সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সুওয়াল ৭ : ১২ই রবিউল আউওয়াল শরীফ নবীজি দুনিয়া থেকে পর্দা করেছেন বিধায় এদিন খুশি করা যাবে না, শোক পালন করতে হবে - কথাটি কতটুকু শরীয়তসম্মত?



সুওয়াল: অনেকে প্রচার করে থাকে যে- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে তারিখে দুনিয়ায় তাশরীফ মুবারক এনেছেন সে তারিখেই তো তিনি দুনিয়া থেকেও পর্দা করেছেন। তাই সেই দিন দুঃখেরও দিন। এদিন ঈদ হলে দুঃখ প্রকাশ করেননা কেন? আর দুঃখের দিনে খুশি প্রকাশ করাটা অন্যায়।

জওয়াব : নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একই দিনে পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক ও পবিত্র বিছালী শান প্রকাশ করেছেন একথা সত্য। কিন্তু পবিত্র হাদীছ শরীফ মুতাবিক জানা যায় যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক ও পবিত্র বিছালী শান প্রকাশ উভয়ই উম্মতের জন্য কল্যাণকর। তাই পবিত্র বিছালী শান প্রকাশ করার দিনও খুশির দিন। এছাড়াও সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার বিধান অনুযায়ী শোক প্রকাশের সীমা হচ্ছে সর্বোচ্চ ৩ দিন। এরপরে আর শোক প্রকাশ বৈধ নয়।

হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ দিবস খুশির দিন :

পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ, পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ, পুনরুত্থান শরীফ প্রত্যেকটিই রহমত, বরকত ও সাকীনার কারণ এবং খুশি প্রকাশের কারণ। সুবহানাল্লাহ!

যেমন, হযরত ইয়াহইয়া আলাইহিস সালাম উনার ব্যাপারে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

وَسَلَامٌ عَلَيْهِ يَوْمَ وُلِدَ وَيَوْمَ يَـمُوْتُ وَيَوْمَ يُبْعَثُ حَيًّا

অর্থ : “আর (হযরত ইয়াহইয়া আলাইহিস সালাম) উনার প্রতি সালাম (অবারিত শান্তি) যেদিন তিনি পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন, যেদিন তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। আর যেদিন উনাকে পুনরুত্থিত করা হবে জীবিত অবস্থায়।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা মারইয়াম শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৫)

অনুরূপভাবে হযরত রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার নিজের বক্তব্য উল্লেখ করে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

وَالسَّلَامُ عَلَىَّ يَوْمَ وُلِدْتُّ وَيَوْمَ اَمُوْتُ وَيَوْمَ اُبْعَثُ حَيًّا

অর্থ : “আমার প্রতি সালাম (অবারিত শান্তি) যেদিন আমি পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করি, যেদিন আমি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করবো এবং যেদিন আমি জীবিত অবস্থায় পুনরুত্থিত হবো।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা মারইয়াম শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৩)

আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে -

عَنْ حَضْرَتْ اَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَيَاتِـىْ خَيْرٌ لَّكُمْ وَمَـمَاتِىْ خَيْرُلَّكُمْ.

অর্থ : ‘ হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, আমার পবিত্র হায়াত মুবারক-পবিত্র বিছাল শরীফ সব অবস্থাই আপনাদের জন্য কল্যাণ বা খায়ের-বরকতের কারণ।’ (কানযুল উম্মাল শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৩১৯০৩; জামিউছ ছগীর শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৩৭৭০, শিফা শরীফ ২য় খ- : ১৯ পৃষ্ঠা)

এছাড়া, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَوْسِ بْنِ اَوْسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِيّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ‏ اِنَّ مِنْ اَفْضَلِ اَيَّامِكُمْ يَوْمَ الْـجُمُعَةِ فِيْهِ خُلِقَ اٰدَمُ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَفِيْهِ قُبِضَ.‏ 

অর্থ : “হযরত আউস ইবনে আউস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আপনাদের দিনগুলোর মধ্যে উত্তম দিন হচ্ছেন পবিত্র জুমুআ উনার দিন। এ দিনে আবুল বাশার হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি সৃষ্টি হয়েছেন এবং এ দিনেই তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন।” (নাসায়ী শরীফ শরীফ : কিতাবুল জুমুয়া : হাদীছ শরীফ নং ১৩৮৫, মুসলিম শরীফ : কিতাবুল জুমুয়া, হাদীছ শরীফ নং ৮৫৫, তিরমিযী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৪৯১, মুসনাদে আহমদ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৮৯৫৪, ইবনে মাজাহ শরীফ : হাদীছ শরীফ ১৭০৫, আবূ দাঊদ শরীফ : কিতাবুছ ছলাত, হাদীছ শরীফ নং ১০৪৭, ইবনে খুজায়মা শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১৬৩২)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ عُبَيْدِ ابْنِ السَّبَّاقِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ فِي جُـمُعَةٍ مِّنَ الْـجُمَعِ يَا مَعْشَرَ الْمُسْلِمِيْنَ اِنَّ هٰذَا يَوْمٌ جَعَلَهُ اللهُ عِيدًا فَاغْتَسِلُوْا وَمَنْ كَانَ عِنْدَهٗ طِيْبٌ فَلَا يَضُرُّهٗ اَنْ يَّـمَسَّ مِنْهُ وَعَلَيْكُمْ بِالسِّوَاكِ.

অর্থ : “হযরত উবাইদ বিন সাব্বাক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এক পবিত্র জুমুআ উনার দিনে ইরশাদ মুবারক করেন, এ পবিত্র জুমআহ উনার দিন হচ্ছেন এমন একটি দিন, যে দিনকে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র ঈদ উনার দিন সাব্যস্ত করেছেন। তাই তোমরা গোসল কর আর যার নিকট সুগন্ধি রয়েছে, সে তা হতে স্পর্শ করলে ক্ষতি নেই। মিসওয়াক ব্যবহার করা তোমাদের কর্তব্য।” সুবহানাল্লাহ! 

(মুয়াত্তা মালিক শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১৪৪, ইবনে মাজাহ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১১৯৮, মা’য়ারিফুস সুনান ওয়াল আছার বায়হাক্বী শরীফ : হাদীছ শরীফ ১৮০২, মুসনাদে শাফিয়ী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ২৬৮, আল্ মু’জামুল আওসাত লিত্ ত্ববারানী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৩৪৩৩)

প্রতিভাত হলো যে, পবিত্র জুমুআ উনার দিনটি মহান আল্লাহ পাক উনার নবী ও রসূল আবুল বাশার হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ উনার দিন হওয়া সত্ত্বেও মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বয়ং নিজেই সে দিনটিকে খুশির দিন হিসেবে নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! 

সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার মধ্যে শোক প্রকাশের সময়সীমা ৩ দিন : 

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ উনার দিবসকে শোকের দিন বলে যারা উক্ত দিনে খুশি প্রকাশ না করে শোক পালন করতে চায়, সেটা সম্পূর্ণরূপে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের বিরোধী কাজ।

কারণ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে- 

عَنْ حَضْرَتْ اُمّ عَطِيَّةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا قَالَتْ كُنَّا نُنْهٰى اَنْ نُـحِدَّ عَلٰى مَيِّتٍ فَوْقَ ثَلَاثٍ اِلَّا عَلٰى زَوْجٍ اَرْبَعَةَ اَشْهُرٍ وَّعَشْرًا.‏

অর্থ : “হযরত উম্মু আতিয়্যাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কারো ইন্তিকালে তিন দিনের পর আর শোক প্রকাশ করতে আমাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে। তবে স্বামীর জন্য আহলিয়া চার মাস দশ দিন শোক পালন করতে পারবে।” (মুয়াত্তা মালিক শরীফ, বুখারী শরীফ : কিতাবুত তালাক : হাদীছ শরীফ নং ৫৩৪১, মুসলিম শরীফ : কিতাবুত তালাক : হাদীছ শরীফ নং ১৪৯৩, আবূ দাউদ শরীফ, নাসায়ী শরীফ, তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, দারিমী শরীফ, মিশকাত শরীফ)

সুতরাং ইন্তিকালের ৩ দিন পর আর শোক পালন করা যাবে না। যদি কেউ কারো ইন্তিকালের ৩ দিন পরও শোক পালন করে সেটা সম্মানিত শরীয়ত উনার খিলাফ হবে। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বিরোধিতা হবে। 

আর সবচেয়ে বড় কথা হলো, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন হায়াতুন নবী। তিনি পবিত্র রওজা শরীফ উনার মধ্যে জীবিত আছেন। উনার পবিত্র বিছালী শান প্রকাশ উপলক্ষ্যে শোক প্রকাশ স্পষ্ট গোমরাহী ও হায়াতুন নবী অস্বীকার করার নামান্তর।

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হায়াতুন নবী :

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَوْسِ بْنِ اَوْسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ اللهَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى حَرَّمَ عَلَى الْاَرْضِ اَنْ تَأْكُلَ اَجْسَادَ الْاَنْبِيَاءِ عَلَيْهِمُ السَّلَامُ.

অর্থ : “হযরত আউস ইবনে আউস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের জিসিম মুবারক যমীনের জন্য ভক্ষণ করা হারাম করে দিয়েছেন।” 

(আবূ দাঊদ শরীফ : কিতাবুল উইত্রি : হাদীছ শরীফ নং ১৫৩১, আবূ দাঊদ শরীফ : কিতাবুছ ছলাত : হাদীছ শরীফ নং ১০৪৭, নাসায়ী শরীফ : কিতাবুল জুমুয়া : হাদীছ শরীফ নং ১১)


পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِـى الدَّرْدَاءِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ اَنَّ اللهَ تَعَالٰى حَرَّمَ عَلَى الْاَرْضِ اَنْ تَأْكُلَ اَجْسَادَ الْاَنْبِيَاءِ عَلَيْهِمُ السَّلَامُ فَنَبِىُّ اللهِ حَىٌّ يُرْزَقُ

অর্থ : হযরত আবু দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের জিসিম মুবারক যমীনের উপর ভক্ষণ করা হারাম করেছেন। 

সুতরাং মহান আল্লাহ পাক উনার হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা জীবিত ও রিযিকপ্রাপ্ত। (ইবনে মাজাহ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১৬৩৬, সুনানে দারীমী : হাদীছ শরীফ নং ১৫৭২, মিশকাত শরীফ, জালাউল আফহাম ৬৩ পৃষ্ঠা, তাযকিরাতুল হুফফাজ : হাদীছ শরীফ নং ১০৮৫)


পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

اَلاَنْبِۢيَاءُ عَلَيْهِمُ السَّلَامُ اَحْيَاءُ فِيْ قُبُوْرِهِمْ يُصَلُّوْنَ

অর্থ : “হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা উনাদের রওযা শরীফ উনাদের মধ্যে জীবিত, উনারা নামায আদায় করেন।’’ (আবূ ইয়ালা শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৩৪২৫, হায়াতুল আম্বিয়া লিল বাইহাকী ১ম খ- ৭৩ পৃষ্ঠা)

হযরত শুহাদা আলাইহিমুস সালাম উনারা যেহেতু দলীলের ভিত্তিতে জীবিত বলে প্রমাণিত। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে তার সুস্পষ্ট বর্ণনা আছে। সুতরাং হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনারা জীবিত থাকবেন।

কারণ উনারা হযরত শুহাদা আলাইহিমুস সালাম উনাদের থেকে উত্তম। 

(ফাতহুল বারী ৬ষ্ঠ খ- ২৮৮ পৃষ্ঠা)

কিতাবে আরো উল্লেখ করা হয়েছে - 

اِنَّ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِـىْ قَبْرِهٖ حَىٌّ

অর্থ : “নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রওযা মুবারকে জীবিত অবস্থায়ই আছেন।” (মিরকাত শরীফ ২য় খ- ২২৩ পৃষ্ঠা)

বিখ্যাত মুহাদ্দিছ আল্লামা ইমাম মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন -

لَيْسَ هُنَا مَوْتٌ وَلَاَفَوْتٌ بَلْ هُوَ اِنْتِقَالٌ مِّنْ حَالٍ اِلٰى حَالٍ وَاِرْتِـحَالٌ مِّنْ دَارٍ اِلٰى دَارٍ وَاِنَّ الْـمُعْتَقَدَ الْـمُحَقَّقَ اِنَّهٗ حَىٌّ يُرْزَقُ

অর্থ : “এখানে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য মৃত্যুও নেই, নিঃশেষ হওয়াও নেই। বরং এক শান মুবারক হতে অন্য শান মুবারক উনার দিকে স্থানান্তরিত হওয়া এবং এক মুবারক ঘর হতে অন্য মুবারক ঘরে হিজরত করা। নিশ্চিত বিশ্বাস এই যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হায়াত মুবারক-এ (জীবিত) আছেন এবং সম্মানিত রিযিকপ্রাপ্ত হচ্ছেন।” (শরহুশ শিফা শরীফ ১ম খ-, পৃষ্ঠা ১৫২, মিরকাত শরীফ)

বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের আলোকে প্রমাণিত যে, সকল হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা উনাদের স্ব স্ব পবিত্র রওজা শরীফ উনাদের মধ্যে জীবিত। 

তাই সকল হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, হযরত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র রওযা শরীফ উনার মধ্যে জীবিত। তাহলে কি করে বলা যেতে পারে সম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ শোকের দিন। নাঊযুবিল্লাহ। যিনি হায়াতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য কি করে শোক দিবস পালন করা যেতে পারে? যারা হায়াতুন নবী মানে না, ছহীহ হাদীছ শরীফ অস্বীকারকারী তারাই বলে থাকে সম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ শোকের দিন।

উপসংহার :

সম্মানিত শরীয়ত উনার দলীল-আদিল্লাহ দ্বারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ উনার দিন মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ উনাকে কারো পক্ষেই শোকের দিন হিসেবে সাব্যস্ত করা সম্ভব নয়। কাজেই, যেদিনটি শোকের দিন নয়, সেদিন কি করে শোক পালন করা যাবে? তাই আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ উনাকে নিয়ামত মনে করে উক্ত দিনে ঈদ বা খুশি প্রকাশ করাই হচ্ছে প্রত্যেক উম্মতের দায়িত্ব ও কর্তব্য।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

*Coca-cola is Haram for Muslim

Because Coca-Cola and Other Soft Drinks may Contain ALCOHOL. Read Details here:~~~~ COCA-COLA: THE REAL THINGS? The proportions in the accompanying recipe are based on the analyses of Coke quoted above and Merory's recipes. The amount of caffeine agrees with that stated in Coca-Cola's So you asked about soft drinks... pamphlet; this is about a third of the caffeine found in the trial analyses. The following recipe produces a gallon of syrup very similar to Coca-Cola's. Mix 2,400 grams of sugar with just enough water to dissolve (high-fructose corn syrup may be substituted for half the sugar). Add 36 grams of caramel, 3.1 grams of caffeine, and 11 grams of phosphoric acid. Extract the cocaine from 1.1 grams of coca leaf ( Truxillo growth of coca preferred) with toluol; discard the cocaine extract. Soak the coca leaves and kola nuts (both finely powdered; 0.37 gram of kola nuts) in 22 grams of 20 percent alcohol. California white wine fortified to 20 percent strengt...

যে সকল শব্দ মুসলমানদের ব্যবহার করা উচিত নয়

শব্দ ব্যবহারের কুচিন্তায় যোগসাধনের ষড়যন্ত্র ইহুদী খ্রিস্টানদের ঐতিহ্যগত প্রবৃত্তি। স্বয়ং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সময়ও ইহুদী খ্রিস্টানদের এরূপ ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার ছিল। কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা রঈনা বলো না উনজুরনা বলো এবং শ্রবণ কর (বা শুনতে থাক) আর কাফিরদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।” (সূরা বাক্বারা ১০৪) আয়াতের শানে নযুলে বলা হয়েছে, ইহুদীরা রসুলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কষ্ট দেবার জন্য ‘রঈনা’ শব্দ ব্যবহার করত, যার একাধিক অর্থ। একটি অর্থ হল ‘আমাদের দিকে লক্ষ্য করুন’ যা ভাল অর্থে ব্যবহার হয় আর খারাপ অর্থ হল ‘হে মূর্খ, হে মেষ শাবক’ এবং হিব্রু ভাষায় একটি বদদোয়া। ইহুদীরা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রঈনা বলে সম্বোধন করত। যাতে প্রকৃতপক্ষে তাদের উদ্দেশ্য ছিল খারাপ অর্থের প্রতি ইঙ্গিত করা। আর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ ‘রঈনা’ শব্দের ভাল অর্থের প্রতি ইঙ্গিত করে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করলে ইহুদীরা খারাপ অর্থ চিন্তা করে হাসাহাসি করত। এতে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলা...

উশরযোগ্য ফল-ফসলের বিধান

উশর কি?  পবিত্র ‘উশর’ শব্দটি আরবী আশরাতুন (দশ) শব্দ হতে উৎসরিত বা উৎকলিত হয়েছে। উনার আভিধানিক বা শাব্দিক অর্থ হলেন এক দশমাংশ। আর সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার পরিভাষায় কৃষিজাত পণ্য- ফল ও ফসলের পবিত্র যাকাত উনাকে পবিত্র উশর বলে। এক কথায়, উৎপাদিত ফল ফসলের যাকাতই হচ্ছেন পবিত্র উশর। পবিত্র উশর সম্পর্কে পবিত্র কুরআন শরীফ থেকে দলীলঃ পবিত্র উশর সম্পর্কে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার একাধিক পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে। মহান আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তায়ালা তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- وانفقوا من طيبات ماكسبتم ومـما اخرجنا لكم من الارض. অর্থ : “তোমরা তোমাদের উপার্জিত হালাল সম্পদ হতে এবং যা আমি তোমাদের জন্য যমীন হতে উৎপন্ন করিয়েছি তা হতে দান করো।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৬৭) তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-  واتوا حقه يوم حصاده অর্থ : “ফসল কাটার সময় তার হক (পবিত্র উশর) আদায় করো।” (পবিত্র সূরা আনআম শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৪১) উশর সম্পর্কে পবিত্র হাদিস শরীফে যা বর্ণিত রয়েছে:  এ প্রসঙ্গে অনেক হাদিস শরীফ পাওয়া যায়। তার মধ্যে ২টি পবিত্র হাদী...