ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার রচনায় পবিত্র ‘শবে বরাত’
মুসলমানী বছরের শা’বান মাসের পরে রমাদ্বান শরীফ। এ মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত্রিতে শবে বরাত। মনে রাখা দরকার যে, মুসলমানী গণনায় প্রথমে রাত্রি, পরে দিন। কাজেই, শবে বরাত হচ্ছে ১৫ শা’বানের রাত্রি। ফারসী ‘শব’ শব্দের মানে রাত্রি। আরবীতে বলা হয় ‘লাইল’। ‘বরাত’ শব্দের অর্থ ভাগ্য। একে ভাগ্যের রাত্রি কেন বলা হয়, জান? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম তিনি বলেছেন যে, এই রাত্রিতে মালাকুল মওতের হাতে যারা একবছরের মধ্যে ইন্তিকাল করবে তাদের নামের ফর্দ দেয়া হয়। উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রায় সমস্ত শা’বান মাসে রোযা রাখতেন। আমি উনাকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তাতে তিনি বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা এ মাসে (১৫ই রাত্রিতে) তাদের নাম লিখে (মালাকুল মওতের কাছে) দেন যারা সে বছরের মধ্যে ইন্তিকাল করবে। আমি ভালবাসি যে আমার বিছাল শরীফ এমন অবস্থায় হোক যখন আমি রোযায় থাকি। অধিকাংশ উলামায়ে কিরাম বলেন, এ ব্যাপার শবে বরাত থেকে আরম্ভ হয় আর শবে ক্বদরে শেষ হয়। (অর্থাৎ শবে বরাতে ফায়সালা হয় আর শবে ক্বদরে জারি হয় তাই শবে বরাত থেকে শবে ক্বদর পর্যন্ত সময়টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ) আরো বলা হয়েছে যে, এ রাত্রিতে সারা বৎসরের রুজির তালিকা নির্দিষ্ট ফেরেশতা উনাদের হাতে দেয়া হয়। ইবাদত-বন্দিগী দ্বারা হায়াত ও রুজি বাড়ে। এ জন্য শা’বান মাসে রোযা নফল করা হয়েছে আর বিশেষ করে শবে বরাতের ইবাদত ও রোযার বিধান করা হয়েছে।
হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, “যখন শা’বান মাসের ১৫ তারিখের রাত্রি আসে তখন তোমরা ওই রাত্রিতে ইবাদত কর আর দিনে রোযা রাখ। কেননা ওই তারিখে সূর্য অস্তমিত হলে আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার আসমানে রহমতে খাছ নাযিল করেন অতঃপর বলতে থাকেন, ওহে! কে আমার কাছে মাফ চায়, আমি তাকে মাফ করে দিব; ওহে! কে আমার কাছে রুজি চায়, আমি তাকে রুজি দেব; ওহে! কে বিপদগ্রস্ত আছে, আমি তাকে মুক্তি দিব; এভাবে ফজর হওয়া পর্যন্ত প্রত্যেক হাজতমান্দকে সম্বোধন করে বলতে থাকেন।” (ইবনে মাজাহ শরীফ)
অন্য হাদীছ শরীফ-এ আছে যে, মুশরিক ও হিংসা পোষণকারী ভিন্ন আল্লাহ তাআলা এই রাত্রিতে সকলকে মার্জনা করেন। অন্য হাদীছ শরীফ-এ হতভাগ্যদের মধ্যে, জাদুকর, গণক, মাতাপিতার অবাধ্য সন্তান, ব্যভিচারী-ব্যভিচারিণী, মদ্যপানকারী, আত্মীয়তা ছেদনকারী প্রভৃতির উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ মহাপাপী যদি তওবা না করে, সে ভিন্ন সমস্ত পাপীদিগকে এই রাত্রিতে মাফ চাইলে ক্ষমা করা হয়। এ রাত্রিতে পুরুষদের জন্য কবর যিয়ারত করা রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নতরূপে বর্ণনা করা হয়েছে। সুতরাং মৃতদের জন্য দান-খয়রাত, তিলাওয়াতে কুরআন প্রভৃতি পুণ্য কার্য করাও বিধেয়, মুস্তাহাব-সুন্নত। কিন' অতিরিক্ত বাতি জ্বালানো বা আলোকসজ্জা করা, আতশবাজি, হিন্দুদের শিবরাত্রির অনুকরণে করা হয়েছে। মূর্খ লোকে শবে বরাতকে শিবরাত্রির সঙ্গে এক করে নিয়েছে। নাঊযুবিল্লাহ! সুতরাং এগুলো বর্জনীয়।
শবে বরাতে রসূলে করীম ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জীবন
মুবারক-এর একটি ঘটনা
এক শবে বরাতের ঘটনা। উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি এরূপে বর্ণনা করেছেন, “১৫ শা’বানের রাত্রিতে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার কাছে ছিলেন। যখন রাত দ্বিপ্রহর, আমি উনাকে দেখতে পেলাম না। তখন আমি উনাকে অন্যান্য উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের হুজরা শরীফ-এ তালাশ করলাম, কিন' উনাকে পেলাম না। তখন আমি নিজের হুজরা শরীফ-এ ফিরে এসে উনাকে দেখলাম, তিনি সিজদায় বলছেন, আমার ভাবনা ও মন আপনাকে সিজদা করছে, আমার অন্তর আপনার উপর ঈমান এনেছে। হে মহান! হে প্রত্যেক মাহাত্ম্য আশাস্থল! উম্মতের মহাপাপ ক্ষমা করুন। আমার মুখমণ্ডল উনাকে সিজদা করছে, যে তাকে সৃষ্টি করেছে, আকৃতি দান করেছে আর কান ও চোখ ফুটিয়েছে। তারপর তিনি মাথা তুলে আবার সিজদায় গেলেন আর বলতে লাগলেন, আপনার ক্রোধ থেকে আপনার প্রসন্নতায় আশ্রয় নিই, আপনার শাস্তি থেকে আপনার ক্ষমায় আশ্রয় নিই আর আপনা থেকে আপনাতেই আশ্রয় নিই। আপনি তেমনটি যেমন আপনি নিজের প্রশংসা করেছেন। আমি তাই বলছি যা আমার ভাই হযরত দাঊদ আলাইহিস সালাম তিনি বলেছিলেন- আমি আমার প্রতিপালকের জন্য আমার মুখমণ্ডলকে ধুলায় রগড়াই; উনার জন্য উপযুক্ত যে উনাকে সিজদা করে। তারপর তিনি মাথা তুলে বলতে লাগলেন, হে আল্লাহ তায়ালা! আমাকে এমন দিল দান করুন, যা শিরক থেকে মুক্ত, যা পাপী নয় বা হতভাগ্য নয়। তারপর তিনি সেখান থেকে উঠে আমার কাছে আমার বিছানায় তাশরীফ নিলেন। তিনি বললেন, হে হুমায়রা! এ কি? আমি উনাকে ঘটনা বললাম। তিনি আমার দুই হাঁটুতে হাত বুলাতে বুলাতে বললেন, হায়! এই দুই হাঁটু কি (নামাযে) কাতর হয়েছে এই শা’বান মাসের ১৫ তারিখ রাত্রিতে। এ রাত্রিতে আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার আসমানে নাযিল হন অর্থাৎ খাছ রহমত নাযিল করেন। আর উনার বান্দাদের গুনাহ মাফ করে দেন। তবে যারা মুশরিক কিংবা হিংসা পোষণকারী তাদেরকে নয়।” (বায়হাক্বী শরীফ)
উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত আর একটি হাদীছ শরীফ বায়হাক্বী ও মিশকাত হাদীছগ্রনে' পাওয়া যায়। তিনি বর্ণনা করেন যে, আমি আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে কোন এক রাত্রিযাপন করছিলাম। এক সময় উনাকে বিছানায় না পেয়ে আমি মনে করলাম যে, তিনি হয়ত অন্য কোন উম্মুল মু’মিনীন আলাইহাস সালাম উনার হুজরা শরীফ-এ তাশরীফ নিয়েছেন।
অতঃপর আমি তালাশ করে উনাকে জান্নাতুল বাক্বীতে পেলাম। সেখানে তিনি উম্মতের জন্য আল্লাহ পাক উনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছেন। এ অবস্থা দেখে আমি স্বীয় হুজরা শরীফ-এ ফিরে আসলে তিনিও ফিরে এসে আমাকে বললেন, আপনি কি মনে করেছেন, আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আপনার সাথে আমানতের খিয়ানত করেছেন! আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি ধারণা করেছিলাম যে, আপনি হয়তো অপর কোন উম্মুল মু’মিনীন আলাইহাস সালাম উনার হুজরা শরীফ-এ তাশরীফ নিয়েছেন। অতঃপর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তিনি শা’বানের পনের তারিখ রাত্রিতে পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন। অতঃপর তিনি বনী কালবের মেষের গায়ে যত পশম রয়েছে তার চেয়ে অধিক সংখ্যক বান্দাকে ক্ষমা করে থাকেন।”
এই রাত্রে আল্লাহ পাক তিনি দেখেন না কেবল মুশরিককে, হিংসাপোষণকারীকে, আত্মীয়তা ছেদনকারীকে, যে (গর্ব ভরে) মাটিতে কাপড় ঝুলিয়ে চলে তাকে, মা-বাপের অবাধ্য সন্তানকে, আর হামেশা শরাবপানকারীকে। তারপর তিনি বললেন, হে উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম! আপনি কি আমাকে এই রাত্রে ইবাদতের জন্য জাগতে ইজাযত দেন? আমি বললাম, হ্যাঁ, আমার মা-বাপ আপনার উপর কুরবান হোক! তারপর তিনি নামাযের জন্য দাঁড়ালেন। তিনি লম্বা সিজদা করলেন।
তিনি সিজদায় বলছেন, আয় আল্লাহ তায়ালা! আপনার শাস্তি থেকে আপনার ক্ষমায় আশ্রয় লই, আপনার ক্রোধ থেকে আপনার প্রসন্নতায় আশ্রয় লই, আপনা থেকে আপনায় আশ্রয় লই। আপনার প্রশংসা আয়ত্তের বাইরে। আপনি তেমনটি যেমন আপনি নিজের প্রশংসা করেছেন। সকাল হলে আমি উনাকে এই দোয়াগুলোর কথা বললাম। তখন তিনি বললেন, আপনি এগুলো অন্যকে শিখান। কারণ হযরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম তিনি এগুলো আমাকে ওহী করেছেন যেন আমি এগুলো সিজদায় বলি।
- “শবে বরাত“ উপলক্ষে আল্লামা ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর রচিত অগ্রনি'ত রচনা
(ঈষৎ পরিবর্তিত ও পরিমার্জিত)
হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, “যখন শা’বান মাসের ১৫ তারিখের রাত্রি আসে তখন তোমরা ওই রাত্রিতে ইবাদত কর আর দিনে রোযা রাখ। কেননা ওই তারিখে সূর্য অস্তমিত হলে আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার আসমানে রহমতে খাছ নাযিল করেন অতঃপর বলতে থাকেন, ওহে! কে আমার কাছে মাফ চায়, আমি তাকে মাফ করে দিব; ওহে! কে আমার কাছে রুজি চায়, আমি তাকে রুজি দেব; ওহে! কে বিপদগ্রস্ত আছে, আমি তাকে মুক্তি দিব; এভাবে ফজর হওয়া পর্যন্ত প্রত্যেক হাজতমান্দকে সম্বোধন করে বলতে থাকেন।” (ইবনে মাজাহ শরীফ)
অন্য হাদীছ শরীফ-এ আছে যে, মুশরিক ও হিংসা পোষণকারী ভিন্ন আল্লাহ তাআলা এই রাত্রিতে সকলকে মার্জনা করেন। অন্য হাদীছ শরীফ-এ হতভাগ্যদের মধ্যে, জাদুকর, গণক, মাতাপিতার অবাধ্য সন্তান, ব্যভিচারী-ব্যভিচারিণী, মদ্যপানকারী, আত্মীয়তা ছেদনকারী প্রভৃতির উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ মহাপাপী যদি তওবা না করে, সে ভিন্ন সমস্ত পাপীদিগকে এই রাত্রিতে মাফ চাইলে ক্ষমা করা হয়। এ রাত্রিতে পুরুষদের জন্য কবর যিয়ারত করা রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নতরূপে বর্ণনা করা হয়েছে। সুতরাং মৃতদের জন্য দান-খয়রাত, তিলাওয়াতে কুরআন প্রভৃতি পুণ্য কার্য করাও বিধেয়, মুস্তাহাব-সুন্নত। কিন' অতিরিক্ত বাতি জ্বালানো বা আলোকসজ্জা করা, আতশবাজি, হিন্দুদের শিবরাত্রির অনুকরণে করা হয়েছে। মূর্খ লোকে শবে বরাতকে শিবরাত্রির সঙ্গে এক করে নিয়েছে। নাঊযুবিল্লাহ! সুতরাং এগুলো বর্জনীয়।
শবে বরাতে রসূলে করীম ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জীবন
মুবারক-এর একটি ঘটনা
এক শবে বরাতের ঘটনা। উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি এরূপে বর্ণনা করেছেন, “১৫ শা’বানের রাত্রিতে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার কাছে ছিলেন। যখন রাত দ্বিপ্রহর, আমি উনাকে দেখতে পেলাম না। তখন আমি উনাকে অন্যান্য উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের হুজরা শরীফ-এ তালাশ করলাম, কিন' উনাকে পেলাম না। তখন আমি নিজের হুজরা শরীফ-এ ফিরে এসে উনাকে দেখলাম, তিনি সিজদায় বলছেন, আমার ভাবনা ও মন আপনাকে সিজদা করছে, আমার অন্তর আপনার উপর ঈমান এনেছে। হে মহান! হে প্রত্যেক মাহাত্ম্য আশাস্থল! উম্মতের মহাপাপ ক্ষমা করুন। আমার মুখমণ্ডল উনাকে সিজদা করছে, যে তাকে সৃষ্টি করেছে, আকৃতি দান করেছে আর কান ও চোখ ফুটিয়েছে। তারপর তিনি মাথা তুলে আবার সিজদায় গেলেন আর বলতে লাগলেন, আপনার ক্রোধ থেকে আপনার প্রসন্নতায় আশ্রয় নিই, আপনার শাস্তি থেকে আপনার ক্ষমায় আশ্রয় নিই আর আপনা থেকে আপনাতেই আশ্রয় নিই। আপনি তেমনটি যেমন আপনি নিজের প্রশংসা করেছেন। আমি তাই বলছি যা আমার ভাই হযরত দাঊদ আলাইহিস সালাম তিনি বলেছিলেন- আমি আমার প্রতিপালকের জন্য আমার মুখমণ্ডলকে ধুলায় রগড়াই; উনার জন্য উপযুক্ত যে উনাকে সিজদা করে। তারপর তিনি মাথা তুলে বলতে লাগলেন, হে আল্লাহ তায়ালা! আমাকে এমন দিল দান করুন, যা শিরক থেকে মুক্ত, যা পাপী নয় বা হতভাগ্য নয়। তারপর তিনি সেখান থেকে উঠে আমার কাছে আমার বিছানায় তাশরীফ নিলেন। তিনি বললেন, হে হুমায়রা! এ কি? আমি উনাকে ঘটনা বললাম। তিনি আমার দুই হাঁটুতে হাত বুলাতে বুলাতে বললেন, হায়! এই দুই হাঁটু কি (নামাযে) কাতর হয়েছে এই শা’বান মাসের ১৫ তারিখ রাত্রিতে। এ রাত্রিতে আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার আসমানে নাযিল হন অর্থাৎ খাছ রহমত নাযিল করেন। আর উনার বান্দাদের গুনাহ মাফ করে দেন। তবে যারা মুশরিক কিংবা হিংসা পোষণকারী তাদেরকে নয়।” (বায়হাক্বী শরীফ)
উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত আর একটি হাদীছ শরীফ বায়হাক্বী ও মিশকাত হাদীছগ্রনে' পাওয়া যায়। তিনি বর্ণনা করেন যে, আমি আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে কোন এক রাত্রিযাপন করছিলাম। এক সময় উনাকে বিছানায় না পেয়ে আমি মনে করলাম যে, তিনি হয়ত অন্য কোন উম্মুল মু’মিনীন আলাইহাস সালাম উনার হুজরা শরীফ-এ তাশরীফ নিয়েছেন।
অতঃপর আমি তালাশ করে উনাকে জান্নাতুল বাক্বীতে পেলাম। সেখানে তিনি উম্মতের জন্য আল্লাহ পাক উনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছেন। এ অবস্থা দেখে আমি স্বীয় হুজরা শরীফ-এ ফিরে আসলে তিনিও ফিরে এসে আমাকে বললেন, আপনি কি মনে করেছেন, আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আপনার সাথে আমানতের খিয়ানত করেছেন! আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি ধারণা করেছিলাম যে, আপনি হয়তো অপর কোন উম্মুল মু’মিনীন আলাইহাস সালাম উনার হুজরা শরীফ-এ তাশরীফ নিয়েছেন। অতঃপর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তিনি শা’বানের পনের তারিখ রাত্রিতে পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন। অতঃপর তিনি বনী কালবের মেষের গায়ে যত পশম রয়েছে তার চেয়ে অধিক সংখ্যক বান্দাকে ক্ষমা করে থাকেন।”
এই রাত্রে আল্লাহ পাক তিনি দেখেন না কেবল মুশরিককে, হিংসাপোষণকারীকে, আত্মীয়তা ছেদনকারীকে, যে (গর্ব ভরে) মাটিতে কাপড় ঝুলিয়ে চলে তাকে, মা-বাপের অবাধ্য সন্তানকে, আর হামেশা শরাবপানকারীকে। তারপর তিনি বললেন, হে উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম! আপনি কি আমাকে এই রাত্রে ইবাদতের জন্য জাগতে ইজাযত দেন? আমি বললাম, হ্যাঁ, আমার মা-বাপ আপনার উপর কুরবান হোক! তারপর তিনি নামাযের জন্য দাঁড়ালেন। তিনি লম্বা সিজদা করলেন।
তিনি সিজদায় বলছেন, আয় আল্লাহ তায়ালা! আপনার শাস্তি থেকে আপনার ক্ষমায় আশ্রয় লই, আপনার ক্রোধ থেকে আপনার প্রসন্নতায় আশ্রয় লই, আপনা থেকে আপনায় আশ্রয় লই। আপনার প্রশংসা আয়ত্তের বাইরে। আপনি তেমনটি যেমন আপনি নিজের প্রশংসা করেছেন। সকাল হলে আমি উনাকে এই দোয়াগুলোর কথা বললাম। তখন তিনি বললেন, আপনি এগুলো অন্যকে শিখান। কারণ হযরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম তিনি এগুলো আমাকে ওহী করেছেন যেন আমি এগুলো সিজদায় বলি।
- “শবে বরাত“ উপলক্ষে আল্লামা ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর রচিত অগ্রনি'ত রচনা
(ঈষৎ পরিবর্তিত ও পরিমার্জিত)
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন