হযরত ইমাম শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ছিলেন দ্বাদশ হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ। তাঁর উল্লেখযোগ্য লক্বব মুবারকের মধ্যে কয়েকটি লক্বব হলো ইমামুল হিন্দ, আরিফুর রব্বানী, হুজ্জাতুল ইসলাম ইত্যাদি।
পবিত্র হাদীস শরীফের মাঝে এসেছে -
“নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি আমার উম্মতের জন্য প্রতি হিজরী শতকের শুরুতে একজন করে মুজাদ্দিদ (সংস্কারক) প্রেরণ করবেন। যিনি সম্মানিত দ্বীন উনার তাজদীদ (সংস্কার) করবেন।”
(আবু দাউদ শরীফ)
হযরত ইমাম শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে ভারতীয় উপমহাদেশের "ইলমী জনক" হিসাবেও অভিহিত করা হয়। তিনি প্রচুর কিতাব লিখে রেখে গেছেন। বর্গী মারাঠাদের অত্যাচার থেকে মুসলিমদেরকে হিফাজত করার উদ্দেশ্যে তিনি আহমেদ শাহ দুররানির কাছে চিঠি লেখেন; পরিণামে পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধে বর্গী মারাঠাদের পরাজয় হয়।
উনার সময়কালে তিনি নিজে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করেছেন।
এমনকি তিনি পবিত্র মক্কা শরীফ যিয়ারতকালে সেখানে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনের ঘটনা উনার কিতাবে বর্ণনা করেছেন-
“আমি এর পূর্বে পবিত্র মক্কা মু’আযযামায় পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের বরকতময় হুজরা শরীফের মধ্যে উপস্থিত ছিলাম। আর সেখানে লোকজন সমবেত হয়ে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর একত্রে দরূদ শরীফ পাঠ করছিলেন।
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের সময় সংঘটিত অলৌকিক ঘটনাবলী ও উনার আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত প্রকাশের পূর্বে সংঘটিত ঘটনাবলী আলোচনা করছিলেন। তারপর আমি সেখানে এক মিশ্র মুবারক নূরের ঝলক প্রত্যক্ষ করলাম। আমি বলতে পারিনি যে, এ মুবারক নূরগুলো চর্মচক্ষে দেখেছিলাম এবং এটাও বলতে পারি না যে, এগুলো কেবল মাত্র অন্তর চক্ষুতে দেখেছিলাম। এ দুটোর মধ্যে প্রকৃত ব্যাপার কি ছিল, তা মহান আল্লাহ পাক তিনিই ভালো জানেন। অতঃপর আমি গভীরভাবে চিন্তা করলাম এবং উপলব্ধি করতে পারলাম যে, এই নূর বা জ্যোতি ওই সব ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম, যাঁরা এ ধরণের মজলিস ও উল্লেখযোগ্য (ধর্মীয়) স্থানসমূহে (জ্যোতি বিকিরণের জন্য) নিয়োজিত থাকেন। আমার অভিমত হল সেখানে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের নূর ও রহমতের নূরের সংমিশ্রণ ঘটেছে।”
[ ফয়ূযুল হারামাইন [আরবী-উর্দু], পৃষ্ঠা ৮০-৮১ ]
এছাড়া তিনি তাঁর রচিত আরেকটি কিতাব “আদ দুররুস সামীন ফী মুবাশশারাতিন নবীয়্যিল আমীন” কিতাবের ৯ম পৃষ্ঠায় লিখেছেনঃ
“আমার শ্রদ্ধেয় আব্বাজান আমাকে অবহিত করে বলেন, আমি প্রতি বছরই নবীকুল সর্দার ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মীলাদ উপলক্ষ্যে বিরাট খাবার আয়োজন করে আসছিলাম। অতঃপর এক বছর খাবারের আয়োজন করা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। সুতরাং অল্প ভাজ্যকৃত চনা (ছোলা) ব্যতীত আর কিছুই আমি জোগাড় করতে পারিনি। কাজেই সেগুলো উপস্থিত লোকদের মাঝে বন্টন করে দিলাম।
অতঃপর আমি স্বপ্নে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাক্ষাত লাভ করে ধন্য হলাম। দেখলাম, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সামনে ঐ চনাগুলো (ছোলা) মওজুদ আছে। তখন হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন অত্যন্ত আনন্দিত ও হাস্যোজ্জল”।
[ তথ্যসূত্রঃ ফতওয়ায়ে রশীদিয়া, পৃষ্ঠা নং- ১৩৭ ]
চতুর্থ পর্বের লিঙ্ক - https://att-tajdeed.blogspot.com/2022/09/blog-post_27.html
#90DaysMahfil || SM40.COM
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন