Anthrax জীবাণু:
ভূমিকা: Anthrax-জীবাণু অর্থাৎ Bacillus anthracis আমাদের পরিবেশে দুইভাবে অবস্থান করে: (১) সক্রিয় অবস্থা (active/vegetative form) এবং (২) সুপ্ত অবস্থা (spore form/inactive form)
এ দুই অবস্থার মধ্যে প্রথম অবস্থাটি আক্রান্ত প্রাণীদেহের অভ্যন্তরে থাকে এবং দ্বিতীয় অবস্থাটি (spore form) প্রাণীদেহের বাইরে এবং প্রকৃতিতে অবস্থান করে। spore form কখনোই প্রাণীদেহের অভ্যন্তরে থাকতে পারে না বা পাওয়া যায় না। কিন্তু এ spore form নিয়ে জীবাণুটি সম্পূর্ণ প্রতিকূল পরিবেশে, এমনকি Antarctica -তেও যুগ যুগ ধরে বা শতাব্দীর পর শতাব্দী বেঁচে থাকতে পারে।
আরো উল্লেখ্য যে, প্রাণীদেহে জীবাণুটি এ spore form নিয়েই প্রবেশ করে এবং পর মুহূর্তেই তা vegetative/active form ধারণ করে। অতঃপর দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে Anthrax রোগ ঘটায়। ফলশ্রুতিতে কয়েকদিন বা সপ্তাহখানেকের মধ্যেই আক্রান্ত প্রাণীটি মৃত্যুবরণ করে (যদি চিকিৎসা করা না হয়)।
কাদের Anthrax হয় এবং এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কি?
Anthrax জীবাণু ২৫০-৪০০ সেলসিয়াস (৭৭০-১০৪০ ফারেনহাইট) তাপমাত্রায় বংশবৃদ্ধি করতে পারে। প্রায় সমস্ত উষ্ণরক্তের (warm blooded) প্রাণী Anthrax -এ আক্রান্ত হতে পারে (যেহেতু এদের শরীরের তাপমাত্রা উপরোক্ত তাপমাত্রার সীমার মধ্যে থাকে)। অপরপক্ষে শীতল রক্তের (cold blooded) প্রাণী কখনোই Anthrax -এ আক্রান্ত হয় না। তেমনি অধিক উষ্ণ রক্তের প্রাণীও (যেমন পাখি) একই কারণে Anthrax -এ আক্রান্ত হয় না।মূলত Anthrax রোগটি তৃণভোজী প্রাণীদেরই (herbivores) রোগ- সেটি গৃহপালিতই হোক কিংবা বুনোই হোক। গৃহপালিতদের মধ্যে উল্ল্লেখযোগ্য হলো- গরু ছাগল, ভেড়া, উট ইত্যাদি। বন্যদের মধ্যে হাতী, জেব্রা, ইত্যাদি। তবে কদাচিৎ (rare) এই রোগ গোশত ভক্ষণকারী প্রাণী (carnivores) যেমন মানুষেরও হতে পারে। কুকুর এবং বিড়াল গোশত ভক্ষণকারী প্রাণী হলেও এদের Anthrax হয় না বললেই চলে।
বস্থত মানুষের মধ্যে এটি খুবই rare । নিকট অতীতে America (২০০১ সাল) এবং Russia (১৯৭৯ সাল)-তে সংঘটিত তথাকথিত Bioterrorism -এ মাত্র হাতে গোনা কয়েকজন আক্রান্ত হওয়াই এর বড় প্রমাণ।
Anthrax আক্রান্ত প্রাণীর মৃতদেহ কতটা বিপদজনক? এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা:
Anthrax আক্রান্ত প্রাণী যদি মৃত্যুবরণ করে (রোগের কারণেই হোক কিংবা ভুলক্রমে জবাই করা হোক) তার দেহাভ্যন্তরে অবস্থানকারী বেশিরভাগ সক্রিয় Anthrax bacteria -ই সেই প্রাণীরই অভ্যন্তরসি'ত অন্য কিছু বিশেষ bacteria (anaerobic) দ্বারা আক্রান্ত হয়ে কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ধ্বংস হয়ে যায়। আর প্রাণীদেহের প্রাকৃতিক ছিদ্রসমূহ দিয়ে রস এবং রক্তের মাধ্যমে প্রথমেই যে সকল সক্রিয় Anthrax জীবাণু বাইরে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয় কেবলমাত্র তারাই anaerobic ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেয়ে প্রকৃতিতে spore form করে বেঁচে থাকতে পারে। ফলে মৃত বা জবাইকৃত-যেরূপই হোক না কেন Anthrax আক্রান্ত প্রাণীর গোশত বস্থত প্রাকৃতিকভাবেই জীবাণুমুক্ত হয়ে যায়। যদিবা কিছু bacteria পশুর চামড়া কিংবা গোশতে থেকে যেতে পারে, যথাযথভাবে রান্না করা হলে সে সকল Anthrax জীবাণুও নিশ্চিতরূপে মারা যায়। কারণ, সুনির্দিষ্টভাবে এটি প্রমাণিত যে রান্না করাকালীন তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস-এ পৌঁছার পর কমপক্ষে ৫ মিনিট স্থায়ী হলেই কোন Anthrax জীবাণুই আর বেঁচে থাকে না। শুধু তাই নয়, Anthrax আক্রান্ত প্রাণীর সংস্পর্শে আসা বিভিন্ন দ্রব্যাদি যা Anthrax বহন করতে সক্ষম সেগুলোকেও আমরা ফুটন্ত পানিতে ৩০ মিনিট বা আরো বেশি সময় ধরে boil করে সহজেই সম্পূর্ণরূপে জীবাণুমুক্ত করতে পারি।
Anthrax ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে আসা মানেই Anthrax রোগ হওয়া নয়:
Anthrax জীবাণু প্রাণীদেহে প্রবেশ করলেই যে Anthrax রোগ হয়ে গেলো এ কথার কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। মনে রাখতে হবে- রোগ বিস্তারের জন্য কিছু নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ হওয়া আবশ্যক। যেমন প্রথমেই বলা যায়, আক্রমণকারী জীবাণুর সংখ্যা (spore count)| । দ্বিতীয়ত, প্রাণীদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (body immunity)| । তৃতীয়ত, জীবাণুটির রোগ বিস্তারের ক্ষমতা (virulence) ইত্যাদি।
Anthrax রোগ হতে হলে spore count ন্যূনতম ৫০,০০০ হওয়া দরকার। গবেষণায় দেখা যায়, সন্দেহজনক প্রাণীদেহে সচরাচর এতোটা spore count পাওয়া যায় না। অর্থাৎ কম spore count হওয়ার ফলে প্রাণীদেহটি Anthrax রোগাক্রান্ত হয় না- এটা নিশ্চিত বলা যায়। অপরপক্ষে রোগাক্রান্ত প্রাণীদেহের spore count সচরাচর ৫০,০০০-এর বেশি পাওয়া যায়। এর কমে Anthrax রোগ হওয়া সত্যিই দুষ্কর। আলোচ্য বিষয়ে প্রাণীদেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার গুরুত্ব অপরিসীম। যেমন: একটি সুস্থ সবল প্রাণীদেহে অহঃযৎধী জীবাণু প্রবেশমাত্রই প্রাণীদেহের immune system (defense mechanism) তাকে অকার্যকর করে ফেলে। কোন ক্ষেত্রে spore count যদি বেড়ে যায়, তবে প্রাণীদেহ হেরে যেতে পারে এবং তখনই শুধুমাত্র Anthrax -এর লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে।
Source: http://www.al-ihsan.net/FullText.aspx?subid=2&textid=1566
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন