সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের তারিখ নিয়ে ইখতিলাফ বা মতভেদ আছে - বিষয়টা কতটুকু সত্য?



এ প্রশ্নের সাথে সংশ্লিষ্ট আরো কিছু প্রশ্ন মানুষ করে থাকে, যেমন-

সুওয়াল ৪ : নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের তারিখ নিয়ে ইখতিলাফ বা মতভেদ আছে। তাই মতভেদ সম্পর্কিত বিষয় পালন করা ঠিক নয়।

সুওয়াল ৫ : নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবসের তারিখ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা জানতেন না।

সুওয়াল ৬ : নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবসের তারিখ মুবারক ১২ তারিখ নয় বরং ৯ তারিখ।


জওয়াব : নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের তারিখ মুবারক নিয়ে কোন ইখতিলাফ বা মতভেদ নেই।

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের তারিখ সম্পর্কে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অবশ্যই জানতেন এবং তা বর্ণনাও করেছেন।

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবসের তারিখ- ৯ তারিখ নয় বরং ১২ তারিখ। 

এ প্রসঙ্গে হাফিয হযরত আবূ বকর ইবনে আবী শায়বাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ছহীহ সনদ সহকারে বছর ও বার উল্লেখপূর্বক সুস্পষ্টভাবেই বর্ণনা করেছেন যে, পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের তারিখ মুবারক হচ্ছেন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ।

দলীল

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتِ الْـمُطَّلِبِ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ قَيْسِ بْنِ مَـخْرَمَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنْ اَبِيْهِ عَنْ جَدِّهٖ قَالَ وُلِدْتُّ اَنَا وَرَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامَ الْفِيلِ وَسَاَلَ عُثْمَانُ بْنُ عَفَّانَ عَلَيْهِ السَّلَامُ قُبَاثَ بْنَ اَشْيَمَ اَخَا بَنِيْ يَعْمَرَ بْنِ لَيْثٍ اَاَنْتَ اَكْبَرُ اَمْ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ فَقَالَ: رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَكْبَرُ مِنِّيْ وَاَنَا اَقْدَمُ مِنْهُ فِي الْمِيْلَادِ وُلِدَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامَ الْفِيْلِ.

অর্থ : “হযরত মুত্তালিব ইবনে আব্দিল্লাহ ইবনে কাইস ইবনে মাখরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি উনার পিতা হতে এবং উনার পিতা উনার দাদা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি “হাতীর বছরে” বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন, আমিও সেই হাতীর বছরেই বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেছি। সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি হযরত কুবাস বিন আশিয়াম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে প্রশ্ন করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বড় না আপনি বড়? তিনি উত্তরে বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার থেকে বড়, আর আমি উনার পূর্বে বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেছি।” (তিরমিযী শরীফ, হযরত আবূ ঈসা মুহাম্মদ ইবনু ঈসা রহমতুল্লাহি আলাইহি (২৭৯ হিঃ), আস সুনান, প্রকাশনা- বৈরুত, দারু ইহ্য়ায়িত তুরাসিল আরাবী, হাদীছ শরীফ নং ৩৬১৯)

আবার অন্য হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِـيْ قَتَادَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ بِـهٰذَا الْـحَدِيْثِ زَادَ قَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَرَاَيْتَ صَوْمَ يَوْمِ الْاِثْنَيْنِ وَيَوْمِ الْـخَمِيْسِ قَالَ ‏فِيْهِ وُلِدْتُّ وَفِيْهِ اُنْزِلَ عَلَىَّ الْقُرْاٰنُ.

অর্থ : “হযরত আবূ কাতাদা আনসারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইয়াওমুল ইছলাইনিল আযীম শরীফ ও ইয়াওমুল খ¦মীস রোযা রাখার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলো, তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন যে, এদিন (ইয়াওমুল ইছলাইনিল আযীম শরীফ) আমি পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছি, আর এদিনই আমার উপর ওহী বা পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল হয়েছে।” (মুসলিম শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ২৮০৭, আবূ দাঊদ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ২৪২৮, সুনানে কুবরা লি বায়হাক্বী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৮২১৭, ইবনে খুজাইমা শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ২১১৭, মুসনাদে আবি আওয়ানা : হাদীছ শরীফ নং ২৯২৬, মুসনাদে আহমদ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ২২৬০৩)

উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফদ্বয় উনাদের বর্ণনা থেকে এটা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন বছর হিসেবে ‘হাতীর বছর’ আর সাপ্তাহিক বার হিসেবে ‘ইয়াওমুল ইছলাইনিল আযীম শরীফ’।


আর অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ عَفَّانَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ حَضْرَتْ سَلِيْمِ بْنِ حَيَّانَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ حَضْرَتْ سَعِيْدِ بْنِ مِيْنَا رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ حَضْرَتْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ الْأَنْصَارِيّ وَحَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ وُلِدَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامَ الْفِيْلِ يَوْمَ الِاثْنَيْنِ الثَّانِـيْ عَشَرَ مِنْ شَهْرِ رَبِيْعٍ الْاَوَّلِ.

অর্থ : “হযরত আফফান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি হযরত সালিম বিন হাইয়ান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে তিনি হযরত সাঈদ ইবনে মীনা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেছেন যে, হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ হস্তি বাহিনী বর্ষের মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ হয়েছিল।” সুবহানাল্লাহ! (বুলুগুল আমানী শরহিল ফাতহির রব্বানী, আছ ছিহ্হাহ্ ওয়াল মাশাহীর ১ম খ- ২৬৭ পৃষ্ঠা)

উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনার সনদের মধ্যে প্রথম বর্ণনাকারী হযরত আফফান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্পর্কে মুহাদ্দিছগণ উনারা বলেছেন, “তিনি একজন উচ্চ পর্যায়ের নির্ভরযোগ্য ইমাম, প্রবল স্মরণশক্তি ও দৃঢ়প্রত্যয় সম্পন্ন ব্যক্তি।” (খুলাছাতুত তাহযীব শরীফ)

“দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ণনাকারী যথাক্রমে হযরত সালিম বিন হাইয়ান রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত সাঈদ ইবনে মীনা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারাও অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য।” (খুলাছাহ শরীফ, তাক্বরীব শরীফ)

সনদের উপরের দুজন তো ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনাদের তো কোন তুলনাই নেই। অপর তিন জন রাবী হযরত সাঈদ ইবনে মীনা রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত সলিম ইবনে হাইয়ান রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত আফফান রহমতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে রেজালের কিতাবে বলা হয়েছে উনারা উচ্চ পর্যায়ের নির্ভযোগ্য ইমাম, সিকাহ, তীক্ষè স্মরণশক্তিসম্পন্ন, বিশস্ত এবং নির্ভরযোগ্য, দৃঢ় প্রত্যয়সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব।’’ (খুলাছাতুত তাহযীব ২৬৮ পৃষ্ঠা, ত্বাকরীবুত তাহযীব ২য় খন্ড ১২৬ পৃষ্ঠা, সমূহ রেজালের কিতাব)

আর হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা দু’জন উচ্চ পর্যায়ের ফক্বীহ ছাহাবী। উনাদের বিশুদ্ধ সনদ সহকারে বর্ণনা থেকে প্রমাণিত হলো যে, “মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবস।”

এ ছহীহ ও নির্ভরযোগ্য বর্ণনার উপর কোন কোন হযরত ইমাম উনাদের ইজমা (ঐকমত্য) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। (সীরাত-ই-হালবিয়াহ শরীফ, যুরক্বানী আলাল মাওয়াহিব শরীফ, মা ছাবাতা বিস সুন্নাহ শরীফ ইত্যাদি)

উপরোক্ত বর্ণনার দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবসের তারিখ মুবারক হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা জানতেন।

তাহলে ‘নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবসের তারিখ মুবারক সম্পর্কে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা জানতেন না’ বলা কত বড় মিথ্যাচার তা সহজেই অনুধাবনীয়। যা অসংখ্য হাদীছ শরীফ অস্বীকারের নামান্তর।

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক আগমনের সুসংবাদ প্রত্যেক যামানায় প্রত্যেক হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা যমীনে জিন-ইনসানকে প্রদান করেছেন। এমনকি আলমে আরওয়াহতেও মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের থেকে ওয়াদা মুবারক নিয়েছেন যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সর্ব বিষয়ে উনারা খিদমত মুবারক করবেন।

যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- 

وَاِذْ اَخَذَ اللهُ مِيْثَاقَ النَّبِيّيْنَ لَمَا اٰتَيْتُكُم مّنْ كِتَابٍ وَّحِكْمَةٍ ثُـمَّ جَاءَكُمْ رَسُوْلٌ مُّصَدِّقٌ لِّمَا مَعَكُمْ لَـتُؤْمِنُنَّ بِهٖ وَلَتَنْصُرُنَّهٗ ۚ قَالَ اَاَقْرَرْتُـمْ وَاَخَذْتُـمْ عَلٰى ذٰلِكُمْ اِصْرِيْ  ۖقَالُوْﺁ اَقْرَرْنَا ۚ قَالَ فَاشْهَدُوْا وَاَنَا مَعَكُمْ مِّنَ الشَّاهِدِيْنَ ◌ 

অর্থ : “(হে আমার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি স্মরণ করুন সেই সময়ের কথা) যখন মহান আল্লাহ পাক তিনি আলমে আরওয়াহতে সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের কাছ থেকে ওয়াদা নিয়েছিলেন যে, আপনাদেরকে আমি কিতাব ও হিকমত দান করবো। অতঃপর আপনাদেরকে সত্য প্রতিপাদনের জন্য আখিরী নবী, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে প্রেরণ করবো। আপনারা উনাকে নবী ও রসূল হিসেবে মেনে নিবেন এবং সর্ব বিষয়ে উনার খিদমত মুবারক করবেন। আপনারা কি এই ওয়াদার কথা মেনে নিলেন? উত্তরে সকলে বললেন, হ্যাঁ আমরা এই ওয়াদা স্বীকার করলাম। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, আপনারা সাক্ষী থাকুন, আমিও আপনাদের সাথে সাক্ষী হয়ে গেলাম।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৮১)

উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে প্রদত্ত ওয়াদা মুবারক অনুযায়ী প্রত্যেক যামানায় প্রত্যেক হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা যমীনে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক আগমনের সুসংবাদ মুবারক প্রদান করেছেন। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ক্বওল শরীফ উল্লেখ করে ইরশাদ মুবারক করেন-

وَمُبَشّرً‌ا بِۢرَ‌سُوْلٍ يَّأْتِـيْ مِنْ بَۢعْدِي اسْـمُهٗ اَحْـمَدُ.

অর্থ : “আমি এমন একজন সম্মানিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক আগমনের সুসংবাদদানকারী, যিনি আমার পরে পৃথিবীতে তাশরীফ মুবারক আনবেন, উনার সুমহান নাম মুবারক হচ্ছেন সাইয়্যিদুনা হযরত আহমদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।” (পবিত্র সূরা ছফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬)

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক আগমনের ভবিষ্যতদ্বাণী ছহিবে তাওরাত শরীফ, হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি ইয়াহূদী সম্প্রদায়কে জানিয়েছেন। আর পবিত্র তাওরাত শরীফ উনার মাধ্যমে পরবর্তী ইয়াহূদী সম্প্রদায় এই ভবিষ্যতদ্বাণী জেনে বছরের পর বছর সম্মানিত মদীনা শরীফ উনার মধ্যে অবস্থান করতে থাকে শুধুমাত্র নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছোহবত মুবারক হাছিল করার জন্য।

তাহলে যে বিষয়টি আবুল বাশার হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার থেকে শুরু করে হযরত রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম পর্যন্ত সকল হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা বিশ্ববাসীকে জানিয়ে গিয়েছেন। সে বিষয়টি অর্র্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তাশরীফ মুবারক নেয়ার বিষয়টি, উনার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের তারিখ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা জানতেন না এ কথাটি কিভাবে বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে। এটি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের প্রতি সুস্পষ্ট অপবাদ বৈ কিছুই নয়।

শুধু তাই নয় পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার অন্য সনদেও এ বিষয়ে পবিত্র হাদীছ শরীফ উল্লেখ আছে। ইমাম হযরত হাকিম নিশাপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এ প্রসঙ্গে উনার কিতাবে উল্লেখ করেন-

عَنْ حَضْرَتْ مُـحَمَّدِ بْنِ اِسْحَاقَ رَحـْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ وُلِدَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِاِثْنَتَيْ عَشَرَةَ لَيْلَةٍ مَضَتْ مِنْ شَهْرِ رَبِيْعِ الْاَوَّلِ


অর্থ : “হযরত মুহম্মদ ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাস উনার বারো রাত অতিবাহিত হওয়ার পর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন।” (মুস্তাদরাক লিল হাকিম শরীফ ৪র্থ খ-, ১৫৬৮ পৃষ্ঠা, হাদীছ শরীফ নং ৪১৮২)

অন্য হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

قَالَ مُـحَمَّدُ بْنُ اِسْحَاقَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ وُلِدَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ الاِثْنَيْنِ عَامَ الْفِيْلِ لِاِثْنَتَيْ عَشَرَةَ لَيْلَةٍ مَضَتْ مِنْ شَهْرِ رَبِيْعٍ الاَوَّلِ

অর্থ : “হযরত মুহম্মদ ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ, হস্তীর বছর, রাত্রির শেষভাগে বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন।” (দালায়িলুন নুবুওওয়াত লি ইমাম বায়হাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি : হাদীছ শরীফ নং ২৩; কিতাবুল ওয়াফা লি আহওয়ালিল মুস্তফা লি আল্লামা ইবনে জাওজী রহমতুল্লাহি আলাইহি, পৃষ্ঠা ৮৭; প্রকাশনা : দারূল কুতুব ইসলামিয়া, বৈরূত, লেবানন)

উপরোক্ত বিশুদ্ধ বর্ণনা মুতাবিক পবিত্র ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফই হচ্ছে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবস। এটাই সর্বাধিক ছহীহ ও মশহূর মত। এর বিপরীতে যেসব মত ঐতিহাসিকগণ থেকে বর্ণিত হয়েছে তা অনুমান ভিত্তিক ও দূর্বল। অতএব তা আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়।

এ প্রসঙ্গে হাফিজুল হাদীছ ইমাম হযরত কুস্তালানি রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,

هُوَ الْـمَشْهُوْرُ اَنَّهٗ وُلِدَ ثَانِـيْ عَشَرَ رَبِيْعِ الْاَوَّلِ وَهُوَ قَوْلُ اِبْنِ اِسْحَاقَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ وَغَيْرِهٖ

অর্থ : “প্রসিদ্ধ মত অনুসারে নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ দুনিয়ায় তাশরীফ মুবারক নেন। যা ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি ও অন্যান্যদের এটাই মত।” (শরহুল মাওয়াহিব ১ম খ- ২৪৮ পৃষ্ঠা)

অন্যত্র বর্ণিত আছে- 

وَعَلَيْهِ عَمَلُ اَهْلِ مَكَّةَ فِـيْ زِيَارَتِـهِمْ مَوْضِعَ مَوْلِدِهٖ فِـيْ هٰذَا الْوَقْتِ

অর্থ : “মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ তারিখে সম্মানিত মক্কা শরীফ উনার অধিবাসী উনাদের মধ্যে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের স্থান মুবারক যিয়ারত করার আমল বর্তমান অবধি জারী রয়েছে।’’ (শরহুল মাওয়াহিব ১ম খ- ২৪৮ পৃষ্ঠা)

বিখ্যাত ঐতিহাসিক ইমাম হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,

وُلِدَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ الْاِثْنَيْنِ لِاِثْنَتَـيْ عَشَرَةَ لَيْلَةٍ خَلَتْ مِنْ شَهْرِ رَبِيْعِ الْاَوَّلِ عَامَ الْفِيْلِ

অর্থ : “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ, আমুল ফিল বা হস্তী বাহিনীর বছর রাতের শেষ ভাগে দুনিয়ায় তাশরীফ মুবারক নেন।” (সীরাতে ইবনে হিশাম ১ম খ- ১৫৮ পৃষ্ঠা)

বিখ্যাত ঐতিহাসিক ইবনে খালদুন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, 

وُلِدَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامَ الْفِيْلِ لِاِثْنَتَـيْ عَشَرَةَ لَيْلَةٍ خَلَتْ مِنْ رَبِيْعِ الْاَوَّلِ لِاَرْبَعِيْنَ سَنَةً مّنْ مُلْكِ كِسْرٰي انَوْشِيْرْوَان

অর্থ : “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ, আমুল ফিল বা হস্তী বাহিনীর বছর রাতে দুনিয়ায় তাশরীফ মুবারক নেন। তখন ছিলো শাসক নাওশেরাওয়ার শাসনকালের ৪০তম বছর।” (তারীখে ইবনে খালদুন ২য় খ- ৩৯৪ পৃষ্ঠা)

ইমাম হযরত জারির তাবারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, 

وُلِدَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ الْاِثْنَيْنِ عَامَ الْفِيْلِ لِاِثْنَتَـيْ عَشَرَةَ لَيْلَةٍ مَضَتْ مِنْ شَهْرِ رَبِيْعِ الْاَوَّلِ

অর্থ : “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ, আমুল ফিল বা হস্তী বাহিনীর বছর রাতের শেষ ভাগে দুনিয়ায় তাশরীফ মুবারক নেন।’’ (তারীখে ওমুম ওয়াল মূলক ২য় খ- ১২৫ পৃষ্ঠা)

ইমাম হযরত ইবনে কাছীর ও ইমাম হযরত যুরকানী রহমতুল্লাহি আলাইহিমা উনারা বলেন,

وَهُوَ الْـمَشْهُوْرُ عِنْدَ الْـجُمْهُوْرِ .. هُوَ الَّذِيْ عَلَيْهِ الْعَمَلُ

অর্থ : “মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ তারিখই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার (পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের) তারিখ হিসাবে জমহুর উলামায়ে কিরামের নিকট প্রসিদ্ধ। উক্ত মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ তারিখই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তাশরীফ মুবারক গ্রহণ হিসেবে সবাই পালন করে আসছেন।” (শরহুল মাওয়াহিব ২য় খ- ২৪৮ পৃষ্ঠা)

হাফিজুল হাদীছ হযরত আবুল ফাত্তাহ আন্দালুসী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,

وُلِدَ سَيِّدُنَا وَنَبِيُّنَا مُـحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ الْاِثْنَيْنِ لِاِثْنَتَـيْ عَشَرَةَ لَيْلَةٍ مَضَتْ مِنْ شَهْرِ رَبِيْعِ الْاَوَّلِ عَامَ الْفِيْلِ قِيْلَ بَعْدَ الْفِيْلِ بِـخَمْسِيْنَ يَوْمًا

অর্থ : “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ, রাতের শেষ ভাগে হস্তী বাহিনীর বছর দুনিয়ায় তাশরীফ মুবারক নেন। বলা হয়, হস্তী বাহিনীর ঘটনার ৫০ দিন পরে তিনি দুনিয়ায় তাশরীফ মুবারক নেন।” (আইনুল আসার ১ম খ- ৩৩ পৃষ্ঠা)

বিখ্যাত মুহাদ্দিছ, উপমহাদেশের যুগশ্রেষ্ঠ আলিম, শায়েখ হযরত আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের তারিখ হিসাবে মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ তারিখই মশহূর। সম্মানিত মক্কা শরীফ উনার অধিবাসী উনাদের আমল হলো উক্ত মুবারক তারিখে উনারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের মুবারক স্থান যিয়ারত করতেন।’’ (মা-সাবাতা বিস সুন্নাহ ৮১ পৃষ্ঠা)

উক্ত কিতাবে আরো বর্ণিত আছে, “সমস্ত মুসলমান এ বিষয়ের উপর ইজমা করেছেন বা একমত যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ তাশরীফ মুবারক নিয়েছেন।” (মা-সাবাতা বিস সুন্নাহ ৮২ পৃষ্ঠা)

দেওবন্দী ওহাবীদের মুরুব্বীদের কিতাবে উল্লেখ রয়েছে- “সারকথা যে বছর আসহাবে ফীল পবিত্র কা’বা শরীফ আক্রমন করে, সেই বছর পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাসে মহাসম্মানিত ১২ তারিখ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ (সোমবার) ছিলো পৃথিবীর জীবনে এক অনন্য বিশেষ দিবস। যেদিন নিখিল ভূবন সৃষ্টির মূল লক্ষ্য, দিবস রজনী পরিবর্তনের মূখ্য উদ্দেশ্য, হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম ও বনী আদমের গৌরব, হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার কিস্তির নিরাপত্তার নিগূঢ় তাৎপর্য, হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার দুআ ও হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম ও হযরত রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ভবিষ্যদ্বাণীসমূহের উদ্দিষ্ট ব্যক্তিত্ব অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে তাশরীফ মুবারক নেন।” (সীরাতে খতিমুল আম্বিয়া, পৃষ্ঠা ৪, প্রকাশনা : এমদাদিয়া লাইব্রেরি)

উক্ত কিতাবে একটি টীকা সংযোজন করা হয়েছে, “সর্বসম্মত মতানুসারে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ হয়েছিল পবিত্র রবীউল আউয়াল শরীফ মাস উনার ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ। কিন্তু তারিখ নির্ধারণের জন্য ৪টি রেওয়ায়েত প্রসিদ্ধ রয়েছে। যথা- দ্বিতীয়, অষ্টম, দশম, দ্বাদশ। হাফিজ মোগলতাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি (৬৮৯-৭৬২ হিজরী) ২য় তারিখের রেওয়ায়েত গ্রহণ করে অন্যান্য রেওয়ায়েতকে দূর্বল বলে মন্তব্য করেছেন। কিন্তু প্রসিদ্ধ রেওয়ায়েত হচ্ছে দ্বাদশ তারিখের রেওয়ায়েত। এমনকি হযরত ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি ইহার উপর ইজমার দাবী বর্ণনা করেছেন। ইহাকে কামেলে ইবনে আছীরে গ্রহণ করা হয়েছে।”

অথচ উনবিংশ শতাব্দীতে মাহমুদ পাশা আল ফালাকি (১৮১৫-১৮৮৫ ঈসায়ী) নামক একজন মিশরীয় জ্যোতির্বিদ দাবী করেছে যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবস হচ্ছে পবিত্র ৯ রবীউল আউওয়াল শরীফ। নাঊযুবিল্লাহ! আর তার দাবীকৃত এই বিভ্রান্তিমূলক তারিখটিই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দুশমনরা ব্যবহার করে থাকে। তাদের কাছে ছহীহ হাদীছ শরীফ অপেক্ষা একজন নাস্তিকের দাবী বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নাঊযুবিল্লাহ! তাই এই ভুল বিশ্লেষণ  এবং উক্ত বিশ্লেষণের প্রতারণা উন্মোচন  করা হলো।

ভুল বিশ্লেষণটি নি¤œরূপ-

উক্ত বিশ্লেষণে দেখানো হয়েছে যে, ১০ম হিজরী শরীফ উনার পবিত্র শাওওয়াল শরীফ উনার শেষ তারিখে সূর্যগ্রহণ হয়েছিল আর একই দিনেই ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুর রবি’ আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। আর তাই ১০ম হিজরী শরীফ উনার পবিত্র শাওওয়াল শরীফ উনার শেষ তারিখ ৬৩২ ঈসায়ী সালের ৭ নভেম্বরকে সূর্যগ্রহণের তারিখ ধরে সে হিসেব অনুযায়ী গণনা করে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়ার যমীনে তাশরীফ মুবারক নেয়ার তারিখ ৫৭১ ঈসায়ী সনের ১২ই এপ্রিল- পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাস উনার ৯ তারিখ প্রমাণিত হয়। নাঊযুবিল্লাহ! আর যেহেতু নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়ার যমীনে তাশরীফ মুবারক নেয়ার বারটি ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ, এই বিষয়ে সবাই একমত। 

তাই আমুল ফীল বা হস্তির বছরের ১২ই এপ্রিল ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ পড়তে হলে অন্য কোন আরবী তারিখ (৮ কিংবা ১২ রবীউল আউওয়াল শরীফ) হওয়ার কোন সম্ভাবনাই নেই, বরং ৯ রবীউল আউওয়াল শরীফই হয়।


ভুল বিশ্লেষণটি ব্যবচ্ছেদ ও প্রতারণা নির্ণয়ন :

ক) ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুর রবি’ আলাইহিস সালাম উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশের ভুল তারিখ গ্রহণ: ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুর রবি’ আলাইহিস সালাম তিনি ১০ম হিজরী শরীফ উনার পবিত্র শাওওয়াল শরীফ উনার শেষ তারিখে পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন- এই তথ্যটি একটি ডাহা মিথ্যা।

কেননা ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুর রবি’ আলাইহিস সালাম তিনি ৮ম হিজরী সনের পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাসে দুনিয়ার যমীনে আগমন করেন। আর পবিত্র হাদীছ শরীফ অনুযায়ী তিনি ১৬ মাস যমীনে অবস্থান মুবারক করেন।

যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফে এসেছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَلْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ رَضِىَ اللهُ  تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ مَاتَ حَضْرَتْ اِبْرَاهِيْمُ ابْنُ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ ابْنُ سِتَّةَ عَشَرَ شَهْرًا فَاَمَرَ بِهٖ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَنْ يُّدْفَنَ فِى الْبَقِيْعِ وَقَالَ اِنَّ لَهٗ مُرْضِعًا يُّرْضِعُهٗ فِى الْـجَنَّةِ 

 অর্থ: “হযরত বারা ইবনে আযিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত রাবি’ আলাইহিস সালাম উনার দুনিয়াবী জিন্দেগী মুবারক অনুযায়ী বয়স মুবারক যখন ১৬ মাস, তখন তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত রাবি’ আলইহিস সালাম উনার রওযা শরীফ জান্নাতুল বাক্বী’ শরীফ উনার মধ্যে স্থাপন করার জন্য নির্দেশ মুবারক প্রদান করেন এবং তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই উনার জন্য সম্মানিত জান্নাত মুবারক-এ একজন সম্মানিতা দুধপানকারিনী রয়েছেন, যিনি উনাকে দুধ মুবারক পান করাবেন।” সুবহানাল্লাহ! (মুসনাদে আহমদ ৩০/৫২০, মুসনাদে আবী ইয়া’লা ৩/২৫১, আল আহাদ ওয়াল মাছানী ৫/৫৬৪, তারীখুল মদীনা ১/৯৭, আস সুনানুল কুবরা লিল বাইহাক্বী, শরহু মা‘আনিল আছার, মুছান্নাফে আবী শায়বাহ, মা’রিফাতুছ ছাহাবাহ লিআবী নাঈম, মুছান্নাফে আব্দির রাজ্জাক্ব)

উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ অনুযায়ী হিসেবে করে দেখা যায়, ৮ম হিজরী সনের পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাস থেকে পরবর্তী ১৬ মাস পর উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশের মাস হচ্ছেন ১০ম হিজরী সনের পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ। কোন ভাবেই ১০ম হিজরী সনের পবিত্র শাওওয়াল শরীফ মাস হয় না।

এমনকি ১৭ বা ১৮ মাস বয়স মুবারক-এ পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন ধরা হলেও কোন ভাবেই পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ পবিত্র শাওওয়াল শরীফ-এ হয় না।

আর তাই ১০ম হিজরী সনের পবিত্র শাওওয়াল শরীফ মাসের শেষ তারিখ ৬৩২ সালের ৭ নভেম্বরকে সূর্যগ্রহণের তারিখ ধরে সে হিসেব অনুযায়ী গণনা করে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়ার যমীনে তাশরীফ মুবারক নেয়ার তারিখ পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাস উনার ৯ তারিখ প্রমাণ করার অপচেষ্টা একটি প্রতারণা বৈ কিছুই নয়।

আসল কথা হচ্ছে, ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত রাবি’ আলাইহিস সালাম তিনি ১০ম হিজরী সনের পবিত্র ১০ই রবীউল আউওয়াল শরীফ, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার), প্রায় ১৬ মাস (১৫ মাস ৮ দিন) বয়স মুবারক-এ পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন।

এ প্রসঙ্গে বর্ণিত আছে-

وَمَاتَ يَوْمَ الثُّلَاثَاءِ لِعَشْرِ لَيَالٍ خَلَوْنِ مِنْ شَهْرِ رَبِيْعِ الْاَوَّلِ سَنَةَ عَشَرٍ.

অর্থ : “তিনি ১০ম হিজরী সনের পবিত্র ১০ই রবীউল আউওয়াল শরীফ, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন।” (সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১১/২৪, ওয়াকিদী, মুখতাছার, তারীখে দিমাশক্ব ৪/৪৬৫)

দুনিয়াবী জিন্দেগী মুবারক অনুযায়ী তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত বয়স মুবারক ছিলো ৬১ বছর ১১ মাস ২৮ দিন। সুবহানাল্লাহ!

সুতরাং উপরের আলোচনা হতে প্রমাণিত হলো যে, ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত রাবি’ আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশের তারিখ ১০ম হিজরী সনের পবিত্র শাওওয়াল শরীফ মাসের শেষ দিন নয়, তাই ১০ম হিজরী সনের পবিত্র শাওওয়াল শরীফ মাসের শেষ দিনকে ঈসায়ী হিসেবে ৬৩২ সালের ৭ নভেম্বর ধরে সে হিসেব অনুযায়ী গণনা করে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের তারিখ পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাস উনার ৯ তারিখ প্রমাণ করা কখনোই সম্ভব নয়।

কেননা, পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাস হতে পবিত্র শাওওয়াল শরীফ মাস পর্যন্ত প্রায় ৭ মাস ২০ দিনের একটি পার্থক্য রয়েছে। ফলে তখন দুনিয়াবী জিন্দেগী মুবারক অনুযায়ী নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত বয়স মুবারক ছিলো ৬১ বছর ১১ মাস ২৮ দিন হলেও পবিত্র শাওওয়াল শরীফ মাসে সম্মানিত বয়স মুবারক ছিলো ৬২ বছর ৭ মাস ১৮ দিন।  

খ) আমুল ফীল বা হস্তির বছর কখনোই ৫৭১ ঈসায়ী নয় বরং ৫৭০ ঈসায়ী : সম্মানিত বয়স মুবারক উনার হিসাব আরবী (চন্দ্র) মাসের হিসাব অনুযায়ী। কিন্তু এই বয়স মুবারককে প্রমাণ ধরে ঈসায়ী হিসেবে গণনা করা হলে প্রতি ৩৩ বছরে ১ বছরের পার্থক্য হয় এবং ঘটেছেও তাই। কেননা, আরবী (চন্দ্র) মাস গণনা করা হয় চাঁদের হিসেব ধরে ২৯ বা ৩০ দিনে আর সৌরসন অর্থাৎ ঈসায়ী মাস গণনা করা হয় ৩০ বা ৩১ দিনে। এজন্য সৌর বছর হয় ৩৬৫ দিনে (অধিবর্ষে ৩৬৬ দিন) আর চন্দ্র বর্ষ হয় ৩৫৪/৩৫৫ দিনে। এছাড়াও আরবী মাস শুরু হয় সূর্যাস্তের সাথে সাথে আর সৌর সন শুরু হয় রাত ১২টার পর থেকে। ফলে প্রত্যেক বছরে ঈসায়ী সনের সাথে আরবী বা চন্দ্রবছরের ১০/১১ দিনের পার্থক্য তৈরী হয়, যা ৩৩ বছরে ১ বছরের পার্থক্যে রূপ নেয়।

আর তাই ৬৩২ সালের ৭ নভেম্বর থেকে আমুল ফীল বা হস্তির বছর পর্যন্ত গণনা করে আমুল ফীল বা হস্তির বছরকে ৫৭১ ঈসায়ী হিসেবে পাওয়া গিয়েছে। অথচ আমুল ফীল বা হস্তির বছর ৫৭১ ঈসায়ী নয় বরং ৫৭০ ঈসায়ী।

কেননা, শাসক নাওশেরাওয়ার ৫৩১ ঈসায়ী সালের ১লা সেপ্টেম্বর সিংহাসনে আরোহন করে আর ৫৭০ ঈসায়ী সাল হচ্ছে তার শাসনকালের ৪০তম বছর।

এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত ঐতিহাসিক ইবনে খালদুন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, 

وُلِدَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامَ الْفِيْلِ لِاِثْنَتَـيْ عَشَرَةَ لَيْلَةٍ خَلَتْ مِنْ رَبِيْعِ الْاَوَّلِ لِاَرْبَعِيْنَ سَنَةً مِّنْ مُلْكِ كِسْرٰي انَوْشِيْرْوَان

অর্থ : “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ, আমুল ফীল বা হস্তী বাহিনীর বছর রাতে দুনিয়ায় তাশরীফ মুবারক নেন। তখন ছিলো শাসক নাওশেরাওয়ার শাসনকালের ৪০তম বছর।” (তারীখে ইবনে খালদুন ২য় খ- ৩৯৪ পৃষ্ঠা)

সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, আমুল ফীল বা হস্তির বছর কখনোই ৫৭১ ঈসায়ী নয় বরং ৫৭০ ঈসায়ী। তাই ৫৭১ ঈসায়ী সালের পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাস উনার ৯ তারিখ কখনোই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূয়র পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের তারিখ নয়।

গ) ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত রাবি’ আলাইহিস সালাম উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশের দিন যে সূর্যগ্রহণ হয়েছিল তা প্রকৃত অর্থে সূর্যগ্রহণ নয় বরং সূর্যের শোক প্রকাশ : যদিও ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত রাবি’ আলাইহিস সালাম উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশের দিন সূর্যগ্রহণ হয়েছিল কিন্তু প্রকৃত অর্থে সেদিনে সূর্যগ্রহণ হওয়ার কথা নয়। 

কেননা কোন আরবী (চন্দ্র) মাসের ২য় সপ্তাহে কখনো সূর্যগ্রহণ হয় না। সাধারণভাবে আরবী মাসের শেষের দিকে যখন অমাবস্যা সংঘটিত হয় তখন সূর্যগ্রহণ সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

বস্তুত এই সূর্যগ্রহণ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একটি মুজিযা শরীফ ছিলো। ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত রাবি’ আলাইহিস সালাম উনার একটি মুজিযা শরীফ ছিলো। যার কারণে এই সূর্যগ্রহণের মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত রাবি’ আলাইহিস সালাম উনার অপরিসীম মর্যাদা মুবারক উনার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। তাই এই সূর্যগ্রহণের বিষয়টিকে সমস্ত ইমাম মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা এক বাক্যে মেনে নিয়েছেন যে, এটি ছিল সূর্যের শোক প্রকাশ। সুবহানাল্লাহ! এই মতের বিরোধিতাকারীদের বিরুদ্ধে অনেক ইমাম মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা শক্ত জবাবও দিয়েছেন।

সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত রাবি’ আলাইহিস সালাম  তিনি ১০ম হিজরী সনের পবিত্র শাওওয়াল শরীফ মাসে শেষ তারিখে পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেননি বরং তিনি ১০ম হিজরী সনের পবিত্র ১০ই রবীউল আউওয়াল শরীফ বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন। তাই ১০ম হিজরী সনের পবিত্র শাওওয়াল শরীফ মাসের শেষ তারিখে সূর্যগ্রহণের তারিখ ধরে সে হিসেব অনুযায়ী গণনা করে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়ার যমীনে আগমনের তারিখ পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাস উনার ৯ তারিখ প্রমাণ করার অপচেষ্টা একটি প্রতারণা বৈ কিছুই নয়।

ঘ) আমুল ফীল বা হস্তির বছরের পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাস শুরু হওয়ার তারিখ চাঁদ খালি চোখে দেখার ভিত্তিতে নয় বরং অনুমান করে নির্ধারণ করা হয়েছে : আরেকটি ভুল হচ্ছে- ১০ম হিজরী সনের পবিত্র শাওওয়াল শরীফ মাসের শেষ তারিখে সূর্যগ্রহণের তারিখ ধরে সে হিসেব অনুযায়ী গণনা করে আমুল ফীল বা হস্তির বছর পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাস উনার ১লা তারিখ ধরা হয়েছে ৫৭১ ঈসায়ী সনের ১২ই এপ্রিল। কিন্তু সে বছর পবিত্র মক্কা শরীফ উনার আকাশে ১১ই এপ্রিলই যে খালি চোখে পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ উনার চাঁদ দেখা গিয়েছিল তার প্রমাণ নাস্তিক মাহমুদ পাশা দিতে পারেনি। কখনোই পারবেও না। কেননা আরবী মাস শুরু করার বিষয়টি খালি চোখে চাঁদ দেখা যাওয়ার সাথে সম্পর্কিত, অনুমানের মাধ্যমে নয়। সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে অনুমানের কোন স্থান নেই। তাহলে একটি অগ্রহণযোগ্য ও অনুমান ভিত্তিক বিষয়ের উপর ভিত্তি করে আমুল ফীল বা হস্তির বছর পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাস উনার ১লা তারিখ ১২ই এপ্রিল ধরা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। 

ঙ) জাহেলী যুগে নাসী বা মাস আগে-পিছে করার বিষয়টি ধর্তব্যে আনা হয়নি : নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের মুবারক তারিখ নির্ণয় করতে গিয়ে ঈসায়ী তারিখকে হিজরী তারিখে রূপান্তর করে পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ উনার ৯ তারিখ প্রমাণের ব্যর্থ চেষ্টা করা হয়েছে। এতে একদিকে যেমন প্রতি বছরে ১০/১১ দিনের পার্থক্য রয়েছে, যার ফলে প্রতি ৩৩ বছরে ১ বছরের পার্থক্য তৈরী হয়েছে। অন্যদিকে তৎকালীন আরবে যে নাসী (মাস আগে-পিছে) করা হতো তা ধর্তব্যেই আনা হয়নি। আরবের কাফির-মুশরিকরা তাদের নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য কখনো কখনো ১৭ মাসে বছর গণনা করতো আবার কখনো ১০ মাসেও বছর গণনা করতো। কোন সময়ে এই অতিরিক্ত মাসগুলো সংযোজন করতো বা মাসগুলো বিয়োজন করতো তার কোন দলীল-প্রমাণ নেই। এমনকি যুদ্ধ-বিগ্রহের জন্য পবিত্র ছফর শরীফ মাসকে পবিত্র মুহররমুল হারাম শরীফ মাসের আগে গণনা করতো। এমন পরিস্থিতিতে ক্যালকুলেশন বা গণনা পদ্ধতি অবলম্বন করে হিসাব মিলানো কখনোই সম্ভব নয়। আর তাই নাস্তিক মাহমুদের হিসাব অনুযায়ী আমুল ফীল বা হস্তির বছর ৫৭১ ঈসায়ী হচ্ছে। অথচ বছরটি হচ্ছে ৫৭০ ঈসায়ী। অর্থাৎ ১ বছরের একটি তারতম্য পরিলক্ষিত হচ্ছে।

তাহলে যেখানে ঈসায়ী সন হিসেবে ১ বছরের একটি তারতম্য পরিলক্ষিত হচ্ছে সেখানে এটা কি করে গ্রহণযোগ্য হতে পারে যে, আমুল ফীল বা হস্তির বছর পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাস উনার ১২ তারিখ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) ছিল না। নাঊযুবিল্লাহ!

তাই এই বিষয়ে একমাত্র সমাধান হচ্ছে পবিত্র হাদীছ শরীফ ও হযরত ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ইজমা। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে স্পষ্ট বর্ণনা করা হয়েছে যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের সম্মানিত তারিখ হচ্ছেন পবিত্র ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ, সেদিনটি ছিল- ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ عَفَّانَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ حَضْرَتْ سَلِيْمِ بْنِ حَيَّانَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ حَضْرَتْ سَعِيْدِ بْنِ مِيْنَا رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ حَضْرَتْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ الْأَنْصَارِيِّ وَحَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ وُلِدَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامَ الْفِيلِ يَوْمَ الِاثْنَيْنِ الثَّانِـيْ عَشَرَ مِنْ شَهْرِ رَبِيْعٍ الْاَوَّلِ.

অর্থ : “হযরত আফফান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি হযরত সালিম বিন হাইয়ান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে তিনি হযরত সাঈদ ইবনে মীনা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেছেন যে, হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ হস্তি বাহিনী বর্ষের মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ হয়েছিল।” সুবহানাল্লাহ! (বুলুগুল আমানী শরহিল ফাতহির রব্বানী, আছ ছিহ্হাহ্ ওয়াল মাশাহীর ১ম খ- ২৬৭ পৃষ্ঠা)

এ ছহীহ ও নির্ভরযোগ্য বর্ণনার উপর কোন কোন হযরত ইমাম উনাদের ইজমা (ঐকমত্য) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। (সীরাত-ই-হালবিয়াহ শরীফ, যুরক্বানী আলাল মাওয়াহিব শরীফ, মা ছাবাতা বিস সুন্নাহ শরীফ ইত্যাদি)

সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, পবিত্র হাদীছ শরীফ ও হযরত ইমাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ইজমা দ্বারা প্রমাণিত যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবস হচ্ছেন মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ। কিন্তু এর বিপরীতে নাস্তিক মাহমুদ পাশার বর্ণনাকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করা পবিত্র হাদীছ শরীফ অবজ্ঞা করার কারণে কুফরী।

নাস্তিক মাহমুদ পাশা আল ফালাকি ছিল সে সময়কার তথাকথিত মিশরীয় রেনেসাঁর একজন ব্যক্তি। সে ফ্রান্সের বৃত্তি নিয়ে গবেষণা ও পড়াশোনা চালিয়েছিল। এই মিশরীয় রেনেসাঁকে আরবীতে বলা হয় ‘আন-নাহদা’। ১৮০০-১৯০০ সালের মাঝামাঝি সময়টিতে এই কথিত রেনেসাঁ সংঘটিত হয়। আর আন-নাহদার মূল ব্যক্তি হচ্ছে ‘রিফা আত-তাহতাবী’ নামক এক ব্যক্তি। তাকেও ফ্রান্সে পাঠানো হয়েছিল। সে মিশরে এসে প্রচার চালায় যে, মুসলমানদেরকে অবশ্যই পাশ্চাত্য সংস্কৃতি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। নাঊযুবিল্লাহ! রিফা আত-তাহতাবী ছাড়াও এই আন-নাহদার আরেক মূল ব্যক্তি ছিল ‘বুরতুস আল বুস্তানী’। সেও মুসলমান ছিল না, ছিল এক লেবানিজ ম্যারেনাইট খ্রীস্টান। অর্থাৎ মিশরীয় তথাকথিত রেনেসাঁ সংশ্লিষ্টরা ফ্রান্সপন্থী ছিল। ফ্রান্সের বৃত্তি পেয়ে পড়াশোনা করে তারা মুসলিম মূল্যবোধ মুছে দিয়ে পাশ্চাত্য সংস্কৃতি চালু করতে উঠে পড়ে লেগেছিল। তাদের মধ্যে অনেকেই ছিল খ্রীস্টান, এমনকি তাদের মধ্যে অনেকে শিয়াও ছিল।

আরেকটি বিষয় হলো, মিশরীয় তথাকথিত রেনেসাঁপন্থীরা ছিল প্রাচীন মিশরের ফেরাউনদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। মিশরীয় তথাকথিত রেনেসাঁপন্থীদের এক ভাস্কর্যশিল্পী মাহমূদ মোখতার বানিয়েছিল ‘মিশরের নবজাগরণ’ নামক এক মূর্তি, যা ছিল ফেরাউন ও স্ফিংসের জোড়া ভাস্কর্য। অর্থাৎ মিশরীয় তথাকথিত রেনেসাঁ ছিল ফেরাউনের যুগে ফিরে যাওয়ার চেতনাধারী।

উল্লেখ্য, উনবিংশ শতাব্দীর মিশরীয় নাস্তিক মাহমুদ পাশা আল ফালাকি নাস্তিক্যবাদে উদ্বুুদ্ধ হয়ে কাফিরদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মুবারক ১২ই শরীফ তারিখকে বিকৃত করে বই রচনা করেছে।

আর বাতিল ৭২ ফিরকার লোকেরা ছহীহ হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনাকে পাশ কাটিয়ে এক নাস্তিকের বর্ণনাকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছে, যা পবিত্র হাদীছ শরীফ অবজ্ঞা করার কারণে কুফরী হয়েছে।

সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের তারিখ হচ্ছেন মহাসম্মানিত ও পবিত্র ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ। মহাকাশবিদগণও গবেষণা করে উল্লেখিত তারিখ ও বার বিশুদ্ধ বলে স্বীকার করে নিয়েছে।

উপসংহার :

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার সুস্পষ্ট বর্ণনা অনুযায়ীই, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবস হচ্ছে হাতির বছরের মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ। 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের ভ্রান্ত আক্বীদা ও তার খন্ডন মূলক দাঁতভাঙ্গা জবাব

সম্মানিত পাঠক! প্রচলিত ৬ উছূলভিত্তিক তাবলীগ জামায়াতের বাস্তবতা সম্পর্কে যদি সত্যিই জানতে আগ্রহী হন তবে দলিল ভিত্তিক এই প্রতিবেদনটি পড়ুন। ========================================================== ভ্রান্ত আক্বীদা (১)   প্রচলিত ৬ উছূলভিত্তিক তাবলীগ জামায়াতের লোকদের লিখিত কিতাবে এ কথা উল্লেখ আছে যে, মূর্খ হোক, আলিম হোক, ধনী হোক, দরিদ্র হোক, সকল পেশার সকল মুসলমানের জন্য তাবলীগ করা ফরজে আইন। (হযরতজীর মালফুজাত-৪, পৃষ্ঠা-৭, অনুবাদক- মাওলানা ছাখাওয়াত উল্লাহ; তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব, পৃষ্ঠা-৫৬, অনুবাদক- ইসমাঈল হোসেন; তাবলীগে ইসলাম, পৃষ্ঠা-৩, লেখক- মাওলানা আব্দুস সাত্তার ত্রিশালী; পস্তী কা ওয়াহিদ এলাজ, লেখক- মাওলানা এহ্‌তেশামুল হাসান কান্দলবী, পৃষ্ঠা-২২) ——————————————————————————— জবাব : তাদের উপরোক্ত বক্তব্যের প্রেক্ষিতে প্রশ্ন জাগে, তাবলীগ করা কি- ফরজে আইন নাকি ফরজে কিফায়া? কেননা- যে ইবাদত প্রত্যেকের জন্য আলাদাভাবে পালন করা ফরজ তা  ফরজে আইন । যেমন- নামাজ, রোজা, ইত্যাদি। আর যে ইবাদত সমষ্টিগতভাবে পালন করা ফরজ অর্থাৎ যে ফরজ কাজ দেশবাসী, শহরবাসী,এলাকাবাসী ব...

*Coca-cola is Haram for Muslim

Because Coca-Cola and Other Soft Drinks may Contain ALCOHOL. Read Details here:~~~~ COCA-COLA: THE REAL THINGS? The proportions in the accompanying recipe are based on the analyses of Coke quoted above and Merory's recipes. The amount of caffeine agrees with that stated in Coca-Cola's So you asked about soft drinks... pamphlet; this is about a third of the caffeine found in the trial analyses. The following recipe produces a gallon of syrup very similar to Coca-Cola's. Mix 2,400 grams of sugar with just enough water to dissolve (high-fructose corn syrup may be substituted for half the sugar). Add 36 grams of caramel, 3.1 grams of caffeine, and 11 grams of phosphoric acid. Extract the cocaine from 1.1 grams of coca leaf ( Truxillo growth of coca preferred) with toluol; discard the cocaine extract. Soak the coca leaves and kola nuts (both finely powdered; 0.37 gram of kola nuts) in 22 grams of 20 percent alcohol. California white wine fortified to 20 percent strengt...

TABLEEGHI KUFRI AQEEDA--Exposed!!!

THE AQEEDA OF THE TABLEEGHI JAMAAT AND DEOBAND—EXPOSED!!! ===================================================== To have good and strong Imaan, one must have the proper Aqeeda. It is for this reason that we quote a few un-Islamic beliefs of the leaders of the Tableeghi Jamaat together with the proper Islamic answers. The present Molvis and devotees of the T. Jamaat refuse to condemn the persons who wrote such bad beliefs and to even disassociate themselves from such false beliefs. The un-Islamic beliefs which we have quoted below are quotations from those individuals who possess such beliefs and by writing them in this handbill, we have no intention of Kufr. FALSE BELIEF 1: “Allah can speak lies“. (“Barahine Qaatia” by Khaleel Ambetwi; “Yakrozi” by Ismaeel Dehlwi; “Fatawa Rasheedia” by Rasheed Ahmed Gangohi). NAUZ BILLAH ANSWER: Lies is a defect which is not worthy of the Zaat of Almighty Allah and is totally Muhaal (Impossible) for Almighty Allah. Allah is free from all shortages a...