বাংলাদেশকে ‘ভারতের উপর নির্ভরশীল’ করার নীল নকশা বাস্তবায়নের পর এখন দেশকে ভারতের অঙ্গরাজ্য করার কাজ চলছে
ডিজিএফআই’র সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব:) এম এ হালিম-এর স্বীকারোক্তি- “বাংলাদেশে ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা ‘র’ -এর লক্ষ্য হলো বাংলাদেশে ভারতীয় প্রভাব বিস্তার করা ও সব ব্যাপারে বাংলাদেশকে ভারতের ওপর নির্ভরশীল করে তোলা।” (সূত্র: গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধানদের কথা: বাংলাদেশে ‘র’)
বাংলাদেশে ‘র’ নামক বইটি ২০০১ ঈসায়ী প্রকাশিত হলেও ডিজিএফআই’র সাবেক মহাপরিচালকের চরম সত্যভাষ্যটি বহু পুরনো দিনের বরং ততোদিনের মধ্যে ভারতীয় গোয়েন্দারা তাদের উদ্দেশ্য সাধনে অনেকটা সফল। তার সুষ্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে প্রাত্যাহিক খবরের কাগজগুলোতে। বর্তমানে বাংলাদেশ ভারতের উপর এতোটা নির্ভরশীল যে, একটি টিউবয়েল বসাতেও সরকারকে ভারতের সহযোগিতা নিতে হয়। কোন সরকারের আমলেই এর ব্যতিক্রম হয়নি। দেশে পর্যাপ্ত উৎপাদন বা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা থাকা সত্ত্বেও চাল ডাল থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় প্রায় কিছুই ভারত থেকে আমদানি করা হয়। আর দেশের অবকাঠামো নির্মাণে, খনিজ সম্পদ উৎপাদনে ভারতের বিকল্পতো চিন্তাই করা যায়না। এসব ক্ষেত্রে ভারতীয় কোম্পানিকে কাজ পাইয়ে দিতে প্রশাসনে নিযুক্ত থাকে কিছু ভারতীয় দালাল।
উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা যায়- বিজি প্রেসসহ বাংলাদেশে অসংখ্য মানসম্মত ছাপাখানা থাকা সত্ত্বেও বোর্ডের বই ছাপানো হয় ভারত থেকে। এ নিয়ে ২৬ জুন ২০১১ ঈসায়ী তারিখে বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় একটি খবর এসেছে এভাবে- “দেশীয় মুদ্রণশিল্প ধ্বংসের নীল নকশা: ভারতীয় কোম্পানিকে কাজ পাইয়ে দিতে এনসিটিবির জোর লবিং।”
দেশীয় মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে ‘ভেজাল’-এর মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে ভারতীয় কোম্পানীকে দিয়েই ছাপানো হচ্ছে কোটি কোটি বই। অথচ, দেশি মুদ্রণের মান নিয়ে বা কোন প্রকার দুর্নীতি নিয়ে ইতিপূর্বে কোন অভিযোগ পাওয়া না গেলেও ভারত থেকে ছাপিয়ে আনা বইগুলোর কাগজ ও ছাপার মান নিয়ে বহু অভিযোগ প্রকাশিত হয়েছে।
যেমন- বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় ২৩ জুন ২০১৪ ঈসায়ী তারিখে প্রকাশ হয়- “আমদানি নির্ভর নিম্নমানের কাগজে পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ: প্রতারিত হচ্ছে লাখ লাখ শিক্ষার্থী, অপচয় হচ্ছে শত কোটি টাকা। ব্যবস্থা নিতে এনসিটিবিকে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ।”
উল্লেখ্য মন্ত্রণালয় যে এনসিটিবিকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ করেছে এই এনসিটিবি-এর জোর লবিং-এর কারণেই ২০১১ সালে ভারতীয় কোম্পানি কাজ পেয়েছিলো।
বাংলাদেশে অবকাঠামো নির্মাণে ভারতের উপর নির্ভরশীলতা প্রমাণ করে আমাদের সরকার ভারতের কাছে কতোটা অসহায়। বাংলাদেশে অনেক আন্তর্জাতিক পর্যায়ের কন্সট্রাকশন ফার্ম থাকার পরও যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ দিয়েছে ভারতীয় ঠিকাদার কোম্পানি সিমপ্লেক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচারকে। (বণিক বার্তা, ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ )
অথচ এই সিমপ্লেক্সকে কাজ দিয়ে গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী (মেয়র হানিফ) ফ্লাইওভার নির্মাণ করতে যে ব্যয় হয়েছে তাতে বিশ্ব রেকর্ড হয়েছে। গত কয়েক বছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শতাধিক ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়। এগুলোর নির্মাণব্যয় কিলোমিটারপ্রতি ৮০-৯০ কোটি টাকা। কোনো কোনোটির ক্ষেত্রে ব্যয় আরো কম। অথচ গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের নির্মাণব্যয় কিলোমিটারপ্রতি প্রায় ২১১ কোটি টাকা। এতে ফ্লাইওভার নির্মাণব্যয়ের ক্ষেত্রে বিশ্বে শীর্ষস্থান দখল করেছে বাংলাদেশ।
অথচ এই সিমপ্লেক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচারই ১৬ দশমিক ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ইস্টার্ন ফ্রিওয়ে নির্মাণ করে নিজ দেশ ভারতে। ভারতের মুম্বাইয়ে চলতি ২০১৪ সালের ১৪ জুন উদ্বোধন করা ফ্লাইওভারটির নির্মাণব্যয় হয় মাত্র ১ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় দাঁড়ায় ৮৮ কোটি ২১ লাখ টাকা। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এরাই গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার নির্মাণে ব্যায় লাগায় কিলোমিটারপ্রতি প্রায় ২১১ কোটি টাকা।
ভারতের প্রতি হেন দুর্বলতা বা নির্ভরশীলতার হেতু কি আমার বোধগম্য নয়। জনগণের টাকা বলেই কি সরকারের গায়ে লাগে না?
-দেশী কোম্পানিগুলোর যথেষ্ট অভিজ্ঞতা থাকলেও দ্বিতীয় ভৈরব সেতু বানানো হচ্ছে ভারতীয় কোম্পানি ইরকন ও এফকন্সকে দিয়ে। (প্রথম আলো, ১৫ আগস্ট, ২০১৩ঈ.)
-দেশী কোম্পানিগুলোর বহির্বিশ্বে সুনাম থাকলেও দ্বিতীয় তিতাস রেলসেতু বানানো হচ্ছে ভারতীয় কোম্পনি গ্যানোন ও এফএলসিএলকে দিয়ে। (প্রথম আলো, ১৫ আগস্ট, ২০১৩ঈ.)
-দেশী কোম্পানীগুলোর উৎপাদিত ওষুধ বহির্বিশ্বে ব্যাপক চাহিদা থাকলেও ৩১২ কোটি টাকার ভ্যাকসিন আমদানি করা হয়েছে ভারতের অখ্যাত সিরাম ইন্সটিটিউট থেকে। (মানবজমিন, ২১ জানুয়ারী, ২০১৪ঈ.)
অথচ জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে জীবন রক্ষাকারী কয়েকটি রোগের ভ্যাকসিন উৎপাদন অর্ধযুগ ধরে বন্ধ। ভ্যাকসিন উৎপাদনের একটি এআরভি কুলিং মেশিন দীর্ঘদিন ধরে বিকল। এধরনের হাজারো সমস্যায় জর্জরিত দেশি প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু এসব সমস্যা সমাধানে সরকারকে আন্তরিক দেখা যায় না।
আন্তর্জাতিক বাজারে সুনাম অর্জনকারী ও বহুল চাহিদাসম্পন্ন ওষুধ কোম্পানি বাংলাদেশে থাকলেও শিশুদের জন্য ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল আমদানি করা হয়েছে ভারত থেকে। (দৈনিক ইত্তেফাক, ১৭ই মার্চ, ২০১৩)
ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল উৎপাদনকারী ‘অলিভ হেলথ কেয়ার’ নামক প্রতিষ্ঠানটি ভারতেই বহুল বিতর্কিত।
২০১৩ ঈসায়ী সালের ১২ মার্চ জাতীয় ক্যাম্পেইনে ভারত থেকে আমদানিকৃত ভিটামিন-এ ও কৃমিনাশক খাওয়ানোর পর অসুস্থ হয়ে শত শত শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়। কয়েক শিশুর মৃত্যুর খবরও প্রকাশ পেয়েছে। এ ব্যাপারে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের অনাপত্তিপত্র (এনওসি) নিয়ে কোটি কোটি টাকা মূল্যের নিম্নমানের ভিটামিন এ ক্যাপসুল আমদানি নিয়ে প্রশ্ন উঠে। কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের ভারতের দালাল কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে নিম্নমানের এসব ভিটামিন-এ আমদানি করা হয় বলে অভিযোগ উঠে।
এদিকে বিশ্বের প্রায় ৭০টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে বাংলাদেশের ওষুধ। সম্প্রতি প্রকাশিত রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি’র) প্রকাশিত পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ওষুধ রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১৬ শতাংশ। রপ্তানি হয়েছে ছয় কোটি ৯২ লাখ ডলার। (কালেরকণ্ঠ, ১৫ জুলাই ২০১৪)
বাংলাদেশী ওষুধের চাহিদা আন্তর্জাতিক বাজারে দিন দিন যেভাবে বাড়ছে তাতে প্রয়োজনীয় সহায়তা পেলে এ খাতটি হতে পারে দেশের অন্যতম প্রধান রপ্তানি খাত। কিন্তু দেশী কোম্পানীকে সহযোগিতা না করে, বরং ভারত থেকে আমদানী করা হচ্ছে। যদি ওষুধ কোম্পানীগুলো বেসরকারি না হয়ে সরকারি হতো হয়তোবা ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানা কিংবা আদমজী জুট মিলের পরিণতি ভোগ করতে হতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে। সোনালী আঁশ পাটের মতোই ধ্বংস হয়ে যেতো এ সম্ভবনাময় খাতটিও।
বাংলাদেশে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ করে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে (প্রথম আলো: ৩০ নভেম্বর, ২০১৩ঈ.)
অথচ দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো বন্ধ, অচল হয়ে পড়ে থাকে বছরের পর বছর। গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়- “চট্টগ্রামের ৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র ৫ মাস বন্ধ: যন্ত্রাংশের ক্ষতি।” (যুগান্তর: ১০ জানুয়ারি, ২০১৪ঈ.)
এমন বন্ধ হয়ে যাওয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রর খবর প্রায়শই পত্রিকায় প্রকাশ পায়। কিন্তু এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র সচলের জন্য সরকার কাজ করেছে এমন খবর পাওয়া যায় না।
এছাড়াও বায়ুশক্তি, পাথরকুচিসহ বিভিন্ন উপায়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যাপক সম্ভাবনা ও এসবের ব্যাপক গবেষণা থাকার পরেও এসব সমূহ সম্ভাবনার পেছনে মেধা ও অর্থ বিনিয়োগে সরকারের কোনো আগ্রহ কখনোই প্রকাশ পায় না। এমনকি আমাদের দেশের অনেক মেধাবী আছে যারা তেল ও বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে পানি, বাতাস ইত্যাদি দিয়ে মোটর যন্ত্র চালনা কৌশল আবিষ্কার করেছে, তাদেরকেও সরকারিভাবে কোনো পৃষ্ঠপোষকতা করা হয় না।
সর্বোপরি সরকারের উচিত ভারতের অন্ধ আনুগত্য না করে, ভারতের উপর নির্ভরশীল না হয়ে বরং দেশের উৎপাদন সম্ভাবনা ও মেধাকে কাজে লাগিয়ে স্বনির্ভর হওয়া। বাংলাদেশের মতো স্বনির্ভর একটি দেশ ভারতের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকা হচ্ছে অনেকটা সুস্থ-সামর্থ্যবান ব্যক্তি ল্যাংড়া ভিক্ষুকের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকার ন্যায়। ভারতের প্রতি এধরনের আত্মঘাতী নির্ভরশীলতা জাতির জন্য দুঃখজনক।
পূর্বে প্রকাশিত গণমাধ্যমের সংবাদ সূত্রে প্রমাণিত হয়েছে বাংলাদেশকে ভারতের প্রতি নির্ভরশীল করার ষড়যন্ত্রে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় গোয়েন্দা ও দালালরা কতটা সফল। এখন তাদের টার্গেট শুধু ‘নির্ভরশীলতা’ নয়, আধিপত্য বিস্তার এবং পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশকে ভারতের অঙ্গরাজ্য বানানো। এ লক্ষ্যে যেসময় তারা বিরামহীন কাজ করে যাচ্ছে সেসময় ‘বর্ধমান বিস্ফোরণে বাংলাদেশের সন্ত্রাসবাদীরা জড়িত’ এমন অজুহাতে বাংলাদেশে এসেছে ভারতীয় গোয়েন্দাদের একটি দল। তদন্তের নামে বাংলাদেশে ভারতীয় গোয়েন্দাদের বাধাহীন প্রবেশের মাধ্যমে ভারত তার আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় কতটা সফল হতে পেরেছে এবং পারবে তারও দৃষ্টান্তও সৃষ্টি হয়ে গেছে।
-The Daily Al Ihsan
বাংলাদেশে ‘র’ নামক বইটি ২০০১ ঈসায়ী প্রকাশিত হলেও ডিজিএফআই’র সাবেক মহাপরিচালকের চরম সত্যভাষ্যটি বহু পুরনো দিনের বরং ততোদিনের মধ্যে ভারতীয় গোয়েন্দারা তাদের উদ্দেশ্য সাধনে অনেকটা সফল। তার সুষ্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে প্রাত্যাহিক খবরের কাগজগুলোতে। বর্তমানে বাংলাদেশ ভারতের উপর এতোটা নির্ভরশীল যে, একটি টিউবয়েল বসাতেও সরকারকে ভারতের সহযোগিতা নিতে হয়। কোন সরকারের আমলেই এর ব্যতিক্রম হয়নি। দেশে পর্যাপ্ত উৎপাদন বা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা থাকা সত্ত্বেও চাল ডাল থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় প্রায় কিছুই ভারত থেকে আমদানি করা হয়। আর দেশের অবকাঠামো নির্মাণে, খনিজ সম্পদ উৎপাদনে ভারতের বিকল্পতো চিন্তাই করা যায়না। এসব ক্ষেত্রে ভারতীয় কোম্পানিকে কাজ পাইয়ে দিতে প্রশাসনে নিযুক্ত থাকে কিছু ভারতীয় দালাল।
উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা যায়- বিজি প্রেসসহ বাংলাদেশে অসংখ্য মানসম্মত ছাপাখানা থাকা সত্ত্বেও বোর্ডের বই ছাপানো হয় ভারত থেকে। এ নিয়ে ২৬ জুন ২০১১ ঈসায়ী তারিখে বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় একটি খবর এসেছে এভাবে- “দেশীয় মুদ্রণশিল্প ধ্বংসের নীল নকশা: ভারতীয় কোম্পানিকে কাজ পাইয়ে দিতে এনসিটিবির জোর লবিং।”
দেশীয় মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে ‘ভেজাল’-এর মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে ভারতীয় কোম্পানীকে দিয়েই ছাপানো হচ্ছে কোটি কোটি বই। অথচ, দেশি মুদ্রণের মান নিয়ে বা কোন প্রকার দুর্নীতি নিয়ে ইতিপূর্বে কোন অভিযোগ পাওয়া না গেলেও ভারত থেকে ছাপিয়ে আনা বইগুলোর কাগজ ও ছাপার মান নিয়ে বহু অভিযোগ প্রকাশিত হয়েছে।
যেমন- বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় ২৩ জুন ২০১৪ ঈসায়ী তারিখে প্রকাশ হয়- “আমদানি নির্ভর নিম্নমানের কাগজে পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ: প্রতারিত হচ্ছে লাখ লাখ শিক্ষার্থী, অপচয় হচ্ছে শত কোটি টাকা। ব্যবস্থা নিতে এনসিটিবিকে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ।”
উল্লেখ্য মন্ত্রণালয় যে এনসিটিবিকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ করেছে এই এনসিটিবি-এর জোর লবিং-এর কারণেই ২০১১ সালে ভারতীয় কোম্পানি কাজ পেয়েছিলো।
বাংলাদেশে অবকাঠামো নির্মাণে ভারতের উপর নির্ভরশীলতা প্রমাণ করে আমাদের সরকার ভারতের কাছে কতোটা অসহায়। বাংলাদেশে অনেক আন্তর্জাতিক পর্যায়ের কন্সট্রাকশন ফার্ম থাকার পরও যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ দিয়েছে ভারতীয় ঠিকাদার কোম্পানি সিমপ্লেক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচারকে। (বণিক বার্তা, ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ )
অথচ এই সিমপ্লেক্সকে কাজ দিয়ে গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী (মেয়র হানিফ) ফ্লাইওভার নির্মাণ করতে যে ব্যয় হয়েছে তাতে বিশ্ব রেকর্ড হয়েছে। গত কয়েক বছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শতাধিক ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়। এগুলোর নির্মাণব্যয় কিলোমিটারপ্রতি ৮০-৯০ কোটি টাকা। কোনো কোনোটির ক্ষেত্রে ব্যয় আরো কম। অথচ গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের নির্মাণব্যয় কিলোমিটারপ্রতি প্রায় ২১১ কোটি টাকা। এতে ফ্লাইওভার নির্মাণব্যয়ের ক্ষেত্রে বিশ্বে শীর্ষস্থান দখল করেছে বাংলাদেশ।
অথচ এই সিমপ্লেক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচারই ১৬ দশমিক ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ইস্টার্ন ফ্রিওয়ে নির্মাণ করে নিজ দেশ ভারতে। ভারতের মুম্বাইয়ে চলতি ২০১৪ সালের ১৪ জুন উদ্বোধন করা ফ্লাইওভারটির নির্মাণব্যয় হয় মাত্র ১ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় দাঁড়ায় ৮৮ কোটি ২১ লাখ টাকা। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এরাই গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার নির্মাণে ব্যায় লাগায় কিলোমিটারপ্রতি প্রায় ২১১ কোটি টাকা।
ভারতের প্রতি হেন দুর্বলতা বা নির্ভরশীলতার হেতু কি আমার বোধগম্য নয়। জনগণের টাকা বলেই কি সরকারের গায়ে লাগে না?
-দেশী কোম্পানিগুলোর যথেষ্ট অভিজ্ঞতা থাকলেও দ্বিতীয় ভৈরব সেতু বানানো হচ্ছে ভারতীয় কোম্পানি ইরকন ও এফকন্সকে দিয়ে। (প্রথম আলো, ১৫ আগস্ট, ২০১৩ঈ.)
-দেশী কোম্পানিগুলোর বহির্বিশ্বে সুনাম থাকলেও দ্বিতীয় তিতাস রেলসেতু বানানো হচ্ছে ভারতীয় কোম্পনি গ্যানোন ও এফএলসিএলকে দিয়ে। (প্রথম আলো, ১৫ আগস্ট, ২০১৩ঈ.)
-দেশী কোম্পানীগুলোর উৎপাদিত ওষুধ বহির্বিশ্বে ব্যাপক চাহিদা থাকলেও ৩১২ কোটি টাকার ভ্যাকসিন আমদানি করা হয়েছে ভারতের অখ্যাত সিরাম ইন্সটিটিউট থেকে। (মানবজমিন, ২১ জানুয়ারী, ২০১৪ঈ.)
অথচ জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে জীবন রক্ষাকারী কয়েকটি রোগের ভ্যাকসিন উৎপাদন অর্ধযুগ ধরে বন্ধ। ভ্যাকসিন উৎপাদনের একটি এআরভি কুলিং মেশিন দীর্ঘদিন ধরে বিকল। এধরনের হাজারো সমস্যায় জর্জরিত দেশি প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু এসব সমস্যা সমাধানে সরকারকে আন্তরিক দেখা যায় না।
আন্তর্জাতিক বাজারে সুনাম অর্জনকারী ও বহুল চাহিদাসম্পন্ন ওষুধ কোম্পানি বাংলাদেশে থাকলেও শিশুদের জন্য ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল আমদানি করা হয়েছে ভারত থেকে। (দৈনিক ইত্তেফাক, ১৭ই মার্চ, ২০১৩)
ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল উৎপাদনকারী ‘অলিভ হেলথ কেয়ার’ নামক প্রতিষ্ঠানটি ভারতেই বহুল বিতর্কিত।
২০১৩ ঈসায়ী সালের ১২ মার্চ জাতীয় ক্যাম্পেইনে ভারত থেকে আমদানিকৃত ভিটামিন-এ ও কৃমিনাশক খাওয়ানোর পর অসুস্থ হয়ে শত শত শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়। কয়েক শিশুর মৃত্যুর খবরও প্রকাশ পেয়েছে। এ ব্যাপারে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের অনাপত্তিপত্র (এনওসি) নিয়ে কোটি কোটি টাকা মূল্যের নিম্নমানের ভিটামিন এ ক্যাপসুল আমদানি নিয়ে প্রশ্ন উঠে। কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের ভারতের দালাল কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে নিম্নমানের এসব ভিটামিন-এ আমদানি করা হয় বলে অভিযোগ উঠে।
এদিকে বিশ্বের প্রায় ৭০টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে বাংলাদেশের ওষুধ। সম্প্রতি প্রকাশিত রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি’র) প্রকাশিত পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ওষুধ রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১৬ শতাংশ। রপ্তানি হয়েছে ছয় কোটি ৯২ লাখ ডলার। (কালেরকণ্ঠ, ১৫ জুলাই ২০১৪)
বাংলাদেশী ওষুধের চাহিদা আন্তর্জাতিক বাজারে দিন দিন যেভাবে বাড়ছে তাতে প্রয়োজনীয় সহায়তা পেলে এ খাতটি হতে পারে দেশের অন্যতম প্রধান রপ্তানি খাত। কিন্তু দেশী কোম্পানীকে সহযোগিতা না করে, বরং ভারত থেকে আমদানী করা হচ্ছে। যদি ওষুধ কোম্পানীগুলো বেসরকারি না হয়ে সরকারি হতো হয়তোবা ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানা কিংবা আদমজী জুট মিলের পরিণতি ভোগ করতে হতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে। সোনালী আঁশ পাটের মতোই ধ্বংস হয়ে যেতো এ সম্ভবনাময় খাতটিও।
বাংলাদেশে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ করে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে (প্রথম আলো: ৩০ নভেম্বর, ২০১৩ঈ.)
অথচ দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো বন্ধ, অচল হয়ে পড়ে থাকে বছরের পর বছর। গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়- “চট্টগ্রামের ৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র ৫ মাস বন্ধ: যন্ত্রাংশের ক্ষতি।” (যুগান্তর: ১০ জানুয়ারি, ২০১৪ঈ.)
এমন বন্ধ হয়ে যাওয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রর খবর প্রায়শই পত্রিকায় প্রকাশ পায়। কিন্তু এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র সচলের জন্য সরকার কাজ করেছে এমন খবর পাওয়া যায় না।
এছাড়াও বায়ুশক্তি, পাথরকুচিসহ বিভিন্ন উপায়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যাপক সম্ভাবনা ও এসবের ব্যাপক গবেষণা থাকার পরেও এসব সমূহ সম্ভাবনার পেছনে মেধা ও অর্থ বিনিয়োগে সরকারের কোনো আগ্রহ কখনোই প্রকাশ পায় না। এমনকি আমাদের দেশের অনেক মেধাবী আছে যারা তেল ও বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে পানি, বাতাস ইত্যাদি দিয়ে মোটর যন্ত্র চালনা কৌশল আবিষ্কার করেছে, তাদেরকেও সরকারিভাবে কোনো পৃষ্ঠপোষকতা করা হয় না।
সর্বোপরি সরকারের উচিত ভারতের অন্ধ আনুগত্য না করে, ভারতের উপর নির্ভরশীল না হয়ে বরং দেশের উৎপাদন সম্ভাবনা ও মেধাকে কাজে লাগিয়ে স্বনির্ভর হওয়া। বাংলাদেশের মতো স্বনির্ভর একটি দেশ ভারতের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকা হচ্ছে অনেকটা সুস্থ-সামর্থ্যবান ব্যক্তি ল্যাংড়া ভিক্ষুকের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকার ন্যায়। ভারতের প্রতি এধরনের আত্মঘাতী নির্ভরশীলতা জাতির জন্য দুঃখজনক।
পূর্বে প্রকাশিত গণমাধ্যমের সংবাদ সূত্রে প্রমাণিত হয়েছে বাংলাদেশকে ভারতের প্রতি নির্ভরশীল করার ষড়যন্ত্রে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় গোয়েন্দা ও দালালরা কতটা সফল। এখন তাদের টার্গেট শুধু ‘নির্ভরশীলতা’ নয়, আধিপত্য বিস্তার এবং পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশকে ভারতের অঙ্গরাজ্য বানানো। এ লক্ষ্যে যেসময় তারা বিরামহীন কাজ করে যাচ্ছে সেসময় ‘বর্ধমান বিস্ফোরণে বাংলাদেশের সন্ত্রাসবাদীরা জড়িত’ এমন অজুহাতে বাংলাদেশে এসেছে ভারতীয় গোয়েন্দাদের একটি দল। তদন্তের নামে বাংলাদেশে ভারতীয় গোয়েন্দাদের বাধাহীন প্রবেশের মাধ্যমে ভারত তার আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় কতটা সফল হতে পেরেছে এবং পারবে তারও দৃষ্টান্তও সৃষ্টি হয়ে গেছে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন