৮ই যিলক্বদ শরীফ ‘বিশ্ব পর্দা দিবস’। এ দিনেই প্রথম পর্দার আয়াত শরীফ নাযিল হয়। পবিত্র সুরা আহযাব শরীফ উনার ৫৩ তম আয়াত শরীফ নায়িল হওয়ার মাধ্যমে পর্দা ফরয হয়।
প্রথম পর্দার বিধান জারী করা হয় ৫ম হিজরীতে। তখন হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ইবনে হযরত উম্মু সুলাইম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ১৫ বৎসরের যুবক, উনার সামনে প্রথম পর্দার আয়াত নাযিল হয়।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَدْخُلُوا بُيُوتَ النَّبِيِّ...الخ
অর্থ: হে ঈমানদারগণ! তোমরা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাপবিত্রতম হুজরা শরীফে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করোনা....।
হযরত আনাস রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, "আমাদের নবী হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত যয়নব বিনতে জাহাশ আলাইহাস সালাম উনাদের নিসবতে আযীম শরীফের (নিকাহ মুবারক ) পর ওলীমা স্বরুপ কিছু রুটি, গোশত এবং হারিছার ব্যবস্থা করা হয়। আমাকে, লোকদেরকে খাওয়ার জন্যে ডেকে আনতে পাঠানো হয়। তারপর একদল লোক এসে খেয়ে চলে গেল। তারপর আর একদল লোক এসে খেয়ে চলে গেল। এভাবে চলতে থাকলে পুনরায় ডেকে আর কাউকে পেলামনা।
তখন তিনি বললেন, খাবার উঠিয়ে রেখে দাও। কিন্তু তখনও তিন ব্যক্তি ঘরে বসে গল্প করছিল। তা দেখে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বের হয়ে উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার হুজরা শরীফে গেলেন এবং বললেন, আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল বাইতি ওয়া রাহমাতুল্লাহ"। উত্তরে হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন" ওয়া আলাইকাস সালামু ওয়া রাহমাতুল্লাহি" আপনার নতুন (উম্মুল মু’মিনীন) কেমন পেলেন?
এভাবে তিনি পর পর সব (উম্মুল মু’মিনীন) আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের হুজরা শরীফে গেলেন এবং হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনাকে যা বললেন, সকলকে তাই বললেন, উনারাও একই উত্তর দিলেন, যা হযরত ছিদ্দিক্বা আলাইহাস সালাম বলেছিলেন। পুনরায় হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেই তিন ব্যাক্তিকে কথাবার্তায় রত দেখতে পেলেন তিনি খুবই লাজুক প্রকৃতির ছিলেন, তাই তিনি আবারও হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার হুজরা শরীফে ফিরে গেলেন।
অতঃপর আমি লোকদের চলে যাওয়ার খবর হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দিলে তিনি ফিরে আসেন। দরজার চৌকাঠে এক পা এবং বাইরে এক পা রাখা অবস্থায় উনার এবং আমার মাঝখানে পর্দা টেনে দেন। আর এই সময়ই পর্দার আয়াত শরীফ নাযিল হয়।
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَدْخُلُوا بُيُوتَ النَّبِيِّ إِلَّا أَن يُؤْذَنَ لَكُمْ إِلَىٰ طَعَامٍ غَيْرَ نَاظِرِينَ إِنَاهُ وَلَـٰكِنْ إِذَا دُعِيتُمْ فَادْخُلُوا فَإِذَا طَعِمْتُمْ فَانتَشِرُوا وَلَا مُسْتَأْنِسِينَ لِحَدِيثٍ ۚ إِنَّ ذَٰلِكُمْ كَانَ يُؤْذِي النَّبِيَّ فَيَسْتَحْيِي مِنكُمْ ۖ وَاللَّـهُ لَا يَسْتَحْيِي مِنَ الْحَقِّ ۚ وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِن وَرَاءِ حِجَابٍ ۚ ذَٰلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِنَّ ۚوَمَا كَانَ لَكُمْ أَن تُؤْذُوا رَسُولَ اللَّـهِ وَلَا أَن تَنكِحُوا أَزْوَاجَهُ مِن بَعْدِهِ أَبَدًا ۚ إِنَّ ذَٰلِكُمْ كَانَ عِندَ اللَّـهِ عَظِيمًا
অর্থ: ওহে ঈমানদারগণ! তোমরা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হুজরা শরীফে প্রবেশ করো না, তোমাদের খানাপিনার জন্য অনুমতি না দেওয়া হলে। রান্নাবান্না শেষ হবার অপেক্ষা না করে, বরং যখন তোমাদের ডাকা হয় তখন তোমরা প্রবেশ করো, তারপর যখন তোমরা খেয়ে নিয়েছ তখন চলে যেও, এবং গড়িমসি করো না বাক্যালাপের জন্য। নিঃসন্দেহ এইসব হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কষ্ট দিয়ে থাকে, অথচ তিনি সংকোচ বোধ করেন তোমাদের জন্য, কিন্তু মহান আল্লাহ পাক তিনি সত্য সন্বন্ধে সংকোচ করেন না। আর যখন তোমরা তাদের কাছে কোনো-কিছু চাও তখন পর্দার আড়াল থেকে তাদের কাছে চাইবে। এটিই অধিকতর পবিত্র তোমাদের ন্তরের জন্য এবং তাদের ন্তরের জন্যেও। এটি তোমাদের জন্য নয় যে তোমার হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উত্ত্যক্ত করবে, আর এটিও নয় যে তার পরে তোমরা কখনো হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মা ব্যাতিত অন্য কিছু ভেবে গ্রহণ করবে। নিঃসন্দেহে এটি আল্লাহর কাছে গুরুতর ব্যাপার! (সুরা আহযাব শরীফ : ৫৩)
উল্লেখ্য হযরতুল আল্লামা ইবনে কাসীর রহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং ছাহিবে “নায়লুল আওতার” রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনারাসহ অসংখ্য ফকীহ ও আলিমগণ একমত, ৫ম হিজরীতে (৬২৭ খ্রিস্টাব্দে) পবিত্র ৮ই যিলক্বদ শরীফ পর্দা ফরয হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!!
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন