সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ, ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাকে কারবালায় শহীদ করা। হযরত উলামায়ে কিরামগণ উনারা ইজমা করেছেন যে, বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে আশ্চর্যজনক, নির্মম, বেদনাদায়ক এবং হৃদয়বিদারক বিষয় হলো কারবালার ঘটনা। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নকশা মুবারক। তিনি হচ্ছেন ঈমানের মূল। এবং নাজাতের মূল। অথচ মুসলমান নামধারীরাই উনাকে শহীদ করলো। উনার শাহাদাত মুবারক উনার সাথে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত সকলের জন্য মহান আল্লাহ পাক, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের এবং সমস্ত মাখলুকাতের লা’নত।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن ام المؤمنين حضرت ام سلمة عليها السلام دخل حضرت حسين عليه السلام على رسول الله صلى الله عليه وسلم ففزع فقالت حصزت ام سلمة عليها السلام ما لك يارسول الله صلى الله عليه و سلم قال ان جبريل عليه السلام اخبرنى ان ابنى هذا يقتل وانه اشتد عضب الله على من يقتله
অর্থ : উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু সালামাহ আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম তিনি তাশরীফ মুবারক নিলে উনাকে বেশ অস্বাভাবিক দেখা যায়। তখন উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু সালামাহ আলাইহাস সালাম তিনি আরয করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন বিষিয় আপনাকে ভিন্ন শান মুবারকে নিয়েছে। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, এই মাত্র হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি আমার খিদমতে আরয করলেন যে, আমার এই আওলাদ আলাইহিস সালাম তিনি শাহাদাত মুবারক বরণ করবেন। আর উনার শাহাদাত মুবারকের সাথে সম্পৃক্তদের উপর মহান আল্লাহ পাক উনার অত্যধিক কঠিন গোস্বা ও আযাব। (কানযুল উম্মাল)
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, একজন খলীফা উনার শাহাদাত মুবারকের কারণে ৩৫ হাজার লোককে, একজন নবী-রসূল আলাইহিস সালাম উনার শাহাদাত মুবারকের জন্য ৭০ হাজার এবং হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম উনার শাহাদাত মুবারকের জন্য ১ লক্ষ ৪০ হাজার লোককে আখিরাতে তো অবশ্যই এমনকি দুনিয়াতে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। সত্যিই কারবালার ঘটনার সাথে জড়িতরা কঠিন আযাব-গযবে পতিত হয়ে লাঞ্ছনা-গঞ্জনার সাথে মৃত্যুবরণ করেছে।
কারবালার ঘটনা ইবনে যিয়াদের সেনাপতিত্বে সংঘটিত হয়। পরবর্তীতে আশিকে রসূল হযরত মুখতার সাকাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ইবনে যিয়াদকে কঠিন যন্ত্রণার দ্বারা হত্যা করেন। তার শরীর কুকুরকে খাওয়ানো হয়। আর তার মাথা সম্পর্কে হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে
عن حضرت عمارة بن عمير قال : لما جيء برأس عبيد الله بن زياد وأصحابه نضدت في المسجد في الرحبة فانتهيت إليهم وهو يقولون قد جاءت قد جاءت فإذا حية قد جاءت تخلل الرؤس حتى دخلت في منخري عبيد الله بن زياد فمكثت هنيهة ثم خرجت فذهبت حتى تغيبت ثم قالوا قد جاءت قد جاءت ففعلت ذلك مرتين أو ثلاثا
অর্থ : হযরত আম্মার ইবনে উমাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন। ইবনে যিয়াদ ও তার সাথীদের কর্তিত মাথাগুলো যখন (হযরত মুখতার সাকাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি) উনার নিকট নেয়া হলো, তখন আমি মসজিদে ছিলাম। সংবাদ পেয়ে আমি সেখানে গেলাম। লোকজন বলতে লাগলো আসতেছে! আসতেছে! আমি দেখলাম একটা অদ্ভুত আকারের সাপ এলো। সাপটি মাথাগুলোর চারদিকে ঘুরাতে লাগলো। অতঃপর ইবনে যিয়াদের নাক দিয়ে প্রবেশ করলো। সাপটি তার নাকের ভিতর কিছু সময় অতিবাহিত করলো। তারপর বেরিয়ে আসলো। তারপর আবার প্রবেশ করলো এবং কিছু সময় থেকে আবার বের হলো। এভাবে মোট দু’বার মতান্তরে তিনবার সেই অদ্ভুদ সাপটি ইবনে যিয়াদের মাথায় প্রবেশ করেছে। নাউযুবিল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ)
অন্য হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن حضرت ابي رَجَاءٍ الْعُطَارِدِيَّ ، يَقُولُ : " لا تَسُبُّوا عَلِيًّا وَلا أَهْلَ هَذَا الْبَيْتِ ، فَإِنَّ جَارًا لَنَا مِنْ بَلْهُجَيْمِ ، قَالَ : أَلَمْ تَرَوْا إِلَى هَذَا الْفَاسِقِ الْحُسَيْنِ بن عَلِيٍّ قَتَلَهُ اللَّهُ ، فَرَمَاهُ اللَّهُ بِكَوْكَبَيْنِ فِي عَيْنَيْهِ ، فَطَمَسَ اللَّهُ بَصَرَهُ " .
অর্থ: হযরত আবু রজা রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমরা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম এবং হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে গাল-মন্দ করো না। বনু জুহাইম গোত্রের আমাদের এক প্রতিবেশি কুফা হতে ফিরে এসে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম উনাকে ফাসিকের ছেলে ফাসিক বলে গালি দিলো। নাউযুবিল্লাহ! তাকে হত্যা করা হয়েছে। নাউযুবিল্লাহ! বর্ণনাকারী বলেন, তখন মহান আল্লাহ পাক সেই নরাধমের চোখে দুটি উল্কা নিক্ষেপ করলেন, (আসমান থেকে দুটি উল্কা এসে তার চোখে আঘাত করলো) তৎক্ষণাত সে অন্ধ হয়ে গেল। (আহমদ শরীফ, তাবারনী)
কিতাবে উল্লেখ করা হয়, কারবালার ঘটনার সাথে জড়িত এক ব্যক্তি হঠাৎ অন্ধ হয়ে যায়। তাকে তার অন্ধত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে সে বলে, এক রাত্রে সে স্বপ্নে দেখে যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাত মুবারকে একখানা লাঠি। উনার সামনে কারবালার ঘটনার সাথে জড়িত দশজনের কর্তিত মাথা পড়ে রয়েছে। তিনি স্বপ্ন দ্রষ্টাকে লক্ষ্য করে বললেন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদ করার কাজে সম্পৃক্ত থাকায় তুই অন্ধ হয়ে যাবি। এ বলে তিনি উনার লাঠি মুবারক দ্বারা তার চোখে দুটি আঘাত করেন। ফলশ্রুতিতে তৎক্ষণাত সে অন্ধ হয়ে যায়। (জাওযী)
কিতাবে আরো উল্লেখ করা হয়, উজ্জল ত্বক বিশিষ্ট এক লোক। যে তার ঘোড়ার পিছনে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম উনার মাথা মুবারক বেধে ছিলো। সে ক্রমন্বয়ে কয়লার ন্যায় কালো হয়ে যায়। সে বলে যে, সে যখনই ঘুমায় তখনই দেখে যে, দুই ব্যক্তি তাকে ধরে জ্বলন্ত আগুনে ঢুকিয়ে দিচ্ছে। সেই আগুনের কারণে সে সারা শরীরে জ্বালা অনুভব করে এবং তাপের কারণে তার শরীর কালো হয়ে যায়। (জাওযী)
অন্য কিতাবে উল্লেখ করা হয়, এক ব্যক্তি এক মজলিশে বলে, কারবালার ঘটনার সাথে জড়িতদের নাকি দুনিয়াতেই কঠিন শাস্তি হবে? আমি তো কারবালার ঘটনার সাথে জড়িত। আমার তো কিছুই হলো না। একথা বলার কিছুক্ষণ পরে সে বাতি ধরাতে যায়। তখন তার দাড়িতে আগুন লাগে। মুহূর্তের মধ্যে সে পুড়ে সম্পূর্ণ কয়লায় পরিণত হয়ে যায়।
মহান আল্লাহ পাক উম্মাহকে কারবালার ঘটনা হতে ইবরত-নছীহত হাছিল করার তাওফীক্ব দান করুন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন