‘এনথ্র্যাক্স’ নাম গ্রিক শব্দ থেকে উত্তপত্তি। যার অর্থ কয়লা। কারণ এনথ্র্যাক্স রোগীর চামড়ায় যে ক্ষত হয় তা কালো ছাইয়ের মতো দেখায়। বিংশ শতাব্দীর আগে ইউরোপ, এশিয়া, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ ভিয়েতনামে প্রতি বছর হাজার হাজার প্রাণী ও মানুষ এই রোগে মৃত্যুবরণ করেছে, এর মধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ঘনবসতিপূর্ণ ক্যাম্প ও উত্তর আমেরিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
এনথ্রাক্স বা তড়কা রোগের ইতিহাস অনেক পুরনো। খ্রিস্টাপূর্ব ১৪৯১ সালেও মিসরে এ রোগের প্রকোপ ছিল বলে জানা যায়। শুধু মিসর নয়, গ্রিস, রোম এমনকি ভারতবর্ষেও এ রোগের প্রকোপ ছিল। সপ্তদশ শতাব্দীর শুরুতে ইউরোপে এ রোগ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছিল। ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে আমেরিকায় ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়ার রেকর্ড রয়েছে। এমনকি মাত্র তিন দশক আগে ১৯৭৮-৮০ সালে জিম্বাবুয়েতে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছিল। এতে শুধু পশু নয়, প্রায় দশ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়। মারা যায় প্রায় ১৫১ জন।
এ রোগের জন্য দায়ী ব্যাসিলাস এথ্যাসিস নামের এক ধরনের ব্যাক্টেরিয়া। এই ব্যাক্টোরিয়া বিশেষ ধরনের কিছু টক্সিন বা বিষ তৈরি করতে পারে। এ টক্সিন প্রাণীদেহে প্রবেশের দুই থেকে চার ঘণ্টার মধ্যে প্রাণীদেহের নিউট্রোফিলকে দুর্বল করে ফেলে। নিউট্রোফিল হচ্ছে এক ধরনের শ্বেতকণিকা যা বাইরে জীবাণুর আক্রমণ করে দেহকে রক্ষা করে। টক্সিন নিউট্রোফিলের ফিলামেন্ট তৈরিতে বাধা দেয়, ফলে নিউট্রোফিল চলৎ-শক্তি হারিয়ে ফেলে। আক্রান্ত ক্ষত স্থানে যেতে পারে না, ব্যাক্টোরিয়াকে ধ্বংসও করতে পারে না।
নিউট্রোফিল নিষ্ক্রিয় হওয়ায় ব্যাক্টোরিয়া বাধাহীনভাবে দ্রুত দেহে ছড়িয়ে পড়ে এবং রোগ তৈরি করে মৃত্যু ঘটায়।
এনথ্র্যাক্স জীবাণু আবিষ্কারের পর শুরু হয় একে অস্ত্র হিসেবে যুদ্ধে ব্যবহার করার মহাপরিকল্পনা। ১৯৩০ সালে প্রথম জাপানের মানুচরিয়ার জাপানিজ কোয়ান্টাং আর্মি যুদ্ধে বন্দিদের উপর এটি প্রয়োগ করে হাজার হাজার বন্দিকে মেরে ফেলা হয়। এরপর থেকে একে যুদ্ধকালীন জীবাণু অস্ত্র হিসেবে আমেরিকা, ইংল্যান্ড, জার্মানি, রাশিয়া, ফিনল্যান্ড প্রভৃতি দেশ বিভিন্ন নামে (যেমন, এন এজেন্ট, এন বোমড) ব্যবহার করতে থাকে। এছাড়াও ১৯৪৪ সালে পঞ্চাশ লাখ ক্যাটল কেকসকে এনথ্র্যাক্স জীবাণূর স্পোর সম্পৃক্ত করে তা ‘অপারেশন ভেজেটরিয়ান’ নামে এন্টি লাইভস্টোক ইউপনস হিসেবে জার্মানিতে নিক্ষেপ করার জন্য রয়েল এয়ার ফোর্স জমা করে রাখে। কিন' তা শেষ পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়নি এবং ১৯৪৫ সালে তা সম্পূর্ণভাবে পুড়িয়ে ফেলা হয়।
১৯৭৮-৭৯ সালে রোডেশিয়ার কালো জাতীয়তাবাদীদের বিরুদ্ধেও রোডেশিয়ার সরকার এনথ্র্যাক্স জীবাণু অস্ত্র ব্যবহার করেছিলো। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নিক্সন ১৯৬৯ সালে আমেরিকার জীবাণু অস্ত্র প্রোগ্রাম দৃশ্যত বাতিল ঘোষণা করে এবং ১৯৭১-৭২ সালে সব এনথ্র্যাক্স বায়োইউপনসের সংগ্রহশালা ধ্বংস করে ফেলা হয় বলে প্রচারনা চালানো হয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন ১০০ থেকে ২০০ টন এনথ্র্যাক্সের স্পোর জমা করে রেখেছিলো ভোজরোধেনিয়া দ্বীপের কান্টুবেকে। ১৯৯২ সালে তা পরিত্যাক্ত ঘোষণা করা হয় এবং ২০০২ সালে ধ্বংস করা হয়। ১৯৭২ সালে বায়োউনপনস চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পরও এর ব্যবহার পুরোপুরি শেষ হয়ে যায়নি, কনসেন্ট্রেটেড এনথ্র্যাক্সের স্পোর ২০০১ সালে আমেরিকাতে পোস্টাল চিঠির মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয়। (এর উদ্দেশ্য ছিলো মুসলমানদেরকে দায়ী করে ষড়যন্ত্রের নয়া জাল বিস্তার করা) ধারণা করা হয়, ডা. ব্রুস আইভিস এর জন্য দায়ী। এরপর থেকে আমেরিকার পোস্টাল সার্ভিসে এনথ্র্যাক্স শনাক্তকারী স্ক্যানার বসানো হয়।
জীবাণু অস্ত্র হিসেবে এনথ্রাক্স স্পোবের ব্যবহার ২০০১ সালে আমেরিকায় বেশ আলোড়ন তুলেছিল।
জেবসন্ত্রাসের এজেন্ট হিসেবে এনথ্রাক্স নিয়ে বেশ আলোচনা হয় ২০০১ সালে আমেরিকায়। ডাকের মাধ্যমে চিঠিতে এনথ্রাক্স জীবাণু মিশ্রিত পাউডার শ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করে ২২টি অ্যানথ্রাক্স আক্রমণ ঘটেছিল।
অর্থ্যাৎ এনথ্রাক্স রোগ অনেক আগ হতেই এবং দীর্ঘদিন যাবত দুরভিসন্ধিমূলক ষড়যন্ত্রের একটি বড় বাহন হিসেবে জঙ্গি ইহুদী-খ্রিস্টানরা ব্যবহার করে আসছে।
বাংলাদেশে এনথ্রাক্স রোগ নিয়ে ষড়যন্ত্রের পত্তন ঘটানো হয় গত বছর অর্থাৎ ২০০৯ সালে। তখন নয়টি আক্রমণের কথা প্রচার করা হয়। কিন' উদ্দেশ্যমূলকভাবে এই দুরভিসন্ধিমূলক ষড়যন্ত্রের প্রকাশ হয় এ বছর কুরবানীর মাত্র দুই মাস আগে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে এদেশের সংবিধান থেকে ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহ পাক উনার প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস্থ এ বক্তব্য উঠিয়ে দেয়ার পাঁয়তারা চলছে। (নাউযুবিল্লাহ)
কিন' এরই মধ্যে পর্দা পালন তথা বোরকা পরিধানের বিরুদ্ধে আইন করা হয়েছে।
শিক্ষানীতিতে ইসলাম বৈরী মনোভাবের প্রতিফলন হয়েছে।
ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক নারীনীতি গ্রহণ করা হয়েছে।
পোশাকসহ সংস্কৃতির নামে সব কিছুতেই বলিউড নায়ক-নায়িকাদের পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসরণ-অনুকরণ করা হয়েছে।
গতবার রোযার ঈদে মুসলমানদের বাড়িতে হাই ভলিউমে বেজে উঠেছে, হরে কৃষ্ণ হরে রাম গাম। (নাউযুবিল্লাহ)
অর্থাৎ অত্যন্ত দুরভিসন্ধিমূলকভাবে এদেশের মুসলমানদের অন্তর থেকে ইসলামী অনুভূতির বিপরীতে হিন্দুয়ানী বিশ্বাস ও সংস্কৃতিতে পর্যবসিত করার পাঁয়তারা চলেছে।
এরই অংশ হিসেবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমল থেকেই জোর তৎপরতা চলছে কুরবানীর বিরুদ্ধে। তখন সিডরের নামে কুরবানীর টাকা সিডরে পাঠিয়ে দেয়ার প্রচারণা চলছে।
কিন' ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের তাতেও বিভ্রান্ত করা যায়নি।
এবারে নেয়া হয়েছে এনথ্রাক্স অস্ত্র। আগে এনথ্রাক্স জীবাণু অস্ত্র সামরিক যুদ্ধে ব্যবহার করা হতো। কিন' এবারে এনথ্রাক্স অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে মুসলমানদের বিরুদ্ধে সংস্কৃতিক যুদ্ধে। মুসলমানদের ঈমান-আমল নষ্ট করার যুদ্ধে।
সর্বোপরি মুসলমানদের মৌলিক বৈশিষ্ট ‘গরু কুরবানীর’ বিরুদ্ধে। তথা বার্ড ফ্লু’র মত ফার্মের মুরগি শিল্প নষ্ট করার পর এখন এদেশের গরু-ছাগল ব্যবসা ধ্বংস করার গভীর ষড়যন্ত্রমূলক হীন উদ্দেশ্যে।
একটু খতিয়ে দেখলে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত এখনকার খবরগুলোতে সেই বিষয়টিই প্রতিভাত হয়।
পত্রিকায় হেডিং হয়েছে,
* ‘মুরগিওয়ালার পোয়াবারো, কসাইদের মাথায় হাত।’
* ‘পাবনায় এনথ্রাক্স আতঙ্কে গরু-ছাগলের দামে ভাটা।’
* ‘গরুর গোশতের বাজারে এনথ্রাক্স আতঙ্ক : বাড়ছে মাছ মুরগির দাম।’
* ‘এনথ্রাক্স: গরু জবাই, গোশত বিক্রি কমছে।’
খবরে বলা হয়েছে, “ডিসিসি’র দেয়া তথ্যমতে, ঢাকায় প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৬ হাজার পশু জবাই হয়। এর মধ্যে ৭০০ গরু, ২৫০টি মহিষ আর ছাগল ও ভেড়া মিলিয়ে হয় বাকি ৫ হাজার। ডিসিসি’র অধীনে থাকা ৫টি জবাইখানায় জবাই হয় দেড় হাজার পশু। এনথ্রাক্স রোগ দেখা দেয়া ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে গরু জবাই কমে যাচ্ছে। প্রতিদিন এখন গড়ে ২০০টির বেশি জবাই হয় না বলে জানা গেছে। গরুর গোশতের দামও কমে গেছে। ক্রেতা কমে যাওযায় কমেছে বিক্রি। তাতে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। নগরীর কারওয়ান বাজার, শান্তিনগর বাজার, হাতিরপুল কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, কসাইয়ের দোকানের সামনে ঝুলছে গরুর রান। তাতে ওড়াউড়ি করছে মাছি ও অন্য পোকা। বিক্রেতারা জানান, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গরুর রান ঝুলিয়ে রাখলেও বিক্রি হচ্ছে না। অনেক এলাকায় এখন গরু জবাই হচ্ছে না বলেও জানা যায়।”
বলাবাহুল্য, এ অবস্থা চলতে থাকলে আগমী কুরবানী ঈদে গরু-ছাগল কুরবানী দিতে দারুন অনীহা তৈরি হতে পারে। তাতে ‘কুরবানীর পরিবর্তে টাকা দুঃস্থদের দান’ এ গুমরাহী কুফরী প্রচারণাকারীরা সুযোগ নিতে পারে।
আর তারপরেও যারা কুরবানী করবে তারা ভারতীয় গরুকে পছন্দ করবে। কুরবানীর বাজার হয়ে পড়বে ভারতীয় গরুর উপর নির্ভরশীল। দেশীয় চামড়া শিল্পেও তাতে মারাত্মক মার খাবে। বাংলাদেশের হাজার হাজার কোটি টাকা চলে যাবে সীমান্তের ওপারে।
অর্থাৎ এনথ্রাক্স জীবাণু অস্ত্রের ব্যবহার সাময়িকভাবে বন্ধ হলেও তার চেয়েও ভয়ঙ্কর মারাত্মক অস্ত্র নিয়ে আবির্ভুত হয়েছে বর্তমান এনথ্রাক্স ব্যবহারকারীরা ও প্রচারকারীরা।
এনথ্রাক্স জীবাণু অস্ত্র ব্যবহারকারীরা ইতঃপূর্বে কিছু সংখ্যক লোককে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিলো। কিন' এদেশে এবার এনথ্রাক্স ব্যবহারকারীরা-
এদেশের শতকরা ৯৫ ভাগ জনগোষ্ঠী মুসলমানদের ইসলামী অনুভূতি নষ্ট করার তথা কুরবানীর মত মৌলিক আমল বাধাগ্রস্ত করার পাশাপাশি এদেশের গরু-ছাগল ভিত্তিক অর্থনীতি এদেশের চামড়া শিল্প নষ্ট করাসহ গোটা অর্থনীতি তথা বাজারই ভারতনির্ভর করে দিতে চাইছে।
কাজেই এদেশের শতকরা ৯৫ ভাগ জনগোষ্ঠী মুসলমানদের এ হীন ও কূট ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সম্যক অবগত হতে হবে।
অতএব প্রথম যে গরুটি এনথ্রাক্সে আক্রান্ত হয়েছিলো; তার রোগটি এসেছিলো কোন গরু থেকে? ‘এনথ্রাক্স রোগ গরু থেকে গরুতে ছড়ায়’- এ তত্ত্ব পাচারকারীরা জবাব দিবেন কী? বার্ড ফ্লু’র নামে পোল্ট্রি শিল্প ধ্বংসের পর, এনথ্রাক্সের প্রচারণার পিছনে দুরভিসন্ধিটা কী? একদিকে গরু-ছাগল ধ্বংস করা অপরদিকে ইসলামের প্রতি একের পর এক ষড়যন্ত্রের পর সামনের কুরবানীকে বাধাগ্রস্ত করা। এদেশে যাতে গরু কুরবানী বন্ধ হয় সে দুরভিসন্ধি বাস্তবায়ন করা। অতএব, দেশের চৌদ্দকোটি মুসলমান! ইসলাম বিরোধীদের সব ষড়যন্ত্র থেকে সাবধান।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন