সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

তারাবীহ নামাযে বা কুরআন শরীফ খতম বা তিলাওয়াত করে বা করিয়ে উজরত বা পারিশ্রমিক নেয়া ও দেয়া উভয়টাই জায়িয

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, তোমাদের জন্য যা হালাল করা হয়েছে তোমরা তা হারাম করো না।
শরীয়তের দৃষ্টিতে তারাবীহ নামাযে বা অন্য যে কোনো সময় কুরআন শরীফ খতম বা তিলাওয়াত করে বা করিয়ে উজরত বা পারিশ্রমিক নেয়া ও দেয়া উভয়টাই জায়িয।
এটাই তারজীহপ্রাপ্ত ও ফতওয়াগ্রাহ্য মত।
তাই কুরআন শরীফ খতম বা তিলাওয়াত করে উজরত বা পারিশ্রমিক নেয়াকে নাজায়িয বলা কুফরী।

যামানার খাছ লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদুর রসূল, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুনা, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, নির্ভরযোগ্য সকল ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবে একথাই উল্লেখ আছে যে, উলামায়ে মুতাকাদ্দিমীন অর্থাৎ পূর্ববর্তী ফক্বীহগণ উনাদের মতে সকল ইবাদতের বিনিময়ে উজরত গ্রহণ করা নাজায়িয ছিলো। কিন্তু উলামায়ে মুতাআখখিরীন বা পরবর্তী ফক্বীহগণ উনারা ইসলামের বৃহত্তর স্বার্থে ইজতিহাদ করতঃ ফতওয়া বা রায় দেন যে, সময় ও স্থান নির্ধারণ করার শর্তে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত বা খতম করাসহ সকল প্রকার ইবাদতের বিনিময়ে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয।

মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, মানুষের দ্বীনদারী-পরহেযগারী ও দ্বীনের খিদমতে আগ্রহ হ্রাস পাওয়ায়, পরবর্তী আলিমগণ অর্থাৎ উলামায়ে মুতাআখখিরীনগণ উনারা ইজতিহাদ করতঃ ফতওয়া দেন যে, শর্ত সাপেক্ষে অর্থাৎ সময় ও স্থান নির্ধারণ করে দিলে কুরআন শরীফ খতমসহ সমস্ত প্রকার ইবাদতের বিনিময়ে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয।

মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, সময় ও স্থান নির্ধারণ করে দেয়াতে সে ব্যক্তি তখন, সময় ও স্থানের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে যায়। অতএব, তাকে যে উজরত বা পারিশ্রমিক দেয়া হবে, তা তার সময় ও স্থানে আবদ্ধ থাকার কারণে, ইবাদতের বিনিময়ে নয়। সুতরাং সময় ও স্থান নির্ধারণ করে দেয়ার কারণে আযান, ইমামতী, হজ্জ, জিহাদ, কুরআন শরীফ ও ফিক্বাহ শিক্ষা দিয়ে যেরূপ উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয, তদ্রƒপ কুরআন শরীফ খতম বা খতমে তারাবীহ পাঠ করেও উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয। এমনকি উক্ত পারিশ্রমিক সে জোরপূর্বকও আদায় করতে পারবে।

মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, নির্ভরযোগ্য, বিশ্ববিখ্যাত, সর্বজনমান্য ও শক্তিশালী সকল কিতাবে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করে উজরত গ্রহণ করা জায়িয বলা হয়েছে। যেমন- ‘তাফসীরে ইকলীল’ ৫ম খ-, ২১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, “শায়েখ হযরত ছালেহ দাসুক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি একখানা কিতাব রচনা করেন, যার নাম রাখা হয়, ‘কাশফুল গুম্মাহ’। তিনি উক্ত কিতাবে, বরকূবী ও আল্লামা ইবনে আবিদীন শামী উনাদের কিতাবের মত রদ করে দেন এবং কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করে উজরত গ্রহণ করা জায়িয হওয়া সম্পর্কে চার মাযহাবের বহু বর্ণনা উল্লেখ করেন। অনুরূপ মক্কা শরীফ-এর মুফতী, মাওলানা আব্দুর রহমান সিরাজ ও মদীনা শরীফ-এর মুফতী, মাওলানা মুহম্মদ তাজুদ্দীন ইলিয়াস রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করে উজরত গ্রহণ করা জায়িয ফতওয়া দিয়েছেন।”

‘ফতওয়ায়ে আলমগীরী’ ৪র্থ খ-ের, ৪৬৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, “সময় নির্দিষ্ট করে কবরের নিকট কুরআন শরীফ পাঠ করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করার ব্যাপারে আলিমগণ মতভেদ করেছেন। (কেউ বলেন জায়িয নয়, আর কেউ কেউ বলেন এটা জায়িয)। মূলত, এটাই (অর্থাৎ শেষোক্তটাই) গ্রহণযোগ্য মত। অনুরূপ ‘সিরাজুল ওহহাজ’ কিতাবে উল্লেখ আছে।”

‘বাহরুর রায়েক’ কিতাবের ৫ম খ-, ২২৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, “নিশ্চয় ফতওয়াগ্রাহ্য মতে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয।”

‘তাহতাবী’ কিতাবের ৪র্থ খ-, ৩০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, “গ্রহণযোগ্য মত হলো- কবরের নিকট কোনো এক নির্দিষ্ট সময় কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয।”

পুরাতন ছাপার ‘জাওহারাতুন নাইয়্যারাহ’ কিতাবে উল্লেখ আছে, “(আলিমগণ) কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করার ব্যাপারে ইখতিলাফ বা মতবিরোধ করেছেন। কেউ কেউ বলেন ওটা জায়িয নয়, আর কেউ কেউ বলেন জায়িয, এমতটিই (অর্থাৎ; শেষোক্তটিই) মনোনীত বা গ্রহণযোগ্য মত।”

‘মুলতাকাল আবহর’ কিতাবের ২য় খ-, ৩৮৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, “উলামায়ে মুতাকাদ্দিমীনগণ (পূর্ববর্তী আলেম) উনাদের নিকট আযান, হজ্জ্ব, ইমামতী, কুরআন শরীফ ও ফিক্বাহ শিক্ষা দিয়ে এবং ফিক্বাহ ও কুরআন শরীফ পাঠ করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা নাজায়িয ও বাতিল। আর উলামায়ে মুতাআখখিরীনগণ (পরবর্তী আলিমগণ) উনারা দান-খয়রাতে আগ্রহ হ্রাস পাওয়ার কারণে কুরআন শরীফ পাঠসহ উক্ত ইবাদতের উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয ফতওয়া দেন।”

‘রফউল গিশাওয়াহ লিমাহমূদ আফেন্দী’ কিতাবে উল্লেখ আছে, আল্লামা মাহমূদ আফেন্দী মুফতীয়ে দামেশক বলেন, আমাকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয়েছে যে, আলিম, ফাযিল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ ইবনে আবিদীন শামী তিনি রদ্দুল মোহতার, তনকীহ ও ‘শিফাউল আলীল’ কিতাবসমূহে পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা নাজায়িয লিখেছেন, এটা মাযহাবের ফতওয়াগ্রাহ্য মত কি?” আমি উক্ত বক্তব্যের জবাবে বললাম যে, “সংশোধনকারী (অর্থাৎ আল্লামা ইবনে আবিদীন শামী উক্ত তিন কিতাবে যা লিখেছেন, তা উলামায়ে মুতাকাদ্দিমীন অর্থাৎ পূর্ববর্তী আলিমগণ উনাদের মত। কেননা উনাদের মতে ইবাদতের বিনিময়ে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা নাজায়িয ছিল। কিন্তু উলামায়ে মুতাআখখিরীন অর্থাৎ পরবর্তী আলিমগণ উনারা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন যে, ফতওয়াগ্রাহ্য মতে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয। এটা অধিকাংশ পরবর্তী আলিমগণ উনাদের মত। এ সম্পর্কিত বর্ণনাগুলো প্রায় মুতাওয়াতের পর্যন্ত পৌঁছেছে। সবগুলোই ফতওয়ার আলামত (চিহ্ন)সহ প্রকাশিত হয়েছে এবং ইসলামী শহরের প্রবীণ ও প্রসিদ্ধ আলিমগণ এটা জায়িয হওয়ার ফতওয়া দিয়েছেন। আমি উনাদের উল্লেখিত বর্ণনাগুলো সঙ্কলন করবো। তিনি প্রায় ৪০খানা কিতাব হতে তৎসমস্ত সঙ্কলন করেন।” (অনুরূপ ‘তাফসীরে ইকলীল’ কিতাবে উল্লেখ আছে)।

মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, শরীয়তের উছূল হলো- হালালকে হারাম বলা কুফরী। কাজেই যারা সময় ও স্থান নির্ধারণ সাপেক্ষে কুরআন শরীফ পাঠ বা খতমে তারাবীহ পড়িয়ে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করাকে হারাম ও নাজায়িয বলবে তারা কুফরী করবে।

মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, সময় ও স্থান নির্ধারণের শর্তে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয এ সম্পর্কে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ২৩-২৪তম সংখ্যায় ৫১টি অকাট্ট দলীল দ্বারা ফতওয়া প্রদান করা হয়েছে। তিনি উলামায়ে ‘ছূ’দের মনগড়া, দলীলবিহীন প্রচারণায় বিভ্রান্ত না হয়ে অকাট্ট ও নির্ভরযোগ্য দলীলের ভিত্তিতে প্রমাণিত বিষয়ে আমল করার জন্য সকলকে আহ্বান জানান।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

*Coca-cola is Haram for Muslim

Because Coca-Cola and Other Soft Drinks may Contain ALCOHOL. Read Details here:~~~~ COCA-COLA: THE REAL THINGS? The proportions in the accompanying recipe are based on the analyses of Coke quoted above and Merory's recipes. The amount of caffeine agrees with that stated in Coca-Cola's So you asked about soft drinks... pamphlet; this is about a third of the caffeine found in the trial analyses. The following recipe produces a gallon of syrup very similar to Coca-Cola's. Mix 2,400 grams of sugar with just enough water to dissolve (high-fructose corn syrup may be substituted for half the sugar). Add 36 grams of caramel, 3.1 grams of caffeine, and 11 grams of phosphoric acid. Extract the cocaine from 1.1 grams of coca leaf ( Truxillo growth of coca preferred) with toluol; discard the cocaine extract. Soak the coca leaves and kola nuts (both finely powdered; 0.37 gram of kola nuts) in 22 grams of 20 percent alcohol. California white wine fortified to 20 percent strengt...

যে সকল শব্দ মুসলমানদের ব্যবহার করা উচিত নয়

শব্দ ব্যবহারের কুচিন্তায় যোগসাধনের ষড়যন্ত্র ইহুদী খ্রিস্টানদের ঐতিহ্যগত প্রবৃত্তি। স্বয়ং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সময়ও ইহুদী খ্রিস্টানদের এরূপ ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার ছিল। কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা রঈনা বলো না উনজুরনা বলো এবং শ্রবণ কর (বা শুনতে থাক) আর কাফিরদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।” (সূরা বাক্বারা ১০৪) আয়াতের শানে নযুলে বলা হয়েছে, ইহুদীরা রসুলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কষ্ট দেবার জন্য ‘রঈনা’ শব্দ ব্যবহার করত, যার একাধিক অর্থ। একটি অর্থ হল ‘আমাদের দিকে লক্ষ্য করুন’ যা ভাল অর্থে ব্যবহার হয় আর খারাপ অর্থ হল ‘হে মূর্খ, হে মেষ শাবক’ এবং হিব্রু ভাষায় একটি বদদোয়া। ইহুদীরা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রঈনা বলে সম্বোধন করত। যাতে প্রকৃতপক্ষে তাদের উদ্দেশ্য ছিল খারাপ অর্থের প্রতি ইঙ্গিত করা। আর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ ‘রঈনা’ শব্দের ভাল অর্থের প্রতি ইঙ্গিত করে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করলে ইহুদীরা খারাপ অর্থ চিন্তা করে হাসাহাসি করত। এতে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলা...

উশরযোগ্য ফল-ফসলের বিধান

উশর কি?  পবিত্র ‘উশর’ শব্দটি আরবী আশরাতুন (দশ) শব্দ হতে উৎসরিত বা উৎকলিত হয়েছে। উনার আভিধানিক বা শাব্দিক অর্থ হলেন এক দশমাংশ। আর সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার পরিভাষায় কৃষিজাত পণ্য- ফল ও ফসলের পবিত্র যাকাত উনাকে পবিত্র উশর বলে। এক কথায়, উৎপাদিত ফল ফসলের যাকাতই হচ্ছেন পবিত্র উশর। পবিত্র উশর সম্পর্কে পবিত্র কুরআন শরীফ থেকে দলীলঃ পবিত্র উশর সম্পর্কে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার একাধিক পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে। মহান আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তায়ালা তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- وانفقوا من طيبات ماكسبتم ومـما اخرجنا لكم من الارض. অর্থ : “তোমরা তোমাদের উপার্জিত হালাল সম্পদ হতে এবং যা আমি তোমাদের জন্য যমীন হতে উৎপন্ন করিয়েছি তা হতে দান করো।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৬৭) তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-  واتوا حقه يوم حصاده অর্থ : “ফসল কাটার সময় তার হক (পবিত্র উশর) আদায় করো।” (পবিত্র সূরা আনআম শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৪১) উশর সম্পর্কে পবিত্র হাদিস শরীফে যা বর্ণিত রয়েছে:  এ প্রসঙ্গে অনেক হাদিস শরীফ পাওয়া যায়। তার মধ্যে ২টি পবিত্র হাদী...