বিভিন্ন ইতিহাসে বর্ণিত, এখানে একটি বিশেষ কূপ ছিলো। যে কূপের পানি ছিলো অত্যন্ত সুমিষ্ট। যে পানি পান করলে অনেক কঠিন দুরারোগও ভালো হয়ে যেতো। এই কুপটির সুনাম ভারত বর্ষসহ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছিলো। এর পানি খাওয়ার জন্য হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকেরাও এখানে আসতো। যেহেতু কূপটি মুসলমানদের ছিলো তাই অনেক বিধর্মী এই কুপের পানি খাওয়ার জন্য বা নেয়ার জন্য আরজি করতো। মুসলমানদের মহানুভবতার কারণে সেই সুবিধা তারা শতভাগ লাভ করতো। এমনকি এই পানি খেয়ে উপকার পেয়ে অনেক বিধর্মী ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার কথাও জানা যায়। এছাড়াও বহু হিন্দু এস্থানের ঐতিহাসিক কূপের পানি পান করার জন্য কলিকাতা, দিল্লী, গুজরাট, কানপুর, মিজোরাম, মেঘালয় থেকে আসতো। তারা এই কূপের পানিকে ঈশ্বরের জল মনে করতো। শুধু তাই নয়, ইংরেজরা এই উপভারত মহাদেশে আসার পরে এই কূপের পানি খেয়ে উপকৃত হয়ে এটাকে ‘প্রফেসিক ওয়াটার’ বলে আখ্যায়িত করেছিলো। অথচ কূপটির মূলত ছিলো মুসলমানদের।
সময়ের আবর্তনে এই কূপের পানির লোভ তথা ঈদগাহ ময়দানের সৌন্দর্যবোধ হিন্দুদের স্বপ্নের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। ব্রিটিশ আমলে হিন্দুরা ব্রিটিশদের পা চেটে, অনেক কাকুতি মিনতি করে অতি কৌশলে স্থানটি দখলদারিত্ব নিয়ে নেয়। পরবর্তীতে হিন্দুরা এই বরকতময় পানিকে তাদের মতো পবিত্র করার লক্ষ্যে এর ভেতর গো-চনা নিক্ষেপ করে ও নানা পূজা পার্বন করার কারণে কিছুদিন পর পানি ঐশ্বরিকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। অনেক চেষ্টা করেও সেই পানি আর তারা উত্তোলন করতে পারেনি। এক পর্যায়ে ব্রিটিশদের সহযোগিতায় এই কূপ ও ঈদগাহের সমস্ত ইতিহাস তারা মুছে দেয় এবং মিথ্যা ইতিহাস তৈরি করে। সেই মিথ্যা ইতিহাসে হিন্দুরা বলে, ১২শ শতাব্দিতে বল্লাল সেন এই মন্দির প্রতিষ্ঠিত করে। কিন্তু ঐতিহাসিকরা আগেই প্রমাণ করেছে তৎকালীন যুগের মন্দিরের নির্মাণ শৈলীর সাথে এর কোনো মিল নেই। স্থানটি পরবর্তীতে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে রূপধারণ করে। হিন্দুরা সেখানে দুর্গা পূজার প্রচলন ঘটায়। বর্তমানে ঢাকেশ্বরী মন্দিরটি হচ্ছে দূর্গাপূজার সবচেয়ে বড় স্থান। যেহেতু দুর্গাপূজার বিশেষত্বেই এই মন্দিরের পরিচিতি সুতরাং এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা ব্রিটিশ আমলেই। কেননা, ব্রিটিশ আমলেই দুর্গাপূজার প্রচলন হয়। এর আগে দুর্গা পূজা বলতে হিন্দুদের মধ্যে কোনো উৎসব ছিলো না।
প্রকৃতপক্ষে, বর্তমানের ঢাকেশ্বরী মন্দিরের জায়গাটি ছিলো শায়েস্তা খাঁর আমলের মুসলিমবাগ ঈদগাহ-এর জায়গা। কুচক্রী হিন্দু সম্প্রদায় ছলে বলে কৌশলে সেই স্থানটি ব্রিটিশদের কাছ থেকে তাদের নামে বরাদ্দ নিয়ে মুসলমানদের ঈদগাহ ধ্বংস করে মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছে। কিভাবে যুগে যুগে শক্তি প্রয়োগ ও কৌশলে নীরিহ মানবগোষ্ঠীর জমি জমাসহ সবকিছুর সার্থন্বেষী মহল গলধঃকরণ করেছে, এই ঢাকেশ্বরী মন্দির তার একটি নির্মম দৃষ্টান্ত। কবি তাই বলেছেন, ‘তুমি মহারাজ, সাধু হলে আজ, আমি আজ চোর বটে..’।
আশ্চর্য, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হচ্ছে তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই, তারা চলে যাচ্ছে উদ্বাস্তু শিবিরে এবং একসময় এই ইতিহাসকেও মুছে ফেলা হচ্ছে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন