নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খাওয়ার সময় দস্তরখানা বিছিয়ে খেতেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَنَسِ
بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ
اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ مَا أَكَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلٰى خِوَانٍ وَلَا
فِي سُكْرُجَةٍ وَلَا خُبِزَ لَهٗ مُرَقَّقٌ. قُلْتُ لِـحَضْرَتْ قَتَادَةَ رَضِىَ
اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَلٰى مَا يَأْكُلُونَ قَالَ عَلَى السُّفَرِ.
অর্থ: “হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ,
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কখনো ‘খিওয়ান’ (টেবিলের মত উঁচু
স্থানে)-এর উপর খাবার রেখে আহার করেননি এবং ছোট ছোট বাটিতেও তিনি আহার করেননি। আর উনার
জন্য কখনো পাতলা রুটি তৈরী করা হয়নি। রাবী (হযরত ইউনুস রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি) বলেন, আমি হযরত কাত্বাদাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে
জিজ্ঞেস করলাম, তাহলে উনারা কিসের উপর আহার করতেন? তিনি বললেন, খয়েরী রংয়ের দস্তরখানের উপর।” (বুখারী
শরীফ: কিতাবুত ত্বয়ামাহ: হাদীছ শরীফ নং ৫৪১৫, তিরমিযী শরীফ:
হাদীছ শরীফ নং ১৭৮৮, ইবনে মাজাহ শরীফ: হাদীছ শরীফ নং ৩৪১৭)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত আছে-
عن حَضْرَتِ الْـحَسَنِ
بْنِ مِهْرَانَ الْكِرْمَانِـىْ رَضِىَ اللهُ
تَعَالٰى عَنْهُ سـمعتُ فَرْقَدًا
صَاحِبِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ رَاَيْتُ النَّبِىَّ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَاَكَلَتُ عَلٰى مائِدتِه
অর্থ: “হযরত হাসান ইবনে মিহরান আল কিরমানী
রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত ফারকাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
উনাকে বলতে শুনেছি। আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সাক্ষাৎ মুবারক করেছি এবং উনার চামড়ার দস্তরখান মুবারকে
একত্রে আহার করেছি।” (আখলাকুন নবী-৩০১)
উল্লেখ্য যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মুবারক সফরে দস্তরখানা সাথে নিয়ে যেতেন। উনার সফর শরীফের সামান-আসবাব মুবারক উনাদের মধ্যে দস্তরখানা মুবারক ছিল।
সাইয়্যিদাতুনা হযরত আসমা
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি পবিত্র হিজরত মুবারক উনার সময় সফর মুবারকের যে
সামান-আসবাব প্রস্তুত করে দিয়েছিলেন তার মধ্যে দস্তরখানা মুবারকও ছিল।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দস্তরখান বিছিয়ে
খেতেন। তিনি কখনো টেবিল বা টেবিলের মত উঁচু স্থানের উপর খাবার রেখে আহার করেননি।
তাই টেবিল বা টেবিলের মত উঁচু স্থানের উপর খাবার রেখে আহার করা বিদ্‘য়াত।
দস্তরখানের রং:
শামসুল আরেফীন হযরত খাজা
উছমান হারূনী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বরাত দিয়ে সুলত্বানুল হিন্দ হযরত খাজা ছাহিব
রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার সংকলিত ‘আনীসুল আরওয়াহ’ নামক কিতাব উনার অষ্টম
মজলিসে উল্লেখ করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দস্তরখানা মুবারক ব্যতীত সাধারণত খাদ্য মুবারক গ্রহণ করতেন
না। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক
উপস্থিতিতে যখনই খাদ্য মুবারকের আয়োজন করা হতো, তখনই খয়েরী রংয়ের চামড়ার
দস্তরখান মুবারক ব্যবহার করা হতো।
এটা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অন্যতম সম্মানিত
সুন্নত মুবারক।
খয়েরী রংয়ের দস্তরখানে খাবার খাওয়া হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনারও
সম্মানিত সুন্নত এবং অন্যান্য হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনাদেরও সম্মানিত সুন্নত।
সুবহানাল্লাহ! হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি কখনো খয়েরী রংয়ের দস্তরখানে খাবার
না রেখে আহার করতেন না। সুবহানাল্লাহ! হযরত রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার দস্তরখানাও
খয়েরী রংয়ের ছিল। সুবহানাল্লাহ!
উল্লেখ্য, ছাগলের চামড়ার তৈরি দস্তরখানায় আহার করা খাছ সুন্নত। অতঃপর গরুর চামড়ার তৈরি
দস্তরখানা। কারো পক্ষে চামড়ার দস্তরখানায় খাওয়া সম্ভব না হলে খয়েরী রংয়ের কাপড় বিছিয়ে
খেতে পারেন।
দস্তরখানে আহার করার ফযীলত:
দস্তরখানা ব্যবহারের ফযীলত সম্পর্কে বিভিন্ন কিতাবে বিভিন্ন বিষয় বর্ণিত রয়েছে।
নিম্নে এ বিষয়ে আলোচনা করা হলো-
১. যে ব্যক্তি খয়েরী রংয়ের দস্তরখানে আহার করবেন, তিনি প্রতি লুক্বমার বিনিময়ে ১০০ করে ছাওয়াব লাভ করবেন এবং সে ব্যক্তির জন্য
বেহেশতের ১০০টি দরজা নির্ধারণ করা হবে ও ১০০টি কামরা সুসজ্জিত করা হবে।
সুবহানাল্লাহ!
২. সে ব্যক্তি সব সময়ই হযরত রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম ও অন্যান্য হযরত নবী আলাইহিমুস
সালাম উনাদের হাজার হাজার দু‘য়া মুবারক লাভ করবেন। সুবহানাল্লাহ!
৩. যে ব্যক্তি খয়েরী দস্তরখানে কোন গরীব-দুঃখীকে আহার করাবেন,
উনার জন্য শ্রেষ্ঠ প্রতিদান উনার আমলনামায় লিখা হবে
এবং যখন রুটি খাওয়া শেষ হবে, তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি সেই ব্যক্তির গুণাহসমূহ মাফ করে দিবেন।
সুবহানাল্লাহ!
৪. যে ব্যক্তি খয়েরী রংয়ের দস্তরখানে রুটি খাবেন, তিনি একটি উমরা হজ্জের ছাওয়াব পাবেন, ১০০ জন ক্ষুধার্তকে পেট ভরে খাওয়ানোর ছাওয়াব পাবেন। উক্ত ব্যক্তি এত বেশি ছাওয়াব
লাভ করবেন, যেন
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মতের
মধ্যে ১০০০ বন্দীকে মুক্ত করালেন। সুবহানাল্লাহ!
৫. যে ব্যক্তি সবসময় খয়েরী রংয়ের দস্তরখানে আহার করতে থাকবেন,
রোজ হাশরে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনার জন্য বেহেশতী
পোশাকসহ বোরাক নিয়ে আসবেন। সে ব্যক্তিকে বোরাকের উপরে উপবেশন করিয়ে এবং পোশাক পরিয়ে
বেহেশতে নিয়ে যাবেন। সুবহানাল্লাহ!
৬. যে ব্যক্তি কোন মেহমানকে খয়েরী রংয়ের দস্তরখানে আহার করাবেন,
তিনি প্রতিটি দানা যা মেহমানকে ভক্ষণ করাবেন তার বিনিময়ে
১০০০ নেকী লাভ করবেন। সুবহানাল্লাহ!
৭. যে ব্যক্তি খয়েরী রংয়ের দস্তরখানে খানা খাবেন এবং খাওয়াবেন মহান আল্লাহ
পাক তিনি উনাকে রহমতের নজরে দেখবেন এবং উনাকে ১০০০টি বেহেশতের প্রকোষ্ঠ দান করবেন।
সুবহানাল্লাহ! (আনিসুল আরওয়াহ)
৮. পেটের রোগ দূরীভূত হবে এবং স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পাবে। সুবহানাল্লাহ!
৯. ক্বিয়ামতের দিন ডান হাতে আমলনামা লাভ করবে। সুবহানাল্লাহ!
স্মর্তব্য যে, দস্তরখানাকে তা’যীম-তাকরীম, সম্মান করা উচিত। দস্তরখানা পা দ্বারা পাড়ানো, দস্তরখানার
উপর দিয়ে যাওয়া বেয়াদবি, শরাফত বা শিষ্টাচার বিবর্জিত কাজ।
দস্তরখানা সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা সুন্নত। অপরিষ্কার অপরিচ্ছন্ন রাখা
সম্মানিত সুন্নত উনার পরিপন্থী।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন