অপরাধের সাক্ষী হিসেবে নিরাপত্তার অযুহাতে বাতাসের মতো ছড়িয়ে পড়ছে সিসিটিভি
নামক যন্ত্রটি। বাংলাদেশের হোটেল-রেস্তোরায়, হাসপাতালে,
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, সরকারি-বেসরকারি ভবনে, বাজারের দোকানপাটে, পাবলিক
প্লেসে এমনকি পবিত্র মসজিদেও সিসিটিভি ক্যামেরা দেখা যায়। অনেকেই বিশ্বাস
করে, ‘সিসিটিভি হচ্ছে উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে অপরাধ দমন করা
সম্ভব।’ আসলে এ ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল এবং অজ্ঞতার ফল।
নিরাপত্তার জন্য সিসিটিভি ক্যামেরা একেবারেই অনির্ভরযোগ্য এবং খুবই ব্যয়বহুল ব্যবস্থা। সিসিটিভি’র কার্যক্ষমতা নিয়ে বাংলাদেশে এখন তেমন আলোচনা শুরু না হলেও ইউরোপ-আমেরিকায় এ ব্যবস্থাটি অনেক সমালোচিত এবং প্রশ্নবিদ্ধ। কারণ এই সিসিটিভি ব্যবস্থাপনায় যে পরিমাণ অর্থ খরচ করা হয়, সে তুলনায় আউটপুট আসে না। তথাকথিত উন্নতবিশ্বে বা ইউরোপ-আমেরিকায় সিসিটিভি’র বিরুদ্ধে অনেক রিপোর্ট হয়েছে। তার মধ্যে কিছু উদাহরণ এখানে পেশ করছি-
(১) ব্রিটিশ পুলিশ বলেছে, সিসিটিভি’র মাধ্যমে অপরাধ হ্রাস পায় না। ইউরোপের সবচেয়ে বেশি সিসিটিভি আছে ব্রিটেনে (১০ লক্ষের উপর) কিন্তু অপরাধ দমনে এর তেমন কোনো প্রভাব নেই। এর দ্বারা যদি সামান্য কিছু (মাত্র ৩ %) আউটপুট আসেও, কিন্তু এর পেছনে যে বিলিয়ন পাউন্ড খরচ হয়, সে তুলনায় তা একেবারেই নগণ্য। পাশাপাশি সিসিটিভি’'র দুর্বল চিত্র দিয়ে অপরাধী চেহারাও সনাক্ত করা কঠিন এবং কোর্টে তা প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা যায় না। সিসিটিভি সনাক্তকরণ কঠিন হওয়ায় পুলিশ অনেক সময় সেই পদ্ধতিতেই যায় না। (সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, ডেইলি মেইল, ৬ মে ২০০৮)
(২) স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড পুলিশ বলছে: সিসিটিভি কার্যক্ষমতা খুবই কম। ১ হাজার সিসিটিভি দিয়ে ১ বছরে মাত্র ১টি অপরাধ দমন করা সম্ভব। (সূত্র: ডেইলি মেইল, ২৫ আগস্ট ২০০৯)
(৩) লন্ডনে ১০ হাজার সিসি ক্যামেরা, খরচ ২০০ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু সিসিটিভি’র প্রমাণ দিয়ে ৮০ ভাগ অপরাধেরই সমাধান করা যায় না। (সূত্র: লন্ডন ইভিনিং স্ট্যান্ডার্ড, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০০৭)
(৪) সিসিটিভি (স্পাই) ক্যামেরা রাস্তায় অপরাধ ফুটিয়ে উঠাতে ব্যর্থ। (সূত্র: ওয়াশিংটন পোষ্ট, ১৩ই আগস্ট ২০০৬)
(৫) সিসিটিভি দোকানে চুরি ঠেকাতে পুরোই ব্যর্থ। (সূত্র: হেরাল্ড স্কটল্যান্ড, ১৯শে অক্টোবর ২০০৩)
(৬) সিসিটিভি কখনোই অপরাধ প্রতিবন্ধক নয়। (সূত্র: বিবিসি, ১৪ই অগাস্ট, ২০০২)
(৭) ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের কেনটাকি অঙ্গরাজ্যের নিউপোর্ট পুলিশ সিসিটিভি নিরাপত্তা প্ল্যান পরিবর্তন করলো। (সূত্র: কেওয়াইপোস্ট, ২১শে অক্টোবর, ২০০৩)
(৮) ক্যামেরায় পর্যবেক্ষণ অপরাধ দমন করতে পারে না। (সূত্র: সুইডেনের, তারিখ ১৫ই জানুয়ারি ২০০৮)
(৯) ২শ’ সিসি ক্যামেরা দিয়েও এক ধর্ষককে ঠেকানো যায়নি। (সূত্র: নিউইয়র্ক ডেইলি নিউজ, ২১ শে মার্চ ২০০৮)
(১০) সিসিটিভি লন্ডন দাঙ্গা প্রতিরোধে কিছুই করতে পারেনি। (সূত্র: গার্ডিয়ান. ১৭ই আগস্ট ২০১১)
(১১) সিসিটিভি মানুষের গোপনীয়তা নষ্ট করে দেয়। এর মাধ্যমে মানুষের অনেক ব্যক্তিগত মুহূর্ত ধারণ করা সম্ভব, যা দিয়ে পরবর্তীতে জঘন্য অপরাধ ও ব্ল্যাকমেইল সংঘটিত হয়।
লন্ডনের ২০০টি স্কুলের টয়লেট এবং ড্রেস চেঞ্জ রুমে সিসিটিভি সেট করা আছে। (সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১২)
মূলত, নিরাপত্তার নাম করে মানুষকে বোকা বানিয়ে সাম্রাজ্যবাদীরা বিভিন্ন প্রকার ফায়দা লুটে নিচ্ছে কিন্তু সিসিটিভি ব্যবহারকারীর লাভের চেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে। অথচ লোকসানের ঐ পরিমাণের চেয়ে অনেক কম টাকা দিয়ে সিকিউরিটি হিসেবে দু’চারজন কর্মী নিয়োগ দেয়া যায়। এতে কিছু লোকের কর্মসংস্থানও হয় আবার সরাসরি অপরাধ ঠেকানোর কাজও হতো। আমাদের দেশের মাথামোটা লোকগুলোর শুভ বুদ্ধির উদয় হোক।
-লেখাটি দৈনিক আল ইহসান পত্রিকায় প্রকাশিত।
নিরাপত্তার জন্য সিসিটিভি ক্যামেরা একেবারেই অনির্ভরযোগ্য এবং খুবই ব্যয়বহুল ব্যবস্থা। সিসিটিভি’র কার্যক্ষমতা নিয়ে বাংলাদেশে এখন তেমন আলোচনা শুরু না হলেও ইউরোপ-আমেরিকায় এ ব্যবস্থাটি অনেক সমালোচিত এবং প্রশ্নবিদ্ধ। কারণ এই সিসিটিভি ব্যবস্থাপনায় যে পরিমাণ অর্থ খরচ করা হয়, সে তুলনায় আউটপুট আসে না। তথাকথিত উন্নতবিশ্বে বা ইউরোপ-আমেরিকায় সিসিটিভি’র বিরুদ্ধে অনেক রিপোর্ট হয়েছে। তার মধ্যে কিছু উদাহরণ এখানে পেশ করছি-
(১) ব্রিটিশ পুলিশ বলেছে, সিসিটিভি’র মাধ্যমে অপরাধ হ্রাস পায় না। ইউরোপের সবচেয়ে বেশি সিসিটিভি আছে ব্রিটেনে (১০ লক্ষের উপর) কিন্তু অপরাধ দমনে এর তেমন কোনো প্রভাব নেই। এর দ্বারা যদি সামান্য কিছু (মাত্র ৩ %) আউটপুট আসেও, কিন্তু এর পেছনে যে বিলিয়ন পাউন্ড খরচ হয়, সে তুলনায় তা একেবারেই নগণ্য। পাশাপাশি সিসিটিভি’'র দুর্বল চিত্র দিয়ে অপরাধী চেহারাও সনাক্ত করা কঠিন এবং কোর্টে তা প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা যায় না। সিসিটিভি সনাক্তকরণ কঠিন হওয়ায় পুলিশ অনেক সময় সেই পদ্ধতিতেই যায় না। (সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, ডেইলি মেইল, ৬ মে ২০০৮)
(২) স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড পুলিশ বলছে: সিসিটিভি কার্যক্ষমতা খুবই কম। ১ হাজার সিসিটিভি দিয়ে ১ বছরে মাত্র ১টি অপরাধ দমন করা সম্ভব। (সূত্র: ডেইলি মেইল, ২৫ আগস্ট ২০০৯)
(৩) লন্ডনে ১০ হাজার সিসি ক্যামেরা, খরচ ২০০ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু সিসিটিভি’র প্রমাণ দিয়ে ৮০ ভাগ অপরাধেরই সমাধান করা যায় না। (সূত্র: লন্ডন ইভিনিং স্ট্যান্ডার্ড, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০০৭)
(৪) সিসিটিভি (স্পাই) ক্যামেরা রাস্তায় অপরাধ ফুটিয়ে উঠাতে ব্যর্থ। (সূত্র: ওয়াশিংটন পোষ্ট, ১৩ই আগস্ট ২০০৬)
(৫) সিসিটিভি দোকানে চুরি ঠেকাতে পুরোই ব্যর্থ। (সূত্র: হেরাল্ড স্কটল্যান্ড, ১৯শে অক্টোবর ২০০৩)
(৬) সিসিটিভি কখনোই অপরাধ প্রতিবন্ধক নয়। (সূত্র: বিবিসি, ১৪ই অগাস্ট, ২০০২)
(৭) ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের কেনটাকি অঙ্গরাজ্যের নিউপোর্ট পুলিশ সিসিটিভি নিরাপত্তা প্ল্যান পরিবর্তন করলো। (সূত্র: কেওয়াইপোস্ট, ২১শে অক্টোবর, ২০০৩)
(৮) ক্যামেরায় পর্যবেক্ষণ অপরাধ দমন করতে পারে না। (সূত্র: সুইডেনের, তারিখ ১৫ই জানুয়ারি ২০০৮)
(৯) ২শ’ সিসি ক্যামেরা দিয়েও এক ধর্ষককে ঠেকানো যায়নি। (সূত্র: নিউইয়র্ক ডেইলি নিউজ, ২১ শে মার্চ ২০০৮)
(১০) সিসিটিভি লন্ডন দাঙ্গা প্রতিরোধে কিছুই করতে পারেনি। (সূত্র: গার্ডিয়ান. ১৭ই আগস্ট ২০১১)
(১১) সিসিটিভি মানুষের গোপনীয়তা নষ্ট করে দেয়। এর মাধ্যমে মানুষের অনেক ব্যক্তিগত মুহূর্ত ধারণ করা সম্ভব, যা দিয়ে পরবর্তীতে জঘন্য অপরাধ ও ব্ল্যাকমেইল সংঘটিত হয়।
লন্ডনের ২০০টি স্কুলের টয়লেট এবং ড্রেস চেঞ্জ রুমে সিসিটিভি সেট করা আছে। (সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১২)
মূলত, নিরাপত্তার নাম করে মানুষকে বোকা বানিয়ে সাম্রাজ্যবাদীরা বিভিন্ন প্রকার ফায়দা লুটে নিচ্ছে কিন্তু সিসিটিভি ব্যবহারকারীর লাভের চেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে। অথচ লোকসানের ঐ পরিমাণের চেয়ে অনেক কম টাকা দিয়ে সিকিউরিটি হিসেবে দু’চারজন কর্মী নিয়োগ দেয়া যায়। এতে কিছু লোকের কর্মসংস্থানও হয় আবার সরাসরি অপরাধ ঠেকানোর কাজও হতো। আমাদের দেশের মাথামোটা লোকগুলোর শুভ বুদ্ধির উদয় হোক।
-লেখাটি দৈনিক আল ইহসান পত্রিকায় প্রকাশিত।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন