প্লাষ্টিক পাত্রের অপকারীতা ও মাটির পাত্রের বিভিন্ন উপকারিতা:
প্লাস্টিকে বিপিএ- এর মতো কেমিক্যাল রয়েছে; যা অস্বাস্থ্যকর। প্লাস্টিকের বোতলে পানি সংরক্ষণের পর তা পান করলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ে। অন্যদিকে মাটির পাত্রে সংরক্ষণ করা পানি শরীরের জন্য বেশ উপকারী। এতে কোনো স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকে না। আবার স্বাদেরও পরিবর্তন হয় না।
গবেষণায় জানা গেছে, প্লাস্টিক পাত্রে সংরক্ষণ করা পানি শরীরের টেস্টোটেরোনের মাত্রা কমিয়ে দেয়। কিন্তু মাটির পাত্রে রাখা পানি টেস্টোটেরোন বজায় রাখতে সহায়তা করে এবং বিপাক ক্রিয়া শক্তিশালী রাখে।
মাটি ক্ষারজাতীয় উপাদান। এটি পানির পিএইচ লেভেল বজায় রাখে। মাটির পাত্রে অ্যাসিডিক খাবার রান্না করলে এর ক্ষতিকারক উপাদান নিষ্ক্রিয় করে দেয় মাটির ক্ষারীয় উপাদান।মাটির পাত্র শতভাগ প্রাকৃতিক। এতে কোনো বিষাক্ত পদার্থ নেই। মাটির পাত্রে খাবার রাখলে দীর্ঘ সময় ধরে গরম থাকে। খাবারের পুষ্টিগুণও অটুট রাখে মাটির পাত্র।
খাবার পরিবেশনের জন্যও মাটির বাসন বেশ স্বাস্থ্য উপযোগী ও সুন্দর। কারণ অ্যালুমিনিয়াম, টাইটানিয়াম, নিকেল এবং ক্রোমিয়ামের মতো ধাতব পাত্রে রান্না করলে খাবার ধাতুর সংস্পর্শে অস্বাস্থ্যকর হয়। কিন্তু মাটি পুরোপুরি প্রাকৃতিক, তাই মাটির পাত্রে খাবারের পুষ্টিগুণ অপরিবর্তিত থাকে।
রেফ্রিজারেটর হিসেবে কাজ করে মাটির পাত্র। মাটির পাত্র ব্যবহারে খাবার শীতল রাখা যায়। যখন রেফ্রিজারেটর ছিল না, তখন খাবার ভালো রাখতে মাটির পাত্রই ছিল ভরসা।
জানেন কি খাবার রান্না করা অথবা পানি রাখার জন্য স্টিল, প্লাস্টিক অথবা কাচের পাত্রের চেয়ে মাটির পাত্রই বেশি স্বাস্থ্যকর?
খাবার রান্না, সংরক্ষণ ও পরিবেশনে কেন মাটির পাত্র ব্যবহার করবেন?
অ্যালুমিনিয়াম, টাইটানিয়াম, নিকেল এবং ক্রোমিয়ামের মতো ধাতব পাত্রে রান্না করলে খাবার ধাতুর সংস্পর্শে এসে অস্বাস্থ্যকর হয়ে পড়ে। কিন্তু মাটি পুরোপুরি প্রাকৃতিক, তাই মাটির পাত্রে খাবারের পুষ্টিগুণ অপরিবর্তিত থাকে।
প্লাস্টিকের বোতলের বদলে পানি সংরক্ষণ করুন মাটির পাত্রে। কারণ প্লাস্টিকের থাকে বিপিএ-এর মতো কেমিক্যাল যা অস্বাস্থ্যকর। মাটির পাত্রে সংরক্ষণ করা পানির স্বাদে কোনো ধরনের পরিবর্তন হয় না।
কিছু গবেষণা বলছে, প্লাস্টিক পাত্রে সংরক্ষণ করা পানি শরীরের টেস্টোটেরোন-এর মাত্রা কমিয়ে দেয়। কিন্তু মাটির পাত্রে রাখা পানি টেস্টোটেরোন বজায় রাখতে সহায়তা করে এবং বিপাক ক্রিয়া শক্তিশালী রাখে।
মাটি ক্ষারজাতীয় উপাদান। এটি পানির পিএইচ লেভেল বজায় রাখে। এছাড়া অ্যাসিডিক খাবার মাটির পাত্রে রান্না করলে এর ক্ষারীয় প্রকৃতি নিষ্ক্রিয় করে দেয় ক্ষতিকারক উপাদান।
মাটির পাত্র শতভাগ প্রাকৃতিক। এতে কোনো ধরনের বিষাক্ত পদার্থ নেই। দীর্ঘক্ষণ খাবার গরম রাখতে পারে এটি। পুষ্টিগুণও অটুট থাকে মাটির পাত্রে।
মাটির পাত্রে রান্না করার উপকারীতা :
মাটির পাত্রে রান্নায় তেল লাগে কম। খাবারের স্বাদ ও পুষ্টিগুণ রাখে অক্ষুন্ন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শখে মাটির পাত্রে রান্না ও পরিবেশন করেন অনেকে। তবে শুধু ঐতিহ্য ব্ াআনুষ্ঠানিকতা পালনের জন্যই নয়, মাটির পাত্রে খাওয়া এবং রান্না দুই ক্ষেত্রেই রয়েছে উপকার।
হান্ডি বিরিয়ানি আর সাধারণ বিরিয়ানির মধ্যে পার্থক্য নিশ্চই জানা আছে। এদের মূল পার্থক্য স্বাদ আর পুষ্টি উপদানে। কাচ বা স্টিলের পাত্রের ব্যবহার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মাটির পাত্রের ব্যবহার প্রায় হারাতে বসেছে।
বর্তমানে পুরানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। নতুন প্রযুক্তিতে তৈরি করা হচ্ছে মাটির তৈজসপত্র।
স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে এই বিষয়ের ওপর প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে এটা আসলে কতটা কার্যকর ও উপকারী সেসব বিষয় নিয়েই এই আলোচনা।
মাটির পাত্রে রান্নার উপকারিতা: স্বাদ ও পুষ্টির বিবেচনায় সব ধরনের রান্নার জন্য মাটির পাত্র উপযোগী। আয়ুর্বেদশাস্ত্র অনুযায়ী, মাটির পাত্র রান্না ধীর করে এবং খাবারের স্বাদ ও মান উন্নত করে।
অনেকে বলেন, “মাটির প্রাকৃতিক নিরোধক বৈশিষ্ট্য পাত্রের ভারসাম্য রক্ষা করে এবং পুষ্টি উপাদানের কোনো ক্ষতি করে না। পাশাপাশি খাবার পুড়ে যাওয়াও প্রতিরোধ করে।”
মানব স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী: “মাটির পাত্র এক ধরনের ক্ষারীয় উপাদান দিয়ে তৈরি যা খাবারের অ্যাসিড প্রক্রিয়াজাতকরণে সাহায্য করে এবং হজমে সহায়তা করে। তাছাড়া মাটির পাত্রে রান্না করা খাবারে লৌহ, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও সালফারের মান বেশি থাকে।”
“মাটির পাত্রে রান্না করলে খুব সহজেই তেলের ব্যবহার এড়িয়ে যাওয়া যায়। কেননা এর প্রাকৃতিক আর্দ্রতা খাবার ভালোভাবে রান্না করার জন্য উপযোগী।”
প্রাকৃতিক ক্ষারীয় উপাদান: মাটির পাত্র কাদা দিয়ে তৈরি করা হয়। যাতে প্রাকৃতিক ভাবে ক্ষারীযুক্ত হয়। তাপ প্রয়োগে মাটির পাত্র খাবারের অ্যাসিডের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করে এবং পিএইচ’য়ের ভারসাম্য বজায় রাখে। যা খাবারকে সহজপাচ্য করে।
তাছাড়া এটা খাবারের পুষ্টি উপাদান যেমন- লৌহ, ক্যালসিয়াম, ম্যাগ্নেসিয়াম এবং সালফার ঠিক রাখে।
তেলের কম ব্যবহার: মাটির পাত্রে রান্নার আরেকটি ভালো দিক হল, এতে তেল কম লাগে। ধীর গতিতে রান্না ও তাপ নিরোধক হওয়ায় এটা খাবারের প্রাকৃতিক তেল ও আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
স্বাদ ও গন্ধ: খাদ্যের পুষ্টিমান বজায় রেখে স্বাদ ও গন্ধ অক্ষুণ্য রাখে বা বাড়িয়ে দেয় মাটির পাত্র। যা অন্যান্য উপাদানের তৈজস দিয়ে সম্ভব নয়।
সস্তা ও সহজ প্রাপ্য: মাটির পাত্রের দাম অন্যান্য তৈজসের তুলনায় বেশ সস্তা। আর রাস্তার পাশের দোকানেই পাওয়া যায়।
মাটির পাত্রে রান্না পদ্ধতি-
১. রান্না শুরু করার আগে পাত্রটি ১৫ থেকে
২৯ মিনিট পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। যেন পাত্রটি ভালোভাবে পানি শুষে নিতে পারে।
২. তুলনামূলক কম প্রেসারে ও ধীরে ধীরে
মধ্যম আঁচে রান্না করতে হবে। তাতে খাদ্যের মধ্যে থাকা মাইক্রো নিউট্রিয়েন্সটস (অনুপুষ্টিসমূহ)
নষ্ট হয়ে যাবেনা।
৩. রান্নার সময় পাত্রটি অবশ্যই যতটুকু
সম্ভব ঢেকে রাখতে হবে। এতে রান্না দ্রুত হবে এবং মাটির পুষ্টিসমূহ খাদ্যের সাথে ভালোভাবে
মিশ্রণ ঘটবে হবে।
৪. তেল ও মসলাযুক্ত খাবার এবং মিষ্টি বা
দুধ জাতীয় খাবার একই পাত্রে রান্না না করে ভিন্ন পাত্রে রান্না করতে হবে। এজন্য দুধের
পাত্রের মতো দুটি পাত্রই চিহ্নিত করে রাখতে হবে। মসলাযুক্ত খাবার রান্নার পাত্রে ভুলক্রমে
কখনো মিষ্টান্ন রান্না হলে এতে স্বাদ ও ফ্লেভার নষ্ট হতে পারে।
৫. রান্নার পর গরম মাটির পাত্রটি কখনো
ঠান্ডা জায়গায় রাখা যাবেনা, এতে পাত্রটি ফেটে যেতে পারে। চুলা থেকে নামিয়ে কাঠ, কাপড়
কিংবা হিট রেজিস্টেন্স কোন কিছুর উপর রাখুন। এক্ষেত্রে কাঠের তেপায়া (ত্রিভুজ আকৃতির
স্ট্যান্ড) ব্যবহার করা উত্তম।
৬. ক্ষতিকর ডিসওয়াশ (পরিস্কারক) দিয়ে পাত্র ধোয়া যাবে না। এতে ক্ষতিকর উপাদান মাটির পাত্রের ছিদ্র দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতে হবে।
কেমন মাটির পাত্র কিনবেন?
চকচকে গ্লেজী পাত্র দেখতে খুব সুন্দর হলেও স্বাস্থ্যকর নয়। মাটির পাত্রের উপকারিতা পুরোপুরি পেতে চাইলে অমশৃন, কৃত্রিম রং বিহীন পাত্র দেখে নিতে হবে। সাধারনত মারকারি, শিশা ইত্যাদি ক্ষতিকর পদার্থ দিয়ে মাটির পাত্রকে চকচকে ও গ্লেজ দিয়ে থাকে, যা সাস্থ্যের জন্য বিপদজনক। এমন পাত্র ভুলক্রমে কেনা হয়ে গেলে সেটা রান্নায় ব্যবহার না করে বরং শো পিছ বা চারা রোপনের টব হিসেবে রাখাই উত্তম। সরাসরি কুমার থেকে নিতে পারলে উত্তম। কারন অনেক কুমার গরুর গোবর ও গরুর মূত্র মিশ্রণ করে থাকে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন