প্রশ্ন ১: “মীলাদুন নবী” ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শব্দ মুবারক উনার শরয়ী কোন ভিত্তি নেই, তাই পরিত্যাজ্য - বক্তব্যটি কতটুকু শুদ্ধ?
এই প্রশ্নের অনুরুপ আরো কিছু প্রশ্ন রয়েছে সবগুলোর উত্তর এখানে বিশদ ভাবে দেয়া হলো।
অনুরুপ আরো কিছু প্রশ্ন-
সুওয়াল ১ : “মীলাদুন নবী” শব্দের শরয়ী কোন ভিত্তি নেই, তাই এটি পরিত্যাজ্য।
সুওয়াল ২ : ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে নেই।
সুওয়াল ৩ : পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে ঈদে মীলাদুন নবী বা ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষ্যে খুশি প্রকাশ করার কথা আছে কি?
জওয়াব : পবিত্র “মীলাদুন নবী” শব্দ মুবারক পবিত্র শরীয়ত উনার মধ্যে রয়েছে। তাই পবিত্র শব্দ মুবারক অবশ্যই পরিপূর্ণরূপে গ্রহণযোগ্য।
পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের মধ্যে পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী বা ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষ্যে খুশি প্রকাশ করার বিষয়ে বিস্তারিত বা ব্যাপক বর্ণনা রয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী বা ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই বিষয়টি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে তো রয়েছেই শুধু তাই নয় বরং পরিপূর্ণরূপে সম্মানিত ইসলামী শরয়ীত উনার উপর সুপ্রতিষ্ঠিত। সুবহানাল্লাহ!
“মীলাদুন নবী” শব্দের শরয়ী ভিত্তি
مِيْلَادٌ ‘মীলাদ’ সম্পর্কে তিনটি শব্দ রয়েছে- مِيْلَادٌ ‘মীলাদ’, مَوْلِدٌ ‘মাওলিদ’ ও مَوْلُوْدٌ ‘মাওলূদ’, যাد -ل-و মূলাক্ষর থেকে এসেছে। শব্দগুলো বানান ও উচ্চারণগত কিছু পার্থক্য থাকলেও মূল অক্ষর একই এবং একই অর্থ অর্থাৎ ‘বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ’ (জন্মবৃত্তান্ত, জন্মগ্রহণ সংক্রান্ত) বিষয় প্রকাশ করে। আবার এক দিক থেকে আলাদা অর্থ প্রকাশ করে। যেমন - مِيْلَادٌ ‘মীলাদ’ শব্দের অর্র্থ জন্মের সময়, مَوْلِدٌ ‘মাওলিদ’ শব্দের অর্র্থ জন্মের স্থান, مَوْلُوْدٌ ‘মাওলূদ’ শব্দের অর্র্থ সদ্যপ্রসূত সন্তান। আর اَلنَّبِـىُّ ‘নবী’ শব্দ দ্বারা বুঝায় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে।
অর্র্থাৎ আভিধানিক বা শাব্দিক অর্থে مِيْلَادُ النَّبِـىِّ ‘মীলাদুন নবী’ বলতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ বুঝানো হয়ে থাকে।
مِيْلَادٌ ‘মীলাদ’, مَوْلِدٌ ‘মাওলিদ’ ও مَوْلُوْدٌ ‘মাওলূদ’ শব্দসমূহের ব্যাখ্যা :
ক) مِيْلَادٌ ‘মীলাদ’: مِيْلَادٌ শব্দখানি وَاحِدْ كُبْـرٰي এর صِيْغَةٌ বা শব্দরূপ। বাহাছ اِسْمُ اٰلَةٍ ‘ইসমে আলা’ বা যন্ত্রবাচক বিশেষ্য থেকে এসেছে। যা وِلَادَةٌ মূল শব্দ থেকে উৎপত্তি। এ হিসাবে مِيْلَادٌ শব্দখানি মূলে ছিলো مِوْلَادٌ।
এ শব্দখানির শুরুতে مِيْمٌ مَكْسُوْرْ (যের যুক্ত মীম) এবং পরে সাকিনওয়ালা و ওয়াও হরফ থাকায় উচ্চারণে কঠিন বিধায় اِسْمُ اٰلَةٍ ‘ইসমে আলা’-এর ছীগাহ হিসাবে মীম হরফের নিচের যের’কে বহাল রেখে তার (যেরের) সমতা রক্ষার্থে সাকিনওয়ালা ওয়াও’কে বিলুপ্ত করে তদস্থলে يَاءٌ (ইয়া) হরফ’কে আনয়ন করে مِيْلَادٌ করা হয়েছে। যার আভিধানিক দৃষ্টিকোণ থেকে সঠিক অর্থ হবে জন্মবৃত্তান্ত, জন্মের সময়, জন্ম, জন্মের তারিখ, বিলাদত শরীফ উনার সময় তারিখ ইত্যাদি।
অর্থাৎ مِيْلَادٌ ‘মীলাদ’ শব্দটি اِسْمُ اٰلَةٍ ‘ইসমে আলা’র অর্থ প্রকাশ করে না, বরং এ শব্দটি مَصْدَرٌ ‘মাছদার’ বা ক্রিয়ামূলের অর্থ প্রকাশ করে এবং اِسْمٌ ظَرْفٌ ‘ইসমে জরফ’-এর অর্থও প্রদান করে থাকে। একই বা অনুরূপ ওজনে শব্দ আসলেই যে ইসমে আলার অর্থ দিবে তা নয়। একই ওজনে শব্দ আসার পরও ইসমে আলার (যন্ত্রবাচক বিশেষ্যের) অর্থ প্রদান না করে বরং اِسْمٌ ظَرْفٌ ‘ইসমে জরফ’-এর অর্থ প্রদান করে থাকে এরূপ অনেক শব্দ সকল বিশ্বখ্যাত আরবী লুগাত বা অভিধানে রয়েছে। এমনকি সকল আরবী-বাংলা অভিধানগুলোতেও রয়েছে। এরূপ কিছু শব্দ যা ইসমে আলার অর্থ কখনোই প্রকাশ করে না, নিচের ছকে তা উল্লেখ করা হলো-
শব্দ ইসমে আলা অনুযায়ী অর্থ যা প্রচলিত বা গ্রহণযোগ্য নয়
ব্যবহারিক/বাস্তবিক অর্থ মাছদার/
ক্রিয়ামূল
مِيْرَاثٌ ‘মীরাছ’ ওয়ারিছ হওয়ার একটি বড় হাতিয়ার বা যন্ত্র। ওয়ারিছ সত্ত্ব, উত্তরাধিকার, উত্তরসূরী হিসেবে প্রাপ্ত সম্পদ ইত্যাদি وَرَاثَةٌ
مِيْعَادٌ ‘মীয়াদ’ ওয়াদা পূর্ণ করার একটি বড় হাতিয়ার বা যন্ত্র। ওয়াদা পূর্ণ করা, ওয়াদা, প্রতিশ্রুত সময় ইত্যাদি وَعْدٌ
مِيْقَانٌ ‘মীক্বান’ দৃঢ় বিশ্বাসের একটি বড় হাতিয়ার বা যন্ত্র। অত্যাধিক বিশ্বাস, বিশ্বাসপ্রবণ, দৃঢ় বিশ্বাস ইত্যাদি يَقِيْنٌ
مِيْفَاءٌ
‘মীফা’ ওয়াদা পূরণে একটি বড় হাতিয়ার বা যন্ত্র। ওয়াদা পূর্ণ করা, ঋণ পরিশোধে সক্ষম, বিশ্বস্ত ইত্যাদি وَفِـىٌ
مِيْنَاءٌ ‘মীনা’ ক্লান্তি দূর করার একটি বড় যন্ত্র। বন্দর وَنَـىٌ
مِيْقَاتٌ ‘মীকাত’ সময়ের একটি হাতিয়ার বা যন্ত্র। সময়সূচি, সাক্ষাতসূচি, মীকাত, ইহরাম বাঁধার স্থান ইত্যাদি وَقْتٌ
مِـحْرٰبٌ ‘মিহরাব’ যুদ্ধের একটি বড় হাতিয়ার বা যন্ত্র। উঁচু জায়গা, ইমাম দাঁড়ানোর স্থান, ইবাদতের স্থান, একান্তস্থান, যুদ্ধাস্ত্র রাখার স্থানই হচ্ছে মেহরাব ইত্যাদি حَرْبٌ
আরবী ব্যাকরণে অজ্ঞ এক শ্রেণীর লোক, যারা মূলত নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিদ্বেষী, তারা مِيْلَادٌ ‘মীলাদ’ শব্দটির اِسْمُ اٰلَةٍ ‘ইসমে আলা’ অনুযায়ী ব্যঙ্গাত্বক অর্থ করে থাকে। নাঊযুবিল্লাহ!
যদি সবক্ষেত্রে একই ওজনে শব্দ আসলেই ইসমে আলার অর্থ দেয় তাহলে مِيْرَاثٌ ‘মীরাছ’ শব্দের অর্থ ওয়ারিছ সত্ত্ব বা উত্তরাধিকারী হলো কেন? পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে مِيْرَاثٌ ‘মীরাছ’ শব্দ মুবারক ব্যবহার করে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَلِلّٰـهِ مِيْرَاثُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ
অর্থ : “মহান আল্লাহ পাক তিনি হচ্ছেন আসমান ও যমীনের পরম অধিপতি।” (পবিত্র সূরা আল ইমরান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৮০ ও পবিত্র সূরা হাদীদ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১০)
যদি مِيْرَاثُ ‘মীরাছ’ শব্দ মুবারক ‘ইসমে আলা’র অর্থ প্রকাশ করে তাহলে মহান আল্লাহ পাক উনার শান মুবারক সম্পর্কে উক্ত অর্থ গ্রহণ করলে ঈমান থাকবে কি? মহান আল্লাহ পাক উনার শান মুবারক সম্পর্কে مِيْرَاثٌ ‘মীরাছ’ শব্দ মুবারক উনার ব্যবহারিক অর্থ গ্রহণ করলেও ঈমানহানীর কারণ হবে। অনুরূপভাবে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক সম্পর্কে مِيْلَادٌ ‘মীলাদ’ শব্দের ক্ষেত্রে ইসমে আলার অর্থ গ্রহণ করা উনার সুমহান শান-মান মুবারক উনার খিলাফ।
একইভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার শান মুবারক সম্পর্কে الـمِيْعَادُ ‘মীয়াদ’ শব্দ মুবারক যদি ‘ইসমে আলা’র অর্থ প্রকাশ করে তাহলে মহান আল্লাহ পাক উনার শান মুবারক সম্পর্কে উক্ত অর্থ গ্রহণ করলে ঈমান থাকবে কি?
যেমন- মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اِنَّ اللهَ لَا يُـخْلِفُ الْمِيْعَادَ
অর্থ : “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি ওয়াদা পরিপূর্ণ করে থাকেন।” (পবিত্র সূরা আল ইমরান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৯ ও পবিত্র সূরা রা’দ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩১)
اِنَّكَ لَا تُـخْلِفُ الْمِيْعَادَ
অর্থ : “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি ওয়াদা পরিপূর্ণ করে থাকেন।” (পবিত্র সূরা আল ইমরান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৯৪)
لَا يُـخْلِفُ اللهُ الْمِيْعَادَ
অর্থ : “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি ওয়াদা পরিপূর্ণ করে থাকেন।” (পবিত্র সূরা যুমার শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২০)
قُلْ لَّكُمْ مِّـيْعَادُ يَوْمٍ لَّا تَسْتَأْخِرُوْنَ عَنْهُ سَاعَةً وَلَا تَسْتَقْدِمُوْنَ
অর্থ : “বলুন, তোমাদের জন্যে একটি দিনের ওয়াদা রয়েছে যাকে তোমরা এক মুহুর্র্তও বিলম্বিত করতে পারবে না এবং ত্বরান্বিতও করতে পারবে না।” (পবিত্র সূরা সাবা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩০)
সুতরাং দেখা যাচ্ছে সর্বাবস্থায় একই ওজনে শব্দ আসলেই ইসমে আলার অর্থ দিবে তা না বরং শব্দটি مَصْدَرٌ ‘মাছদার’ বা ক্রিয়ামূলের অর্থ প্রকাশ করে এবং اِسْمٌ ظَرْفٌ ‘ইসমে জরফ’-এর অর্থও প্রদান করে থাকে। আর তাই مِيْلَادٌ ‘মীলাদ’ শব্দটি তার مَصْدَرٌ ‘মাছদার’ বা ক্রিয়ামূল وِلَادَةٌ-এর অর্থ প্রকাশ করে। মূলত مِيْلَادٌ ‘মীলাদ’ শব্দটির মূল অক্ষর হচ্ছে و + ل + د) ولد)।
مِيْلَادٌ ‘মীলাদ’ ও وِلَادَةٌ ‘বিলাদত’ শব্দের পার্থক্য :
مِيْلَادٌ ‘মীলাদ’ শব্দটি জন্মগ্রহণ, জন্মগ্রহণের সময়, জন্মগ্রহণের স্থান বা বিলাদত শরীফ গ্রহণ, বিলাদত শরীফ গ্রহণের সময়, বিলাদত শরীফ গ্রহণের স্থান বা বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ, বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের সময়, বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের স্থান অর্থাৎ ক্রিয়া, ক্রিয়ার সময় ও ক্রিয়া সংঘটনের কাল বুঝাতে ব্যাপক অর্থে مِيْلَادٌ ‘মীলাদ’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়।
وِلَادَةٌ ‘ওয়ালাদাতুন’ শব্দটিতে ওয়াওয়ের নিচে যের দিয়ে وِلَادَةٌ ‘উইলাদাহ’ বা ‘বিলাদত’ শব্দটির উদ্ভব ঘটেছে, অর্থাৎ মাছদার বা ক্রিয়ামূল থেকে উৎপত্তি। যার অর্থ জন্মগ্রহণ, বিলাদত শরীফ গ্রহণ বা বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ।
মীলাদ, মীলাদুন নবী, ঈদে মীলাদুন নবী শব্দের পার্থক্য :
মীলাদ : মীলাদ শব্দটি জন্মগ্রহণ সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়ের আলোচনা বুঝাতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। মীলাদ শব্দটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। শুধুমাত্র মীলাদ শব্দ দিয়ে যে কারো মীলাদ বা জন্মগ্রহণ সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়ের আলোচনা বুঝানো হয়ে থাকে। যেহেতু আবুল বাশার হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম ও উম্মুল বাশার হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম উনারা ছাড়া দুনিয়ার সব মানুষেরই জন্মগ্রহণ বা বিলাদত শরীফ গ্রহণ করতে হয়েছে, তাই উনারা ছাড়া মীলাদ নেই এমন কোন মানুষ নেই। বরং আবুল বাশার হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম ও হযরত উম্মুল বাশার আলাইহাস সালাম উনাদেরও মীলাদ রয়েছে। উনাদের মীলাদ হচ্ছে উনাদের সৃষ্টির ঘটনা।
মীলাদুন নবী : মীলাদুন নবী শব্দ মুবারক আমভাবে হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের বিলাদত শরীফ বা বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়ের আলোচনা বুঝাতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে মীলাদুন নবী শব্দ মুবারক দ্বারা খাছভাবে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়ের আলোচনা বুঝাতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
আর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে নিসবত মুবারক থাকার কারণে যথাযথ আদব রক্ষার্থে মীলাদুন নবী শব্দ মুবারক উনার সাথে ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যুক্ত করে ‘মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ বলা হয়।
ঈদে মীলাদুন নবী : নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাওয়ার কারণে উনার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবস উপলক্ষ্যে ঈদ বা খুশি প্রকাশ করাকে ঈদে মীলাদুন নবী বলা হয়ে থাকে। আর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে নিসবত মুবারক থাকার কারণে যথাযথ আদব রক্ষার্থে ঈদে মীলাদুন নবী শব্দ মুবারক উনার সাথে ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যুক্ত করে ‘ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ বলা হয়।
খ) مَوْلِدٌ ‘মাওলিদ’ : مَوْلِدٌ শব্দটি اِسْمٌ ظَرْفٌ ‘ইসমে জরফ’ (স্থান ও কাল বাচক বিশেষ্য)। যার অর্থ জন্মের স্থান বা সময়।
গ) مَوْلُوْدٌ ‘মাওলূদ’ : مَوْلُوْدٌ শব্দটি একবচন, اِسْمٌ مَفْعُوْلٌ ‘ইসমে মাফ‘ঊল’ (কর্মকারক বিশেষ্য)-এর ছীগাহ বা শব্দরূপ। যার অর্থ সদ্য প্রসূত সন্তান।
ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনারই অংশ
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ব্যবহৃত মীলাদ শব্দ মুবারক :
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَسَلَامٌ عَلَيْهِ يَوْمَ وُلِدَ وَيَوْمَ يَـمُوْتُ وَيَوْمَ يُبْعَثُ حَيًّا
অর্থ : “আর (হযরত ইয়াহইয়া আলাইহিস সালাম) উনার প্রতি সালাম (অবারিত শান্তি) যেদিন তিনি পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন, আর যেদিন তিনি বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। আর যেদিন উনাকে পুনরুত্থিত করা হবে জীবিত অবস্থায়।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা মারইয়াম শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৫)
অনুরূপভাবে হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার নিজের বক্তব্য মুবারক উল্লেখ করে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
وَالسَّلَامُ عَلَىَّ يَوْمَ وُلِدْتُّ وَيَوْمَ اَمُوْتُ وَيَوْمَ اُبْعَثُ حَيًّا
অর্থ : “আমার প্রতি সালাম (অবারিত শান্তি) যেদিন আমি বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করি, যেদিন আমি বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করবো এবং যেদিন আমি জীবিত অবস্থায় পুনরুত্থিত হবো।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা মারইয়াম শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৩)
সুতরাং মূল অক্ষরে وُلِدْتُّ শব্দ মুবারক পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যেই ব্যবহৃত হয়েছে; যার অর্থ বিলাদত শরীফ গ্রহণ বা যমীনে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ। সাধারণ বাংলায় যাকে বলা জন্মগ্রহণ করা। এ শব্দ মুবারক প্রমাণ করে মীলাদের মূল অস্তিত্ব পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যেই বিদ্যমান।
এছাড়াও মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
لَـمْ يَلِدْ وَّلَـمْ يُوْلَدْ
অর্থ : “মহান আল্লাহ পাক তিনি কারো থেকে বিলাদত শরীফ লাভ করেননি বা জন্মগ্রহণ করেননি এবং কাউকে জন্ম দেননি।” (পবিত্র সূরা ইখলাছ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩)
মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য বিলাদত শরীফ গ্রহণ করা বা কাউকে জন্ম দেয়া উনার শান মুবারক উনার খিলাফ। তথাপি এখানে يُوْلَدْ ও يَلِدْ শব্দ মুবারক দ্বারা বিলাদত শরীফ বা জন্মগ্রহণ বুঝানো হয়েছে।
মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন-
وَوَالِدٍ وَّمَا وَلَدَ
অর্থ : “শপথ জনকের এবং যা জন্ম দেয়।” (পবিত্র সূরা বালাদ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩)
এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যেও وَلَدَ ও وَالِدٍ শব্দ মুবারক দ্বারা বিলাদত শরীফ বিষয়ে বুঝানো হয়েছে।
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মীলাদ অর্থে ব্যবহৃত শব্দ মুবারক এক নজরে ছক আকারে দেখানো হলো-
ক্রম পবিত্র আয়াত শরীফ শব্দ মুবারক
১ وَسَلَامٌ عَلَيْهِ يَوْمَ وُلِدَ وَيَوْمَ يَـمُوْتُ وَيَوْمَ يُبْعَثُ حَيًّا وُلِدَ
২ وَالسَّلَامُ عَلَىَّ يَوْمَ وُلِدْتُّ وَيَوْمَ اَمُوْتُ وَيَوْمَ اُبْعَثُ حَيًّا وُلِدتُّ
৩ لَـمْ يَلِدْ وَلَـمْ يُوْلَدْ يَلِدْ ও يُوْلَدْ
৪ وَوَالِدٍ وَمَا وَلَدَ وَالِدٍ ও وَلَدَ
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ব্যবহৃত মীলাদ শব্দ মুবারক :
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنِ حَضْرَتْ الـمُطَّلِبِ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ قَيْسِ بْنِ مَـخْرَمَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنْ اَبِيْهِ عَنْ جَدّهٖ قَالَ وُلِدْتُّ اَنَا وَرَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامَ الْفِيلِ وَسَاَلَ حَضْرَتْ عُثْمَانُ بْنُ عَفَّانَ عَلَيْهِ السَّلَامُ قُبَاثَ بْنَ اَشْيَمَ اَخَا بَنِيْ يَعْمَرَ بْنِ لَيْثٍ اَاَنْتَ اَكْبَرُ اَمْ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَكْبَرُ مِنِّيْ وَاَنَا اَقْدَمُ مِنْهُ فِي الْمِيْلَادِ وُلِدَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامَ الْفِيْلِ.
অর্থ : “হযরত মুত্তালিব ইবনে আব্দিল্লাহ ইবনে কাইস ইবনে মাখরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি উনার পিতা হতে এবং উনার পিতা উনার দাদা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি “হাতীর বছরে” পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন, আমিও সেই হাতীর বছরেই পবিত্র বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেছি। সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি হযরত কুবাস বিন আশিয়াম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে প্রশ্ন করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বড় না আপনি বড়? তিনি উত্তরে বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার থেকে বড়, আর আমি উনার পূর্বে বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেছি।” (তিরমিযী শরীফ, হযরত আবূ ঈসা মুহাম্মদ ইবনু ঈসা রহমতুল্লাহি আলাইহি (২৭৯ হিঃ), আস সুনান, প্রকাশনা- বৈরুত, দারু ইহ্য়ায়িত তুরাসিল আরাবী, হাদীছ শরীফ নং ৩৬১৯)
আবার অন্য হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـيْ قَتَادَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ بِـهٰذَا الْـحَدِيْثِ زَادَ قَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَرَاَيْتَ صَوْمَ يَوْمِ الْاِثْنَيْنِ وَيَوْمِ الْـخَمِيْسِ قَالَ فِيْهِ وُلِدْتُّ وَفِيْهِ اُنْزِلَ عَلَىَّ الْقُرْاٰنُ.
অর্থ : “হযরত আবূ ক্বাতাদা আনসারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইয়াওমুল ইছলাইনিল আযীম শরীফ ও ইয়াওমুল খ¦মীস রোযা রাখার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলো, তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন যে, এদিন (ইয়াওমুল ইছলাইনিল আযীম শরীফ) আমি পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছি, আর এদিনই আমার উপর ওহী বা পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল হয়েছে।” (মুসলিম শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ২৮০৭, আবূ দাঊদ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ২৪২৮, সুনানে কুবরা লি বায়হাক্বী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৮২১৭, ইবনে খুজাইমা শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ২১১৭, মুসনাদে আবি আওয়ানা : হাদীছ শরীফ নং ২৯২৬, মুসনাদে আহমদ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ২২৬০৩)
আবার অন্য হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا مِنْ مَوْلُودٍ اِلَّا يُوْلَدُ عَلَى الْفِطْرَةِ.
অর্থ : “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, প্রত্যেক শিশু তার স্বভাবের উপর জন্মলাভ করে।” (মুসলিম শরীফ, কিতাবুল ক্বদর : বাবু মা’না কুল্লি মাওলুদিন ইউলাদু ‘আলাল ফিতরাতি ওয়া হুকমি মাওতি আত্বফালিল কুফফারি ওয়া আত্বফালিল মুসলিমীন : হাদীছ শরীফ নং ২৬৫৮)
সুতরাং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে “মাওলুদ” শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। এমনকি পবিত্র হাদীছ শরীফ শাস্ত্রের হযরত ইমাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা স্ব স্ব কিতাবে মীলাদ শব্দটি ব্যবহার করেছেন।
যেমন-
১. বিখ্যাত মুহাদ্দিছ হযরত আবূ ঈসা মুহম্মদ ইবনু ঈসা তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি (হিজরী ২৭৯) তিনি উনার বিখ্যাত কিতাব জামে তিরমিযী শরীফ উনার ২য় খ-ের ২০৩ পৃষ্ঠায় একটি শিরোনাম রচনা করে নাম দিয়েছেন-
بَابُ مَا جَاءَ فِىْ مِيْلَادِ النَّبِىّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
অর্থাৎ যা রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ সম্পর্কে এসেছে। এখানে তিনি ‘মীলাদুন নবী’ শব্দটি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ সংক্রান্ত বিষয় বুঝাতে ব্যবহার করেছেন।
২. ইমাম হযরত বায়হাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত ৪৫৮ হিজরী) তিনি উনার বিখ্যাত সীরাত সংক্রান্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার কিতাব “দালায়িলুন নুবুওওয়াত” নামক কিতাবের ১ম খ-ের ৪৯ পৃষ্ঠায়
اَبْوَابُ مِيْلَادِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
শীর্ষক একটি অধ্যায় এনেছেন, যেখানে স্পষ্ট ‘মীলাদে রসূল’ শব্দটি উল্লেখ করেছেন।
যেখানে তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ উনার বৃত্তান্ত (জীবন বৃত্তান্ত মুবারক) মুবারক আলোচনা করেছেন।
সুতরাং পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার হযরত ইমাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের স্পষ্ট দলীল দ্বারাই মীলাদ ও মীলাদুন নবী শব্দ মুবারক উনার প্রমাণ পাওয়া গেলো। সুবহানাল্লাহ। অর্থাৎ “মীলাদুন নবী” শব্দ মুবারক উনার শরয়ী সুস্পষ্ট ভিত্তি বিদ্যমান।
যেহেতু “মীলাদুন নবী” শব্দ মুবারক উনার সুস্পষ্ট শরয়ী ভিত্তি বিদ্যমান। আর এই শব্দ মুবারক দ্বারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, রহমতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের বিষয়টি বুঝানো হয়।
আর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাওয়ার কারণে বান্দা-বান্দিকে মহান আল্লাহ পাক তিনি খুশি প্রকাশ করতে আদেশ মুবারক করেছেন। সুতরাং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তাশরীফ মুবারক গ্রহণ উপলক্ষ্যে খুশি মুবারক প্রকাশ করাকেই বলা হয় “ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” বা “ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম”। অর্থাৎ “ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” উনার শরয়ী ভিত্তি অবশ্যই রয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
ঈদে মীলাদুন নবী বা ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষ্যে খুশি প্রকাশ করার কথা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে উল্লেখ রয়েছে
“ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” বা “ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
قَالَ عِيْسَى ابْنُ مَرْيَـمَ اللّٰـهُمَّ رَبَّنَا اَنْزِلْ عَلَيْنَا مَائِدَةً مِّنَ السَّمَاءِ تَكُوْنُ لَـنَا عِيْدًا لِّاَوَّلِنَا وَاٰخِرِنَا وَاٰيَةً مّنْكَ ۖ وَارْزُقْنَا وَاَنْتَ خَيْرُ الرَّازِقِيْنَ ◌ قَالَ اللهُ اِنِّــيْ مُنَزِّلُـهَا عَلَيْكُمْ ۖ فَمَنْ يَّكْفُرْ بَعْدُ مِنْكُمْ فَاِنِّــيْ اُعَذِّبُهٗ عَذَابًا لَّا اُعَذِّبُهٗ اَحَدًا مِّنَ الْعَالَمِيْنَ ◌
অর্থ : “হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহি তিনি বলেন, আয় আমাদের রব মহান আল্লাহ পাক! আমাদের জন্য আপনি আসমান হতে (বেহেশ্তী) খাদ্যসহ একটি খাঞ্চা নাযিল করুন। খাঞ্চা নাযিলের উপলক্ষ্যটি আমাদের জন্য, আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের জন্য ঈদ (খুশি) স্বরূপ হবে এবং আপনার পক্ষ হতে একটি নিদর্শন হবে। আমাদেরকে রিযিক দান করুন।
নিশ্চয় আপনিই উত্তম রিযিকদাতা। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই আমি আপনাদের প্রতি খাদ্যসহ খাঞ্চা নাযিল করবো। অতঃপর যে ব্যক্তি সে খাদ্যসহ খাঞ্চা নাযিলের দিনকে ঈদ বা খুশির দিন হিসেবে পালন করবেনা বরং অস্বীকার করবে আমি তাকে এমন শাস্তি দিবো, যে শাস্তি সারা কায়িনাতের অপর কাউকে দিবো না।” (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১১৪-১১৫)
সামান্য খাদ্যসহ এক খাঞ্চা নাযিলের দিনটি যদি হযরত রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার এবং উনার উম্মতের জন্য তো অবশ্যই বরং পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের জন্য ঈদ বা খুশির দিন হয়ে যায় এবং সে দিনটিকে ঈদের দিন হিসেবে পালন না করলে কঠিন শাস্তির যোগ্য হয়। তাহলে যিনি সৃষ্টির মূল, যিনি সারা আলমের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের জন্য রহমত মুবারক, যাঁকে সৃষ্টি না করলে কোনো কিছুই সৃষ্টি করা হতো না উনার যমীনে তাশরীফ মুবারক নেয়ার দিনটি কতবড় ঈদের দিন হবে আর সেদিন উপলক্ষ্যে খুশি প্রকাশ না করলে তা কতো কঠিন শাস্তির যোগ্য অপরাধ হবে তা চিন্তা-ফিকিরের বিষয়।
এছাড়া পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرِتْ اَوْسِ بْنِ اَوْسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اِنَّ مِنْ اَفْضَلِ اَيَّامِكُمْ يَوْمَ الْـجُمُعَةِ فِيْهِ خُلِقَ اٰدَمُ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَفِيْهِ قُبِضَ.
অর্থ : “হযরত আউস ইবনে আউস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আপনাদের দিনগুলোর মধ্যে উত্তম দিন হচ্ছেন পবিত্র জুমআ উনার দিন। এ দিনে হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি সৃষ্টি হয়েছেন এবং এ দিনেই তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন।” সুবহানাল্লাহ!
(নাসায়ী শরীফ শরীফ : কিতাবুল জুমআ : হাদীছ শরীফ নং ১৩৮৫, মুসলিম শরীফ : কিতাবুল জুমআ : হাদীছ শরীফ নং ৮৫৫, তিরমিযী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৪৯১, মুসনাদে আহমদ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৮৯৫৪, ইবনে মাজাহ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১৭০৫, আবূ দাঊদ শরীফ : কিতাবুছ ছলাত : হাদীছ শরীফ নং ১০৪৭, ইবনে খুজায়মা শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১৬৩২)
আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ عُبَيْدِ ابْنِ السَّبَّاقِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ فِيْ جُـمُعَةٍ مِّنَ الْـجُمَعِ يَا مَعْشَرَ الْمُسْلِمِيْنَ اِنَّ هٰذَا يَوْمٌ جَعَلَهُ اللهُ عِيْدًا فَاغْتَسِلُوْا وَمَنْ كَانَ عِنْدَهٗ طِيْبٌ فَلَا يَضُرُّهٗ اَنْ يـَّمَسَّ مِنْهُ وَعَلَيْكُمْ بِالسِّوَاكِ.
অর্থ : “হযরত উবাইদ বিন সাব্বাক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এক পবিত্র জুমুআ উনার দিনে ইরশাদ মুবারক করেন, এ পবিত্র জুমআহ উনার দিন হচ্ছেন এমন একটি দিন, যে দিনকে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র ঈদ উনার দিন সাব্যস্ত করেছেন। তাই তোমরা গোসল কর আর যার নিকট সুগন্ধি রয়েছে, সে তা হতে স্পর্শ করলে ক্ষতি নেই। মিসওয়াক ব্যবহার করা তোমাদের কর্তব্য।” সুবহানাল্লাহ!
(মুয়াত্তা মালিক শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১৪৪, ইবনে মাজাহ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১১৯৮, মা’য়ারিফুস সুনান ওয়াল আছার বায়হাক্বী শরীফ : হাদীছ শরীফ ১৮০২, মুসনাদে শাফিয়ী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ২৬৮, আল্ মু’জামুল আওসাত লিত্ ত্ববারানী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৩৪৩৩)
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَسَلَامٌ عَلَيْهِ يَوْمَ وُلِدَ وَيَوْمَ يَـمُوْتُ وَيَوْمَ يُبْعَثُ حَيًّا
অর্থ : “আর (হযরত ইয়াহইয়া আলাইহিস সালাম) উনার প্রতি সালাম (অবারিত শান্তি) যেদিন তিনি বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন, যেদিন তিনি বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। আর যেদিন উনাকে পুনরুত্থিত করা হবে জীবিত অবস্থায়।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা মারইয়াম শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৫)
অনুরূপভাবে হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার নিজের বক্তব্য উল্লেখ করে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
وَالسَّلَامُ عَلَىَّ يَوْمَ وُلِدْتُّ وَيَوْمَ اَمُوْتُ وَيَوْمَ اُبْعَثُ حَيًّا
অর্থ : “আমার প্রতি সালাম (অবারিত শান্তি) যেদিন আমি বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করি, যেদিন আমি বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করবো এবং যেদিন আমি জীবিত অবস্থায় পুনরুত্থিত হবো।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা মারইয়াম শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৩)
সুতরাং প্রতিভাত হলো যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের পবিত্র বিলাদত শরীফ দিবস হচ্ছে অবারিত শান্তির দিবস বা খুশি প্রকাশের দিবস। আর তাই পবিত্র আয়াত শরীফদ্বয় উনাদের মধ্যে يَوْمَ বা দিবস উল্লেখ করে মহান আল্লাহ পাক তিনি উক্ত দিবস শান্তির অর্থাৎ খুশির দিবস হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন।
আবার পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـيْ قَتَادَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ بِـهٰذَا الْـحَدِيثِ زَادَ قَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَرَاَيْتَ صَوْمَ يَوْمِ الْاِثْنَيْنِ وَيَوْمِ الْـخَمِيْسِ قَالَ فِيْهِ وُلِدْتُّ وَفِيْهِ اُنْزِلَ عَلَىَّ الْقُرْاٰنُ.
অর্থ : “হযরত আবূ কাতাদা আনসারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইয়াওমুল ইছলাইনিল আযীম শরীফ ও ইয়াওমুল খ¦মীস রোযা রাখার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলো, তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন যে, এদিন (ইয়াওমুল ইছলাইনিল আযীম শরীফ) আমি পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছি, আর এদিনই আমার উপর ওহী বা পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল হয়েছে।” (মুসলিম শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ২৮০৭, আবূ দাঊদ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ২৪২৮, সুনানে কুবরা লি বায়হাক্বী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৮২১৭, ইবনে খুজাইমা শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ২১১৭, মুসনাদে আবি আওয়ানা : হাদীছ শরীফ নং ২৯২৬, মুসনাদে আহমদ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ২২৬০৩)
উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবস স্মরণে রেখে প্রত্যেক সপ্তাহেই উদযাপন করেছেন। আর তাই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারাও পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবস স্মরণ করে মাহফিল করে খুশি প্রকাশ করেছেন।
যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِى الدَّرْدَاءِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّهٗ مَرَّ مَعَ النَّبِىّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِلٰى بَيْتِ عَامِرِ الاَنْصَارِىِّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ وَكَانَ يُعَلِّمُ وَقَائِعَ وِلادَتِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِاَبْنَائِهٖ وَعَشِيْرَتِهٖ وَيَقُوْلُ هٰذَا الْيَوْمَ هٰذَا الْيَوْمَ فَقَالَ عَلَيْهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَامُ اِنَّ اللهَ فَتَحَ لَكَ اَبْوَابَ الرَّحْـمَةِ وَالْمَلَائِكَةُ كُلُّهُمْ يَسْتَغْفِرُوْنَ لَكَ مَنْ فَعَلَ فِعْلَكَ نَـجٰى نَـجٰتَكَ.
অর্থ : “হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, একদা তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে হযরত আমির আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার গৃহে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন যে, তিনি উনার সন্তানাদি এবং আত্মীয়-স্বজন, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী, পাড়া-প্রতিবেশী উনাদেরকে নিয়ে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ সম্পর্কিত মুবারক ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছেন এবং বলছেন, এই দিবস; এই দিবস (অর্থাৎ এই দিবসে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে তাশরীফ মুবারক এনেছেন এবং ইত্যাদি ইত্যাদি ঘটেছে)। এতদশ্রবণে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তায়ালা উনার মুবারক রহমত উনার দরজা মুবারকসমূহ আপনার জন্য উম্মুক্ত করেছেন এবং সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন এবং যে কেউ আপনার মত এরূপ কাজ করবে, তিনিও আপনার মত নাযাত (ফযীলত) লাভ করবেন।” সুবহানাল্লাহ!
(আত তানউইর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, মাওলূদুল কাবীর, দুররুল মুনাযযাম, সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদিল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ইশবাউল কালামি ফী ইছবাতিল মাওলিদি ওয়াল ক্বিয়ামি, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী মীলাদে আহমদী)
এ সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُمَا اَنَّهٗ كَانَ يُـحَدِّثُ ذَاتَ يَوْمٍ فِىْ بَيْتِهٖ وَقَائِعَ وِلَادَتِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِقَوْمٍ فَيَسْتَبْشِرُوْنَ وَيُـحَمِّدُوْنَ اللهَ وَيُصَلُّوْنَ عَلَيْهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاِذَا جَاءَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ حَلَّتْ لَكُمْ شَفَاعَتِىْ.
অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি একদা উনার নিজগৃহে সমবেত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ সম্পর্কিত মুবারক ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছিলেন। এতে শ্রবণকারীগণ উনারা আনন্দ ও খুশি প্রকাশ করছিলেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার প্রশংসা তথা তাসবীহ-তাহলীল মুবারক পাঠ করছিলেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি (পবিত্র ছলাত শরীফ-পবিত্র সালাম শরীফ) পবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করছিলেন। এমন সময় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তথায় তাশরীফ মুবারক নেন এবং (পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠের অনুষ্ঠান দেখে) বললেন, “আপনাদের জন্য আমার শাফায়াত মুবারক ওয়াজিব।” সুবহানাল্লাহ! (আত তানউইর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, মাওলূদুল কাবীর, দুররুল মুনাযযাম, সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদিল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ইশবাউল কালামি ফী ইছবাতিল মাওলিদি ওয়াল ক্বিয়ামি, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী মীলাদে আহমদী)
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা শুধু নিজেরাই পালন করেননি বরং পরবর্তী উম্মতকে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনে উৎসাহিতও করেছেন।
যেমন এ প্রসঙ্গে আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম ফী মাওলিদি সাইয়্যিদি ওয়ালাদি আদম লি হযরতুল আল্লামা আহমদ শিহাবুদ্দীন হাইতামী শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ৮ম পৃষ্ঠা; নাফহাতুল আম্বারিয়াতু লিইসবাতিল কিয়াম ফি মাওলিদি খাইরিল বারিয়্যাহ লি হযরতুল আল্লামা আব্দুল আউওয়াল জৈনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ৮ম পৃষ্ঠা উনাদের মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার প্রথম খলীফা, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি বলেন,
مَنْ اَنْفَقَ دِرْهَمًا عَلٰى قِرَائَةِ مَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ رَفِيْقِىْ فِىْ الْـجَنَّةِ.
অর্থ : “যে ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ অর্থাৎ সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উপলক্ষ্যে খুশি প্রকাশ করে এক দিরহাম ব্যয় করবেন, তিনি জান্নাতে আমার বন্ধু হয়ে থাকবেন।” সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দ্বিতীয় খলীফা, খলীফাতুল মুসলিমীন, হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বলেন,
مَنْ عَظَّمَ مَوْلِدَ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَدْ اَحْيَا الْاِسْلَامَ.
অর্থ : “যে ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ অর্থাৎ সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনাকে বিশেষ মর্যাদা দিলেন অর্থাৎ এ উপলক্ষ্যে খুশি প্রকাশ করলেন, তিনি মূলত দ্বীন ইসলাম উনাকেই পুনরুজ্জীবিত করলেন।” সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার তৃতীয় খলীফা, আমীরুল মুমিনীন, হযরত যুন নুরাইন আলাইহিস সালাম তিনি বলেন,
مَنْ اَنْفَقَ دِرْهَـمًا عَلٰى قِرَائَةِ مَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَكَاَنَّـمَا شَهِدَ غَزْوَةَ بَدْرٍ وَّحُنَيْنٍ.
অর্থ : “যে ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ অর্থাৎ সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উপলক্ষ্যে খুশি হয়ে এক দিরহাম খরচ করলেন, তিনি যেনো বদর ও হুনাইন জিহাদে শরীক থাকলেন।” সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার চতুর্থ খলীফা, আসাদুল্লাহিল গালিব, আমীরুল মু’মিনীন হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি বলেন,
مَنْ عَظَّمَ مَوْلِدَ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَكَانَ سَبَبًا لّقِرَائَتِهٖ لَايَـخْرُجُ مِنَ الدُّنْيَا اِلَّا بِالْاِيْـمَانِ وَيَدْخُلُ الْـجَنَّةَ بِغَيْرِ حِسَابٍ.
অর্থ : “যে ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ অর্থাৎ সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনাকে বিশেষ মর্যাদা প্রদান করলেন অর্থাৎ সে উপলক্ষ্যে খুশি প্রকাশ করলেন, তিনি অবশ্যই ঈমান নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিবেন এবং বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবেন।” সুবহানাল্লাহ!
সর্বোপরি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
ﻳَﺂ اَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَتْكُمْ مَّوْعِظَةٌ مِّن رَّبِّكُمْ وَشِفَاءٌ لِّمَا فِي الصُّدُوْرِ وَهُدًى وَّرَحْـمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِيْنَ ◌ قُلْ بِفَضْلِ اللهِ وَبِرَحْـمَتِهٖ فَبِذٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوْا هُوَ خَيْرٌ مِّـمَّا يَـجْمَعُوْنَ ◌
অর্থ : “হে মানবজাতি! অবশ্যই মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে তোমাদের মধ্যে তাশরীফ মুবারক এনেছেন মহান নছীহত মুবারক দানকারী, তোমাদের অন্তরের সকল ব্যাধিসমূহ শিফা মুবারক দানকারী, কুল-কায়িনাতের মহান হিদায়েত মুবারক দানকারী ও খাছভাবে ঈমানদারদের জন্য, আমভাবে সমস্ত কায়িনাতের জন্য মহান রহমত মুবারক দানকারী (নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি উম্মাহকে বলে দিন, মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত ফদ্বল বা অনুগ্রহ মুবারক ও সম্মানিত রহমত মুবারক হিসেবে উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হাদিয়া মুবারক করেছেন; সেজন্য তারা যেনো সম্মানিত ঈদ উদযাপন তথা খুশি মুবারক প্রকাশ করে। এই খুশি মুবারক প্রকাশ বা ঈদ করাটা সেসব কিছু থেকে উত্তম, যা তারা দুনিয়া আখিরাতের জন্য সঞ্চয় করে।” (পবিত্র সূরা ইঊনুস শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৭-৫৮)
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ব্যবহৃত رَحْـمَةٌ ‘রহমত’ শব্দ মুবারক উনার তাফসীরে পৃথিবী বিখ্যাত সব তাফসীরের কিতাবে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কথাই বলা হয়েছে। যেমন- বিখ্যাত মুফাসসির, সমগ্র মাদরাসায় যাঁর তাফসীর পড়ানো হয়, হাফিযে হাদীছ, আল্লামা জালালুদ্দীন সূয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি, তাজুল মানতেকীন ফখরুদ্দীন রাজী রহমতুল্লাহি আলাইহি, বিখ্যাত মুফাসসির আল্লামা আলুসী বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা বলেন-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ فِي الْاٰيَةِ فَضْلِ اللهِ اَلْعِلْمُ وَ رَحْـمَتِهٖ مُـحَمَّدٌ صَلَّي اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اللهُ تَعَالٰي وَمَا اَرْسَلْنَاكَ اِلَّا رَحْـمَةً لِّلْعٰلَمِيْنَ
অর্থ : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, এ আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে এখানে মহান আল্লাহ পাক উনার فَضْل ‘অনুগ্রহ’ বলতে ‘ইলম’ বুঝানো হয়েছে। আর رَحْـمَةٌ ‘রহমত’ দ্বারা বুঝানো হয়েছে ‘নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ উনাকে। যেমন, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি তো আপনাকে তামাম আলমের জন্য সম্মানিত রহমত মুবারক স্বরূপ প্রেরণ করেছি।” (তাফসীরে দূররুল মানছূর, তাফসীরে রূহুল মা’য়ানী, তাফসীরে কবীর)
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে رَحْـمَةٌ বলতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বুঝানো হয়েছে।
সুতরাং অর্থ দাঁড়াচ্ছে, মহান আল্লাহ পাক উনার অনুগ্রহ এবং রহমত নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনের কারণে খুশি বা ঈদ পালন করো।
আবার মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَمَا اَرْسَلْنَاكَ اِلَّا رَحْـمَةً لّـِلْعَالَمِيْنَ
অর্থ : “আমি আপনাকে তামাম আলমের জন্যে সম্মানিত রহমত মুবারক স্বরূপই প্রেরণ করেছি।” (পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১০৭)
আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـيْ اُمَامَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ النَّبِـيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَنَّ اللهَ تَعَالٰى بَعَثَنِيْ رَحْـمَةً لّـِلْعَالَمِيْنَ
অর্থ : “হযরত আবূ উমামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে তামাম আলমের জন্য সম্মানিত রহমত মুবারক হিসেবে পাঠিয়েছেন।” (ত্ববারানী শরীফ, মুসনাদে আহমদ শরীফ, মিরকাত শরীফ, দালায়িলুন নুবুওওয়াত লি আবু নুয়াইম)
অর্থাৎ সমগ্র জগতের রহমত হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। উনাকে সম্মানিত রহমত মুবারক হিসাবে প্রেরণ করা হয়েছে।
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন,
ثُـمَّ تَوَلَّيْتُمْ مِّنْ بَۢعْدِ ذٰلِكَ ۖ فَلَوْ لَا فَضْلُ اللهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْـمَتُهٗ لَكُنْتُمْ مّنَ الْـخَاسِرِيْنَ
অর্থ : “তারপরেও তোমরা তা থেকে ফিরে গেছ। কাজেই মহান আল্লাহ পাক উনার অনুগ্রহ ও রহমত যদি তোমাদের উপর না থাকতো, তবে অবশ্যই তোমরা ধ্বংস হয়ে যেতে।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৪)
এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে কিতাবে উল্লেখ করা হয়- “আর হাদীছ শরীফ উনার ভিত্তিতে আযাব অবতীর্ণ না হওয়াটা যেহেতু নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারই বরকত। কাজেই কোন কোন তাফসীরকারক নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক আর্বিভাবকেই মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত ও করুণা বলে বিশ্লেষণ করেছেন।” (তাফসীরে মায়ারিফুল কুরআন)
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফদ্বয় উনাদের তাফসীরের মাধ্যমে সুস্পষ্ট যে, رَحْـمَةٌ ‘রহমত’ হচ্ছেন স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। সুতরাং, মহান আল্লাহ পাক উনার অনুগ্রহ ও রহমত হিসেবে উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাওয়ার কারণে পবিত্র ঈদ উদযাপন তথা খুশি প্রকাশ করা ফরয। যা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দলীল দ্বারাই প্রমাণিত।
উপসংহার :
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র সূরা মারইয়াম শরীফ উনার ১৫ নং পবিত্র আয়াত শরীফ, পবিত্র সূরা মারইয়াম শরীফ উনার ৩৩ নং পবিত্র আয়াত শরীফ, পবিত্র সূরা ইখলাছ শরীফ উনার ৩ নং পবিত্র আয়াত শরীফ, পবিত্র সূরা বালাদ শরীফ উনার ৩ নং পবিত্র আয়াত শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ ও পবিত্র ইজমা-ক্বিয়াস শরীফ দ্বারাই বিলাদত, মীলাদ ইত্যাদি শব্দ মুবারক প্রমাণিত। হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের পবিত্র বিলাদত শরীফ উপলক্ষ্যে খুশির দিন বা ঈদের দিন সাব্যস্ত হওয়ার বিষয়টি যেহেতু পবিত্র সূরা মারইয়াম শরীফ উনার ১৫ ও ৩৩ নং পবিত্র আয়াত শরীফ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দ্বারা সুস্পষ্ট প্রমাণিত। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা ইঊনুস শরীফ উনার ৫৭ ও ৫৮ নং পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাওয়ার কারণে খুশি প্রকাশ করতে বলেছেন। তাই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ভিত্তি তো অবশ্যই আছেই বরং তা ফরয হিসেবে সাব্যস্ত।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন