মি’রাজ শরীফ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সেই সীমাহীন মর্যাদা-মর্তবারই একটি বহিঃপ্রকাশ
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, ‘হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি আপনার সম্মান, ইজ্জত, মর্যাদা, মর্তবাকে সীমাহীনভাবে বুলন্দ করেছি।’
মি’রাজ শরীফ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সেই সীমাহীন মর্যাদা-মর্তবারই একটি বহিঃপ্রকাশ
উনার খাদিম হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনিসহ সকল হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামগণ উনারা যেখানে চোখের পলকে আসমান থেকে যমীনে এবং যমীন থেকে আসমানে আসা-যাওয়া করেন;
সেখানে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মি’রাজ শরীফ-এর ব্যাপারে কি করে সংশয় প্রকাশ করা যেতে পারে?
মূলত, উনার মি’রাজ শরীফ-এর ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করা কাট্টা কুফরী ছাড়া কিছুই নয়।
যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, ‘হে আমার হাবীব! আমি আপনার সম্মান, ইজ্জত, মর্যাদা, মর্তবাকে সীমাহীনভাবে বুলন্দ করেছি।’ পবিত্র মি’রাজ শরীফ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেমেছাল ফাযায়িল-ফযীলতের মধ্য হতে একটি বিশেষ ফাযায়িল-ফযীলত। যা বিশ্বাস করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরয। আর অস্বীকার ও অবজ্ঞা করা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ২৪ ঘণ্টাই মহান আল্লাহ পাক উনার দায়িমী যিয়ারতে রয়েছেন; আসমানবাসী, যমীনবাসীকে বুঝানোর জন্য মি’রাজ শরীফ একটি আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শুরুতে মহান আল্লাহ পাক উনার সীমাহীন কুদরত মুবারক-এর মধ্যে ছিলেন, এখনো আছেন এবং অনন্তকাল থাকবেন। মূলত, মহান আল্লাহ পাক উনার সমস্ত কাজগুলোই কুদরত মুবারক-এর অধীন; যা আমভাবে সাধারণ মানুষের অনুধাবন করা খুবই কঠিন। সেজন্যই বলা হয়, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন চোখের পলকে রাতের কিছু সময়ের মধ্যে মি’রাজ শরীফ করে ফিরে আসলেন তখনো উনার বিছানা মুবারক গরম ছিল, ওযুর পানি মুবারক গড়িয়ে যাচ্ছিল, দরজা মুবারক-এর কড়া মুবারক নড়ছিল।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, সময় তো মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অধীন। তিনি স্বয়ং নিজে সময়কে নিয়ন্ত্রণ করেন। তবে সময়কে বন্ধ করে রাখা হয়নি; বরং সময় অতিবাহিত হওয়ার পূর্বেই তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার দীদার মুবারক লাভ করে তথা মি’রাজ শরীফ করে ফিরে আসেন। সুবহানাল্লাহ! দুনিয়াবী হিসেবে তা ২৭ বছর। এটা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার; যা উনার একটি বিশেষ মু’জিযা শরীফও বটে।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, কোনো কোনো গুমরাহ ও কাফির মি’রাজ শরীফ সম্পর্কে সংশয় প্রকাশ করে বলে থাকে যে, এত অল্প সময়ে কি করে সাত আসমান অতিক্রম করে আরশে আযীমে যাওয়া এবং জান্নাত জাহান্নাম পরিদর্শন করে যমীনে ফিরে আসা সম্ভব? নাউযুবিল্লাহ! মূলত, এরা যেহেতু আশদুদ দরজার জাহিল এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেমেছাল ফাযায়িল-ফযীলত সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে বেখবর তাই তারা এধরনের কুফরী কথা বলে থাকে ও কুফরী আক্বীদা পোষণ করে থাকে এবং মি’রাজ শরীফ সম্পর্কে সংশয় প্রকাশ করে। নাউযুবিল্লাহ! অথচ উনার খাদিম হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামগণ উনারা চোখের পলকে আসমানে যান আর আসেন। যেমন- এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ আছে, আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে একবার হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম তিনি এবং হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম তিনি উভয়ে উনারা বসা ছিলেন এমতাবস্থায় হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতে আসলেন।
হযরত দাহইয়াতুল কলবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ঈমান আনার পর হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি সাধারণত উনার ছূরত মুবারকেই আসতেন। আর হযরত দাহইয়াতুল কলবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আদত (অভ্যাস) ছিল তিনি যখন মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতে আসতেন তখন হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম উনার এবং হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার অর্থাৎ উনাদের জন্য কিছু হাদিয়া নিয়ে আসতেন। উনাদেরকে কোলে নিতেন। যার কারণে উনার সাথে উনাদের আলাদা একটা মুহব্বত পয়দা হয়েছিল। উনারা দু’জন উনাকে দেখলেই উনার কাছে চলে যেতেন। হযরত দাহইয়াতুল কলবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনাদেরকে খাছভাবে মুহব্বত করতেন যে কারণে উনারাও উনাকে মুহব্বত করতেন।
একদিন হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট আসলেন হযরত দাহইয়াতুল কলবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ছূরত মুবারকে। স্বাভাবিক হযরত দাহইয়াতুল কলবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আসলে হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম তিনি এবং হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম তিনি উভয়ে উনারা হযরত দাহইয়াতুল কলবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কাছে যেতেন। তাই হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি আসা মাত্র উনারা উনার কাছে যেতে চাচ্ছিলেন।
হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে জরুরী কিছু আলোচনা করছিলেন আর এ দিকে হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম তিনি এবং হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম তিনি অর্থাৎ উনারা উনার কাছে যেতে চাচ্ছিলেন। আর মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাদেরকে ফিরিয়ে রাখছিলেন। এমনিভাবে একবার, দু’বার, তিনবার হয়ে গেল। হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি ব্যাপারটা বুঝতে পারছি না যে, হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম এবং হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনারা আমার কাছে আসতে চাচ্ছেন, আপনি উনাদেরকে ফিরিয়ে রাখছেন, ব্যাপারটি কি?
মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, হে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম! আপনি তো হযরত দাহইয়াতুল কলবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ছূরত মুবারকে এসেছেন। হযরত দাহইয়াতুল কলবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার একটা আদত রয়েছে, তিনি আমার নিকট যখনই আসেন তখনই উনাদের জন্য কিছু হাদিয়া নিয়ে আসেন, উনাদেরকে কোলে নেন, মুহব্বত করেন, উনারাও উনার কাছে যান। আপনাকে দেখে উনারা মনে করেছেন, আপনি হয়তো হযরত দাহইয়াতুল কলবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, সেহেতু উনারা আপনার কাছে যেতে চাচ্ছেন। তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার বেয়াদবী ক্ষমা করবেন, আমাকে একটু সময় দিন, আমি এখনই আসছি।
একথা বলে তিনি বের হয়ে গেলেন, কিছুক্ষণ পর আবার আসলেন এক থোকা আঙ্গুর নিয়ে, আঙ্গুরগুলো পেশ করলেন, হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম উনার এবং হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার অর্থাৎ উনাদের খিদমতে, উনারা সেটা গ্রহণ করলেন। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, হে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম! আপনি এগুলো এতো তাড়াতাড়ি কোথা থেকে আনলেন? তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদের জন্য যে জান্নাত নির্ধারণ করে রেখেছেন সে জান্নাত থেকে এ আঙ্গুর ফলগুলো আমি এনেছি। সুবহানাল্লাহ!
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উসীলায় সৃষ্ট এবং উনার খাদিম হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম, হযরত মীকাঈল আলাইহিস সালাম, হযরত ইসরাফীল আলাইহিস সালাম ও হযরত আযরাঈল আলাইহিস সালাম উনারাসহ অন্যান্য সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা যদি চোখের পলকে সাত আসমান অতিক্রম করে ও জান্নাত জাহান্নামে যেতে পারেন। তবে মহান আল্লাহ পাক উনার পরেই যিনি, উনাকে সৃষ্টি না করলে কোনো কিছুই সৃষ্টি করতেন না, সেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষে কেন তা সম্ভব হবে না? মূলত, এব্যাপারে বিন্দু থেকে বিন্দুতম সংশয় বা সন্দেহ পোষণ করাও কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
-দৈনিক আল ইহসান
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন