সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কিভাবে খাওয়া সুন্নত? সুন্নতী নিয়মে খাদ্য গ্রহণের তরতীব জেনে নিন।

 খাবার গ্রহণের মহাসম্মানিত সুন্নতী তারতীব বা পদ্ধতি

হায়াতুন নবী, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খাদ্য গ্রহণের যে আদব ও তারতীব মুবারক শিক্ষা দিয়েছেন অর্থাৎ খাবারের সম্মানিত সুন্নতসমূহ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

. খাওয়ার আগে ও খাওয়ার শেষে হাত কব্জি পর্যন্ত ধোয়া: খাওয়ার আগে ও পরে দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত ধোয়া সুন্নত।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ سَلْمَانَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَرَأْتُ فِي التَّوْرَاةِ اَنَّ بَرَكَةَ الطَّعَامِ الْوُضُوءُ قَبْلَهٗ فَذَكَرْتُ ذَلِكَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ‏ بَرَكَةُ الطَّعَامِ الْوُضُوْءُ قَبْلَهٗ وَالْوُضُوءُ بَعْدَهٗ. ‏ 

অর্থ: “হযরত সালমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি পবিত্র তাওরাত শরীফ উনার মধ্যে পড়েছি, খাবার শুরুর আগে উযু করার মধ্যেই খাবারের বরকত নিহিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে আমি এ কথা বর্ণনা করলে তিনি বলেন খাদ্য গ্রহণের আগে ও পরে উযু করার (হাত ধোয়ার) মধ্যে খাদ্যের বরকত নিহিত।” সুবহানাল্লাহ! (আবূ দাঊদ শরীফ: কিতাবুত ত্বয়ামাহ: হাদীছ শরীফ নং ৩৭৬১)

. দস্তরখানা বিছিয়ে খাওয়া: নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খাওয়ার সময় দস্তরখানা বিছিয়ে খেতেন।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ مَا أَكَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلٰى خِوَانٍ وَلَا فِي سُكْرُجَةٍ وَلَا خُبِزَ لَهٗ مُرَقَّقٌ‏.‏ قُلْتُ لِـحَضْرَتْ قَتَادَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَلٰى مَا يَأْكُلُونَ قَالَ عَلَى السُّفَرِ‏.

অর্থ: “হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কখনো ‘খিওয়ান’ (টেবিলের মত উঁচু স্থানে)-এর উপর খাবার রেখে আহার করেননি এবং ছোট ছোট বাটিতেও তিনি আহার করেননি। আর উনার জন্য কখনো পাতলা রুটি তৈরী করা হয়নি। রাবী (হযরত ইউনুস রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি) বলেন, আমি হযরত কাত্বাদাহ্‌ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জিজ্ঞেস করলাম, তাহলে উনারা কিসের উপর আহার করতেন? তিনি বললেন, খয়েরী রংয়ের দস্তরখানের উপর।” (বুখারী শরীফ: কিতাবুত ত্বয়ামাহ: হাদীছ শরীফ নং ৫৪১৫, তিরমিযী শরীফ: হাদীছ শরীফ নং ১৭৮৮, ইবনে মাজাহ শরীফ: হাদীছ শরীফ নং ৩৪১৭)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত আছে-

عن حَضْرَتِ الْـحَسَنِ بْنِ مِهْرَانَ الْكِرْمَانِـىْ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ سـمعتُ فَرْقَدًا صَاحِبِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ رَاَيْتُ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَاَكَلَتُ عَلٰى مائِدتِه

অর্থ: “হযরত হাসান ইবনে মিহরান আল কিরমানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত ফারকাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বলতে শুনেছি। আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সাক্ষাৎ মুবারক করেছি এবং উনার চামড়ার দস্তরখান মুবারকে একত্রে আহার করেছি।” (আখলাকুন নবী-৩০১)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَسْـمَاءِ بِنْتِ اَبِـىْ بَكْرٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا قَالَتْ صنعت سفرة رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِىْ بَيْتِ اَبِـىْ بَكْرٍ اَلصَّدِيْقِ عَلَيْهِ السَّلَامُ حِيْنَ اراد ان يُّهَاجَرَ اِلَى الْـمَدِيْنَةِ قَالَتْ فلم نـجدْ لِسُفْرتِهٖ ولا لِسَقَائِهٖ مانربطهما به فقلت لابى بكر عليه السلام والله ما اجد شيئا اربط به الا نطاقى قال فَشَقِّيْهٖ بِاثِنين فَارْبِطِيْهِ بِوَاحدٍ السّقاءَ وبالاخرِ السُّفرةَ ففعلتُ فلذلك سُـمِيْتُ ذاتُ النطاقَين.

অর্থ: “হযরত আসমা বিনতে আবু বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি বর্ণনা করেন। পবিত্র মদীনা শরীফে হিজরত করার প্রাক্কালে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম উনার বাড়িতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য দস্তরখানা বা সুফরা বানিয়ে দিয়েছি। সাইয়্যিদাতুনা হযরত আসমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পানির মশক বাঁধার জন্য এবং দস্তরখানার জন্য কোনো কিছু পাচ্ছিলাম না। তখন আমি আমার সম্মানিত পিতা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম উনার মুবারক খিদমতে বিষয়টি জানালাম যে, আমার কোমর বন্ধ ব্যতীত পানির মশক বাঁধা এবং দস্তরখানার জন্য কিছু পাচ্ছি না। তিনি বললেন, উহাকে দুটি টুকরা করুন। একটি দ্বারা মশক বেঁধে দিন। আর অপর অংশ দস্তরখানার জন্য দিয়ে দিন। আমি সেটাই করলাম। আর এ কারণে আমাকে ‘যাতুন নিতাকাইন’ বলা হতো। (বুখারী শরীফ, মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল)

উল্লেখ্য যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মুবারক সফরে দস্তরখানা সাথে নিয়ে যেতেন। উনার সফর শরীফের সামান-আসবাব মুবারক উনাদের মধ্যে দস্তরখানা মুবারক ছিল।

সাইয়্যিদাতুনা হযরত আসমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি পবিত্র হিজরত মুবারক উনার সময় সফর মুবারকের যে সামান-আসবাব প্রস্তুত করে দিয়েছিলেন তার মধ্যে দস্তরখানা মুবারকও ছিল।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দস্তরখান বিছিয়ে খেতেন। তিনি কখনো টেবিল বা টেবিলের মত উঁচু স্থানের উপর খাবার রেখে আহার করেননি। তাই টেবিল বা টেবিলের মত উঁচু স্থানের উপর খাবার রেখে আহার করা বিদ্‘য়াত।

দস্তরখানের রং: শামসুল আরেফীন হযরত খাজা উছমান হারূনী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বরাত দিয়ে সুলত্বানুল হিন্দ হযরত খাজা ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার সংকলিত ‘আনীসুল আরওয়াহ’ নামক কিতাব উনার অষ্টম মজলিসে উল্লেখ করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দস্তরখানা মুবারক ব্যতীত সাধারণত খাদ্য মুবারক গ্রহণ করতেন না। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক উপস্থিতিতে যখনই খাদ্য মুবারকের আয়োজন করা হতো, তখনই খয়েরী রংয়ের চামড়ার দস্তরখান মুবারক ব্যবহার করা হতো।

এটা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অন্যতম সম্মানিত সুন্নত মুবারক।

খয়েরী রংয়ের দস্তরখানে খাবার খাওয়া হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনারও সম্মানিত সুন্নত এবং অন্যান্য হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনাদেরও সম্মানিত সুন্নত। সুবহানাল্লাহ! হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি কখনো খয়েরী রংয়ের দস্তরখানে খাবার না রেখে আহার করতেন না। সুবহানাল্লাহ! হযরত রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার দস্তরখানাও খয়েরী রংয়ের ছিল। সুবহানাল্লাহ!

উল্লেখ্য, ছাগলের চামড়ার তৈরি দস্তরখানায় আহার করা খাছ সুন্নত। অতঃপর গরুর চামড়ার তৈরি দস্তরখানা। কারো পক্ষে চামড়ার দস্তরখানায় খাওয়া সম্ভব না হলে খয়েরী রংয়ের কাপড় বিছিয়ে খেতে পারেন।

খয়েরী রংয়ের দস্তরখানে আহার করার ফযীলত:

দস্তরখানা ব্যবহারের ফযীলত সম্পর্কে বিভিন্ন কিতাবে বিভিন্ন বিষয় বর্ণিত রয়েছে। নিম্নে এ বিষয়ে আলোচনা করা হলো-

১. যে ব্যক্তি খয়েরী রংয়ের দস্তরখানে আহার করবেন, তিনি প্রতি লুক্বমার বিনিময়ে ১০০ করে ছাওয়াব লাভ করবেন এবং সে ব্যক্তির জন্য বেহেশতের ১০০টি দরজা নির্ধারণ করা হবে ও ১০০টি কামরা সুসজ্জিত করা হবে। সুবহানাল্লাহ!

২. সে ব্যক্তি সব সময়ই হযরত রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম ও অন্যান্য হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের হাজার হাজার দু‘য়া মুবারক লাভ করবেন। সুবহানাল্লাহ!

৩. যে ব্যক্তি খয়েরী দস্তরখানে কোন গরীব-দুঃখীকে আহার করাবেন, উনার জন্য শ্রেষ্ঠ প্রতিদান উনার আমলনামায় লিখা হবে এবং যখন রুটি খাওয়া শেষ হবে, তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি সেই ব্যক্তির গুণাহসমূহ মাফ করে দিবেন। সুবহানাল্লাহ!

৪. যে ব্যক্তি খয়েরী রংয়ের দস্তরখানে রুটি খাবেন, তিনি একটি উমরা হজ্জের ছাওয়াব পাবেন, ১০০ জন ক্ষুধার্তকে পেট ভরে খাওয়ানোর ছাওয়াব পাবেন। উক্ত ব্যক্তি এত বেশি ছাওয়াব লাভ করবেন, যেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মতের মধ্যে ১০০০ বন্দীকে মুক্ত করালেন। সুবহানাল্লাহ!

৫. যে ব্যক্তি সবসময় খয়েরী রংয়ের দস্তরখানে আহার করতে থাকবেন, রোজ হাশরে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনার জন্য বেহেশতী পোশাকসহ বোরাক নিয়ে আসবেন। সে ব্যক্তিকে বোরাকের উপরে উপবেশন করিয়ে এবং পোশাক পরিয়ে বেহেশতে নিয়ে যাবেন। সুবহানাল্লাহ!

৬. যে ব্যক্তি কোন মেহমানকে খয়েরী রংয়ের দস্তরখানে আহার করাবেন, তিনি প্রতিটি দানা যা মেহমানকে ভক্ষণ করাবেন তার বিনিময়ে ১০০০ নেকী লাভ করবেন। সুবহানাল্লাহ!

৭. যে ব্যক্তি খয়েরী রংয়ের দস্তরখানে খানা খাবেন এবং খাওয়াবেন মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে রহমতের নজরে দেখবেন এবং উনাকে ১০০০টি বেহেশতের প্রকোষ্ঠ দান করবেন। সুবহানাল্লাহ! (আনিসুল আরওয়াহ)

৮. পেটের রোগ দূরীভূত হবে এবং স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পাবে। সুবহানাল্লাহ!

৯. ক্বিয়ামতের দিন ডান হাতে আমলনামা লাভ করবে। সুবহানাল্লাহ!

স্মর্তব্য যে, দস্তরখানাকে তা’যীম-তাকরীম, সম্মান করা উচিত। দস্তরখানা পা দ্বারা পাড়ানো, দস্তরখানার উপর দিয়ে যাওয়া বেয়াদবি, শরাফত বা শিষ্টাচার বিবর্জিত কাজ। দস্তরখানা সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা সুন্নত। অপরিষ্কার অপরিচ্ছন্ন রাখা সম্মানিত সুন্নত উনার পরিপন্থী।

৩. দাঁড়িয়ে নয় বরং বসে পানাহার করা : নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সর্বদা বসে আহার করেছেন এবং দাঁড়িয়ে পানাহার করতে নিষেধ করেছেন।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَنَّهٗ نَـهٰى اَنْ يَشْرَبَ الرَّجُلُ قَائِمًا.‏ قَالَ حَضْرَتْ قَتَادَةُ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ فَقُلْنَا فَالأَكْلُ فَقَالَ ذَاكَ أَشَرُّ اَوْ اَخْبَثُ‏.

অর্থ: “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কোন লোককে দণ্ডায়মান হয়ে পান করতে বারণ/নিষেধ করেছেন। হযরত কাতাদাহ্‌ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমরা বললাম, তবে খাবারের ব্যাপারে (আদেশ মুবারক কি)? হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, সেটা তো আরো নিকৃষ্ট, আরো জঘন্য।” নাঊযুবিল্লাহ! (মুসলিম শরীফ: কিতাবুশ শারাবাহ: হাদীছ শরীফ নং ৫১৭০)

মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, সিলসিলার তারতীব অনুযায়ী খাবার গ্রহণের সময় তিনভাবে বসা যায়। ক) উভয় হাঁটু বিছিয়ে অর্থাৎ নামাযে বসার ন্যায় বসে সামান্য সম্মুখ পানে ঝুঁকে আহার করা। এভাবে বসে খাবার গ্রহণ করা সম্মানিত সুন্নত উনার অন্তভুক্ত। খ) এক হাঁটু উঠিয়ে এবং অপর হাঁটু বিছিয়ে। গ) উভয় হাঁটু উঠিয়ে এবং পদ যুগলে ভর করে।

বলা বাহুল্য যে, শুধুমাত্র তিন প্রকার পানীয় দাড়িয়ে পান করা আদব। যা বিভিন্ন কিতাবে এবং হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে। আর তা হচ্ছে ১. যমযম কূপের পানি, ২. ওযূর অবশিষ্ট পান ও ৩. হক্কানী-রব্বানী আলিম-উলামা তথা অত্যাধিক সম্মানিত ব্যক্তিত্ব উনাদের ঝুটা পানি।   

. হেলান দিয়ে না খাওয়া: পানাহারের সময় বিনয় ও নম্রতার দিকে লক্ষ্য রাখা উচিত। ঘরের মেঝেতে বসার মাধ্যমে অধিকতর বিনয় প্রকাশ পায়। শরীয়ত সম্মত কোন প্রকার ওজর ছাড়া হেলান দিয়ে আহার করা অনুচিত।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِـيْ حُجَيْفَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ كُنْتُ عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ لِرَجُلٍ عِنْدَهٗ لَا اٰكُلُ وَاَنَا مُتَّكِئٌ.

অর্থ: “হযরত আবূ হুজাইফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র দরবার শরীফে ছিলাম। তিনি এক ব্যক্তিকে বলেন, আমি কোন কিছুর সাথে হেলান দেয়া অবস্থায় কোনো আহার গ্রহণ করি না।” (বুখারী শরীফ: কিতাবুত ত্বয়ামাহ: বাবু আকলি মুত্তাকিয়া: হাদীছ শরীফ নং ৫৩৯৯)

. উপুড় হয়ে শুয়ে না খাওয়া: হেলান দিয়ে যেরূপ পানাহার করা নিষিদ্ধ, তেমনি উপুড় হয়ে শুয়ে খাওয়াও নিষিদ্ধ।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ سَالِـمٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنْ أَبِيهِ قَالَ نَـهٰى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَنْ يَأْكُلَ الرَّجُلُ وَهُوَ مُنْبَطِحٌ عَلٰى وَجْهِهٖ.

অর্থ: “হযরত সালিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি উনার পিতা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে কোন ব্যক্তিকে উপুড় হয়ে আহার করতে নিষেধ করেছেন।” (ইবনে মাজাহ শরীফ: কিতাবুত ত্বয়ামাহ: হাদীছ শরীফ নং ৩৩৭০)

৬. খাওয়ার শুরুতে চুপে চুপে বিসমিল্লাহ বলা এবং খাবারের মাঝখান থেকে না খেয়ে বরং নিজের নিকটবর্তী অংশ থেকে খাওয়া: নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খাবার গ্রহণের শুরুতে সবসময় চুপে চুপে বিসমিল্লাহ বলে খাবার শুরু করতে এবং নিজের নিকটবর্তী অংশ থেকে খাবার খেতে উম্মতকে শিক্ষা মুবারক দিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ وَهْبِ بْنِ كَيْسَانَ اَبِـي نُعَيْمٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ اُتِـيَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِطَعَامٍ وَمَعَهٗ رَبِيْبُهٗ حَضْرَتْ عُمَرُ بْنُ اَبِـي سَلَمَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ فَقَالَ سَمِّ اللهَ وَكُلْ مِـمَّا يَلِيْكَ.

অর্থ: “হযরত ওহাব ইবনে কাইসান আবূ নু’আইম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করে বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে একদা কিছু খাবার আনা হলো, উনার সঙ্গে ছিলেন উনার গোলাম হযরত উমর ইবনে আবূ সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, বিসমিল্লাহ বল এবং নিজের কাছের দিক থেকে খাও।” (বুখারী শরীফ: কিতাবুত ত্বয়ামাহ:  হাদীছ শরীফ নং ৫৩৭৮)

খাওয়ার শুরুতে বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে গেলে যখন মনে পড়ে তখনই বিসমিল্লাহ বলতে হয়।

এ সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اُمَيَّةَ بْنِ مَـخْشِيٍّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ وَكَانَ مِنْ اَصْحَابِ رَسُوْلِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَالِسًا وَرَجُلٌ يَأْكُلُ فَلَمْ يُسَمِّ حَتّٰى لَـمْ يَبْقَ مِنْ طَعَامِهٖ اِلَّا لُقْمَةٌ فَلَمَّا رَفَعَهَا اِلٰى فِيْهِ قَالَ بِسْمِ اللهِ اَوَّلَهٗ وَاٰخِرَهٗ فَضَحِكَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُـمَّ قَالَ‏ مَا زَالَ الشَّيْطَانُ يَأْكُلُ مَعَهٗ فَلَمَّا ذَكَرَ اسْمَ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ اِسْتَقَاءَ مَا فِىْ بَطْنِهٖ.‏

অর্থ: “হযরত উমাইয়্যা ইবনে মাখশী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, একদা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বসা ছিলেন এবং একজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আহার করছিলেন কিন্তু তিনি বিসমিল্লাহ বলেননি। অবশেষে খাবারের এক লুক্বমা যখন বাকি ছিল তখন মনে পড়ল যে তিনি “বিসমিল্লাহ” বলেননি। এমতবস্থায় তিনি পড়লেন- بِسْمِ اللهِ اَوَّلَهٗ وَاٰخِرَهٗ “বিসমিল্লাহি আওয়ালাহু ওয়া আখিরাহ”। আর তখনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাবাস্সুমি শান মুবারক (মৃদু হাসি মুবারক) প্রকাশ করে ইরশাদ মুবারক করলেন, শয়তান উনার সাথে খাবার খাচ্ছিল। কিন্তু তিনি যখন মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক নিলেন তখন শয়তানের পেটে যে খাবার গিয়েছিল তা সে বমি করে ফেলে দিল।” (আবূ দাঊদ শরীফ: কিতাবুত ত্বয়ামাহ: হাদীছ শরীফ নং ৩৭৬৮, নাসাঈ শরীফ)

বস্তুত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা হচ্ছে মিয়ারে হক্ব বা সত্যের মাপকাঠি। উনারা সর্বপ্রকার সমালোচনার উর্ধ্বে। তাই উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে নছীহত মুবারক করা হচ্ছে যে, খাবার গ্রহণের শুরুতে বিসমিল্লাহ না বললে খাদ্যগ্রহণকারীর খাবারে শয়তান অংশগ্রহণ করে। তাই খাবারের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে গেলে যখনই মনে পড়বে তখনই বলতে হবে। এতে শয়তানের অংশগ্রহণ দূরীভূত হয়ে যায়।

অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اِذَا اَكَلَ اَحَدُكُمْ طَعَامًا فَلَا يَأْكُلْ مِنْ اَعْلَى الصَّحْنَةِ وَلٰكِنْ لِيَأْكُلْ مِنْ اَسْفَلِهَا فَاِنَّ الْبَرَكَةَ تَنْزِلُ مِنْ اَعْلَاهَا.

অর্থ: “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমাদের কেউ খাওয়ার সময় যেন পাত্রের মাঝখান হতে না খায়, বরং যে যেন তার কিনারা হতে খাওয়া শুরু করে। কেননা পাত্রের মাঝখানে বরকত নাযিল হয়।” (আবূ দাঊদ শরীফ: কিতাবুত ত্বয়ামাহ: হাদীছ শরীফ নং ৩৭৭২)

৭. লবণ দিয়ে খাওয়া শুরু করা: খাবারের শুরুতে এবং খাবারের শেষে লবণ খাওয়া সুন্নত। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-

عَنْ حَضْرَتْ جَعْفَرَ بْنِ مُـحَمَّدٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ عَنْ اَبِيْهِ عَنْ جَدِّهٖ عَنْ عَلِىِّ عَلَيْهِ السَّلَامُ اَنَّهٗ قَالَ قَالَ لِىْ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَا حَضْرَتْ عَلِىُّ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَاِذَا اَكَلْتَ فَابْدَاْ بِالْـمِلْحِ وَاخْتِمْ بِالْـمِلْحِ فَاِنَّ الْـمِلْحَ شِفَاءٌ مِّنْ سَبْعِيْنَ دَاءٌ اَوَّلُـهَا الْـجَذَامُ وَالْـجُنُوْنَ وَالْبَرَصُ وَوَجْعُ الْاَضْرَاسِ وَوَجْعُ الْـحَلْقِ وَوَجْعُ الْبَصَرِ وَفِىْ رِوَاَيِةِ وَجْعُ الْبَطْنِ.

অর্থ: সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম তিনি উনার সম্মানিত পিতা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল খ্বমিস আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি উনার সম্মানিত পিতা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি উনার সম্মানিত পিতা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আউওয়াল কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণনা করেন। সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে নির্দেশ মুবারক দিলেন, হে কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম! আপনি যখন খাদ্য খাবেন তখন শুরুতে লবণ খাবেন এবং খাওয়া শেষ করে লবণ খাবেন। কেননা লবণের মধ্যে সত্তর প্রকার রোগের শিফা (রোগমুক্তি) রয়েছে। তার প্রথমটি হচ্ছে- কুষ্ঠ রোগ, মস্তিস্ক বিকৃতি বা পাগলামী, শ্বেতকুষ্ঠ, দাঁতের ব্যথা, গলার ব্যথা, চোখ ব্যথা।অপর বর্ণনায় পেটের ব্যথা। (বুগইয়াতুল বাহিছ আন যাওয়ায়িদিল হারিস-১/৫২৬, আল মাতালিবুল আলীয়া বি যাওয়ায়িদিল মাসানীদিছ ছামানীয়া-১/১৭০, ইত্তিহাফুল খিয়ারাতিল মাহরবাহ বি যাওয়ায়িদিল মাসানীদ-৪/৯৬)

. ডান হাত দ্বারা খাবার খাওয়া: সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ডান হাত দ্বারা খাবার খেয়েছেন এবং বাম হাত দ্বারা খাবার খেতে নিষেধ করেছেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ ‏لِيَأْكُلْ اَحَدُكُمْ بِيَمِيْنِهٖ وَلْيَشْرَبْ بِيَمِيْنِهٖ وَلْيَأْخُذْ بِيَمِيْنِهٖ وَلْيُعْطِ بِيَمِيْنِهٖ فَاِنَّ الشَّيْطَانَ يَأْكُلُ بِشِمَالِهٖ وَيَشْرَبُ بِشِمَالِهٖ وَيُعْطِي بِشِمَالِهٖ وَيَأْخُذُ بِشِمَالِهٖ.

অর্থ: “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হায়াতুন নবী, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমাদের প্রত্যেকে যেন ডান হাতে আহার করে, ডান হাতে পান করে, ডান হাতে গ্রহণ করে এবং ডান হাতে প্রদান করে। কারণ শয়তান বাম হাতে খায়, বাম হাতে পান করে, বাম হাতে দেয় এবং বাম হাতে গ্রহণ করে।(ইবনে মাজাহ শরীফ: কিতাবুত ত্বয়ামাহ: হাদীছ শরীফ নং ৩২৬৬)

৯. বড় বড় লুক্বমায় আহার না করে বরং ছোট ছোট লুক্বমায় আহার করা: বড় বড় লুক্বমায় আহার করতে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উৎসাহিত করে না, বরং ছোট ছোট লুক্বমায় আহার করা সুন্নত। বড় বড় লুক্বমায় আহার করা দৃষ্টিকটুও বটে।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ كَعْبِ بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنْ اَبِيْهِ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْكُلُ بِاَصَابِعِهِ الثَّلَاثِ وَيَلْعَقُهُنَّ.

অর্থ: “হযরত কা’ব ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তিন অঙ্গুলি দিয়ে আহার করতেন এবং তা চুষে নিতেন।” (শামায়েলে তিরমিযী)

সাধারণভাবে সুন্নত হলো তিন আঙ্গুল- বৃদ্ধা, তর্জনী ও মধ্যমার সাহায্যে ছোট ছোট লুক্বমায় খাবার খাওয়া তবে প্রয়োজনে ৪ আঙ্গুল এমনকি ৫ আঙ্গুলও ব্যবহার করা যায়। যেমন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কখনোও চার আঙ্গুল দ্বারা (আদাবুন নবী) এবং কখনো পাঁচ আঙ্গুল দ্বারা খানা খেতেন। (মুছান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ্)

পক্ষান্তরে দুই আঙ্গুল দ্বারা আহার করাকে শয়তানের আহারের পদ্ধতি বলে আখ্যা দেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَا حَضْرَتْ اِبْنَ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ لَا تَأْكُلْ باِصبعينِ فَاِنَّـهَا اَكْلَةُ الشَّيْطَانِ وَكُلْ بِثَلَاثَةِ اَصَابِعَ.

 অর্থ: “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হায়াতুন নবী, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হে হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! দুই আঙ্গুলে আহার করবেন না। শয়তান দুই আঙ্গুলে আহার করে। তিন আঙ্গুল দ্বারা আহার করুন।” (কানযুল উম্মাল শরীফ ১৫তম খণ্ড ২৬৩ পৃষ্ঠা: হাদীছ শরীফ নং ৪০৮৮০)

১০. তাড়াহুড়া না করে বরং ধীরে সুস্থে খাদ্য গ্রহণ করা: খাবার গ্রহণ করার সময় তাড়াহুড়া না করে বরং ধীর স্থিরভাবে খাদ্য গ্রহণ করা সুন্নত। এমনকি মাগরীবের ওয়াক্তে কোন খাবার গ্রহণের সময়ও ওয়াক্ত চলে যাওয়ার ভয়ে হুলস্থুলভাবে খাবার গ্রহণ করা উচিত নয়।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَمِّ الْـمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ الصِّدِّيْقَةِ عَلَيْهَا السَّلَامُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَنَّهُ قَالَ‏ اِذَا وُضِعَ الْعَشَاءُ وَأُقِيمَتِ الصَّلَاةُ فَابْدَءُوْا بِالْعَشَاءِ‏.‏

অর্থ : “উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যখন রাতের খাবার উপস্থিত করা হয়, আর সে সময় নামাযের ইক্বামাত হয়ে যায়, তখন প্রথমে খাবার খেয়ে নাও।” (বুখারী শরীফ: কিতাবুল আযান: হাদীছ শরীফ নং ৬৭১)

অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اِذَا قُدِّمَ الْعَشَاءُ فَابْدَؤُوْا بِهٖ قَبْلَ اَنْ تُصَلُّوْا صَلَاةَ الْمَغْرِبِ وَلَا تَعْجَلُوْا عَنْ عَشَائِكُمْ.

অর্থ: “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, রাতের খাবার পরিবেশন করা হলে মাগরিবের নামাযের পূর্বে তা খেয়ে নিবে। খাওয়া রেখে নামাযের জন্য তাড়াহুড়া করবে না।” (বুখারী শরীফ: কিতাবুল আযান: হাদীছ শরীফ নং ৬৭২)

উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফদ্বয় উনাদের মধ্যে মাগরিবের নামাযের উল্লেখ করে মূল বুঝানো হচ্ছে যে, ওয়াক্তের দিক দিয়ে মাগরিবের নামাযের ওয়াক্ত অনেক সংকীর্ণ। সে ক্ষেত্রেও নামায ছুটে যাওয়ার ভয়ে তড়িঘড়ি করে খাদ্য গ্রহণ করা যাবে না, বরং ধীর স্থিরে খাবার গ্রহণ করতে হবে।

১০. পড়ে যাওয়া লুক্বমা তুলে খাওয়া: খাবার গ্রহণের সময় দেখা যায় অনেকের থালা-বাসন থেকে খাবারের লুক্বমা বা লুক্বমার কিছু অংশ পড়ে যায়। এই পড়ে যাওয়া খাবার সাথে সাথে তুলে খাওয়া সুন্নত। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মতকে শিক্ষা দেয়ার জন্য দেখিয়েছেন, খাবারকালে পড়ে যাওয়া খাবার তিনি তুলে খেতেন।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ جَابِرٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِذَا وَقَعَتْ لُقْمَةُ اَحَدِكُمْ فَلْيَأْخُذْهَا فَلْيُمِطْ مَا كَانَ بِـهَا مِنْ اَذًى وَلْيَأْكُلْهَا وَلَا يَدَعْهَا لِلشَّيْطَانِ وَلَا يَـمْسَحْ يَدَهٗ بِالْمِنْدِيْلِ حَتّٰى يَلْعَقَ اَصَابِعَهٗ فَاِنَّهٗ لَا يَدْرِيْ فِىْ اَىِّ طَعَامِهِ الْبَرَكَةُ.

অর্থ: “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমাদের কারো খাবারের লুক্বমা পড়ে গেলে সে যেন তা তুলে নেয়। তারপর তাতে যে আবর্জনা স্পর্শ করেছে তা যেন দূরীভূত করে এবং খাদ্যটুকু খেয়ে ফেলে। শয়তানের জন্য সেটি যেন ফেলে না রাখে। আর তার আঙ্গুল চেটে না খাওয়া পর্যন্ত সে যেন তার হাত রুমাল দিয়ে মুছে না ফেলে। কেননা সে জানে না খাদ্যের কোন অংশে বরকত রয়েছে।” (মুসলিম শরীফ: কিতাবুশ শারাবাহ: হাদীছ শরীফ নং ৫১৯৬)

অন্য এক হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে,

مَنْ اَكَلَ مَا سَقَطَ مِنَ الْـمَائِدَةِ عَاشَ فِيْ سَعَةٍ وَعُوْفِيْ فِيْ وَلَدِهٖ

অর্থ: “যে ব্যক্তি দস্তরখান থেকে পড়ে যাওয়া খাবার তুলে খাবে তার দস্তরখানা প্রশস্থ হয়ে গেল অর্থাৎ তার রিযিকের মধ্যে বরকত এসে গেল এবং তার সন্তান-সন্ততি সুস্থতা ও নিরাপত্তা পেয়ে গেল।” (ইহইয়াউ উলুমিদ্দীন)

আরো বর্ণিত রয়েছে-

اٰمَنَ مِنَ الْفَقْرِ وَالْبَرْصِ وَالْـجُذَامِ وَصَرَفَ عَنْ وَّلَدِهِ الْـحُمُقِ

অর্থ: “সে ব্যক্তি অভাব অনটন ও মুখাপেক্ষিতা থেকে নিরাপদ হয়ে গেল। ধবল ও কুষ্ঠরোগ থেকে রক্ষা পেল এবং সন্তান-সন্ততি থেকে নির্বুদ্ধিতা ও বোকামী দূর হয়ে গেল।” (ইহইয়াউ উলুমিদ্দীন)

১১. খাবারের সমালোচনা না করা: অনেকেই খাবারের নানারূপ দোষ-ত্রুটি ধরতে অভ্যস্তএই নিয়ে ফেৎনা ফাসাদও সৃষ্টি হয়অথচ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন কখনো খাবারের দোষ ধরতে নেই এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ مَا عَابَ رَسُوْلُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ طَعَامًا قَطُّ اِنِ اشْتَهَاهُ اَكَلَهٗ وَاِنْ كَرِهَهٗ تَرَكَهٗ.‏

অর্থ: “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হায়াতুন নবী, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কখনও খাদ্যের দোষ বর্ণনা করতেন না। পছন্দ হলে তিনি খেতেন, আর অপছন্দ হলে পরিত্যাগ করতেন।(আবূ দাঊদ শরীফ: কিতাবুত ত্বয়ামাহ: হাদীছ শরীফ নং ৩৭৬৩)

 ১২. ঠান্ডা করতে খাবারে পাত্রে ফুঁক না দেওয়া: ঠান্ডা করতে খাবারের মধ্যে ফুঁক দেওয়া অনেক রোগ পয়দা হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কোন খাবার ঠান্ডা করতে ফুঁ মুবারক দিতেন না।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَسْـمَاءَ بِنْتِ اَبِـيْ بَكْرٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا اَنَّـهَا كَانَتْ اِذَا ثَرَدَتْ شَيْئًا غَطَّتْهُ حَتّٰى يَذْهَبَ ثَوْرُهُ ثُـمَّ قَالَتْ اِنِّـيْ سَـمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ اِنَّهُ اَعْظَمُ لِلْبَرَكَةِ

অর্থ: “হযরত আসমা বিনতে আবূ বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি কোন কিছু রান্না করলে সেটা ঠান্ডা হওয়া পর্যন্ত রেখে দিতেন। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইরশাদ মুবারক করতে শুনেছি, (খাবারের বেশী গরমভাব দূর করে খেলে) তা অত্যধিক বরকতময় হয়।” (মুসনাদে আহমাদ শরীফ ৬ষ্ঠ খণ্ড ৩৫০ পৃষ্ঠা: হাদীছ শরীফ নং ২৭০৪৯৮, বৈরূত ছাপা; মুদতাদরিকে হাকিম ৪র্থ খণ্ড ১১৮ পৃষ্ঠা: হাদীছ শরীফ নং ৭১২৪, বায়হাক্বী শরীফ  ৭ম খণ্ড ২৮০ পৃষ্ঠা: হাদীছ শরীফ নং ১৪৪০৬; ইবনে হিব্বান ১২তম খণ্ড ৬ পৃষ্ঠা: হাদীছ শরীফ নং ৫২০৭)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّهُ كَانَ يَقُوْلُ لَا يُؤْكَلُ طَعَامٌ حَتّٰى يَذْهَبَ بُـخَارُهُ.

অর্থ: “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, গরম খাবারের ভাপ না চলে যাওয়া পর্যন্ত কোন খাবার খাবে না।” (বায়হাক্বী শরীফ  ৭ম খণ্ড ২৮০ পৃষ্ঠা: হাদীছ শরীফ নং ১৫০২৭)

১৩. আঙুল, হাত ও বাসন চেটে খাওয়া: খাবার খাওয়া শেষ হলে নিজ হাত মুছে ফেলা বা ধুয়ে ফেলার আগে আঙুল, হাত ও বাসন চেটে খাওয়া সুন্নত।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ جَابِرٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَمَرَ بِلَعْقِ الاَصَابِعِ وَالصَّحْنَةِ وَقَالَ‏ اِنَّكُمْ لَا تَدْرُوْنَ فِىْ اَيِّهِ الْبَرَكَةُ‏.‏

অর্থ: “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি (খাবার পর) আঙ্গুলগুলো ও বাসন চেটে খাওয়ার আদেশ মুবারক দিয়েছেন এবং ইরশাদ মুবারক করেছেন, বরকত কোথায় রয়েছে তা তোমরা জানো না।” (মুসলিম শরীফ: কিতাবুশ শারাবাহ: হাদীছ শরীফ নং ৫১৯৩)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِذَا اَكَلَ اَحَدُكُمْ مِنَ الطَّعَامِ فَلَا يَـمْسَحْ يَدَهٗ حَتّٰى يَلْعَقَهَا اَوْ يُلْعِقَهَا‏.‏

অর্থ: “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যখন তোমাদের কেউ আহার করে, সে যেন স্বীয় হস্ত মুছে না ফেলে যতক্ষণ না সে তা নিজে চেটে খায় কিংবা অপরকে দিয়ে চাটায়।” (মুসলিম শরীফ: কিতাবুশ শারাবাহ: হাদীছ শরীফ নং ৫১৮৯ ও ৫১৯০)

 

 

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُعْجِبُهُ الثُّفْلُ قَالَ عَبْدُ اللهِ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ يَعْنِيْ مَا بَقِيَ مِنَ الطَّعَامِ.

অর্থ: “হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ‘সুফল’ পছন্দ করতেন। (ইমাম হযরত তিরমিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উস্তাদ) হযরত আবদুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ‘সুফল’ হচ্ছে সে জিনিস, যা লোকেরা খাদ্য গ্রহণের পর হাড়ি-পাতিলের তলায় লেগে থাকে।” (মুসনাদে আহমাদ শরীফ: হাদীছ শরীফ নং ১৩৩২৩; মুস্তাদরাকে হাকেম শরীফ: হাদীছ শরীফ নং ৭১১৬; জামেউস সগীর শরীফ: হাদীছ শরীফ নং ৯১১০; মিশকাত শরীফ: হাদীছ শরীফ নং ৪২১৭)

খাওয়া শেষে থালা/বর্তন (প্লেট) চেটে খেলে, ওই বর্তন আহারকারীর জন্য দোয়া করে থাকে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عن حَضْرَتْ نُبَيْشَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ اَكَلَ فِيْ قَصْعَةٍ ثُـمَّ لَـحِسَهَا تقول له القَصْعَةُ اَعتقَكَ اللهُ مِنَ النَّارِ كمَا اَعتَقْتَنِي مِنَ الشَّيْطَانِ

অর্থ: “হযরত নুবায়শাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, খাবার শেষে যে ব্যক্তি বর্তন চেটে খাবে, তাহলে সেই বর্তন ওই ব্যক্তির জন্য দোয়া করে এবং বলে মহান আল্লাহ পাক তোমাকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে দিন, যেভাবে তুমি আমাকে শয়তান থেকে স্বাধীন রেখেছ।” (রযীন শরীফ, মিশকাত শরীফ: হাদীছ শরীফ নং ৪২৪২)

অপর বর্ণনায় আছে, খাবার খেয়ে প্লেট বা পাত্রটি চেটে খেলে পাত্রটি আহারকারীর জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে মাগফিরাত করে অর্থাৎ গুণাহ মাফ চায়। এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عن حَضْرَتْ نُبَيْشَةُ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَليْهِ وسَلَّمَ مَنْ اَكَلَ فِيْ قَصْعَةٍ فَلَحِسَهَا اسْتَغْفَرَتْ لَهُ الْقَصْعَةُ.

অর্থ: “হযরত নুবায়শাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি আহার করার পর আহারের পাত্র চেটে খেয়ে পরিষ্কার করে, তার জন্যে পাত্রটি ক্ষমা প্রার্থনা করে।” (ইবনে মাজাহ শরীফ: কিতাবুত ত্বয়ামাহ: হাদীছ শরীফ ৩২৭১)

১৪. পেটের এক তৃতীয়াংশ আহার করা: এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ مِقْدَامِ بْنِ مَعْدِيْكَرِبَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ سَـمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ‏ مَا مَلَا اٰدَمِيٌّ وِعَاءً شَرًّا مِنْ بَطْنٍ بِـحَسْبِ ابْنِ اٰدَمَ اُكُلَاتٌ يُقِمْنَ صُلْبَهٗ فَاِنْ كَانَ لَا مُـحَالَةَ فَثُلُثٌ لِطَعَامِهٖ وَثُلُثٌ لِشَرَابِهٖ وَثُلُثٌ لِنَفَسِهٖ.

অর্থ: “হযরত মিকদাম ইবনে মা’দীকারিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইরশাদ মুবারক করতে শুনেছি, মানুষ পেট হতে অধিক নিকৃষ্ট কোন পাত্র পূর্ণ করে না। মেরুদন্ড সোজা রাখতে পারে এমন কয়েক গ্রাস খাবারই আদম সন্তানের জন্য যথেষ্ট। তারচেয়েও বেশি প্রয়োজন হলে পাকস্থলীর এক-তৃতীয়াংশ খাদ্যের জন্য, এক-তৃতীয়াংশ পানীয়ের জন্য এবং এক তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য রাখবে।” (তিরমিযী শরীফ: কিতাবুয যুহুদ: হাদীছ শরীফ নং ২৩৮০, ইবনে মাজাহ শরীফ: কিতাবুত ত্বয়ামাহ: হাদীছ শরীফ নং ৩৩৪৯)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّ رَجُلًا كَانَ يَأْكُلُ اَكْلًا كَثِيْرًا فَأَسْلَمَ فَكَانَ يَأْكُلُ أَكْلًا قَلِيْلًا فَذُكِرَ ذَلِكَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ اِنَّ الْمُؤْمِنَ يَأْكُلُ فِي مِعًى وَاحِدٍ وَالْكَافِرَ يَأْكُلُ فِي سَبْعَةِ أَمْعَاءٍ‏.‏

অর্থ: “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক লোক খুব বেশী পরিমাণে আহার করতো। লোকটি মুসলিম হলে অল্প আহার করতে লাগলো। ব্যাপারটি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারক-এ পেশ করা হলে তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মু’মিন এক পেটে খায়, আর কাফির খায় সাত পেটে।” (বুখারী শরীফ: হাদীছ শরীফ নং ৫৩৯৭; মুসলিম শরীফ: হাদীছ শরীফ নং ২০৬০)

১৫. পানি পান করার সময় ৩ ঢোকে পান করা ও পাত্রে নিঃশ্বাস না ফেলা: পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ‏ لَا تَشْرَبُوا وَاحِدًا كَشُرْبِ الْبَعِيرِ وَلَكِنْ اِشْرَبُوا مَثْنٰى وَثُلَاثَ وَسَـمُّوْا اِذَا اَنْتُمْ شَرِبْتُمْ وَاحْـمَدُوا اِذَا اَنْتُمْ رَفَعْتُمْ‏.‏

অর্থ: “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা এক চুমুকে উটের মত পানি পান করো না; বরং দুই–তিনবারে (শ্বাস নিয়ে) পান করো। তোমরা যখন পান করবে তখন মহান আল্লাহ্‌ পাক উনার নাম মুবারক নিবে (বিসমিল্লাহ বলবে) এবং যখন শেষ করবে তখন মহান আল্লাহ্‌ পাক উনার প্রশংসা করবে (আলহামদুলিল্লাহ বলবে)।” (তিরমিযী শরীফ: কিতাবুশ শারাবাহ: হাদীছ শরীফ নং ১৮৮৫)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَكَانَ يَتَنَفَّسُ فِي الاِنَاءِ ثَلَاثًا‏.‏

অর্থ: “হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পাত্র হতে পানি পানের সময় তিনবার নিঃশ্বাস মুবারক নিতেন।” (তিরমিযী শরীফ: কিতাবুশ শারাবাহ: হাদীছ শরীফ নং ১৮৮৪)

১৫. জগ বা কলসীর মুখে মুখ লাগিয়ে পানি পান না করা : কলসী, জগ বা এ জাতীয় পাত্রের মুখে মুখ লাগিয়ে পান করা উচিত নয়।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ نَـهٰى النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ الشُّرْبِ مِنْ فِي السِّقَاءِ.

অর্থ: “হযরত ইবনে ‘আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মশ্‌কের মুখ থেকে পানি পান করতে নিষেধ করেছেন।” (বুখারী শরীফ: কিতাবুশ শারাবাহ: হাদীছ শরীফ নং ৫৬২৯)

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ نَـهٰى النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَنْ يُّشْرَبَ مِنْ فِي السِّقَاءِ‏.

অর্থ: “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মশ্‌কের মুখ থেকে পানি পান করতে নিষেধ করেছেন।” (বুখারী শরীফ: কিতাবুশ শারাবাহ: হাদীছ শরীফ নং ৫৬২৮)

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদেশ-নিষেধ মুবারক উনাদের মধ্যে লক্ষ-কোটি হিক্বমত মুবারক রয়েছেন। তবে মশ্‌কের মুখ থেকে পানি পান করতে নিষেধ করার পিছনে একটি হিক্বমত এই হতে পারে যে, সরাসরি মশ্‌কের মুখ থেকে বা জগ বা কলসীর মুখ থেকে পানি পান করলে ভিতরে কোন ময়লা বা পোকা-মাকড় থাকলে অজান্তেই তা পানকারীর পেটে চলে যেতে পারে, যা ক্ষতির কারণ হতে পারে।

১৫. খাবারের শেষে দোয়া পড়া: নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খাবার শেষে মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে শুকরিয়া জানাতেন। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ سَعِيدٍ الْـخُدْرِيِّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ اِذَا فَرَغَ مِنْ طَعَامِهٖ قَالَ اَلْـحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ اَطْعَمَنَا وَسَقَانَا وَجَعَلَنَا مِنَ الْـمُسْلِمِيْنَ‏.‏

অর্থ: “হযরত আবূ আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খাওয়া শেষে বলতেন, আলহামদু লিল্লাহিল্লাজি আতআমানা ওয়াসাকানা ওয়াজাআলানা মিনাল মুসলিমিন’ (অর্থাৎ সেই মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য সমস্ত প্রশংসা যিনি আমাদেরকে খাওয়ালেন, পান করালেন এবং মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত করলেন)।” (আবূ দাঊদ শরীফ: কিতাবুত ত্বয়ামাহ: হাদীছ শরীফ নং ৩৮৫০)

১৬. আহার শেষে আগে দস্তরখানা উঠিয়ে তারপর নিজে উঠা: খাবার খাওয়া শেষ হয়ে গেলে আগে দস্তরখান উঠিয়ে তারপর নিজে উঠতে হবে।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَمِّ الْـمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ الصِّدِّيْقَةِ عَلَيْهَا السَّلَامُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَـهٰى اَنْ يُقَامَ عَنِ الطَّعَامِ حَتّٰى يُرْفَعَ‏.‏

অর্থ : “উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খাদ্যসামগ্রী তুলে নেয়ার পূর্বে উঠে যেতে নিষেধ করেছেন।” (ইবনে মাজাহ শরীফ: কিতাবুত ত্বয়ামাহ: হাদীছ শরীফ নং ৩২৯৪)

খাওয়ার শেষে দস্তরখানা উঠানোর পূর্বে খাবার গ্রহণকারীর উঠে যাওয়া আদবের খিলাফ। বরং আগে দস্তরখানা উঠাবেন তারপর খাবার গ্রহণকারী উঠবেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম তিনি দস্তরখানা মুবারক উঠানোর সময় এই দোয়া পড়েছেন।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-

عن حضرت ابى امامة رضى الله تعالى عنه ان النبى صلى الله عليه وسلم كان اذا رفع مائدته قال الحمد لله حمدا كثيرا طيبا مباركا فيه غير مكفى ولامودع ولا مستغنى عنه ربنا

অর্থ: “হযরত আবু উমামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সামন থেকে যখন দস্তরখানা মুবারক উঠানো হতো, তখন তিনি এই দোয়া মুবারক পড়তেন-

الـحمد لله حمدا كثيرا طيبا مباركا فيه غير مكفى ولامودع ولا مستغنى عنه ربنا

অর্থ: “পাক-পবিত্র বরকতময় সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার জন্য। আয় বারে ইলাহী, মহান রব তায়ালা! আপনার রহমত হতে বিমুখ হওয়া যায় না। উহার অন্বেষন ত্যাগ করা যায় না। আর প্রয়োজন হতেও মুক্ত থাকা যায় না।” (বুখারী শরীফ, মিশকাত শরীফ, কিতাবুল আত্বয়িমাহ)

১৭. আহার শেষ করেই পানি পান করা বা শুয়ে পড়া উচিত নয়: নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খাদ্য গ্রহণের সাথে সাথে পানি পান করতেন না। বরং কিছুক্ষণ পরে পান করতেন। (মাদারেজুন নুবুওওয়াহ)

এছাড়াও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খানা খেয়েই শুয়ে পড়তে নিষেধ করতেন। (যাদুল মা‘য়াদ)

খাবার গ্রহণের পর পরই ঘুমালে হজম ঠিকভাবে হয় না। তাই খাবারের পরই ঘুম বড় ধরণের বিপদ ডেকে আনে। চিকিৎসা বিজ্ঞান জানায়, খাবারের পর পরই ঘুম হজম শক্তিতে ব্যাঘাত ঘটায়। ফলে শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়া থেকে শুরু করে হতে পারে স্ট্রোকও। তাই কিছুটা সময় নিয়ে তারপর ঘুমানো উচিত। ঘুমের ২ ঘণ্টা আগে খাবার গ্রহণ করা যেতে পারে।

১৮. খাদ্য গ্রহণের পর খিলাল করা: নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খাদ্য গ্রহণের পর সম্মানিত নূরুল্লাহ মুবারক (দাঁত মুবারক) খিলাল করতেন এবং খিলাল সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرِتْ أبي أيوب الأنصاري رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ حَبَّذَا الْمُتَخَلِّلُونَ مِنْ أُمَّتِي قَالُوا وَمَا الْمُتَخَلِّلُونَ يَا رَسُوْلَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ الْمُتَخَلِّلُوْنَ بِالْوُضُوْءِ وَالْمُتَخَلَّلُوْنَ مِنْ الطَّعَامِ اَمَّا تَـخْلِيْلُ الْوُضُوْءِ فَالْمَضْمَضَةُ وَالْاَسْتِنْشَاقُ وَبَيْنَ الْاَصَابِعِ. وَاَمَّا تَـخْلِيْلُ الطَّعَامِ فَمِنْ الطَّعَامِ اَنَّهُ لَيْسَ شَيْءٌ اَشَدَّ عَلَى الْمَلَكَيْنِ مِنْ اَنْ يَّرَيَا بَيْنَ اَسْنَانِ صَاحِبِهِمَا طَعَامًا وَهُوَ قَائِمٌ يُصَلِّيْ.

অর্থ: “হযরত আবূ আইউব আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত হুজরা শরীফ থেকে বাইরে এসে আমাদেরকে ইরশাদ মুবারক করেন, আমার উম্মতের খিলালকারীগণ কতই না চমৎকার। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সুওয়াল মুবারক করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মুতাখাল্লিলুন কি? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, উযূ এবং খাদ্যের ক্ষেত্রে খিলালকারীগণ। উযূর ক্ষেত্রে খিলাল করা হচ্ছে মজমজা (কুলি) করা এবং ইসতেনশাক (নাকে পানি দেয়া) করা সহ অঙ্গুলীসমূহ খিলাল করা। আর আহারের পরে দাঁতে খিলাল করা। কেননা নামায আদায়ের সময় মুমিনের দাঁতের ফাঁকে লেগে থাকা খাদ্যাংশ সঙ্গী হযরত ফেরেশতা আলাইহিমাস সালাম উনাদের নিকট অত্যন্ত কষ্টদায়ক। (তবারানী ফিল কাবীর; তারগীব ওয়াত তারহিব ১ম খণ্ড ১০৩ পৃষ্ঠা: হাদীছ শরীফ নং ৩৩৭)

১৯. দুপুরে খাবার গ্রহণের পর কায়লুলা করা আর রাতের খাবার গ্রহণের পর কমপক্ষে ৪০ কদম হাঁটা: দুপুরে খাবার গ্রহণের পর বিছানায় সামান্য আরাম করাকে কায়লুলা বলে। কায়লুলা একটি সম্মানিত সুন্নত মুবারক। এর মাধ্যমে রাতের ইবাদত করতে সুবিধা হয়।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ‏ اسْتَعِيْنُوْا بِطَعَامِ السَّحَرِ عَلٰى صِيَامِ النَّهَارِ وَبِالْقَيْلُوْلَةِ عَلٰى قِيَامِ اللَّيْلِ‏.‏

অর্থ: “হযরত ইবনে ‘আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, দিনের রোযা রাখতে রাতে সাহরী খাও এবং রাতের ইবাদতে মনোযোগী হতে দিনের বেলা কায়লুলা করো।” (ইবনে মাজাহ শরীফ: কিতাবুত ত্বয়ামাহ: হাদীছ শরীফ নং ১৬৯৩)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার এক বর্ণনায় এসেছে, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, তোমরা কায়লুলা করো, কারণ শয়তান কায়লুলা করে না।

অনেকে ধারণা করে থাকে যে, দুপুরের খাবার খেয়ে একটু হাঁটাহাঁটি করলে হজম ভালো হয়। আসলে তা নয়, বরং হজমের সমস্যা বাড়ে। কারণ, দুপুরে খাবার হজমের জন্য বিশ্রাম দরকার হয় আর পরিশ্রম করলে হজম হয় না। তবে রাতের খাবার গ্রহণের পর হাঁটাহাঁটি করলে হজম সহজতর হয়। কিন্তু খাবার খাওয়া শেষ করেই তাৎক্ষণিকভাবে হাঁটাহাঁটি করা উচিত নয়। কারণ এতে করে আমাদের শরীর পরিপাক প্রক্রিয়ায় খাবার থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি শোষণে অক্ষম হয়ে পড়ে।

রাতের খাবার গ্রহণের পর কমপক্ষে ৪০ কদম না হেঁটে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। (তিব্বে নববী)

বর্তমান মেডিকেল সাইন্স ও রাতে খাওয়ার পর হাঁটতে বলেন। এতে করে শক্তি খরচ হয় ফলে খাবার হজম হয়। রাতে খাওয়ার পর ২০ মিনিট হাঁটা অন্য সময় ১ ঘন্টা হাঁটার সমান।

বস্তুত দুপুরে খাবার গ্রহণের পর বিছানায় সামান্য আরাম করা এবং রাতে খাবার গ্রহণের পর ৪০ কদম হাঁটার ব্যাপারে বাংলায় প্রচলিত প্রবাদটি নিম্নরূপ-

দুপুরে বালিশ

রাতে চল্লিশ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের ভ্রান্ত আক্বীদা ও তার খন্ডন মূলক দাঁতভাঙ্গা জবাব

সম্মানিত পাঠক! প্রচলিত ৬ উছূলভিত্তিক তাবলীগ জামায়াতের বাস্তবতা সম্পর্কে যদি সত্যিই জানতে আগ্রহী হন তবে দলিল ভিত্তিক এই প্রতিবেদনটি পড়ুন। ========================================================== ভ্রান্ত আক্বীদা (১)   প্রচলিত ৬ উছূলভিত্তিক তাবলীগ জামায়াতের লোকদের লিখিত কিতাবে এ কথা উল্লেখ আছে যে, মূর্খ হোক, আলিম হোক, ধনী হোক, দরিদ্র হোক, সকল পেশার সকল মুসলমানের জন্য তাবলীগ করা ফরজে আইন। (হযরতজীর মালফুজাত-৪, পৃষ্ঠা-৭, অনুবাদক- মাওলানা ছাখাওয়াত উল্লাহ; তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব, পৃষ্ঠা-৫৬, অনুবাদক- ইসমাঈল হোসেন; তাবলীগে ইসলাম, পৃষ্ঠা-৩, লেখক- মাওলানা আব্দুস সাত্তার ত্রিশালী; পস্তী কা ওয়াহিদ এলাজ, লেখক- মাওলানা এহ্‌তেশামুল হাসান কান্দলবী, পৃষ্ঠা-২২) ——————————————————————————— জবাব : তাদের উপরোক্ত বক্তব্যের প্রেক্ষিতে প্রশ্ন জাগে, তাবলীগ করা কি- ফরজে আইন নাকি ফরজে কিফায়া? কেননা- যে ইবাদত প্রত্যেকের জন্য আলাদাভাবে পালন করা ফরজ তা  ফরজে আইন । যেমন- নামাজ, রোজা, ইত্যাদি। আর যে ইবাদত সমষ্টিগতভাবে পালন করা ফরজ অর্থাৎ যে ফরজ কাজ দেশবাসী, শহরবাসী,এলাকাবাসী ব...

*Coca-cola is Haram for Muslim

Because Coca-Cola and Other Soft Drinks may Contain ALCOHOL. Read Details here:~~~~ COCA-COLA: THE REAL THINGS? The proportions in the accompanying recipe are based on the analyses of Coke quoted above and Merory's recipes. The amount of caffeine agrees with that stated in Coca-Cola's So you asked about soft drinks... pamphlet; this is about a third of the caffeine found in the trial analyses. The following recipe produces a gallon of syrup very similar to Coca-Cola's. Mix 2,400 grams of sugar with just enough water to dissolve (high-fructose corn syrup may be substituted for half the sugar). Add 36 grams of caramel, 3.1 grams of caffeine, and 11 grams of phosphoric acid. Extract the cocaine from 1.1 grams of coca leaf ( Truxillo growth of coca preferred) with toluol; discard the cocaine extract. Soak the coca leaves and kola nuts (both finely powdered; 0.37 gram of kola nuts) in 22 grams of 20 percent alcohol. California white wine fortified to 20 percent strengt...

TABLEEGHI KUFRI AQEEDA--Exposed!!!

THE AQEEDA OF THE TABLEEGHI JAMAAT AND DEOBAND—EXPOSED!!! ===================================================== To have good and strong Imaan, one must have the proper Aqeeda. It is for this reason that we quote a few un-Islamic beliefs of the leaders of the Tableeghi Jamaat together with the proper Islamic answers. The present Molvis and devotees of the T. Jamaat refuse to condemn the persons who wrote such bad beliefs and to even disassociate themselves from such false beliefs. The un-Islamic beliefs which we have quoted below are quotations from those individuals who possess such beliefs and by writing them in this handbill, we have no intention of Kufr. FALSE BELIEF 1: “Allah can speak lies“. (“Barahine Qaatia” by Khaleel Ambetwi; “Yakrozi” by Ismaeel Dehlwi; “Fatawa Rasheedia” by Rasheed Ahmed Gangohi). NAUZ BILLAH ANSWER: Lies is a defect which is not worthy of the Zaat of Almighty Allah and is totally Muhaal (Impossible) for Almighty Allah. Allah is free from all shortages a...