সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ফতোয়া: সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার চূড়ান্ত ফায়ছালা মতে মরদুদ,মালউন, রজীম, যালিম কুলাঙ্গার ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি কাট্টা কাফির ও চিরজাহান্নামী

পাপিষ্ঠ ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম অর্থাৎ পবিত্র বংশের মানহানী করার ব্যর্থ কোশেশ করেছে। নাউযুবিল্লাহ! উনাদেরকে নির্দয়ভাবে উৎপীড়ন করেছে। উনাদেরকে শহীদ করেছে। নাঊযুবিল্লাহ! এর চেয়ে বড় কুফরী আর কি হতে পারে?

সুতরাং যে বা যারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বংশের প্রতি এরূপ মানহানীকর আচরণ করবে তাদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক এবং উনার সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের পক্ষ হতে লা’নত করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট তাফসীরকার হযরত আল্লামা আলূসী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সুপ্রসিদ্ধ তাফসীরগ্রন্থ ‘তাফসীরে রূহুল মা’আনীতে’ পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন-

وفى الحديث ستة لعنهم الله وكل نبى مجاب الدعوة المحرف لكتاب الله المكذب لقدر الله المتسلط بالجروت ليعز من اذل الله ويذل من اعز الله والمستحل من عترتى والتارك لسنتى.
অর্থ: পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ছয় ব্যক্তির বর্ণনা এসেছে যাদের প্রতি আল্লাহ পাক উনার এবং উনার সকল হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের দোয়া মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট মকবূল উনারা লা’নত করেছেন। এক. মহান আল্লাহ পাক উনার কিতাব পরিবর্তনকারীর প্রতি। দুই. মহান আল্লাহ পাক উনার তাকদীরে অবিশ্বাসীর প্রতি। তিন. বল প্রয়োগে ক্ষমতা দখলকারীর প্রতি। চার. ওই ব্যক্তির প্রতি মহান আল্লাহ পাক যাকে অপদস্ত করেন সে তাকে সম্মান দান করে, আর আল্লাহ পাক যাকে সম্মান দিয়েছেন তাকে সে অপদস্ত করে। পাঁচ. আমার বংশধর উনাদের মানহানীকারীর প্রতি। ছয়. আমার সুন্নত তরককারীর প্রতি।

এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার আলোকে ইয়াযীদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার সকল হযরত নবী-রসূল আলাইমিুস সালাম উনাদের তরফ হতে লা’নত। কারণ সে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বংশের মানহানি করার কোশেশ করেছে। আর সে গুমরাহ হওয়ার পর বল প্রয়োগে ক্ষমতা দখল করে রেখেছিলো অথচ মুসলমানগণ তাকে চাচ্ছিলো না। তার যামানায় পবিত্র মদীনা শরীফ লুণ্ঠনকারী হুসাইন বিন নুমাইর, ঘাতক উবায়দুল্লাহ ইবনে যিয়াদ, শিমার ইবনে জুল জাউশান, উমর ইবনু সা’য়াদের ন্যায় লুটেরা ঘাতক যালিমরা সম্মান পায়। আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে সম্মান করা হয়নি। কাজেই তার যামানায় মহান আল্লাহ পাক যাঁদেরকে সম্মানিত করেছেন উনারা সম্মানিত ছিলেন না। আর লাঞ্ছিতরা ছিলো সম্মানিত। এমন ব্যক্তির প্রতি মহান আল্লাহ পাক তিনি ও উনার হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা লা’নত করেছেন। গুমরাহ হওয়ার পর ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি সে সুন্নতের পাবন্দী ছেড়ে দিয়ে সর্বপ্রকার হারাম যেমন- শরাব পান, নাচ-গান, বাঁদর খেলা, কবুতরবাজি ইত্যাদি কুকর্মে লিপ্ত হয়েছিলো। তা ঐতিহাসিক সত্য বলে প্রমাণিত। কাজেই পবিত্র সুন্নত উনাদের অবজ্ঞাকারী এবং তরককারীরূপেও ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি তথা লা’নতের উপযুক্ত পাত্র।
হযরত আল্লামা হাইছামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘সাওয়ায়িক’ গ্রন্থে এবং হযরত আল্লামা বারজাঞ্জী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘ইশাআ’ গ্রন্থে হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ক্বওল মুবারক-এ অভিমত বর্ণনা করেছেন। হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ইয়াযীদের প্রতি লা’নত করাকে বৈধ বলে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র আয়াতে কারীমা দ্বারা প্রমাণ পেশ করেছেন। 

এ প্রসঙ্গে বর্ণিত রয়েছে-
انا الامام احمد سأله ولد عبد الله عن لعن يزيد قال كيف لا يلعن من لعنه الله تعالى فى كتابه؟ فقال عبد الله قد قرأت كتاب الله عز وجل فلم اجد فيه لعن يزيد فقال الامام ان الله تعالى يقول فهل عسيتم ان توليتم ان تفسدو فى الارض وتقطعوا ارحامكم اولئك الذين لعنهم الله. واى فساد وقطيعة اشد مما فعله يزيد؟
অর্থ: “হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ছেলে হযরত আব্দুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার পিতাকে ইয়াযীদের প্রতি লা’নত করা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করেন। তিনি ছেলেকে বলেন, মহান আল্লাহ পাক যাকে উনার কিতাব (পবিত্র কুরআন শরীফ) উনার মধ্যে লা’নত করেছেন তাকে লা’নত করা হবে না কেন? হযরত আব্দুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমি মহান আল্লাহ পাক উনার কিতাব (পবিত্র কুরআন শরীফ) পাঠ করেছি। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইয়াযীদের প্রতি লা’নতের সন্ধান পাইনি। হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ছেলেকে বললেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, ‘হতে পারে তোমরা ফিরে যাবে আর পৃথিবীতে উপদ্রব সৃষ্টি করবে এবং তোমাদের রেহমি বা জঠর সম্পর্ক ছিন্ন করবে। এরূপ লোকদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক তিনি লা’নত করেন।’ কাজেই, ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি যা করেছে তার চেয়ে অধিক উপদ্রব ও রেহমি সম্পর্ক ছিন্ন করা আর কি হতে পারে?” (তাফসীরে রূহুল মাআনী, জিলদ ২৫, পৃষ্ঠা ৭২)

হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি পবিত্র সূরা মুহম্মদ শরীফ উনার মধ্যে উল্লিখিত ২২ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা প্রমাণ করেন যে, ইয়াযীদের প্রতি লা’নত করা বৈধ। কারণ ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি পৃথিবীতে উপদ্রব করেছে। কাতয়ি রেহমী করেছে। আত্মীয়তার মর্যাদা রাখেনি। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের চেয়ে আপনজন আর কে হবে? উনাদের সাথে সে চরম দুর্ব্যবহার করেছে। রেহমি বা জঠর সম্পর্ক অপেক্ষা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্পর্ক অতি ঘনিষ্ঠ, অতি আপন। যা ইয়াযীদের দ্বারা বিচ্ছিন্ন হয়েছে। কাজেই, তার প্রতি লা’নত করা বৈধ।

হযরত আল্লামা আলূসী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে রূহুল মাআনীতে” ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি কাফির বলে এক জামায়াত উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের অভিমত বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, ইয়াযীদের কাফির হওয়া সম্পর্কে এবং তার প্রতি লা’নত করার বৈধতার বিষয়ে এক জামায়াত উলামা পরিষ্কার মন্তব্য করেছেন। উনারা হলেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র সুন্নত উনার মদদগার হযরত ইবনুল জাওযী রহমতুল্লাহি আলাইহি আর উনার পূর্বে হযরত ক্বাযী আবূ ইয়া’লা রহমতুল্লাহি আলাইহি। আর হযরত আল্লামা তাফতাযানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমরা ইয়াযীদের ব্যাপারে দ্বিধা করবো না। এমনকি তার ঈমানের ব্যাপারেও না। তার প্রতি, তার সাহায্যকারীদের প্রতি এবং শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত। যাঁরা সুস্পষ্ট ভাষায় ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহিকে লা’নত করেছেন উনাদের মধ্যে হযরত আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও রয়েছেন।

সুনির্দিষ্টভাবে ইয়াযীদের প্রতি লা’নত করা বৈধ হওয়ার প্রশ্নে হযরত আল্লামা আলূসী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার মত প্রদান করে বলেন- “এ কথার ভিত্তিতে (অর্থাৎ সুনির্দিষ্টভাবে অভিসম্পাত দানের বৈধতার ভিত্তিতে) ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহিকে লা’নত করার প্রশ্নে আমরা দ্বিধা করবো না। সে বহুবিধ নিকৃষ্টমানের দোষ করেছে। তার জবর দখলের দিনগুলোতে সে পবিত্র মদীনা শরীফ ও পবিত্র মক্কা শরীফ উনাদের অধিবাসীদের সাথে যে আচরণ করেছে তার ব্যাপারে বিচার করতে গেলে তাই যথেষ্ট। প্রসঙ্গত হযরত ইমাম তিবরানী রহমতুল্লাহি আলাইহি হাসান সূত্রে পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘আয় বারে ইলাহী! যে পবিত্র মদীনাবাসী উনাদের প্রতি যুলুম করবে, উনাদের সন্ত্রস্ত করবে, আপনি তাকেও ভীতির সম্মুখীন করুন।’ এরূপ ব্যক্তির প্রতি মহান আল্লাহ পাক, হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম, মানবকুলসহ সকলের অভিশাপ (লা’নত) বর্ষিত হোক। এরূপ ব্যক্তির কোনো ফরয ও নফল ইবাদত কবুল করা হবেনা।

আর মহাপ্রলয়ের ন্যায় ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম (পরিবারবর্গ) উনাদের সাথে যা করেছে আর ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার শাহাদাতকে যেভাবে সানন্দে সে গ্রহণ করেছে। নাঊযুবিল্লাহ! সাইয়্যিদুনা ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নানা ও উনাদের উভয়ের প্রতি ছলাত ও সালাম ও উত্তম বিনিময় নিবেদন করি এবং সাইয়্যিদুনা ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরিবারবর্গের সাথে সে যেসব মানহানিকর ব্যবহার করেছে, তার বিস্তারিত বিবরণ সূত্রগত একক বর্ণনায় বর্ণিত হলেও অর্থ ও তথ্য দৃষ্টে (মুতাওয়াতির) ব্যাপক সূত্রে বর্ণিত।” (তাফসীরে রূহুল মাআনী, জিলদ ২৫, পৃষ্ঠা ৭২)

এখানে হযরত আল্লামা আলূসী রহমতুল্লাহি আলাইহি ইয়াযীদের আপত্তিকর কার্যকলাপকে ব্যাপক সূত্রে বর্ণিত বলে উল্লেখ করেছেন। যার উপর নির্ভর করে ইয়াযীদের প্রতি লা’নত করা বৈধ বলেছেন। ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি এমন কর্ম করেছে যার কারণে সে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দ্বারা অভিশপ্ত মালঊন সাব্যস্ত হয়েছে। সে পবিত্র মদীনা শরীফ ও পবিত্র মক্কা শরীফ উনার অধিবাসী উনাদেরকে নির্যাতন করেছে। নউযুবিল্লাহ! পবিত্র কা’বা শরীফ আক্রমণ করেছে। নউযুবিল্লাহ! পবিত্র মদীনা শরীফ-এ নারী নির্যাতন করিয়েছে। নউযুবিল্লাহ! তিনদিন যাবৎ অবাধে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাওয়ার লিখিত ফরমান জারি করেছে। নউযুবিল্লাহ! পবিত্র মদীনা শরীফ উনার অধিবাসী উনাদেরকে শহীদ করিয়েছে। নাঊযুবিল্লাহ!

সুন্নী আক্বীদার কিতাব আক্বাঈদে নাসাফীতে বলা হয়েছে যে, সাইয়্যিদুনা ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যে শহীদ করেছে, যে শহীদ করার হুকুম জারি করেছে, উনাকে শহীদ করা জায়িয বলে যে মত প্রকাশ করেছে, এ বিষয়ে যে রাযি রয়েছে, তাদের সকলের প্রতি লা’নত ও অভিসম্পাত করার বৈধতার প্রতি সকল আলিম একমত। আর ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি সাইয়্যিদুনা ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে শহীদ করার নির্দেশ দেয়। এ কর্মে সম্মতি জানায়। উনার শহীদ হওয়ার খবরে সন্তোষ প্রকাশ করে। নাঊযুবিল্লাহ! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মানহানি করে। নাঊযুবিল্লাহ! এসব কথা ব্যাপক বর্ণনা সূত্রে বর্ণিত। কাজেই ইয়াযীদের প্রতি অভিশাপ দেয়ার বৈধতার প্রশ্নে দ্বিধান্বিত থাকার প্রয়োজন নেই বলে মত প্রকাশ করে আক্বাঈদে নাসাফীতে বর্ণিত রয়েছে- কতক আলিম ইয়াযীদের প্রতি লা’নত বর্ষণ করেছেন। কারণ ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি সাইয়্যিদুনা ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে শহীদ করার নির্দেশ দিয়ে কাফিরের কর্ম করেছে। আর যে সাইয়্যিদুনা ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে শহীদ করেছে, যে উনাকে শহীদ করার নির্দেশ জারি করেছে, যে উনাকে শহীদ করাকে বৈধ বলে মত পোষণ করেছে, যে এসব কা-ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে- এরূপ লোকজনের প্রতি লা’নত ও অভিসম্পাত দেয়াকে সকলেই বৈধ বলেছেন।
আর সত্য কথা হলো, ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি সাইয়্যিদুনা ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে শহীদ করার ব্যাপারে রাজি ছিলো। নউযুবিল্লাহ! উনার শাহাদাতবরণের খবরে সে উল্লসিত হয়। নউযুবিল্লাহ! সে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হযরত আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মানহানি করে আনন্দিত হয়। নাঊযুবিল্লাহ! এ তথ্যাদি নির্ভুল বর্ণনা পরম্পরায় ব্যাপকভাবে সমর্থিত যদিও সূত্রগত একক বর্ণনা দ্বারা বর্ণিত হয়। কাজেই, আমরা (সম্মানিত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনারা) ইয়াযীদের ব্যাপারে এতটুকু দ্বিধা করবো না, এমনকি তার ঈমানের প্রশ্নেও না। ইয়াযীদের প্রতি লা’নত ও অভিসম্পাত, ইয়াযীদের সাহায্যকারীদের প্রতি লা’নত ও অভিসম্পাত। ইয়াযীদের পক্ষ সমর্থনকারীদের প্রতি লা’নত ও অভিসম্পাত। (শরহে আক্বাঈদে নাসাফী, পৃষ্ঠা-১৬২)

হযরত আল্লামা আলূসী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “রূহুল মাআনী” তাফসীর গ্রন্থে ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি প্রসঙ্গে আরো বলেন- “আমি বলছি, আমার এটাই অধিক ধারণা যে, খবীসটি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে রসূল বলে বিশ্বাস করতো না। সে মহান আল্লাহ পাক উনার হেরেম শরীফ-এ (পবিত্র কা’বা শরীফ প্রান্তে) অবস্থানকারীদের সাথে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হেরেম শরীফ (মদীনা শরীফ) উনার মধ্যে অবস্থানকারীদের সাথে এবং উনার পূত-পবিত্র বংশধর উনাদের সাথে উনাদের জীবদ্দশায় ও উনাদের পবিত্র বিছাল শরীফ উনার পরে যে আচরণ করেছে, এছাড়া তার দ্বারা যে সমস্ত অনাচার প্রকাশ পেয়েছে তা তার ঈমান না থাকার ব্যাপারটিই স্পষ্ট করে, (তার ঈমান থাকার) ব্যাপারটি প্রমাণ করতে কোনো দুর্বল দলীলও নেই। কারণ এ কাজটি ছিলো পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পাতা অবহেলা অবজ্ঞার সাথে ময়লা-আবর্জনায় নিক্ষেপ করার মতো অন্যায়। আমার ধারণা তখন তার কার্যকলাপ অধিকাংশ মুসলমানদের নিকট অজানা ছিলো না। কিন্তু উনারা অসহায় ছিলেন। ধৈর্যধারণ করা ব্যতীত উনাদের গত্যন্তর ছিলো না। মহান আল্লাহ পাক উনার যা করার তিনি যেন তা করেন। অগত্যা যদি ধরে নেয়া হয় যে, খবীসটি মুসলমানই ছিলো, তাহলে বলতে হয় সে এমন মুসলমান ছিলো যে যাবতীয় বড় পাপ একত্র করেছে। যা বর্ণনা করার ভাষা নেই। আর আমার অভিমত হলো, নাম করে তার মতো ব্যক্তির প্রতি অভিসম্পাত (লা’নত) করা বৈধ। তার ন্যায় অন্য কোনো পাপীর ধারণা করা যায় না। (তাফসীরে রূহুল মাআনী জিলদ-২৫, পৃষ্ঠা-৭৩)

হযরত আল্লামা আলূসী রহমতুল্লাহি আলাইহি একজন সুন্নী তাফসীরকার। তিনি ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহিকে খবীস, নিকৃষ্ট পাপী বলে উল্লেখ করেছেন। আর তার ঈমান ছিলো না বলেই তিনি স্বীয় অভিমত ব্যক্ত করেছেন। পবিত্র কুরআন শরীফ অবমাননা করার জন্য কেউ তা বিষ্ঠা পুঞ্জে নিক্ষেপ করলে নিক্ষেপকারীর ঈমান থাকেনা। এরূপ ব্যক্তি কাফির হয়ে যায়। হযরত আল্লামা আলূসী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি সে এর চেয়েও অবমাননাকর কাজ করেছে পবিত্র হারামাইন শরীফাইন উনার বাসিন্দাদের সাথে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বংশের লোকজনের সাথে। কাজেই তাকে কাফির বলা জায়িয। আর এরূপ ব্যক্তির প্রতি সুনির্দিষ্টভাবে লা’নত করা বৈধ। কারণ ইয়াযীদের ন্যায় নরাধম পাপিষ্ঠ গোটা যমীনে আর কেউ নেই।

যারা ইয়াযীদের প্রতি লা’নত করাকে বৈধ মনে করবে না, তাকে পাপী মনে করবে না তারা ইয়াযীদের সহচরদের অন্তর্ভুক্ত বলে হযরত আল্লামা আলূসী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন। আর তিনি ইয়াযীদের সহচরদের প্রতি ইয়াযীদের ন্যায় লা’নত করেছেন। তিনি বলেন- “আর লা’নতের উপযোগী হওয়ার ব্যাপারে ইয়াযীদের সাথে শামিল উবায়দুল্লাহ ইবনু যিয়াদ, আমর ইবনু সাআদ এবং তাদের দলবল। তাদের সবার প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত ও অভিসম্পাত। তাদের সাহায্যকারী ও শুভানুধ্যায়ী এবং সাঙ্গ পাঙ্গদের প্রতি লা’নত। আর যারা তাদের প্রতি সহানুভূতি দেখাবে তাদের প্রতিও লা’নত ক্বিয়ামতের দিন পর্যন্ত, যতদিন হযরত আবূ আব্দুল্লাহ সাইয়্যিদুনা ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য একটি মাত্র চোখও অশ্রু ঝরাবে।”(তাফসীরে রূহুল মাআনী, জিলদ ২৫, পৃষ্ঠা ৭৩)

যারা ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহিকে ইতিহাসের নিপীড়িত ব্যক্তি বলে তার সাফাই গাইছে তারাও হযরত আল্লামা আলূসী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে লা’নতের যোগ্য। তারাও ইয়াযীদের দলভুক্ত, ইয়াযীদের শুভানুধ্যায়ী। তাদের প্রতিও ইয়াযীদের ন্যায় লা’নত করা বৈধ বলে হযরত আল্লামা আলূসী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সুচিন্তিত অভিমত ব্যক্ত করেছেন। 
আর যারা চরম ইয়াযীদপন্থী, ইয়াযীদের প্রতি যারা কোনোরূপ দোষারোপ করতে চায় না তাদের প্রসঙ্গে হযরত আল্লামা আলূসী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন- আমি কসম করে বলি, এটা হলো চরম ভ্রষ্টতা। যা ইয়াযীদের ভ্রষ্টতাকেও অতিক্রম করেছে। (তাফসীরে রূহুল মাআনী, জিলদ ২৫, পৃষ্ঠা ৭৩)

উল্লেখ্য, ইবনে যিয়াদ ইয়াযীদের নির্দেশে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত হযরত আহলে বাইত উনাদেরকে বন্দী করে এবং কারবালায় শাহাদাতপ্রাপ্ত শহীদানের কর্তিত মস্তক মুবারক নিয়ে মিছিল করে দামেস্কে নিয়ে যাওয়ার জন্য শিমার ইবনে জুল জাউশান ইবনে সা’লাবা, শীস ইবন রাবী, আমর ইবনে হাজ্জাজ এবং আরো কতক লোককে নিযুক্ত করে। তাদেরকে হুকুম দেয় তারা যে শহরে পৌঁছবে সেখানেই যেন কর্তিত মস্তক মুবারক উনার প্রদর্শনী করা হয়। নাঊযুবিল্লাহ! এরূপে মিছিলটি পহেলা ছফর দামেস্ক শহরের দ্বার দেশে পৌঁছে। ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি তখন জায়রূন রাজ প্রাসাদে অবস্থান করছিলো। সে প্রাসাদের বেলকুনীতে বসে এ দৃশ্য উপভোগ করছিলো। নাঊযুবিল্লাহ! সে দেখতে পেলো হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা বন্দী অবস্থায় আসছেন। কর্তিত শির মুবারকসমূহ বর্শার আগায় বিদ্ধ রয়েছে। জায়রূন উপকণ্ঠে মিছিল পৌঁছলে পরে ওখানকার কাকগুলো কলরব করে বিলাপ প্রকাশ করতে থাকে। ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি তখন কবিতা আবৃত্তি করে বিজয় উল্লাস করে বলে- “যখন ওইসব বাহন চোখে পড়লো, আর ওইসব মস্তক সামনে ভেসে উঠলো জায়রূন উপকণ্ঠে তখন কাককুল কলরব করে উঠলো। আমি বললাম, কলরব করো বা নাই করো, আমি রসূলের নিকট হতে আমার ঋণগুলো শোধ করে নিয়েছি।” নাঊযুবিল্লাহ!

ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি তার কথিত বিজয় গাথায় যে ঋণের উল্লেখ করেছে সে বিষয়ে তাফসীরকার হযরত আল্লামা আলূসী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ তাফসীরে রূহুল মা’আনীতে উল্লেখ করে বলেন- “ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি তার উক্তি: আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট হতে আমার ঋণগুলো শোধ করে নিয়েছি- এর দ্বারা বুঝাতে চাচ্ছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বদর যুদ্ধে ইয়াযীদের নানা উতবা এবং তার মামাকে ও তার অন্যান্য আপনজনকে হত্যা করেছিলেন। যার প্রতিশোধরূপে ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি আলে রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে শহীদ করেছে। নাঊযুবিল্লাহ! এটা স্পষ্ট কুফরীর প্রমাণ। তার এ উক্তি প্রমাণিত হওয়ায় ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি এজন্যে অবশ্যই কাফির হয়ে গেছে। অনুরূপ ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি কবি ইবনে যাবআরীর মুসলমান হওয়ার পূর্বের এক কবিতাখ- দ্বারাও একই ধরনের উক্তি করেছে।” নাঊযুবিল্লাহ!

এখানে দেখা যায়, ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি সম্মানিত ইসলাম উনার প্রথম সমরে (বদর যুদ্ধে) তার কাফির পূর্ব পুরুষদের নিহত হওয়ার প্রতিশোধ গ্রহণ করেছে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছ থেকে হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে কারবালার ময়দানে শহীদ করে। নাঊযুবিল্লাহ! তাহলে ইয়াযীদের অন্তরে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি দুশমনি ছিলো বলে সাব্যস্ত হয়। যা স্পষ্ট কুফরী। এসব কারণেই হযরত কাযী আবূ ইয়া’লা রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আল্লামা ইবনু জাউযী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আল্লামা তাফতাজানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আল্লামা ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহিকে সরাসরি কাফির বলেছেন এবং ইয়াযীদের প্রতি লা’নত করেছেন। হযরত শায়খ আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিছ দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ‘দিয়ারে হাবীব’ গ্রন্থে ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহিকে লায়ীন বা লা’নতগ্রস্ত বলেছেন। হযরত শাহ আব্দুল আযীয দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ‘তুহফা ইছনা আশারিয়া’ কিতাবে ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহিকে পালীদ অর্থাৎ অপবিত্র বা নাপাক বলেছেন। অর্থাৎ আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের উলামায়ে কিরাম উনারা ন্যূনতম পর্যায়ে ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহিকে চরম ফাসিক, লা’নতগ্রস্ত, অপবিত্র ইত্যাদি বলেছেন। আর চরম পর্যায়ে তাকে কাফির বলে মন্তব্য করেছেন।

এছাড়া ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে বলতে গিয়ে উনারা আরো উল্লেখ করেছেন যে, ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি ছাহাবী তো নয়ই, বরং তাবিয়ী হওয়ার যোগ্যতাও সে হারিয়ে ফেলেছে। এমনকি সে খলীফা বা আমীরুল মু’মিনীন পদবিতে ভূষিত হওয়ার যোগ্যতাও হারিয়ে ফেলেছে। উনারা বলেছেন, ছাহাবী, তাবিয়ী, খলীফা ও আমীরুল মু’মিনীন এসব মহান মর্যাদা সম্বলিত পদবি লাভের যোগ্যতাও হারিয়ে ফেলেছে। কাজেই, ইয়াযীদের ন্যায় দুরাচার, ফাসিক, অপবিত্র, লা’নতগ্রস্ত এবং সর্বোপরি কাফির ব্যক্তি কোনোক্রমেই উপরোক্ত সম্মানে সম্মানিত হতে পারে না। বরং সে গুমরাহ হওয়ার কারণে যে তাকে খলীফা বা আমীরুল মু’মিনীন বলে আখ্যায়িত করেছে বা করবে সম্মানিত ইসলাম উনার দ-বিধি মুতাবিক এরূপ ব্যক্তিকে দোররা মারা হয়েছে এবং হবে। হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং অনুসরণীয় উলামায়ে কিরাম উনারা এ বর্ণনা উল্লেখ করেছেন। যেমন হযরত আল্লামা ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘তারীখুল খুলাফা’ গ্রন্থে ১৯৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন- “নাওফিল ইবনু আবীল ফুরাত বলেন, আমি খলীফা হযরত উমর ইবনু আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট ছিলাম, সেখানে এক ব্যক্তি ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি প্রসঙ্গে বর্ণনা করতে গিয়ে বলে ফেলে- হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পুত্র (আমীরুল মু’মিনীন) ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি বলেছে। এ কথা শোনার সাথে সাথেই খলীফা হযরত উমর ইবনু আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলে উঠলেন, তুমি ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহিকে আমীরুল মু’মিনীন বলছো? হযরত উমর ইবনু আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি লোকটিকে দোররা মারার নির্দেশ দিলেন। তখনই তাকে বিশটি দোররা মারা হয়।”

উল্লেখ্য, ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহিকে যারা আমীরুল মু’মিনীন অথবা খলীফা বলার দুঃসাহস দেখাবে তাদের শাস্তি কি এখানে তা পরিষ্কার। তাহলে যে বা যারা ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহিকে তাবিয়ী কিংবা কোনো ভালো খিতাবে অভিহিত করবে একইভাবে তারাও শাস্তির উপযুক্ত। কেননা ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি যে অপকর্ম করেছে তা কোনো মু’মিন মুসলমান বরদাশত করতে পারে না। 

ইয়াযীদের হারাম ও কুফরী কাজগুলো হলো: নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত পরিবার উনাদের ক্ষতি করা, পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে অবাধ লুণ্ঠন ও নারী নির্যাতন, পবিত্র কা’বা শরীফ অগ্নি সংযোগ এবং গুমরাহ হওয়ার পর অবৈধ পন্থায় ক্ষমতা দখল করে রেখে সম্মানিত ইসলাম উনার খিলাফত আলা মিন হাজিন নুবুওওয়াহ উনার বরখিলাফ কাজ কর্ম করা। 

ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি কর্তৃক পবিত্র মদীনা শরীফ উনার সম্ভ্রান্ত মহিলাদেরকে সেনাবাহিনী দ্বারা সতীত্ব নষ্ট ও লাঞ্ছিত করার বিবরণ দিয়ে হযরত আল্লামা ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন- “পবিত্র মদীনা শরীফ উনার উপকণ্ঠ ‘আল হাররা’য় বিপর্যয় ঘটে। তুমি কি জান যে, আল হাররা বিপর্যয়টি কি ছিলো। একদা হযরত ইমাম হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এ প্রসঙ্গে এরূপ বর্ণনা করেন- মহান আল্লাহ পাক উনার কসম করে বলছি, এ ঘটনায় কারো পরিত্রাণের কোনো উপায় ছিলো না। এ ঘটনায় বহু সংখ্যক হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম এবং অন্যান্য বহু লোক প্রাণ হারান। পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে অবাধে লুণ্ঠন চলতে থাকে। এ ঘটনায় এক হাজার অবিবাহিতা পর্দানশীন যুবতীর মান-সম্ভ্রম বিনষ্ট করা হয়। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, যে পবিত্র মদীনাবাসীগণকে ভয় দেখাবে মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে ভয় দেখাবেন। তার প্রতি মহান আল্লাহ পাক, উনার, হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের এবং সকল মানুষের লা’নত ও অভিসম্পাত।” (মুসলিম শরীফ) 

উপরোক্ত বর্ণনা ও আলোচনা থেকে এ কথা স্পষ্ট যে, ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি সে যেসব অপকর্ম করেছে তা সুস্পষ্ট কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। কেউ কুফরী করলে সে মুসলমান থেকে খারিজ হয়ে যায়। যার কারণে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ইমাম-মুজতাহিদ, আওলিয়ায়ে কিরাম উনারা ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহিকে কাফির, লা’নতগ্রস্ত ও জাহান্নামী বলতে কোনো দ্বিধা করেননি।
কাজেই, ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহিকে তাবিয়ী বলার অর্থ হলো তার ছানা-ছিফত করা, তাকে হক্ব বলে স্বীকার করা। ইয়াযীদের মতো পাপিষ্ঠ ব্যক্তির ছানা-ছিফত কেবল ওইসব ব্যক্তিই করতে পারে যে তার শুভাকাঙ্খী, সমর্থনকারী। ফলে সম্মানিত শরীয়ত উনার ফতওয়া অনুযায়ী ইয়াযীদের যা হুকুম তার শুভাকাঙ্খী ও সমর্থনকারী তাদেরও একই হুকুম। আর সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার চূড়ান্ত ফতওয়া মতে মরদুদ, মালউন, রজীম, যালিম কুলাঙ্গার ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি সে কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী।

ফতোয়া সূত্র: দৈনিক আল ইহসান ও মাসিক আল বাইয়্যিনাত
গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদীয়া জামিয়া শরীফ, রাজারবাগ, ঢাকা।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের ভ্রান্ত আক্বীদা ও তার খন্ডন মূলক দাঁতভাঙ্গা জবাব

সম্মানিত পাঠক! প্রচলিত ৬ উছূলভিত্তিক তাবলীগ জামায়াতের বাস্তবতা সম্পর্কে যদি সত্যিই জানতে আগ্রহী হন তবে দলিল ভিত্তিক এই প্রতিবেদনটি পড়ুন। ========================================================== ভ্রান্ত আক্বীদা (১)   প্রচলিত ৬ উছূলভিত্তিক তাবলীগ জামায়াতের লোকদের লিখিত কিতাবে এ কথা উল্লেখ আছে যে, মূর্খ হোক, আলিম হোক, ধনী হোক, দরিদ্র হোক, সকল পেশার সকল মুসলমানের জন্য তাবলীগ করা ফরজে আইন। (হযরতজীর মালফুজাত-৪, পৃষ্ঠা-৭, অনুবাদক- মাওলানা ছাখাওয়াত উল্লাহ; তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব, পৃষ্ঠা-৫৬, অনুবাদক- ইসমাঈল হোসেন; তাবলীগে ইসলাম, পৃষ্ঠা-৩, লেখক- মাওলানা আব্দুস সাত্তার ত্রিশালী; পস্তী কা ওয়াহিদ এলাজ, লেখক- মাওলানা এহ্‌তেশামুল হাসান কান্দলবী, পৃষ্ঠা-২২) ——————————————————————————— জবাব : তাদের উপরোক্ত বক্তব্যের প্রেক্ষিতে প্রশ্ন জাগে, তাবলীগ করা কি- ফরজে আইন নাকি ফরজে কিফায়া? কেননা- যে ইবাদত প্রত্যেকের জন্য আলাদাভাবে পালন করা ফরজ তা  ফরজে আইন । যেমন- নামাজ, রোজা, ইত্যাদি। আর যে ইবাদত সমষ্টিগতভাবে পালন করা ফরজ অর্থাৎ যে ফরজ কাজ দেশবাসী, শহরবাসী,এলাকাবাসী বা কোন সম্

*Coca-cola is Haram for Muslim

Because Coca-Cola and Other Soft Drinks may Contain ALCOHOL. Read Details here:~~~~ COCA-COLA: THE REAL THINGS? The proportions in the accompanying recipe are based on the analyses of Coke quoted above and Merory's recipes. The amount of caffeine agrees with that stated in Coca-Cola's So you asked about soft drinks... pamphlet; this is about a third of the caffeine found in the trial analyses. The following recipe produces a gallon of syrup very similar to Coca-Cola's. Mix 2,400 grams of sugar with just enough water to dissolve (high-fructose corn syrup may be substituted for half the sugar). Add 36 grams of caramel, 3.1 grams of caffeine, and 11 grams of phosphoric acid. Extract the cocaine from 1.1 grams of coca leaf ( Truxillo growth of coca preferred) with toluol; discard the cocaine extract. Soak the coca leaves and kola nuts (both finely powdered; 0.37 gram of kola nuts) in 22 grams of 20 percent alcohol. California white wine fortified to 20 percent strengt

TABLEEGHI KUFRI AQEEDA--Exposed!!!

THE AQEEDA OF THE TABLEEGHI JAMAAT AND DEOBAND—EXPOSED!!! ===================================================== To have good and strong Imaan, one must have the proper Aqeeda. It is for this reason that we quote a few un-Islamic beliefs of the leaders of the Tableeghi Jamaat together with the proper Islamic answers. The present Molvis and devotees of the T. Jamaat refuse to condemn the persons who wrote such bad beliefs and to even disassociate themselves from such false beliefs. The un-Islamic beliefs which we have quoted below are quotations from those individuals who possess such beliefs and by writing them in this handbill, we have no intention of Kufr. FALSE BELIEF 1: “Allah can speak lies“. (“Barahine Qaatia” by Khaleel Ambetwi; “Yakrozi” by Ismaeel Dehlwi; “Fatawa Rasheedia” by Rasheed Ahmed Gangohi). NAUZ BILLAH ANSWER: Lies is a defect which is not worthy of the Zaat of Almighty Allah and is totally Muhaal (Impossible) for Almighty Allah. Allah is free from all shortages a