যিনি খালিক্ব, মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوا
মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যিনি শুধুমাত্র যিনি খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি নন সেই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জানিয়ে দিচ্ছেন তিনি যেন দয়া করে সমস্ত সৃষ্টি বান্দা-বান্দী, উম্মত, জীন-ইনসান, সবাইকে বলে দেন তারা সকলে উনাকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ফদ্বল মুবারক এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রহমত মুবারক লাভ করতে পেরেছে এজন্য তাদের সকলের দায়িত্ব হলো কর্তব্য হলো ফরয হলো উনার সম্মানার্থে শুকুর গুজারির সাথে ফালইয়াফরাহু শরীফ খুশি মুবারক প্রকাশ করা। সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
هُوَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُونَ
আর এই খুশি মুবারক প্রকাশ করাটা হচ্ছে সকলের জিন্দেগীর সমস্ত ইবাদত-বন্দেগী থেকেও সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বোত্তম ইবাদত। সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! অর্থাৎ সকলে একমাত্র মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানার্থেই সর্বপ্রকার নেয়ামত মুবারক পেয়েছে, পাচ্ছে এবং অনন্তকালধরে পেতেই থাকবে। সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
অসংখ্য অগণিত নিয়ামত মুবারক থেকে বিশেষ নিয়ামত হচ্ছে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র এই সুন্নত মুবারক। মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নত মুবারক এটা সরাসরি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সম্পৃক্ত এবং সংযুক্ত। সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
لَّقَدْ كَانَ لَكُمْ فِى رَسُولِ ٱللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ
মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই ইরশাদ মুবারক করেন-নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যে উত্তম আদর্শ উসওয়ায়ে হাসানাহ মুবারক রয়েছেন। অর্থাৎ বান্দা-বান্দি, জিন-ইনসান, উম্মত সকলের জন্য ফরযে আইন হচ্ছে মহাস্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইত্তিবা মুবারক করা। উনার যে মহাস্মানিত ও মহাপবিত্র উসওয়ায়ে হাসান্হা মুবারক চরিত্র মুবারক সেই মহাসম¥ানিত চরিত্র মুবারক সুক্ষাতিসুক্ষ-পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসরণ করা অনুকরণ করা ইত্তিবা করা। সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
এখন সাধারণভাবে সুন্নত মুবারক এই শব্দের অর্থ হলো: নিয়ম-কানুন, তর্য-তরীক্বাহ এখানে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যে তর্য-তরীক্বাহ মুবারক উনার যে আদত মুবারক, খুছূছিয়াত মুবারক ,আমল মুবারক কাওলি হোক ফে’লী হোক তাকরীরী হোক অর্থাৎ তিনি যা আদেশ মুবারক করেছেন যা নিজে করেছেন এবং করার জন্য সম্মতি মুবারক প্রকাশ করেছেন সবটুকুই মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভূক্ত। সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
সুন্নত মুবারক উনার গুরুত্ব ও ফযীলত এটা উম্মত উপলদ্ধি না করার কারণে তারা সে বিষয়গুলো যথাযথভাবে আমল করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনা। নাউযুবিল্লাহ!
যিনি খালিক্ব যিনি মালিক যিনি রব মহান আল্লাহ পাক তিনি এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নত মুবারক উনার সর্ম্পকে সরাসরি তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
قُلْ أَطِيعُوا اللَّهَ وَالرَّسُولَ فَإِن تَوَلَّوْا فَإِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْكَافِرِينَ
অর্থ: “আয়! আমার সম্মানিত হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলে দিন, যদি তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত হাছিল করতে চাও, তাহলে আমাকে অনুসরণ করো। তাহলেই মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদেরকে মুহব্বত করবেন এবং তোমাদের গুনাহখাতা ক্ষমা করে দিবেন। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি অত্যধিক ক্ষমাশীল ও দয়ালু।” অর্থাৎ তিনি তোমাদের প্রতি ক্ষমাশীল ও দয়ালু হবেন। (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩১)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যারা ইত্তিবা করবে, তাদের ব্যাপারে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র আয়াত শরীফে ৩টি নিয়ামতের কথা বলে দিচ্ছেন-
প্রথম নিয়ামত হচ্ছেন يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মহাসম্মানিত হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এতো বেশি মুহব্বত করেন যে উনাকে ইত্তিবা করলে তিনি স্বয়ং নিজ থেকেই সেই বান্দা-বান্দি,জিস-ইনসানকে মুহব্বত মুবারক করবেন অর্থাৎ মাহবূব বান্দা-বান্দি হিসেবে কবূল করে নিবেন।
وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজ থেকে জীন্দেগীর সমস্ত গুনা-খাতা গুলো ক্ষমা করে দিবন।
وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ এবং মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজ থেকেই ক্ষমাশীল এবং অত্যান্ত দয়ালু হবেন। ঠিক তার বিপরীতটা হলো----
فَإِن تَوَلَّوْا فَإِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْكَافِرِينَ আর যে ব্যক্তি মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক থেকে ফিরে গেলো, বিরত থাকলো,সে কাফির হয়ে যাবে। আর কাফিরকে মহান আল্লাহ পাক মুহব্বত করেন না।
এই আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِي فَلَيْسَ مِنِّي
অর্থ:- আমার মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক থেকে যে ফিরে গেলো,যে বিরত থাকলো, যে পছন্দ করলো না; সে আমার উম্মত থেকে খারিজ। অর্থাৎ সে কাফির। নাউযুবিল্লাহ!
এখানে ফিকিরের বিষয়, যে ব্যক্তি সুন্নত মুবারক উনার ইত্তেবা করলো না তাকে মহান আল্লাহ পাক মুহব্বত করেন না, সে কাফির। আর যে সুন্নত মুবারক উনার ইত্তেবা করলো ,উনাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই মুহব্বত মুবারক করেন। এটার একটা বড় মিছাল দেয়া হয়, হযরত খাজা সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সূক্ষাতিসূক্ষ-পূঙ্খানুপূঙ্খভাবে মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার ইত্তেবা করতেন। যার ফলে উনার বিছাল শরীফ উনার পর উনার কপাল মুবারকে সোনালী অক্ষরে লেখা উঠলো-- হাযা হাবীবুল্লাহ ! মাতা ফী হুব্বিল্লাহ!
অর্থ: তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব! তিনি বিছাল শরীফ গ্রহণ করেছেন মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বতে। সুবহানা মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
সুলত্বানুল হিন্দ খাজা গারিবে নেওয়ায হাবীবুল্লাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি অনেক বড় ওয়ালী আল্লাহ তিনি যখন ৯০ বছর বয়স মুবারকে তখন বিশেষ সাক্ষাত মুবারক লাভ করলেন। এখনতো ২৪ ঘন্টাই জিয়ারত মুবারকে থাকেন তারপরও বিশেষ জিয়ারত মুবারক লাভ হলো তখন স্বয়ং যিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন- হে মুঈনুদ্দীন! মুঈনুদ্দীন শব্দের অর্থ হচ্ছে দ্বীনের সাহায্যকারী। আপনি সত্যিই দ্বীনের সাহায্যকারী। আপনার দ্বারা অনেক মানুষ হেদায়েত হচ্ছে এবং বলতে গেলে প্রায় সমস্ত সুন্নত মুবারক গুলি আপনার দ্বারা পালিত হচ্ছে। কিন্তু একটা বিশেষ সুন্নত মুবারক এখনও বাকি রয়েগেছে। আলাচনা মুবারক শেষ করে উনার ঘুম ভেঙ্গে গেল তিনি ফিকির করলেন কোন সুন্নত মুবারক বাকি রয়ে গেছে যেটা উনার স্বপ্ন মুবারকে স্মরণ করে দেওয়া হলো এখনও আপনার নিসবতে আযীম অর্থাৎ বিবাহ-শাদী বাকি এখনও করেন নি। তিনি নির্দেশ মুবারক অনুযায়ী পরপর দুইখানা নিসবতে আযীম শরীফ করলেন। সুবহানাল্লাহ!
সুন্নত মুবারক পালন করা ফরয
কেননা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার সূরা আনফাল শরীফ উনার ১ নং পবিত্র আয়াত শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
وَأَطِیعُوا۟ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥۤ إِن كُنتُم مُّؤۡمِنِینَ.
কেউ যদি নিজেকে মু’মিন, ঈমান্দার হিসেবে দাবী করতে চায়, তাহলে তাকে অবশ্যই অবশ্যই মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার ইত্তেবা, অনুস্বরণ-অনুকরণ করতে হবে। এটাই মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত নির্দেশ মুবারক। এ প্রসঙ্গে একখানা ঘটণা মুবারক উল্লেখ রয়েছে------
একবার হযরত আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ফতওয়া মুবারক দিলেন যে, মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক পলন করা ফরয। উনার সমসাময়িক সকল আলেক-উলামাগণ বললেন, আপনি এটা কেমন ফতওয়া দিলেন?? আমারা জানি ফরয পালন করা ফরয, ওয়াজিব পালন করা ওয়াজিব, সুন্নত পালন করা সুন্নত। আপনার ফতওয়ার স্বপক্ষে কি কোন কিতয়ী দলীল রয়েছে??? জবাবে তিনি বললেন, হ্যাঁ আমার দলীল রয়েছে। আপনারা কি পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করেন নি?? অথচ উনারা উনার সকলেই ছিলেন হাফিযে কুরআন। তখন তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র সূরা হাশর শরীফ উনার ৭ নং পবিত্র আয়াত শরীফ পাঠ করলেন-
খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانتَهُوا وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যা নিয়ে এসেছেন তা আঁকড়িয়ে ধরো এবং যা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন তা থেকে বিরত থাকো।” এ বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো,নিশ্চয়ই তিনি কঠিন শাস্তিদাতা (পবিত্র সূরা হাশর শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ-৭)
পবিত্র আয়াত শরীফ তিলাওয়াত শেষ হতে না হতেই উনারা বললেন আমরা এখন বুঝতে পেরেছি।
মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক কিভাবে পালন করতে হবে,আঁকড়িয়ে ধরতে হবে তা শিক্ষা দিয়েছেন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা। আমরা সাইয়্যিদুনা হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার জিবনী মুবারকে দেখতে পাই-
সাইয়্যিদুনা হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতকালে মুসলমানগণ যখন পবিত্র বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ বিজয় করলেন, তখন ইহুদীরা আরজু করলো বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফের চাবি খলীফা উনার হাত মুবারকে সরাসরি হস্তান্তর করবে। সে জন্য তারা সাইয়্যিদুনা হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফে দাওয়াত করলো।
আমীরুল মু'মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারুকে আ'যম আলাইহিস সালাম তিনি যখন তাশরীফ মুবারক নিলেন তখন ইহদিীরা উনার নিকট চাবি হস্তান্তর করলো। চাবি হস্তান্তরের পর ইহুদী-নাছারারা আরজু করলো- আমরা ইসলামী কায়দায় কিছু মেহমানদারীর ব্যবস্থা করতে চাই, সম্মতি পেয়ে তারা আরব দেশীয় রুটি-গোশতের ব্যবস্থা করলো। আমীরুল মু'মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারুকে আ'যম আলাইহিস সালাম তিনি সুন্নতী কায়দায় দস্তরখানা বিছিয়ে নিলেন এবং রুটি নিয়ে গোশত দিয়ে খেলেন, খাওয়া শেষে দস্তরখানায় পড়ে থাকা রুটির টুকরাগুলো টুকে টুকে অর্থাৎ দস্তরখানা পরিস্কার করে খাচ্ছিলেন। এটা দেখে জনৈক ব্যক্তি বললেন, হে আমীরুল মু'মিনীন! এখানে অনেক রাজা-বাদশা, আমীর-ওমরা উপস্থিত, আপনি যদি তাদের সম্মুখে এরূপভাবে রুটির টুকরা টুকে টুকে খান, তবে কেমন দেখা যায়? জবাবে আমীরুল মু'মিনীন, হযরত ফারুকে আ'যম আলাইহিস সালাম তিনি জালালী তবীয়তে বলেন-
اأترك سنة حبيبي لأجل هذه الحمقاء .
অর্থ: “আমি কি এসকল আহমকদের জন্য আমার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র সুন্নত মুবারক পরিহার করবো।" (সুবহানাল্লাহ্) অর্থাৎ খাওয়ার পর দস্তরখানা বা প্লেট পরিস্কার করে খাওয়া “সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।” আমীরুল মু'মিনীন, হযরত ফারুকে আ'যম আলাইহিস সালাম তিনি সর্বাবস্থায় সব কিছুর উপর সম্মানিত সুন্নত উনাকে প্রাধান্য দিয়েছেন।
আমীরুল মু'মিনীন, হযরত ফারুকে আ'যম আলাইহিস সালাম তিনি আমাদেরকে শিক্ষা দিলেন সর্বাবস্থায় মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক উনাকে প্রাধান্য দিতে হবে।
মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক পালন করলে তার কি ফযীলত?
সুন্নত মবারক উনার ফযীলত কতটুকু?? এটা একটা কল্পনাতীত বিষয়; এটা মানুষ ফিকির করে শেষ করতে পারবেনা। বলা হয়ে থাকে-যে সৃষ্টির শুরু থেকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত সমস্ত আমল যদি একপাল্লায় রাখা হয় আর মহাসম্মানিত হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত একখানা সুন্নত মুবারক যদি আরেক পাল্লায় রাখা হয় তাহলে সেই পাল্লা মুবারক উনারই ওজন বেশী হবে।
এই সম্মানিত সুন্নত মুবারক যারা হিফাজত করবেন অর্থাৎ পালন করবেন, প্রচার-প্রসার করবেন তাদেরকে ৪টি নিয়ামত মুবারক দ্বারা সম্মানিত করা হবে। এ ব্যাপারে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
مَنْ حَفِظَ سُنَّتِـىْ اَكْرَمَهُ اللهُ تَعَالـٰى بِاَرْبَعِ خِصَالٍ اَلْـمَحَبَّةُ فِـىْ قُلُوْبِ الْبَرَرَةِ وَالْـهَيْبَةُ فِـىْ قُلُوْبِ الْفَجَرَةِ وَالسَّعَةُ فِـى الرِّزْقِ وَالثِّقَةُ فِـى الدِّيْنِ
অর্থ: “যে ব্যক্তি আমার সম্মানিত সুন্নত মুবারক হেফাযত করবেন, আঁকড়িয়ে ধরবেন, সম্মানিত সুন্নাত মুবারক উনার উপর আমল করবেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে ৪টি বৈশিষ্ট্য মুবারক দ্বারা সম্মানিত করবেন। সুবহানাল্লাহ!
আর তা হচ্ছে-
১. যিনি মহাসম্মানিত মুবারক উনাকে পালন করবেন উনার প্রতি নেককারদের অন্তরে মুহব্বত পয়দা করে দিবেন।
২. বদকারদের,ফাসেক-ফুজ্জারদের অন্তরে যিনি সুন্নত মুবারক পালন করবেন উনার ব্যাপারে ভীতি সৃষ্টি করে দিবেন।
৩. উনাকে রিযিক্বে প্রাচুর্যতা দান করবেন। উনাকে রিযিকের জন্য কোন চিন্তা করতে হবেনা।
৪. উনাকে দ্বীনের মধ্যে নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি হিসেবে কবুল করবেন।” তিনি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার হুজ্জত,দলীল হয়ে যাবেন। সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে রূহুল বায়ান, তাফসীরে হাক্কী)
সম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার বেমেছাল ফযীলত মুবারক সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ أَنَسٍ , قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ أَحْيَا سُنَّتِي فَقَدْ أحياني, ومن أحياني كَانَ مَعِي فِي الْجَنَّةِ.
অর্থ: “যে ব্যক্তি আমার মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক উনাকে জিন্দা করলো, সে যেন আমাকেই অর্থাৎ আমার তর্য-তরীক্বাহই জিন্দা করলো এবং সে আমার সাথেই জান্নাতে থাকবে।
অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে একই জান্নাতে অবস্থান করা যাবে। বলা হয়ে থাকে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত জান্নাত মুবারক , হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের জান্নাত মুবারক থেকে এতো উপরে থাকবে ; যমীন থেকে আমরা তারকারাজী যেমন মিট মিট করে জ্বলতে দেখি, ঠিক তেমনি হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা উনাদের জান্নাত মুবারক থেকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত জান্নাত মুবারক দেখতে পাবেন; অর্থাৎ এতো উপরে অবস্থান মুবারক হবে। সুতরাং যে ব্যক্তি মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার ইত্তেবা করবেন, মুহব্বত করবেন তিনিও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সেই একই জান্নাত মুবারকে অবস্থান করার সুযোগ পাবেন।
শুধু তাই নয়, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
مَنْ تَمَسَّكَ بِسُنَّتِي عِنْدَ فَسَادِ أُمَّتِي فَلَهُ أَجْرُ مِائَةِ شَهِيدٍ
অর্থ:“যে ব্যক্তি ফিতনা-ফাসাদের যুগে আমার একটি সম্মানিত সুন্নত মুবারক কায়িম করবে ,ধারণ করবে এবং দৃঢ়তার সহিত পালন করবে তিনি একশত শহীদ উনাদের সমপরিমাণ ছওয়াব লাভ করবেন।” (মিশকাত শরীফ)
কাজেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদেশ-নিষেধ মুবারক সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম পালন করতে হবে। আর উনার মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক যে আঁকড়িয়ে ধরবে সে কখনো গোমরাহ হবেনা।
এ সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
عن حضرت مالك بن انس رحمة الله عليه مرسلا قال قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: تَرَكْتُ فِيكُمْ أَمْرَيْنِ لَنْ تَضِلُّوا مَا تَمَسَّكْتُمْ بِهِمَا: كِتَابَ اللَّهِ وَسُنَّةَ رَسُولِهِ
অর্থ: “হযরত মালিক ইবনে আনাস রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত । আমি তোমাদের মধ্যে দু'টি নিয়ামত মুবারক রেখে যাচ্ছি। যতক্ষণ তোমরা সে দু'টি নিয়ামত মুবারক আঁকড়ে ধরে থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত পথভ্রষ্ট হবে না- মহান আল্লাহ্ পাক উনার কিতাব ও উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত সুন্নাহ শরীফ।” (মুওয়াত্তায়ে মালিক)
*** জান্নাতে যেতে চায় না, এমন কোন মানুষ নেই; সকলেই জান্নাতে যেতে চায়। সম্মানিত সুন্নত মুবারক পালন করা ব্যতীত জান্নাতী হওয়া যাবেনা।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ, أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: "كُلُّ أُمَّتِي يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ إِلَّا مَنْ أَبَى" قيل: ومَنْ يَأْبَى يا رسول الله؟ قَالَ: "مَنْ أَطَاعَنِي دَخَلَ الْجَنَّةَ, وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ أَبَى"
অর্থ: “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমার সকল উম্মতই জান্নাতে প্রবেশ করবেন, কিন্তু যে অস্বীকার করে সে ব্যতীত। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বললেন, কে অস্বীকার করলো? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উত্তরে ইরশাদ মুবারক করেন, যাঁরা আমার অনুসরণ করবেন উনারা জান্নাতে প্রবেশ করবেন, আর যে আমার অবাধ্য হবে সে-ই অস্বীকারকারী হবে।” (বুখারী শরীফ কিতাবুল ই‘য়তিছাম বিল কিতাব ওয়াস সুন্নাহ: পবিত্র হাদীছ শরীফ নং ৭২৮০)
***আর যে ব্যক্তি সুন্নত মুবারক থেকে বিমূখ থাকবে সে অবশ্যই অবশ্যই গোমরাহ হবেই।
এই বিষয়টি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
عن حضرت عبد الله بن مسعود رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لو تَرَكْتُمْ سُنَّةَ نَبِيِّكُمْ لَضَلَلْتُمْ وفي رواية أخرى لكفرتم
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত । নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যদি তোমরা তোমাদের নবী নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র সুন্নত মুবারক (অবজ্ঞা বা অপছন্দ করে) তরক করো, তবে তোমরা অবশ্যই গোমরা হবে। অপর বর্ণনায় রয়েছে অবশ্যই কাফির হয়ে যাবে।” (আবূ দাউদ শরীফ, ইবনে মাযাহ শরীফ)
এর উপর ভিত্তি করেই বলা হয় যে,
إهانة السنه كفر
অর্থাৎ “সম্মানিত সুন্নত মুবারক উনাকে ইহানত তথা অবজ্ঞা, অপছন্দ ও অস্বীকার করা কুফরী।”
উদারহণ: কদু খাওয়া সুন্নত । কেউ যদি অপছন্দ করে তাহলে কুফরী হবে।
কাজেই গোমরাহী থেকে,কুফরী থেকে বাঁচতে হলে এবং ঈমানদ্বার থাকতে হলে অবশ্যই অবশ্যই মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক পালন করতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই।
মূল কথা হলো, পবিত্র সুন্নত মুবারক উছওয়াতুন হাসানাহ বা উত্তম আদর্শ মুবারক। পবিত্র সুন্নত মুবারক পালন করলে মহান আল্লাহ পাক তিনি মুহব্বত করবেন। তিনি গুণাহ-খতা মাফ করবেন,দয়ালু হবেন। পবিত্র সুন্নত মুবারক দ্বারা মহান আল্লাহ পাক তিনি মুসলমান উনাদেরকে সম্মানিত করেছেন। পবিত্র সুন্নত মুবারক উনাকে মুহব্বতকারী মূলত নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেই মুহব্বতকারী। আর উনার মুহব্বতকারী সব জায়গায় উনার বিশেষ নিছবতে থাকবেন। একখানা সুন্নত মুবারক পালন করলে ১০০ শহীদের ছওয়াব লাভ হবে। পবিত্র সুন্নত মুবারক পালনের মাধ্যমে সর্বপ্রকার গোমরাহী হতে মুক্তিলাভ করা যায়।
আমরা সুন্নত মুবারক উনার অনেক অনেক ফযীলত জানলাম! এখন এই সুন্নত মুবারক কোথায় পাবো ,কিভাবে শিখবো? সেটাও জানা আবশ্যক।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَلَيْكُمْ بِسُنَّتِىْ وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِيْنَ الْمَهْدِيِّيْنَ. تَمَسَّكُوْابِهَا وَعَضُّوْا عَلَيْهَابِالنَّوَاجِذِ.
অর্থঃ- “তোমাদের জন্য আমার মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক ও আমার হযরত খোলাফায়ে রাশেদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত সুন্নত মুবারক গুলো অবশ্যই পালনীয়। তোমরা তা মাড়ীর দাঁত দিয়ে শক্ত করে আকড়িয়ে ধর।” (মিশকাত শরীফ)
কেন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সুন্নত মুবারকও আকড়িয়ে ধরতে হবে?? কারণ উনারা নিজের থেকে কোন আমল মুবারক করেন নি। উনারা সরাসরি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখে দেখে এবং উনার থেকে জেনে জেনে আমল মুবারক করতেন।
আর এই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার যদি হাক্বীক্বী মিসদাক্ব আপনি হতে চান। তাহলে আপনিও সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনাকে দেখে দেখে এবং উনার থেকে জেনে জেনে সমস্ত সুন্নত মুবারক উনার আমল মুবারক করতে পারবেন। উনি যা করেন এবং যা বলেন তাই মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক। এবং উনার থেকেই সুন্নত মুবারকসহ সকল মাসয়ালা মাসায়িল জানতে হবে।
এটা আমার মনগড়া কথা নয়; স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত নির্দেশ মুবারক।
এ সম্পর্কে টুপির ঘটণা মুবারক-
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন ৪০-৪৫ বছর আগের কথা, যাত্রাবাড়ি দরবার শরীফে একদা টুপি সম্পর্কে আলোচনা হলো, সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি ৪ টুকরা বিশিষ্ট টুপি খাছ সুন্নত এ ব্যাপারে দলীল মুবারক দিলেন। অনেকে অনেক ধরণের কথা বললো। সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি বেশি কিছু আর বললেন না। পরের দিন সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি ইশরাক নামাযের পরে পবিত্র খানকা শরীফে শোয়া মুবারক ছিলেন। সে সময় একজন এসে উনার নূরুদ দারাজাত মুবারক টিপতেছিলো। তখন সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, কি ব্যাপার?? এত সকালে তুমি এখানে কেন? সে বললো, গতরাতে যাত্রাবাড়ী দরবার শরীফে টুপি নিয়ে যে আলোচান হয়েছিল, সে রাতে আমি স্বপ্নে পবিত্র মদীনা শরীফ গিয়ে দেখি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বসা রয়েছেন উনার মাথা মুবারকে টুপি মুবারক। আমি জানতে চাইলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! টুপির সুন্নতটা কি? তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কোন জাবাব দিলেন না। তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার থেকে জেনে নেয়ার জন্য। শুধু তাই নয়; তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, সুন্নত এবং যতো মাসয়ালা-মাসায়িল রয়েছে সবকিছু উনার থেকে জেনে নেয়ার জন্য। এটা সরাসরি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আদেশ মুবারক করেছেন।
এখন ফতওয়া কি তাহলে? সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি যা আমল মুবারক করেন, যা বলেন সবই মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক। তা আকড়িয়ে ধরা সকলের জন্য ফরয, ফরয এবং ফরয।
আসলেই আমাদের জন্য বিষয়টি অনেক সহজ হয়ে গেছে। কেননা, আমরা রহমতুল্লিল আলামীন, মুত্বহহার, মুত্বহহির, মুহইউস সুন্নাহ সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনাকে পেয়েছি। তিনি মুহইউস সুন্নাহ, তিনি সমস্ত সুন্নত মুবারক জিন্দা করছেন। তিনি সরাসরি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছ থেকে জেনে জেনে কায়িনাতবাসীকে শিক্ষা দিচ্ছেন, জানিয়ে দিচ্ছেন। এমনকি পবিত্র সুন্নত মুবারক কায়িনাতের সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচারকেন্দ্র।
এ সম্পর্কে আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মুতহ্হার, মুত্বহহির, সাইয়্যিদুনা মামদুহ মুর্শিদ কিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে বলতেছেন যে, আসলে এই বিষয়টা ( সুন্নত মুবারক প্রচার) রূহানী জগতে খুব আলোচিত হচ্ছে। এই সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্রটা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিতে হবে। এখন কিভাবে তাহলে প্ল্যান করতে হবে?। তিনি আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুল হুদা মুবারক (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মাথা মুবারক) উনার মধ্যে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুল মাগফিরাত মুবারক (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাত মুবারক) রেখে বললেন, তাহলে তাড়াতাড়ী করতে হবে। একটা প্ল্যান-পরিকল্পনা করে তারপর সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিতে হবে। একটা প্ল্যান-পরিকল্পনা করে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিতে হবে, সে ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি আমাকে বললেন, আমি শুনলাম। আমি বললাম, হ্যাঁ, করবো। ‘এখন উনাদের রহমত-বরকত, ছাকিনা ছাড়া সেটা সম্ভব না' আমি সেটা বললাম। যখন স্বীকার করলাম, তিনি খুব খুশি হলেন। সুবহানা মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
এরদ্বারা কি বুঝা গেলো? সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি প্রতি জুমুয়া শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন, সরাসরি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আদেশ মুবারক করেছেন সুন্নত মুবারক প্রচারকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য
এবং তা অতিসত্তর সারা কায়িনাতে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য।
কাজেই সকলের দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে, কাফির-মুশরিকদের সকল তর্য-তরীক্বাহ বাদ দিয়ে,সর্বাবস্থায় মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার অনুসরণ-অনুকরণ করা। আন্তর্জাতিক সুন্নত মুবারক প্রচারকেন্দ্র উনার সার্বিক খিদমতের আন্জাম দেয়া। সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনায় সর্বোচ্চ খিদমতের আন্জাম দেয়া।
সম্মানিত হাযিরীন! আমাদের আন্তর্জাতিক সুন্নত মুবারক প্রচারকেন্দ্রে সর্বপ্রকার সুন্নতী সামগ্রী পাওয়া যায়। এর মধ্যে বিশেষ করে-
১) লিবাস= টুপি, পগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, রুমাল, মোজা, স্যান্ডেল ইত্যাদি
২) খাদ্য= ভাত, কদু, সিরকা, হাইস, হারিসা, মধু, ছারিদ, ত্বীন, যয়তুন, খেজুর, রুটি-গোশÍ ইত্যাদি
৩) ব্যবহারিক দ্রব্য= বালিশ,চকি,খেজুর পাতার পাটি,কাঠের প্লেট,বাটি,দস্তরখানা,লবণদানি ইত্যাদি
৪) আমল-আখলাখ= আতর, সুরমা, তাসবীহ, জায়নামাজ,
সুন্নত মুবারক উনার শুধু ফযীলত জানলেই হবেনা। সেটা জেনে সুন্নতী বিষয়গুলো সংগ্রহ করে নিজের আমলে বাস্তবায়ন করতে হবে। এখন তো সমস্ত সুন্নতী বিষয়গুলো সংগ্রহ করা আমাদের জন্য খুবি-ই সহজ। কারণ সকল সুন্নতী সামগ্রী একই জায়গায় পাওয়া যায়। আর সেটা হলো, আন্তর্জাতিক সুন্নত মুবারক প্রচারকেন্দ্র যা বিত্র রাজারবাগ দরবার শরীফে অবস্থিত।
সুতরাং আমাদের সকলের দায়িত্ব কর্তব্য হচ্ছে, আন্তর্জাতিক সুন্নত মুবারক প্রচারকেন্দ্র থেকে সর্বপ্রকার সুন্নতী সামগ্রী ক্রয় করা এবং তা প্রচার-প্রসার করা। নিজের জান-মাল দিয়ে সার্বিকভাবে আন্তর্জাতিক সুন্নত মুবারক প্রচারকেন্দ্র উনার খিমতে আন্জাম দেয়া।
আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মুতহ্হার, মুত্বহহির সাইয়্যিদুনা মামদুহ মুর্শিদ কিবলা আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার সম্মানার্থে আমাদেরকে পবিত্র সুন্নত মুবারক হাক্বীক্বীভাবে অনুসরণ-অনুকরণ করার, পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচারকেন্দ্র উনার সর্বোচ্চভাবে সার্বিক আনজাম দেয়ার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!
---
সুন্নতী খাবার, সুন্নতী লিবাস, সুন্নতী তৈজসপত্র ও যাবতীয় সুন্নতী সামগ্রী সম্পর্কে জানতে ও সংগ্রহ করতে ভিজিট করুন-
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন