দ্বীন ইসলামের মধ্যে ফিৎনা সৃষ্টিকারী বাতিল ফিরকা ওয়াহাবী-সালাফীরা প্রচার করে থাকে, ঈদে মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদআত, নতুন আবিস্কৃত। নাউজুবিল্লাহ।
অথচ তারা নিজেরাই বিদআত, নতুন আবিস্কৃত। ১৮শ শতকের আগে (অর্থাৎ এখন থেকে ২০০ বছর আগে) তাদের অস্তিত্ব ছিলো না। এবং তখন এ বিষয়ে কোন বিতর্কও ছিলো না। বরং এটি একটি সার্বজনীন, সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত হিসেবে যুগ যুগ ধরে পালিত হয়ে আসছে।
এমনকি মশহুর ফিকাহ শাস্ত্র গুলোতে বর্ণিত আছে, এ মহান দিবসটি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি নিজে পালন করেছেন এবং উনার আসহাব রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু উনারাও পালন করেছেন।
যেমন, সহীহ্ হাদীস শরীফ উনার মাঝে ইরশাদ মুবারক হয়,
عَنْ أَبِي قَتَادَةَ الأَنْصَارِيِّ، رضى الله عنه أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم سُئِلَ عَنْ صَوْمِ الاِثْنَيْنِ فَقَالَ فِيهِ وُلِدْتُ وَفِيهِ أُنْزِلَ عَلَىَّ .
অর্থ: হযরত আবূ ক্বাতাদাহ্ আল-আনসারী রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু উনার থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন—“ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনাকে ইয়াওমুল ইসনাইনিল আযীম(সোমবার) শরীফের রোজা সম্পর্কে সওয়াল করা হয়। উত্তরে তিনি বলেন— ইসনাইনিল আযীম শরীফে আমি বিলাদাত শরীফ গ্রহণ করেছি।এবং ঐদিনেই আমার কাছে ওহী নাজিল হয়। ”
(মুসলিম শরীফ, হাদীস শরীফ নং-২৬৪০. ই.ফা-২৬১৭)
এখান থেকে এটা জানা যায় যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি মীলাদ শরীফ উপলক্ষে রোজা রাখতেন। এবার আসি উপরোক্ত রোজা ফরজ না নফল? আশা করি সবাই নফল-সুন্নাতই বলবেন। বাস্তবতাও তা-ই। সুতরাং জানা গেল, হযরত হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি মীলাদ শরীফ উপলক্ষে নফল ইবাদত করতেন।
তিনি যে নফল ইবাদত করতেন তা উপরোক্ত হাদীস শরীফই প্রমাণ।
এ-থেকে এ-মাসআলাও স্পষ্ট হয় যে, মীলাদ শরীফ উপলক্ষে নফল-সুন্নাত ইবাদত করাই হল, সুন্নাহসম্মত পদ্ধতি।
এজন্য, উলামা রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনারা বলেন— সর্বপ্রথম মাহফিলে মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নফল ইবাদত উনার মাধ্যমে পালন করেছেন, ছহিবে মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নূরে মুজাসসাম আন-নাবী, আর-রসূল রহমাতুল্লিল আলামীন হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি।
মীলাদ শরীফ উনার উপর লিখিত বিখ্যাত কিতাব।
‘আল-ই'লামু বিফাতাওয়া আইম্মাতিল ইসলাম হাওলা মাওলিদিহি আলাইহিস ছলাতু ওয়াসসালাম’- এ বলা হয়—
إن أول المحتفلين بالمولد هو صاحب المولد، وهو النبي صلى الله عليه وسلم؛ كما جاء في الحديث الصحيح الذي رواه مسلم لما سئل عن صيام يوم الاثنين، قال صلى الله عليه وسلم ذاك ولدت فيه،
فهذا أصح وأصرح نص في مشروعية الاحتفال بالمولد النبوي الشريف . ولا يلتفت لقول من قال: إن أول من احتفل به الفاطميون، لأن هذا إما جهل، أو تعام عن الحق .
অর্থ:নিশ্চয়ই সর্বপ্রথম যিনি মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালন করেছেন তিনি হলেন, ছহিবে মাওলিদ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ আন-নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি । যেমনটা সহীহ্ হাদীস শরীফ উনার মাঝে ইরশাদ হয়েছে; ইমাম মুসলিম রহিমাহুল্লাহ তিনি তা বর্ণনা করেছেন।
যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনাকে ইয়াওমুল ইসনাইনিল আযীম(সোমবার) শরীফের রোজা সম্পর্কে সওয়াল করা হয়, তিনি বলেন— ইসনাইনিল আযীম শরীফে আমি বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেছি।
আর মাহফিলে মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শরীয়ত সম্মত হওয়ার ব্যাপারে এই হাদীস শরীফ ‘সর্বাধিক সহীহ এবং স্পষ্ট’ দলিল। আর যে বা যারা এ-কথা বলে যে, সর্বপ্রথম ফাতেমীরা মাহফিলে মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি উৎযাপন করেছেন,তাদের কথায় কোন ভ্রুক্ষেপ করা হবেনা। কারণ তারা জাহিল, সত্য হক্ব থেকে বিমুখ, অন্ধ।
(‘আল-ই'লামু বিফাতাওয়া আইম্মাতিল ইসলাম হাওলা মাওলিদিহি আলাইহিস ছলাতু ওয়াসসালাম- ১১পৃ.)
তারপর যাঁরা মাহফিলে মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালন করেছেন, উনারা হলেন আসহাবে রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনারা।
যেমন এসম্পর্কে বলা হয়—
وَأخرج ابْن عَسَاكِر عَن مَكْحُول أَن رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم قَالَ لِبلَال أَلا لَا تغادر صِيَام الأثنين فَإِنِّي ولدت يَوْم الأثنين وأوحي إِلَيّ يَوْم الأثنين وَهَاجَرت يَوْم الأثنين وأموت يَوْم الأثنين.
অর্থ: হযরত ইবনে আসাকির রহিমাহুল্লাহ তিনি হযরত মাকহুল রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি তিনি হযরত বিলাল রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু উনাকে ইরশাদ মুবারক করেন— “সাবধান! কখনো আপনি ইসনাইনিল আযীম (সোমবার) শরীফের রোজা রাখা পরিত্যাগ করবেন না। কারণ, এই দিন আমি বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেছি, এইদিন আমার কাছে ওহী নাযিল হয়েছে,এই দিনে আমি হিজরত শরীফ করেছি,আর এই দিনেই আমি বিছাল শরীফ গ্রহণ করেছি।”
(খাছায়েছুল কুবরা-২/৪৭২)
এখানেও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি মীলাদ শরীফ উপলক্ষে নফল ইবাদত করার জন্য বলেছেন।
সুতরাং, মীলাদ শরীফ উপলক্ষে নফল ইবাদত করা এবং নফল ইবাদতের মাধ্যমে মাহফিল করা, ঈদ হিসেবে গ্রহণ করা সবই শরীয়ত সম্মত।
সুতরাং এ-থেকে স্পষ্ট হয়, হযরত হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি সর্বপ্রথম মাহফিলে মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি পালন করেছেন এবং পরে হযরত আসহাবে রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনারা পালন করেছেন। আর এভাবেই আমাদের কাছে ধারাবাহিক ভাবে এসে পৌঁছেছে।
বিদআত, নাজায়েজ, হারাম বলার কোন সুযোগ নোই।
#90daysMahfil
SM40.COM
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন