মক্কা শরীফে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন করা হতো।
ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথা শুনলে বাতিল ফিরকার কিছু লোক বা বিভ্রান্ত লোকজন ‘বিদয়াত-বিদয়াত’ বলে চিৎকার করে। বলে থাকে এটি কিতাবে নেই, পূর্বের কোনো আউলিয়াগণ করেননি ইত্যাদি ইত্যাদি নানা মিথ্যা কথা বলে থাকে। শুধু তাই নয়, বাতিল ফিরকার লোকজন কেউ কেউ এটাকে ‘লাহাবী আমল’ও বলে কটূক্তিও করে থাকে।
অথচ শতশত, হাজার বছর ধরে মশহুর, নির্ভরযোগ্য এবং যুগশ্রেষ্ঠ ইমাম-মুজাতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ, উলামায়ে কিরামগণ উনারা পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাহফিলের আয়োজন করেছেন, এতে শরীক হয়েছেন এবং এসব বরকতময় আমলের পক্ষে অগণিত কিতাবও রচনা করেছেন।
ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রথম বিরোধীতা শুরু হয় যখন ১৯৩২ সালে সউদ পরিবার জাজিরাতুল আরবের ক্ষমতা দখল করে। উল্লেখ্য ব্রিটিশ গোয়েন্দা টি ই লরেন্সের (Thomas Edward Lawrence) সহায়তায় মরু ডাকাত সউদ পরিবার (সউদ পরিবারের পূর্বপুরুষ ইহুদী ছিলো) উসমানীয় খিলাফতের বিরুদ্ধে লড়াই করে জারিরাতুল আরবের ক্ষমতা দখল করে এবং আরবের নামের পূর্বে নিজ পরিবারের নাম সংযুক্ত করে সউদী আরব নামকরণ করে। ব্রিটিশ প্রভুদের প্রত্যক্ষ সহায়তায় তারা খিলাফত ব্যবস্থা ধ্বংস করে হারাম রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে।
এরপর তারা পবিত্র জান্নাতুল বাকিতে আক্রমণ চালিয়ে প্রায় ১০ হাজার সাহাবীর পবিত্র মাজার শরীফ বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়। তারা ওহাবী-সালাফি মতবাদ প্রচার শুরু করে। সেই মতবাদের অংশ হচ্ছে ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিরোধীতা করা।
বর্তমানে সারা বিশ্বে প্রায় ৪৭টি মুসলিম অধ্যুষিত দেশে ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সরকারিভাবে পালন করা হলেও মিডলইস্টে তিনটি দেশে সেভাবে পালন করা হয় না। তিনটি দেশ হলো- ইসরাইল, সৌদি আরব ও কাতার।
১৯৩২ সালে ওহাবী রাষ্ট্র সউদী আরব প্রতিষ্ঠার পূর্বে পবিত্র মক্কা শরীফ ও পবিত্র মদীনা শরীফ উনাদের মধ্যে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালিত হতো।
যেমন পবিত্র মক্কা শরীফের পত্রিকা “আল ক্বিবলা” পত্রিকার তথ্য অনুযায়ী –
“পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পবিত্র মক্কা শরীফ উনার অধিবাসীরা পালন করতেন যার নাম ছিল ‘ইয়াওম আল ঈদ মাওলিদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। মুসলমানরা উত্তম খাবার রান্না করতেন।
পবিত্র মক্কা শরীফের আমীর এবং হিজাজের কমান্ডার তাঁর সেনাদের সাথে হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রওযা শরীফ যিয়ারত করতেন এবং পবিত্র ক্বাছীদা শরীফ পাঠ করতেন। পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের বরকতময় স্থান মুবারক পর্যন্ত আলোকসজ্জা করা হতো এবং দোকান-পাট সুসজ্জিত করা হতো।
হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদত (জন্ম) প্রকাশের বরকতময় স্থানে সকলে মিলে পবিত্র ক্বাছীদা শরীফ পাঠ করতেন।
পবিত্র ১১ই রবীউল আউওয়াল শরীফের রাতে বাদ ইশা পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনের লক্ষ্যে একত্র হতেন। পবিত্র ১১ই রবীউল আউওয়াল শরীফের মাগরীব থেকে পবিত্র ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফের আছর নামায পর্যন্ত প্রতি নামাযের পরে ২১ বার তোপধ্বনি দেওয়া হতো।”
(মাসিক তরিকত- লাহোর : জানুয়ারী ১৯১৭ ঈসায়ী (১৩৩৫ হিজরী), পৃষ্ঠা ২-৩)
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন