সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত মদীনা শরীফ উনার মধ্যে তাশরীফ মুবারক নিয়ে দু’ঈদ ব্যতীত সব ঈদ বাতিল ঘোষণা করেছেন- কথাটি কতটুকু সত্য?



সুওয়াল ৮ : নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত মদীনা শরীফ উনার মধ্যে তাশরীফ মুবারক নিয়ে দু’ঈদ ব্যতীত সব ঈদ বাতিল ঘোষণা করেছেন।

সুুওয়াল ৯ : সম্মানিত শরীয়ত উনার মধ্যে দু’টি ঈদ- ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা ছাড়া আর কোন ঈদের অস্তিত্ব নেই।

জওয়াব : সম্পূর্ণ মিথ্যা। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে তাশরীফ মুবারক নিয়ে কোন ঈদ বাতিল করেন নি বরং দুইটি কুফরী দিবসসহ সমস্ত কুফরী দিবসকে বাতিল ঘোষণা করে ২টি ঈদ ঘোষনা করেছেন। কিন্তু মুসলমানদের জন্য অন্যান্য বিশেষ দিবস বা আইয়্যামুল্লাহ বাতিল ঘোষণা করেননি। 

এমনকি একথাও বলেননি যে, মুসলমান উনাদের জন্য দু’ঈদ ছাড়া আর কোন ঈদ নেই। বরং তিনি মুসলমান উনাদের জন্য আরো অনেক বিশেষ দিন ও সময় সম্পর্কে ঘোষণা মুবারক দিয়েছেন। 


দলীল

‘নওরোজ’ বা নববর্ষ ও ‘মিহিরজান’ নামক ২টি কুফরী দিবস বাতিল করে মুসলমানদের জন্য ইয়াওমুল আদ্বহা ও ইয়াওমুল ফিতরের ঘোষণা :

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَدِمَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَدِيْنَةَ وَلَـهُمْ يَوْمَانِ يَلْعَبُوْنَ فِيْهِمَا فَقَالَ‏ مَا هٰذَانِ الْيَوْمَانِ‏،‏ قَالُوْا كُنَّا نَلْعَبُ فِيْهِمَا فِي الْـجَاهِلِيَّةِ،‏ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ اللهَ قَدْ اَبْدَلَكُمْ بِـهِمَا خَيْرًا مِّنْهُمَا يَوْمَ الْاَضْحٰى وَيَوْمَ الْفِطْرِ‏.‏

অর্থ : “হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে তাশরীফ মুবারক নিয়ে দেখতে পেলেন সম্মানিত মদীনা শরীফ উনার অধিবাসীরা দু’দিন খেলাধুলা করেন। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, এ দু’টি দিন কি? উনারা বলেন, আমরা এ দু’দিন জাহিলি যুগ থেকেই খেলাধুলা করে আসছি। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি এই দু’দিনের পরিবর্তে তার চেয়ে উত্তম দু’টি দিন দিয়েছেন- ঈদুল আদ্বহা ও ঈদুল ফিতর।” (আবূ দাঊদ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১১৩৪, মুসনাদে আহমদ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১৩২১০, মুস্তাদরাক লি হাকিম শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১১২৪)

উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ খানা দ্বারা যে দুটি কুফরী দিবস বাতিল ঘোষণা করা হয় তাহলো-

(১) ‘নওরোজ’ বা নববর্ষ। অর্থাৎ বছরের প্রথম দিন এবং 

(২) ‘মিহিরজান’।

এই দুটি দিবস সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে- 

عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ تَنَافٰى اَرْضَ الْاَعَاجِمِ فَصَنَعَ نَيْرُوزَهُمْ وَمَهْرِجَانِـهِمْ حُشِرَ مَعَهُمْ. 

অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে অনারব দেশ বিচরণ করে, অতঃপর তাদের নওরোজ ও মিহিরজান উদযাপন করে, তাদের সাথে তাকে হাশরে উঠানো হবে।” (সুনানে বায়হাক্বী শরীফ ২য় খ-, ৩২৫ পৃষ্ঠা)

উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, নওরোজ ও মিহিরজান নামক দু’টি কুফরী দিবসের পরিবর্তে মুসলমানদের জন্য দুই বিশেষ দিন- ঈদুল আদ্বহা ও ঈদুল ফিতর প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এ কথা উল্লেখ করেননি যে, উক্ত দুইটি বিশেষ দিবস ছাড়া আর কোন বিশেষ দিবস নেই।

আরো স্মরণীয় যে, ঈদুল আদ্বহা ও ঈদুল ফিতর এই দুইটি দিবসকে কুফরী দিবসের পরিবর্তে মুসলমানদের প্রদান করা হলেও প্রাথমিক অবস্থাতেই এই দুইটি বিশেষ দিবসকে ঈদের দিন ঘোষণা করা হয়নি। বরং পরবর্তীতে ঈদের দিন ঘোষণা করা হয়েছে। কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বলা হয়েছে-

 يَوْمَ الْاَضْحٰى وَيَوْمَ الْفِطْرِ 

অর্থাৎ আদ্বহার দিবস ও ফিতরের দিবস।

এই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আদ্বহার দিবস ও ফিতরের দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আর এই দুটি দিবস যে ঈদের দিন সেটা পরে ঘোষিত হয়েছে। তাই দু’ঈদ ব্যতীত সব ঈদ বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে বলাই মূর্খতার পরিচায়ক।

সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার মধ্যে ঈদের সংখ্যা ২টির বেশি হওয়ার প্রমাণ :

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

قَالَ اَبُوْ عُبَيْدٍ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ ثُـمَّ شَهِدْتُّ الْعِيْدَ مَعَ عُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ عَلَيْهِ السَّلَامُ فَكَانَ ذٰلِكَ يَوْمَ الْـجُمُعَةِ فَصَلّٰى قَبْلَ الْـخُطْبَةِ ثُـمَّ خَطَبَ فَقَالَ يَا اَيُّهَا النَّاسُ اِنَّ هٰذَا يَوْمٌ قَدِ اجْتَمَعَ لَكُمْ فِيْهِ عِيْدَانِ

অর্থ : “হযরত আবূ ‘উবায়দ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এরপর আমি সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সময়ও হাযির হয়েছি। সেদিন ছিল জুমু’আর দিন। তিনি খুতবা দানের আগে নামায আদায় করলেন। এরপর তিনি খুতবাহ দিতে দাঁড়িয়ে বললেন, হে লোক সকল! এটি এমন দিন, যে দিন তোমাদের জন্য দু’টি ঈদ একত্রে হয়ে গেছে।” (বুখারী শরীফ : কিতাবুল আদ্বাহিইয়্যু: বাবু মা ইউ’কালু মিন লুহূমিল আদ্বাহিইয়্যি ওয়ামা ইউতাযাওয়্যাদু মিনহা : হাদীছ শরীফ নং ৫৫৭২)

অত্র পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে عِيْدَانِ ‘ঈদানে’ ব্যবহৃত হয়েছে যা عِيْدٌ ‘ঈদ’ শব্দের দ্বিবচন। আর এই দ্বিবচন দ্বারা ঈদুল ফিতর আর ঈদুল আদ্বহা বুঝানো হয়নি। বরং সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি জুমু’আর দিনে ঈদুল আদ্বহাকে اِنَّ هٰذَا يَوْمٌ قَدِ اجْتَمَعَ لَكُمْ فِيْهِ عِيْدَانِ “এটি এমন দিন, যে দিন তোমাদের জন্য দু’টি ঈদ একত্রে হয়ে গেছে” বলে উল্লেখ  করেছেন।

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত মদীনা শরীফ তাশরীফ মুবারক নিয়ে ঈদুল ফিতর আর ঈদুল আদ্বহা ব্যতীত সব ঈদ যদি বাতিল ঘোষণাই করতেন, তাহলে উক্ত ঘোষণার প্রায় ২৪ বছর পরে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি ঈদুল আদ্বহার দিনে জুুমুয়ার দিনকেও ঈদ হিসেবে ঘোষণা করলেন কেন? বস্তুত নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিদ্বেষীরা পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ মানতে চায় না বিধায় নানা ছল চাতুরীর আশ্রয় নিয়ে এসব কুফরী বক্তব্য উপস্থাপন করে থাকে।

সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে ঈদুল ফিতর আর ঈদুল আদ্বহা ব্যতীত আরো অনেক ঈদ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে অন্যত্র বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِـي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ زَيِّنُوا اَعْيَادَكُمْ بِالتَّكْبِيْرِ.

অর্থ : “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা তোমাদের ঈদগুলোকে তাকবীর ধ্বনী দ্বারা সৌন্দর্য্যমন্ডিত করো।” (আল্ মু’জামুল আওসাত লিত্ ত্ববারানী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৪৫০৯)

উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ব্যবহৃত اَعْيَادٌ ‘আ’ইয়াদ’ শব্দ মুবারকখানা عِيْدٌ ‘ঈদ’ শব্দের বহুবচন। সাধারণভাবে আরবীতে দু’য়ের অধিক ঈদের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় اَعْيَادٌ ‘আ’ইয়াদ’। এখানে বহুবচন ব্যবহার করে অনেক ঈদের ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে।

সুতরাং পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত হয় যে, সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার মধ্যে অসংখ্য ঈদ রয়েছে। তাই সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত দুই ঈদের মধ্যে সীমাবদ্ধ বলা পবিত্র হাদীছ শরীফ বা ওহী মুবারক অস্বীকার করার নামান্তর, যা সম্পূর্ণরূপে কুফরী।

সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী কতিপয় ঈদের দিনের প্রমাণ

১. পবিত্র জুমুয়ার দিন মুসলমান উনাদের জন্য ঈদের দিন।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ عُبَيْدِ ابْنِ السَّبَّاقِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ فِيْ جُـمُعَةٍ مِّنَ الْـجُمَعِ يَا مَعْشَرَ الْمُسْلِمِيْنَ اِنَّ هَذَا يَوْمٌ جَعَلَهُ اللهُ عِيْدًا فَاغْتَسِلُوْا وَمَنْ كَانَ عِنْدَهٗ طِيْبٌ فَلَا يَضُرُّهٗ اَنْ يـَّمَسَّ مِنْهُ وَعَلَيْكُمْ بِالسِّوَاكِ.

অর্থ : “হযরত উবাইদ বিন সাব্বাক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এক পবিত্র জুমুআ উনার দিনে ইরশাদ মুবারক করেন, এ পবিত্র জুমআহ উনার দিন হচ্ছেন এমন একটি দিন, যে দিনকে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র ঈদ উনার দিন সাব্যস্ত করেছেন। তাই তোমরা গোসল কর আর যার নিকট সুগন্ধি রয়েছে, সে তা হতে স্পর্শ করলে ক্ষতি নেই। মিসওয়াক ব্যবহার করা তোমাদের কর্তব্য।” সুবহানাল্লাহ! (মুয়াত্তা মালিক শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১৪৪, ইবনে মাজাহ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১১৯৮, মা’য়ারিফুস সুনান ওয়াল আছার বায়হাক্বী শরীফ : হাদীছ শরীফ ১৮০২, মুসনাদে শাফিয়ী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ২৬৮, আল্ মু’জামুল আওসাত লিত্ ত্ববারানী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৩৪৩৩)

অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ هٰذَا يَوْمُ عِيْدٍ جَعَلَهُ اللهُ لِلْمُسْلِمِيْنَ فَمَنْ جَاءَ اِلَى الْـجُمُعَةِ فَلْيَغْتَسِلْ وَاِنْ كَانَ طِيْبٌ فَلْيَمَسَّ مِنْهُ وَعَلَيْكُمْ بِالسِّوَاكِ‏.‏

অর্থ : “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি এই দিনকে মুসলমান উনাদের জন্য ঈদের দিনরূপে নির্ধারণ করেছেন। অতএব যে ব্যক্তি জুমুআর নামায আদায় করতে আসবে, তিনি যেন গোসল করে এবং সুগন্ধি থাকলে তা শরীরে লাগায়। আর মিসওয়াক করাও কর্তব্য।” (ইবনে মাজাহ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১০৯৮, আল্ মু’জামুল আওসাত লিত্ ত্ববারানী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৭৩৫৫)

অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِـي لُبَابَةَ بْنِ عَبْدِ الْمُنْذِرِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ يَوْمَ الْـجُمُعَةِ سَيّدُ الاَيَّامِ وَاَعْظَمُهَا عِنْدَ اللهِ وَهُوَ اَعْظَمُ عِنْدَ اللهِ مِنْ يَّوْمِ الْاَضْحٰى وَيَوْمِ الْفِطْرِ فِيْهِ خَـمْسُ خِلَالٍ خَلَقَ اللهُ فِيْهِ حَضْرَتْ اٰدَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَاَهْبَطَ اللهُ فِيْهِ حَضْرَتْ اٰدَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ اِلَى الْاَرْضِ وَفِيْهِ تَوَفَّى اللهُ حَضْرَتْ اٰدَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَفِيْهِ سَاعَةٌ لَا يَسْاَلُ اللهَ فِيْهَا الْعَبْدُ شَيْئًا اِلَّا اَعْطَاهُ مَا لَـمْ يَسْاَلْ حَرَامًا وَفِيْهِ تَقُوْمُ السَّاعَةُ مَا مِنْ مَلَكٍ مُّقَرَّبٍ وَلَا سَـمَاءٍ وَلَا اَرْضٍ وَلَا رِيَاحٍ وَلَا جِبَالٍ وَلَا بَـحْرٍ اِلَّا وَهُنَّ يُشْفِقْنَ مِنْ يَّوْمِ الْـجُمُعَةِ‏.

অর্থ : “হযরত আবূ লুবাবা ইবনে আব্দুল মুনযির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, পবিত্র জুমআ শরীফ উনার দিন সকল দিনের সাইয়্যিদ এবং সকল দিন অপেক্ষা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট অধিক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত। এদিনটি পবিত্র ঈদুল আদ্বহা উনার দিন ও পবিত্র ঈদুল ফিতর উনার দিন অপেক্ষাও মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট অধিক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত। এ দিনটিতে পাঁচটি (গুরুত্বপূর্ণ) বিষয় রয়েছে- (১) এ দিনে মহান আল্লাহ পাক তিনি আবুল বাশার হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করেছেন, (২) এ দিনে উনাকে যমীনে প্রেরণ করেছেন, (৩) এ দিনে তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন, (৪) এ দিনটিতে এমন একটি সময় রয়েছে, যে সময়টিতে বান্দা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট কিছু চাইলে তিনি অবশ্যই তাকে তা দান করেন, যে পর্যন্ত না সে হারাম কিছু চায় এবং (৫) এ দিনেই ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে। এমন কোন ফেরেশতা আলাইহিস সালাম নেই, আসমান নেই, যমীন নেই, বাতাস নেই, পাহাড় নেই, সমুদ্র নেই, যে জুমুআর দিন সম্পর্কে ভীত নয়।” (ইবনে মাজাহ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১১৩৭, আল্ মু’জামুল কবীর লিত্ ত্ববারানী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৪৫১১, বায়হাক্বী শরীফ  : হাদীছ শরীফ নং ২৯৭৩)

অন্য হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَوْسِ بْنِ اَوْسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ‏ اِنَّ مِنْ اَفْضَلِ اَيَّامِكُمْ يَوْمَ الْـجُمُعَةِ فِيْهِ خُلِقَ اٰدَمُ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَفِيْهِ قُبِضَ.‏ 

অর্থ : “হযরত আউস ইবনে আউস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আপনাদের দিনগুলোর মধ্যে উত্তম দিন হচ্ছেন পবিত্র জুমআ উনার দিন। এ দিনে আবুল বাশার হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি সৃষ্টি হয়েছেন এবং এ দিনেই তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন।” (নাসায়ী শরীফ : কিতাবুল জুমুয়া, হাদীছ শরীফ নং ১৩৮৫, মুসলিম শরীফ : কিতাবুল জুমুয়া, হাদীছ শরীফ নং ৮৫৫, তিরমিযী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৪৯১, মুসনাদে আহমদ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৮৯৫৪, ইবনে মাজাহ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১৭০৫, আবূ দাঊদ শরীফ : কিতাবুছ ছলাত, হাদীছ শরীফ নং ১০৪৭, ইবনে খুযায়মা শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১৬৩২)


২. পবিত্র আরাফা উনার দিন মুসলমান উনাদের জন্য ঈদের দিন।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ عَمَّارِ بْنِ اَبِـي عَمَّارٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ قَالَ قَرَاَ حَضْرَتْ اِبْنُ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ ‏‏(‏اَلْيَوْمَ اَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَاَتْـمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِيْ وَرَضِيْتُ لَكُمُ الْاِسْلاَمَ دِيْنًا‏)‏ وَعِنْدَهٗ يَهُوْدِيٌّ فَقَالَ لَوْ اُنْزِلَتْ هٰذِهٖ عَلَيْنَا لَاتَّـخَذْنَا يَوْمَهَا عِيْدًا‏.‏ قَالَ حَضْرَتْ اِبْنُ عَبَّاسٍ فَإِنَّـهَا نَزَلَتْ فِيْ يَوْمِ عِيْدٍ فِيْ يَوْمِ جُـمُعَةٍ وَيَوْمِ عَرَفَةَ‏.‏

অর্থ : “হযরত আম্মার ইবনে আবূ আম্মার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি একদা ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করে দিলাম। ....... (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩)’ এ আয়াত শরীফ খানা শেষ পর্যন্ত তিলাওয়াত করলেন। তখন উনার নিকট এক ইয়াহূদী ছিল, সে বলে উঠলো, যদি এমন আয়াত শরীফ আমাদের ইয়াহূদী সম্প্রদায়ের প্রতি নাযিল হতো, আমরা আয়াত শরীফ নাযিলের দিনটিকে ঈদের দিন হিসেবে ঘোষণা করতাম। এটা শুনে হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, এ আয়াত শরীফ সেই দিন নাযিল হয়েছে যেদিন ঈদ ছিলো- (১) জুমুয়ার দিন এবং (২) আরাফার দিন!” (তিরমিযী শরীফ : হাদীছ শরীফ ৩৩১৮)

অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ طَارِقِ بْنِ شِهَابٍ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ اَنَّ الْيَهُوْدَ قَالُوْا لِعُمَرَ عَلَيْهِ السَّلَامُ  اِنَّكُمْ تَقْرَءُوْنَ اٰيَةً لَوْ اُنْزِلَتْ فِيْنَا لَاتَّـخَذْنَا ذٰلِكَ الْيَوْمَ عِيْدًا‏.‏ فَقَالَ حَضْرَتْ عُمَرُ عَلَيْهِ السَّلَامُ اِنِّـيْ لَاَعْلَمُ حَيْثُ اُنْزِلَتْ وَاَىُّ يَوْمٍ اُنْزِلَتْ وَاَيْنَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَيْثُ اُنْزِلَتْ اُنْزِلَتْ بِعَرَفَةَ وَرَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَاقِفٌ بِعَرَفَةَ.

অর্থ : “হযরত তারিক ইবনে শিহাব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইয়াহূদী লোকেরা সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে বললো, আপনারা এমন একটি আয়াত শরীফ তিলাওয়াত করে থাকেন তা যদি আমাদের সম্পর্কে নাযিল হতো, তবে এ দিনটিকে আমরা খুশির দিন হিসাবে গ্রহণ করতাম। 

সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আমি জানি, ওই আয়াত শরীফ খানা কখন (কোথায়) ও কোন দিন নাযিল হয়েছিল। আর যখন তা নাযিল হয়েছিল তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কোথায় অবস্থান মুবারক করছিলেন (তাও জানি)। পবিত্র আয়াত শরীফ খানা আরাফা উনার দিন নাযিল হয়েছে; নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তখন আরাফা উনার ময়দানেই অবস্থান মুবারক করছিলেন।” (মুসলিম শরীফ : কিতাবুত তাফসীর : হাদীছ শরীফ নং ৭২৪৪, নাসাঈ শরীফ শরীফ : কিতাবুল হজ্জ : হাদীছ শরীফ নং ৩০০২, মুসনাদে আহমদ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১৯০)

৩. পবিত্র আইয়ামে তাশরীক উনার দিন মুসলমানদের জন্য ঈদের দিন।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ‏ اِنَّ يَوْمَ عَرَفَةَ وَيَوْمَ النَّحْرِ وَاَيَّامَ التَّشْرِيْقِ عِيْدُنَا اَهْلَ الْاِسْلَامِ

অর্থ : “হযরত উক্ববা ইবনে আমির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আরাফা উনার দিন, নহর বা কুরবানীর দিন এবং আইয়্যামে তাশরীক (অর্থাৎ ১১, ১২ ও ১৩ যিলহজ্জ শরীফ) আমাদের মুসলমানদের জন্য ঈদের দিন।” (নাসাঈ শরীফ : কিতাবুল হজ্জ : হাদীছ শরীফ নং ৩০০৪, আবূ দাঊদ শরীফ : কিতাবুস সিয়াম, হাদীছ শরীফ নং ২৪১৯, তিরমিযী শরীফ : কিতাবুস সিয়াম : হাদীছ শরীফ নং ৭৭৩)

৪. পবিত্র ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ মুসলমান উনাদের জন্য ঈদের দিন।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

لِكُلِّ مُؤْمِنٍ فِيْ كُلِّ شَهْرٍ اَرْبَعَةُ اَعْيَادٍ اَوْ خَـمْسَةُ اَعْيَادٍ

অর্থ : “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মু’মিন মুসলমানদের প্রতি মাসে চারটি অথবা পাঁচটি ঈদ রয়েছে। অর্থাৎ প্রতিমাসে চারটি অথবা পাঁচটি ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ হয়ে থাকে।” (কিফায়া শরহে হিদায়া ২য় খ- : বাবু ছলাতিল ঈদাইন, হাশিয়ায়ে লখনবী আলাল হিদায়া)




৫. রোযাদারদের জন্য ইফতারের সময় ঈদের সময়।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِـيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ‏ كُلُّ عَمَلِ ابْنِ اٰدَمَ يُضَاعَفُ الْـحَسَنَةُ بِعَشْرِ اَمْثَالِـهَا اِلٰى سَبْعِ مِائَةِ ضِعْفٍ اِلٰى مَا شَاءَ اللهُ يَقُوْلُ اللهُ اِلَّا الصَّوْمَ فَاِنَّهٗ لِيْ وَاَنَا اَجْزِيْ بِهٖ يَدَعُ شَهْوَتَهٗ وَطَعَامَهٗ مِنْ اَجْلِيْ لِلصَّائِمِ فَرْحَتَانِ فَرْحَةٌ عِنْدَ فِطْرِهٖ وَفَرْحَةٌ عِنْدَ لِقَاءِ رَبّهٖ وَلَـخُلُوْفُ فَمِ الصَّائِمِ اَطْيَبُ عِنْدَ اللهِ مِنْ رِيْحِ الْمِسْكِ‏.‏

অর্থ : “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আদম সন্তানের প্রতিটি আমল মহান আল্লাহ পাক উনার মুবারক ইচ্ছা অনুযায়ী দশগুণ হতে সাতশত গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। তবে রোযা ব্যতীত। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, রোযা আমার জন্য। আমি স্বয়ং রোযার প্রতিদান দিবো। বান্দারা আমার জন্য তাদের নফসানিয়ত ও পানাহার তরক করেছে। রোযাদারের জন্য দুটি ঈদ বা খুশি। একটি হলো তার প্রতিদিন ইফতারের সময়। আর অন্যটি হলো মহান আল্লাহ পাক উনার সাক্ষাতের সময়।” (বুখারী শরীফ : কিতাবুস সাওম; মুসলিম শরীফ : কিতাবুস সাওম : হাদীছ শরীফ নং ১১৫৩; ইবনে মাজাহ শরীফ : কিতাবুস সাওম : হাদীছ শরীফ নং ১৬৩৮; মিশকাত শরীফ, সুনানে নাসাঈ শরীফ : কিতাবুস সাওম : হাদীছ শরীফ নং ২২১৫)

উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রোযাদারদের জন্য দুটি ঈদ বা খুশির কথা বলা হয়েছে। একটি রোযাদারের ইন্তিকালের পর মহান আল্লাহ পাক উনার সাক্ষাত। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে ইফতার করার সময়।

ইফতার দুই প্রকার-

(১) ইফতারে কুবরা ও (২) ইফতারে ছুগরা।

ইফতারে কুবরা হচ্ছে, ঈদুল ফিতর যা হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত। আর ছুগরা হচ্ছে, প্রতিদিন মাগরিবের ওয়াক্তে।

এটি প্রতি বছর ২৯ বা ৩০ দিন হয়ে থাকে। এছাড়া সুন্নত রোযা হিসাবে আরো রোযা রয়েছে, যেমন-

শাওওয়াল শরীফ মাসে ৬টি রোযা।

যিলহজ্জ শরীফ মাস উনার ১ তারিখ হতে ৯ তারিখ পর্যন্ত ৯টি রোযা।

এবং রমাদ্বান শরীফ, শাওওয়াল শরীফ ও যিলহজ্জ শরীফ ব্যতীত বাকি ৯ মাসে ৩টি করে সুন্নত রোযা, মোট ২৭টি রোযা।

এই রোযাদারদের প্রতিটি ইফতার হলো ঈদ। সুবহানাল্লাহ্!

রমাদ্বান শরীফ, শাওওয়াল শরীফ ও যিলহজ্জ শরীফ ব্যতীত বাকি ৯ মাসে ৩টি করে রোযা রাখা সুন্নত। এই রোযা রাখার কারণে নি¤েœাক্ত দিবসগুলো উক্ত ২৭টি দিবসের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।

আশূরা শরীফ (আগে/পরে ১টি রোযা) বছরে ২ দিন মোট ৫ দিন

পহেলা রজবুল হারাম শরীফ (১টি রোযা) বছরে ১ দিন

লাইলাতুল মি’রাজ/২৭শে রজব শরীফ (১টি রোযা) বছরে ১ দিন

শবে বরাত/১৫ই শা’বান শরীফ (১টি রোযা) বছরে ১ দিন


বছরে ঈদের সংখ্যা নিচের সারণীতে উল্লেখ করা হলো-

ক্রম ঈদের দিবস বিবরণ সংখ্যা

ইয়াওমুল জুমুআ বছরে ৫০ সপ্তাহ ৫০

ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ বছরে ৫০ সপ্তাহ ৫০

ইয়াওমুল আরাফা (৯ যিলহজ্জ শরীফ) বছরে ১ দিন

পবিত্র ঈদুল ফিতর (১ শাওওয়াল শরীফ) বছরে ১ দিন

পবিত্র ঈদুল আদ্বহা (১০ যিলহজ্জ শরীফ) বছরে ১ দিন

আইয়ামে তাশরীক (১১-১৩ যিলহজ্জ শরীফ) বছরে ৩ দিন

রমাদ্বান শরীফ মাস (১ মাস রোযা) বছরে ১ মাস ২৯/৩০

শাওওয়াল শরীফ মাস (৬টি রোযা) বছরে ৬ দিন

যিলহজ্জ শরীফ মাসের ১ম ৯ দিনের রোযা* বছরে ৮ দিন

১০ বাকি ৯ মাসে ৩টি করে রোযা বছরে ২৭ দিন ২৭

মোট : ১৭৬/১৭৭

* যিলহজ্জ শরীফ মাসের ১ম ৯ দিনের মধ্যে ইয়াওমুল আরাফা অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এখানে ৮ দিন ধরা হয়েছে।


সুতরাং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারাই ১৭৬/১৭৭টি ঈদ প্রমাণিত হলো। তাই দুই ঈদ ব্যতীত আর ঈদ নেই, এ ধরনের কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং পবিত্র কুরআন শরীফ- পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনার খিলাফ ও কুফরীমূলক।

উপসংহার :

সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক মুসলমানদের জন্য বছরে ঈদের সংখ্যা কমপক্ষে ১৭৬টি। তাই মুসলমাদের জন্য ঈদের সংখ্যা ২টির মধ্যে সীমাবদ্ধ করে দেয়া পবিত্র হাদীছ শরীফ অস্বীকারের নামান্তর।

অর্থাৎ ওহীয়ে গাইরে মাতলু অস্বীকার করার কারণে কুফরীর শামীল। আর যারা এই কুফরী করছে ও কুফরী কাজের জন্য ওয়াসওয়াসা দিচ্ছে তারা মূলত চরম গুমরাহ ও মূর্খ। সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার ব্যাপারে তাদের জ্ঞান একেবারেই শূণ্যের কোটায়। তদুপরি তারা হচ্ছে চরম চক্রান্তকারী, ইয়াহুদী-নাছারাদের এজেন্ট বা চর এবং সর্বোপরি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিদ্বেষী।


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের ভ্রান্ত আক্বীদা ও তার খন্ডন মূলক দাঁতভাঙ্গা জবাব

সম্মানিত পাঠক! প্রচলিত ৬ উছূলভিত্তিক তাবলীগ জামায়াতের বাস্তবতা সম্পর্কে যদি সত্যিই জানতে আগ্রহী হন তবে দলিল ভিত্তিক এই প্রতিবেদনটি পড়ুন। ========================================================== ভ্রান্ত আক্বীদা (১)   প্রচলিত ৬ উছূলভিত্তিক তাবলীগ জামায়াতের লোকদের লিখিত কিতাবে এ কথা উল্লেখ আছে যে, মূর্খ হোক, আলিম হোক, ধনী হোক, দরিদ্র হোক, সকল পেশার সকল মুসলমানের জন্য তাবলীগ করা ফরজে আইন। (হযরতজীর মালফুজাত-৪, পৃষ্ঠা-৭, অনুবাদক- মাওলানা ছাখাওয়াত উল্লাহ; তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব, পৃষ্ঠা-৫৬, অনুবাদক- ইসমাঈল হোসেন; তাবলীগে ইসলাম, পৃষ্ঠা-৩, লেখক- মাওলানা আব্দুস সাত্তার ত্রিশালী; পস্তী কা ওয়াহিদ এলাজ, লেখক- মাওলানা এহ্‌তেশামুল হাসান কান্দলবী, পৃষ্ঠা-২২) ——————————————————————————— জবাব : তাদের উপরোক্ত বক্তব্যের প্রেক্ষিতে প্রশ্ন জাগে, তাবলীগ করা কি- ফরজে আইন নাকি ফরজে কিফায়া? কেননা- যে ইবাদত প্রত্যেকের জন্য আলাদাভাবে পালন করা ফরজ তা  ফরজে আইন । যেমন- নামাজ, রোজা, ইত্যাদি। আর যে ইবাদত সমষ্টিগতভাবে পালন করা ফরজ অর্থাৎ যে ফরজ কাজ দেশবাসী, শহরবাসী,এলাকাবাসী বা কোন সম্

*Coca-cola is Haram for Muslim

Because Coca-Cola and Other Soft Drinks may Contain ALCOHOL. Read Details here:~~~~ COCA-COLA: THE REAL THINGS? The proportions in the accompanying recipe are based on the analyses of Coke quoted above and Merory's recipes. The amount of caffeine agrees with that stated in Coca-Cola's So you asked about soft drinks... pamphlet; this is about a third of the caffeine found in the trial analyses. The following recipe produces a gallon of syrup very similar to Coca-Cola's. Mix 2,400 grams of sugar with just enough water to dissolve (high-fructose corn syrup may be substituted for half the sugar). Add 36 grams of caramel, 3.1 grams of caffeine, and 11 grams of phosphoric acid. Extract the cocaine from 1.1 grams of coca leaf ( Truxillo growth of coca preferred) with toluol; discard the cocaine extract. Soak the coca leaves and kola nuts (both finely powdered; 0.37 gram of kola nuts) in 22 grams of 20 percent alcohol. California white wine fortified to 20 percent strengt

TABLEEGHI KUFRI AQEEDA--Exposed!!!

THE AQEEDA OF THE TABLEEGHI JAMAAT AND DEOBAND—EXPOSED!!! ===================================================== To have good and strong Imaan, one must have the proper Aqeeda. It is for this reason that we quote a few un-Islamic beliefs of the leaders of the Tableeghi Jamaat together with the proper Islamic answers. The present Molvis and devotees of the T. Jamaat refuse to condemn the persons who wrote such bad beliefs and to even disassociate themselves from such false beliefs. The un-Islamic beliefs which we have quoted below are quotations from those individuals who possess such beliefs and by writing them in this handbill, we have no intention of Kufr. FALSE BELIEF 1: “Allah can speak lies“. (“Barahine Qaatia” by Khaleel Ambetwi; “Yakrozi” by Ismaeel Dehlwi; “Fatawa Rasheedia” by Rasheed Ahmed Gangohi). NAUZ BILLAH ANSWER: Lies is a defect which is not worthy of the Zaat of Almighty Allah and is totally Muhaal (Impossible) for Almighty Allah. Allah is free from all shortages a