সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

উশরযোগ্য ফল-ফসলের বিধান


উশর কি? 

পবিত্র ‘উশর’ শব্দটি আরবী আশরাতুন (দশ) শব্দ হতে উৎসরিত বা উৎকলিত হয়েছে। উনার আভিধানিক বা শাব্দিক অর্থ হলেন এক দশমাংশ। আর সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার পরিভাষায় কৃষিজাত পণ্য- ফল ও ফসলের পবিত্র যাকাত উনাকে পবিত্র উশর বলে। এক কথায়, উৎপাদিত ফল ফসলের যাকাতই হচ্ছেন পবিত্র উশর।

পবিত্র উশর সম্পর্কে পবিত্র কুরআন শরীফ থেকে দলীলঃ

পবিত্র উশর সম্পর্কে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার একাধিক পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে। মহান আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তায়ালা তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-


وانفقوا من طيبات ماكسبتم ومـما اخرجنا لكم من الارض.

অর্থ : “তোমরা তোমাদের উপার্জিত হালাল সম্পদ হতে এবং যা আমি তোমাদের জন্য যমীন হতে উৎপন্ন করিয়েছি তা হতে দান করো।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৬৭)


তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

 واتوا حقه يوم حصاده

অর্থ : “ফসল কাটার সময় তার হক (পবিত্র উশর) আদায় করো।” (পবিত্র সূরা আনআম শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৪১)


উশর সম্পর্কে পবিত্র হাদিস শরীফে যা বর্ণিত রয়েছে: 

এ প্রসঙ্গে অনেক হাদিস শরীফ পাওয়া যায়। তার মধ্যে ২টি পবিত্র হাদীছ শরীফ উল্লেখ করা হলো -

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে পবিত্র উশর সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে-


عن حضرت عبد الله بن عمر رضى الله تعالى عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم قال فيما سقت السماء والعيون او كان عثريا العشر وما سقى بالنضح نصف العشر.

অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যাতে অর্থাৎ যে যমীনকে আসমান অথবা প্রবাহমান কূপ পানি দান করে অথবা যা নালা দ্বারা সিক্ত হয়, তাতে উশর অর্থাৎ দশ ভাগের এক ভাগ আর যা সেচ দ্বারা সিক্ত হয়, তাতে অর্ধ উশর অর্থাৎ বিশ ভাগের এক ভাগ।

(পবিত্র বুখারী শরীফ)


عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِىْ الْعَسَلِ فِىْ كُلِّ عَشَرَةِ اَزُقٍّ زِقٌّ.‏

অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, প্রতি দশ মশক মধুর জন্যে এক মশক যাকাত ধার্য হবে। ” 

(তিরমিযী শরীফ : কিতাবুয যাকাত : বাবু মাযাআ ফী যাকাতিল ‘আসাল : হাদীছ শরীফ নং ৬২৯)


অন্য এক পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ اَبِيْهِ عَنْ جَدِّهٖ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَنَّهٗ اَخَذَ مِنْ الْعَسَلِ اَلْعُشْرَ.

অর্থ : “হযরত আমর বিন শুয়াইব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার পিতা থেকে উনার পিতা উনার দাদা আবদুল্লাহ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মধু থেকে এক-দশমাংশ (উশর) গ্রহণ করেছেন। ” 

(ইবনে মাজাহ শরীফ : কিতাবুয যাকাত : বাবু যাকাতিল ‘আসাল : হাদীছ শরীফ নং ১৮২৪)


উশর সম্পর্কে সম্মানিত হানাফী মাযহাব উনার ফতওয়া: 

হযরত ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, যমীনে উৎপন্ন যাবতীয় ফসলেরই উশর অথবা নিছফু উশর দিতে হবে। চাই দীর্ঘস্থায়ী শস্য যেমন- খেজুর, আম, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা ইত্যাদি ফলফলাদি হোক অথবা ক্ষণস্থায়ী শস্য যেমন- ধান, গম, সরিষা, কলা, পেঁপে, শাক-সবজি ইত্যাদি যেটাই হোক। তিনি আরো বলেন, ফসল কম-বেশি যাই হোক না কেন, তার উশর বা নিছফে উশর অবশ্যই আদায় করতেই হবে। অনুরূপ মধুরও উশর বা সম্মানিত যাকাত আদায় করতে হবে।


উশর কে দিবেন : 

যিনি বা যারা ফসলের মালিক হবেন তিনি বা উনারাই উশর প্রদান করবেন।


উশর কতটুকু দিবেন : 

সম্মানিত হানাফী মাযহাব মতে, উশর উনার কোন নিছাব নেই। বিনা পরিশ্রমে যমীন থেকে উৎপাদিত ফসল ও ফল-ফলাদির ১০ ভাগের ১ ভাগ বা তার মূল্য দান করে দিতে হবে। আর পরিশ্রম করে ফসল বা ফল ফলাদি ফলানো হলে তখন ২০ ভাগের ১ ভাগ বা তার মূল্য দান করে দিতে হবে।

ধান, চাল, গম ইত্যাদি ব্যতীত ফল-ফলাদির ১০টির ১টি বা ২০টির ১টি দিতে হবে। আর যদি ৫টি হয় তবে একটার অর্ধেক দিতে হবে অথবা সমপরিমাণ মূল্য দিতে হবে।

উদাহরণ : 

কারো যমীনে পরিশ্রমের মাধ্যমে ৫০ মণ ধান উৎপন্ন হলো তিনি নিছফু উশর অর্থাৎ বিশ ভাগের ১ ভাগ পবিত্র উশর প্রদান করবেন, অর্থাৎ আড়াই মণ ধান দান করবেন। আর যদি বিনা পরিশ্রমে উৎপন্ন হয় তাহলে পবিত্র উশর তথা দশ ভাগের একভাগ ধান দান করবেন, অর্থাৎ ৫ মণ ধান পবিত্র উশর হিসেবে আদায় করবেন।


উশর কখন দিবেন : 

উশর আদায়ের নির্দিষ্ট কোন সময় নেই। যতোবারই ফসল উৎপন্ন হবে ততোবারই ফসলের উশর দিতে হবে।


উশর ব্যয়ের খাতসমূহ : 

যে খাতে বা স্থানে সম্মানিত যাকাত ব্যয় করা যায়, সে খাত বা স্থানেই উশর ব্যয় করতে হবে।


উশর আদায়ের হুকুম : 

উশর আদায় করা সম্মানিত যাকাত উনার মতই ফরয। কেউ যদি উশর আদায় না করে তাহলে সে ফরয অনাদায়ের গুনাহে গুনাহগার হবে।


কর ও খাজনা প্রদানকৃত যমীনের ফসলে উশর দেয়ার হুকুম: 

কর ও খাজনা প্রদানকৃত যমীনের ফসলেরও উশর আদায় করতে হবে। কেননা কর ও খাজনা দেয়া হয় সরকারি খাতে জমি সংরক্ষণ, জরিপ ও দেখাশুনা করার জন্য। অনেক জমিতে ফসল না হলেও খাজনা দিতে হয়। আবার পূর্ব যামানায় জমিতে খাজনাও দিতে হতো না। অতএব, কর ও খাজনা প্রদানকৃত যমীনের ফসলেরও উশর আদায় করতে হবে, যা ফরযের অন্তর্ভুক্ত। স্মরণ রাখতে হবে, সম্মানিত যাকাত হলো ফরয ইবাদত। যা মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের কর্তৃক ফরয করা হয়েছে। সম্মানিত যাকাত উনার সাথে কর ও খাজনার কোন সম্পর্ক নেই। উল্লেখ্য, কর ও খাজনা মানুষ কর্তৃক অর্থাৎ সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হয়।


উশর দিলে কি হয়? 

সম্মানিত যাকাত দিলে যেমন সম্পদ বৃদ্ধি পায় এবং পবিত্র হয়, ঠিক তেমনি উশর আদায় করলেও ফসল, ফল-ফলাদিতে বরকত হয় বা বৃদ্ধি পায় ও পবিত্র হয়। সাথে সাথে বিভিন্ন প্রকার দুর্যোগ যেমন- ঝড়-তুফান, বন্যা-খরা, পোকা-মাকড়ের আক্রমণ, প্রাকৃতিক দূর্যোগ ইত্যাদি থেকেও ফসল ও ফল-ফলাদি হিফাযত হয়। সুবহানাল্লাহ!


উশর না দিলে কি হয়? 

যাকাত ফরজ হওয়ার পর যদি কেউ যাকাত না দেয় তার মাল সম্পদ যেরূপ হারাম হয়ে যায়, তদ্রুপ ফল ফসল উৎপাদনের পর তার হক (ওশর) আদায় না করলে সেটা ভক্ষণ করা বা সেটা বিক্রয় লব্ধ উপার্জন হারাম হয়ে যায়। আর হারাম খেলে কোনো ইবাদত বন্দেগী কবুল হয়না। হারাম থেকে উৎপন্ন রক্ত গোস্ত কখনো জান্নাতে প্রবেশ করবেনা, অর্থাৎ সে জাহান্নামী হবে। নাউজুবিল্লাহ। 

উশর দেয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ স্থান কোথায়? 

কোথায় দিলে আপনার উশর মহান আল্লাহ পাক তিনি কবুল করবেন আর আপনার প্রাপ্য বরকত ও ফজীলত পাবেন সেটা জন্য অবশ্যই আপনাকে যাচাই বাছাই করতে হবে। যেখানে সেখানে দিয়ে দিলে সেটা কবুল নাও হতে পারে। 

উশর প্রদান করার সর্বশ্রেষ্ঠ খাত বা স্থান হচ্ছেন মুহম্মদিয়া জমিয়া শরীফ মাদরাসা ও ইয়াতিমখানা। যেখানে উদ্দেশ্যই হচ্ছে সবাইকে আল্লাহওয়ালা, আল্লাহওয়ালি হিসেবে গড়ে তোলা । শিক্ষার্থীগণ পরিপূর্ণ সুন্নত মুবারক উনার আমল করেন। এখানে কিতাবি ইলম অর্থাৎ ইলমে শরিয়ত উনার সাথে সাথে ইলমে তাসাউফও শিক্ষা দেয়া হয়। অর্থাৎ প্রত্যেক শিক্ষার্থী শুধু আলেম নন বরং হক্কানী আলেম হন, তাকওয়া-পরহেজগারি অর্জন করেন। এখানে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নেই। বেত্রাঘাত করা নিষিদ্ধ। শিক্ষার্থীদের আপনি বলে সম্বোধন করা হয়। বালক বালিকা শাখা আলাদা। খাস পর্দা পালন করা হয়। শিক্ষার্থীগণ পরিপূর্ণ দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে দাখিল হয়। 

অত্র মাদ্রাসার ঠিকানা: ৫ আউটার সার্কুলার রোড, রাজারবাগ শরীফ, ঢাকা ১২১৭। 

Website: ahkamuzzakat.net, al-ihsan.net, sunnat.info, SM40.com 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

*Coca-cola is Haram for Muslim

Because Coca-Cola and Other Soft Drinks may Contain ALCOHOL. Read Details here:~~~~ COCA-COLA: THE REAL THINGS? The proportions in the accompanying recipe are based on the analyses of Coke quoted above and Merory's recipes. The amount of caffeine agrees with that stated in Coca-Cola's So you asked about soft drinks... pamphlet; this is about a third of the caffeine found in the trial analyses. The following recipe produces a gallon of syrup very similar to Coca-Cola's. Mix 2,400 grams of sugar with just enough water to dissolve (high-fructose corn syrup may be substituted for half the sugar). Add 36 grams of caramel, 3.1 grams of caffeine, and 11 grams of phosphoric acid. Extract the cocaine from 1.1 grams of coca leaf ( Truxillo growth of coca preferred) with toluol; discard the cocaine extract. Soak the coca leaves and kola nuts (both finely powdered; 0.37 gram of kola nuts) in 22 grams of 20 percent alcohol. California white wine fortified to 20 percent strengt...

যে সকল শব্দ মুসলমানদের ব্যবহার করা উচিত নয়

শব্দ ব্যবহারের কুচিন্তায় যোগসাধনের ষড়যন্ত্র ইহুদী খ্রিস্টানদের ঐতিহ্যগত প্রবৃত্তি। স্বয়ং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সময়ও ইহুদী খ্রিস্টানদের এরূপ ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার ছিল। কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা রঈনা বলো না উনজুরনা বলো এবং শ্রবণ কর (বা শুনতে থাক) আর কাফিরদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।” (সূরা বাক্বারা ১০৪) আয়াতের শানে নযুলে বলা হয়েছে, ইহুদীরা রসুলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কষ্ট দেবার জন্য ‘রঈনা’ শব্দ ব্যবহার করত, যার একাধিক অর্থ। একটি অর্থ হল ‘আমাদের দিকে লক্ষ্য করুন’ যা ভাল অর্থে ব্যবহার হয় আর খারাপ অর্থ হল ‘হে মূর্খ, হে মেষ শাবক’ এবং হিব্রু ভাষায় একটি বদদোয়া। ইহুদীরা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রঈনা বলে সম্বোধন করত। যাতে প্রকৃতপক্ষে তাদের উদ্দেশ্য ছিল খারাপ অর্থের প্রতি ইঙ্গিত করা। আর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ ‘রঈনা’ শব্দের ভাল অর্থের প্রতি ইঙ্গিত করে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করলে ইহুদীরা খারাপ অর্থ চিন্তা করে হাসাহাসি করত। এতে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলা...