পবিত্র কুরবানীর হাটের সংখ্যা কমিয়ে আনলে তা সরকারের অজ্ঞতা ও ব্যর্থতার নজির হয়ে থাকবে ॥ প্রয়োজন হাটের সংখ্যা দ্বিগুণ হারে বাড়ানো
রাজধানী
ঢাকায় প্রতিবছর বাড়ছে মানুষ, বাড়ছে ঈদে বাড়ি ফেরাদের সংখ্যা এবং সেই সাথে
পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রাজধানীতে কুরবানীদাতার সংখ্যা। এছাড়াও অবিশ্বাস্য হারে
ঢাকায় বাড়ছে ধনী লোকের সংখ্যা। সুতরাং সেই সাথে কুরবানীর পশুর সংখ্যা বেড়ে
যাচ্ছে সমান হারে। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে সবকিছু বাড়লেও এবার বাড়ছে না
কুরবানীর হাট। সরকারি মহলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এবার রাজধানীতে কুরবানীর
পশুর হাটের সংখ্যা কমিয়ে আনা হচ্ছে। যদিও হওয়া উচিত ছিলো বিপরীতটি।
হাট কমানো হলে স্বাভাবিকভাবেই কমবে কুরবানীর পশুও। কুরবানীর পশুর হাট কেন বাড়ানো প্রয়োজন তার একটি সহজ হিসাব আমরা দেখতে পারি। এতে স্পষ্টভাবেই বোঝা যাবে সরকারের গৃহিত সিদ্ধান্ত কতোটা অজ্ঞতা ও ব্যর্থতার নামান্তর। কুরবানীর হাটে গরুর জন্য নিম্নোক্ত বিধি ব্যবস্থা থাকা একান্ত প্রয়োজন।
হাট কমানো হলে স্বাভাবিকভাবেই কমবে কুরবানীর পশুও। কুরবানীর পশুর হাট কেন বাড়ানো প্রয়োজন তার একটি সহজ হিসাব আমরা দেখতে পারি। এতে স্পষ্টভাবেই বোঝা যাবে সরকারের গৃহিত সিদ্ধান্ত কতোটা অজ্ঞতা ও ব্যর্থতার নামান্তর। কুরবানীর হাটে গরুর জন্য নিম্নোক্ত বিধি ব্যবস্থা থাকা একান্ত প্রয়োজন।
প্রতিটি গরুর জন্য কমপক্ষে ৫০ বর্গ ফুট ও প্রতিটি ছাগলের জন্য ২৫ বর্গফুট জায়গার প্রয়োজন। কারণ গরুর অবস্থান স্থল, দুটি গরুর মধ্যবর্তী জায়গা, গো’খাবারের জন্য পৃথক জায়গা, গরু ব্যাপারীর থাকার জায়গা, দুই গরুর সারির মধ্যখানের রাস্তা ও ক্রেতাদের দেখার সুবিধার্থে প্রয়োজনীয় জায়গা (সামনে ও পেছনে), গরুর ভূষি জাতীয় ও খড় জাতীয় খাবারের পৃথক দোকানের স্থান, ট্রাক থেকে গরু নামানোর স্থান, হাসিল ঘরের জায়গা (প্রতিটি প্রবেশদ্বার/বাহিরদ্বারের জন্য একটি করে হাসিল ঘর), ট্রাক স্ট্যান্ড, ক্রেতাদের খাবারের দোকানসমূহ, ক্রেতাদের বিশ্রাম স্থান, টয়লেট, ভলিন্টিয়ারদের অবস্থান স্থল, নিরাপত্তা প্রহরীদের অবস্থান স্থল, র্যাব-পুলিশের অবস্থান, পশুর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার স্থান, অসুস্থ পশুর চিকিৎসাকেন্দ্র ও চিকিৎসকদের থাকার জায়গা, পানির সংরক্ষণ ও বিতরণের স্থান ইত্যাদি। এতে প্রতিটি গরুর জন্য কমপক্ষে গড়ে ৭০ বর্গফুট জায়গার প্রয়োজন।
ঢাকা শহরে ২৫ লক্ষ গরু ও ৫ লক্ষ ছাগল জবাই হয়। সে মুতাবিক গরুর জন্য বরাদ্দকৃত জায়গা প্রয়োজন (২৫ লাখদ্ধ৭০ বর্গফুট) জন্য ১৭০১৪ বিঘা প্রায়। এবং একটি ছাগলের জন্য জায়গা প্রয়োজন ২৫ বর্গফুট। ঢাকা শহরে ছাগল জবাই হয় ৫ লক্ষ। সে হিসেবে ছাগলের জন্য মোট জায়গা প্রয়োজন হয়, (৫ লক্ষদ্ধ২৫ বর্গফুট) অর্থাৎ ১ কোটি ২৫ লক্ষ বর্গফুট, যা ৮৬৮ বিঘা জায়গা প্রায়। তাহলে গরু ও ছাগালের জন্য মোট প্রয়োজন হচ্ছে ১৭৮৮২ বিঘা জায়গা। বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজধানীতে ১৫০টি হাটের প্রয়োজন। সে অনুপাতে প্রতিটি হাটের জন্য প্রয়োজন ১৭৮ বিঘা জায়গা। সে অনুপাতে বাস্তবতায় ঢাকার হাটগুলো খুবই ছোট এবং তার উপর যদি হাটের সংখ্যা কমানো হয়, তাহলে অবস্থা হবে আরো বেগতিক।
সরকারকে মনে রাখতে হবে, দেশের মুসলমানদের ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ কিংবা সমস্যা সৃষ্টি করার ফল কখনো ভালো হবে না। তাতে সরকারের অবস্থাও বেগতিক হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই কুরবানীর পশুর হাটের সংখ্যা না কমিয়ে বরং দ্বিগুণ করতে পারলে যানজট কমবে, মানুষ স্বস্তিতে পশু কেনাকাটা করতে পারবে, পকেটমারের দৌরাত্ম্য ও বিশৃঙ্খলা বহুলাংশে কমবে এবং অনেক পশু সংকুলান হবে। ফলে পশুর দামও সহনীয় থাকবে।
কাজেই কুরবানীবিদ্বেষী মহলের কুপ্ররোচনায় প্রভাবিত না হয়ে দেশের জনগণের সুবিধা এবং অসুবিধার কথা ভাবতে হবে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন