নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘আমার হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করো আমার সন্তুষ্টি মুবারক লাভের জন্য।’
আজ সুমহান ঐতিহাসিক পবিত্র আশূরা মিনাল মুহররমুল হারাম শরীফ।
যেদিনটি সকলের জন্যই রহমত, বরকত ও সাকীনা হাছিল করার দিন। এ সুমহান দিনে অনেক রহমতপূর্ণ, বরকতপূর্ণ, নিয়ামতপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।
পাশাপাশি এদিনটি হচ্ছে- সাইয়্যিদুশ শুহাদা, শুহাদায়ে কারবালা, ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র শাহাদাত শরীফ দিবস।
সারাবিশ্বের মুসলিম উম্মাহ উনাদের জন্য দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে- পবিত্র আশূরা শরীফ এবং সাইয়্যিদুনা ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র শাহাদাত দিবস উনার সম্মানার্থে মাসব্যাপী উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক আলোচনা করা অর্থাৎ পবিত্র ওয়াজ শরীফ, পবিত্র মীলাদ শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াম শরীফ এবং দোয়ার মাহফিলের আয়োজন করা।
আর সরকারের জন্যও দায়িত্ব এবং কর্তব্য হচ্ছে- এ মুবারক দিবস উপলক্ষে পবিত্র মাহফিলসমূহের সার্বিক আঞ্জাম দেয়ার সাথে সাথে কারবালার হৃদয়বিদারক ইতিহাসসহ উনার পবিত্র জীবনী মুবারক সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা এবং উনার পবিত্র শাহাদাত শরীফ দিবস উপলক্ষে কমপক্ষে ৩ দিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করা।
যামানার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, আজ সুমহান ঐতিহাসিক পবিত্র আশূরা মিনাল মুহররমুল হারাম শরীফ। মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমরা পবিত্র মুহররমুল হারাম শরীফ মাস উনাকে এবং উনার মধ্যস্থিত পবিত্র আশূরা শরীফ উনাকে সম্মান করো। যে ব্যক্তি পবিত্র মুহররমুল হারাম শরীফ মাস তথা পবিত্র আশূরা শরীফ উনাকে সম্মান করবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে সম্মানিত জান্নাত দ্বারা সম্মানিত করবেন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করবেন।” সুবহানাল্লাহ!
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, পবিত্র মুহররমুল হারাম শরীফ মাস উনারই দশ তারিখ অর্থাৎ ১০ই মুহররম “পবিত্র আশূরা শরীফ” দিনটি বিশ্বব্যাপী এক আলোচিত দিন। সৃষ্টির সূচনা হয় এই রবকতময় দিনে এবং সৃষ্টির সমাপ্তিও ঘটবে এ বরকতময় দিনেই। বিশেষ বিশেষ সৃষ্টি এ রবকতময় দিনেই করা হয় এবং বিশেষ বিশেষ ঘটনা এ বরকতময় দিনেই সংঘটিত হয়। সুবহানাল্লাহ!
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে শুরু করে প্রথম নবী ও রসূল হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম পর্যন্ত প্রায় সকল হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের কোনো না কোনো উল্লেখযোগ্য ঘটনা এ বরকতময় দিনে সংঘটিত হয়েছে। সঙ্গতকারণেই এ বরকতময় দিনটি সবার জন্য এক মহান আনুষ্ঠানিকতার সম্মানিত দিন যা রহমত, বরকত, সাকীনা, মাগফিরাত হাছিল করারও দিন। সুবহানাল্লাহ!
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, এ দিনেই মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র মর্যাদা, সম্মান, খুছূছিয়ত ও হাবীবুল্লাহ হওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করে এদিনকে সম্মানিত করেন। সুবহানাল্লাহ! এদিনে হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার দোয়া মুবারক কবুল করা হয় এবং উনার ইছমত ঘোষণা করা হয়। সুবহানাল্লাহ!
এদিনে মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ইদরীস আলাইহিস সালাম উনাকে আকাশে তুলে নেন। সুবহানাল্লাহ! এদিনে মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার বরকতময় কিস্তিকে জুদী পাহাড়ে ভিড়িয়েছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
এদিনে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন এবং এদিন উনাকে খলীল উপাধি হাদিয়া করা হয় এবং উনাকে নমরূদের আগুন থেকে বের করে আনা হয়। সুবহানাল্লাহ!
এদিনে হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম উনার ইছমত মুবারক ঘোষণা করা হয় এবং উনার সম্মানিত আওলাদ হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম উনার বিশ্বব্যাপী কর্তৃত্ব প্রদানের ঘোষণা দেয়া হয়। সুবহানাল্লাহ!
এদিনেই হযরত আইয়ূব আলাইহিস সালাম তিনি অসুস্থতা থেকে আনুষ্ঠানিক আরোগ্য লাভ করেন। সুবহানাল্লাহ!
এদিনে হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সাথে মহান আল্লাহ পাক তিনি কথা মুবারক বলেছিলেন।
সুবহানাল্লাহ! এবং এদিনেই হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি ও উনার সম্প্রদায় লোহিত সাগর পার হয়েছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
এদিনেই হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম তিনি মাছ সম্প্রদায়কে সুস্থতা দান করে পুনরায় যমীনে তাশরীফ মুবারক এনেছেন। সুবহানাল্লাহ!
এদিনেই হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে আসমানে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
এদিনেই মহান আল্লাহ পাক তিনি দুনিয়া সৃষ্টি করেন এবং এ দিনেই ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে। এ দিনেই মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বপ্রথম যমীনে বৃষ্টি নাযিল করেন। সুবহানাল্লাহ!
এদিনেই হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি রহমতসহ সর্বপ্রথম যমীনে নাযিল হন। আর এদিনেই মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বপ্রথম পৃথিবীতে রহমত বর্ষণ করেন। সুবহানাল্লাহ!
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, পবিত্র আশূরা মিনাল মুহররমুল হারাম শরীফ উনার আরেকটি রহমত বরকত ও সাকীনাপূর্ণ ঘটনা হচ্ছে, ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র শাহাদত মুবারক দিবস। বলার অপেক্ষাই রাখে না, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র শাহাদাত মুবারক নিঃসন্দেহে মুসলিম বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে হৃদয়বিদারক ঘটনা। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, রহমতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়ায় অবস্থান গ্রহণকালীন এবং পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করার পরে আরো অনেক মর্মবিদারক শাহাদাতের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র শাহাদাত মুবারক উনার ন্যায় এত দীর্ঘস্থায়ী ও এত ব্যাপক শোক, কান্না ও আহাজারি মুসলিম জাতি আর কোনো শাহাদাতের জন্য করেনি।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ গ্রহণের কিছুদিন পরই উনার শাহাদাতের কথা সবার মধ্যে জানাজানি হয়ে গিয়েছিল। সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম, সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনারাসহ অন্যান্য ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ও হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সংশ্লিষ্ট সকলেই সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শৈশবাবস্থায় জানতে পেরেছিলেন যে, উনাকে অত্যন্ত নির্মমভাবে শহীদ করা হবে এবং কারবালার ময়দান উনার রক্ত মুবারক দ্বারা রঞ্জিত হবে। এ ব্যাপারে অনেক পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণিত হয়েছে।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, হযরত উম্মুল ফজল বিনতে হারিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা (হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আহলিয়া) তিনি বলেন, আমি একদিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতে হাজির হয়ে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কোল মুবারক-এ দিলাম। এরপর আমি দেখলাম, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দু’চোখ মুবারক থেকে টপটপ করে পানি মুবারক পড়ছে। আমি আরজ করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক, এর কি কারণ? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আমার কাছে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি এসে এ খবর দিয়ে গেলেন, “নিশ্চয়ই আমার উম্মত আমার এ সম্মানিত আওলাদ উনাকে শহীদ করবে।”
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সা’দ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত শা’বী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেছেন, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি জঙ্গে সিফফীনের সময় কারবালার পথ দিয়ে যাওয়ার সময় দাঁড়িয়ে গেলেন এবং সেই জায়গার নাম জানতে চাইলেন। লোকেরা বললো, এ জায়গার নাম ‘কারবালা’। ‘কারবালা’র নাম শুনামাত্র সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি এত কান্নাকাটি করলেন যে, উনার দু’চোখ মুবারক উনার পানি মুবারক দ্বারা মাটি পর্যন্ত ভিজে গিয়েছিল। অতঃপর ফরমালেন, আমি একদিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতে হাজির হয়ে দেখতে পেলাম, তিনি কাঁদছেন। আমি আরজ করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি কাঁদছেন কেন? জাওয়াবে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জানালেন, এইমাত্র হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি এসে আমাকে খবর দিয়ে গেলেন-
“আমার আওলাদ (দৌহিত্র) সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ফোরাত নদীর তীরে যে জায়গায় শহীদ করা হবে, সে জায়গার নাম কারবালা।”
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, পরবর্তীতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ভবিষ্যদ্বাণী মুবারক অনুযায়ী সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ৬১ হিজরী সনের পবিত্র মুহররমুল হারাম শরীফ মাস উনার ১০ তারিখ অর্থাৎ পবিত্র আশূরা মিনাল মুহররম শরীফ উনার দিনে পবিত্র শাহাদাত মুবারক গ্রহণ করে কায়িনাতবাসীকে এই শিক্ষা দিয়ে গেলেন যে, জীবন চলে গেলেও হক্ব থেকে এক চুল পরিমাণ বিচ্যুতও হওয়া যাবে না এবং কোনো অবস্থাতেই নাহক্ব ও বাতিলের কাছে মাথা নত ও আপোস করা যাবে না। সর্বাবস্থায় হক্ব মত-পথ উনার উপর ইস্তিকামত থাকতে হবে। এটাই পবিত্র আশূরা মিনাল মুহররম শরীফ উনার অন্যতম শিক্ষা।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, হযরত ইমাম যাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শহীদকারীদের কেউই মহান আল্লাহ পাক উনার গযব থেকে রক্ষা পায়নি। কেউ লা’নতে পড়ে নিহত হয়েছে এবং কেউ এমন কষ্টদায়ক অবস্থার শিকার হয়েছে যে, মৃত্যুও তার চেয়ে অনেক ভালো ছিল। হযরত ইমাম ইবনুল জাওযী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, “সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে শহীদকারীরা সবাই দুনিয়াতেই কোনো না কোনো প্রকারে শাস্তি পেয়েছে। কেউ নিহত হয়েছে, কেউ অন্ধ হয়ে গেছে। আর ক্ষমতাসীনরা অল্প সময়েই ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে।”
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, আব্দুল মালেক ইবনে মারওয়ানের শাসনামলে যখন হযরত মুখতার সাকাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি কূফার শাসক হলেন, তখন তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শাহাদাত মুবারক-এ অংশগ্রহণকারীদেরকে এবং উনার বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়া বাহিনীতে যোগদানকারীদেরকে বেছে বেছে হত্যা করেন। এমনকি একদিনে তিনি এ ধরনের দুইশ চল্লিশ ব্যক্তিকে হত্যা করেন। আমর বিন হাজ্জাজ নামক এক ব্যক্তি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শহীদকারী ছিল। সে কূফা থেকে পালিয়েও বাঁচতে পারেনি। হযরত মুখতার সাকাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার লোকদের হাতে সে নিহত হয়েছে। হযরত মুখতার সাকাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার লোকেরা পাপিষ্ঠ সিমারকে হত্যা করে তার লাশ কুকুরকে খাইয়ে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! মোটকথা, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে জিহাদ ও ষড়যন্ত্রে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেককেই মহান আল্লাহ পাক তিনি সমূলে ধ্বংস করে দেন।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, কোনো কোনো গুমরাহ ও কাফির তারা পাপিষ্ঠ ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহিকে ‘রহমতুল্লাহি আলাইহি’ ও ‘তাবিয়ী’ বলে উল্লেখ করে। নাউযুবিল্লাহ! যা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। কেননা, ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি সে যেসব অপকর্ম করেছে তা সুস্পষ্ট কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। কেউ কুফরী করলে সে মুসলমান থেকে খারিজ হয়ে যায়। যার কারণে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ইমাম-মুজতাহিদ, আউলিয়ায়ে কিরাম উনারা ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহিকে কাফির, লা’নতগ্রস্ত ও জাহান্নামী বলতে কোনো দ্বিধা করেননি। কাজেই, ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহিকে তাবিয়ী বলার অর্থ হলো তার ছানা-ছিফত করা, তাকে হক্ব বলে স্বীকার করা। ইয়াযীদের মতো পাপিষ্ঠ ব্যক্তির ছানা-ছিফত কেবল ওইসব ব্যক্তিই করতে পারে যে তার শুভাকাঙ্খী, সমর্থনকারী। ফলে সম্মানিত শরীয়ত উনার ফতওয়া অনুযায়ী ইয়াযীদের যা হুকুম তার শুভাকাঙ্খী ও সমর্থনকারী তাদেরও একই হুকুম। আর তা হলো সম্মানিত শরীয়ত উনার ফতওয়া মতে কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, মূলকথা হলো- আজ সুমহান ঐতিহাসিক পবিত্র আশূরা মিনাল মুহররম শরীফ। যেদিনটি সকলের জন্যই রহমত, বরকত ও সাকীনা হাছিল করার দিন। এদিন অনেক রহমতপূর্ণ, বরকতপূর্ণ, নিয়ামতপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। পাশাপাশি এ সুমহান দিনটি হচ্ছে- সাইয়্যিদুশ শুহাদা, শুহাদায়ে কারবালা, ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র শাহাদাত শরীফ দিবস। সারাবিশ্বের মুসলিম উম্মতের জন্য দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে- পবিত্র আশূরা শরীফ এবং সাইয়্যিদুনা ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র শাহাদাত দিবস উনার সম্মানার্থে মাসব্যাপী উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক আলোচনা করা অর্থাৎ পবিত্র ওয়াজ শরীফ, পবিত্র মীলাদ শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াম শরীফ এবং দোয়ার মাহফিলের আয়োজন করা। আর সরকারের জন্যও দায়িত্ব এবং কর্তব্য হচ্ছে- এ মুবারক দিবস উপলক্ষে পবিত্র মাহফিলসমূহের সার্বিক আঞ্জাম দেয়ার সাথে সাথে কারবালার হৃদয়বিদারক ইতিহাসসহ উনার পবিত্র জীবনী মুবারক সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা এবং উনার পবিত্র শাহাদাত শরীফ দিবস উপলক্ষে কমপক্ষে ৩ দিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করা।
সূত্র: দৈনিক আল ইহসান
আজ সুমহান ঐতিহাসিক পবিত্র আশূরা মিনাল মুহররমুল হারাম শরীফ।
যেদিনটি সকলের জন্যই রহমত, বরকত ও সাকীনা হাছিল করার দিন। এ সুমহান দিনে অনেক রহমতপূর্ণ, বরকতপূর্ণ, নিয়ামতপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।
পাশাপাশি এদিনটি হচ্ছে- সাইয়্যিদুশ শুহাদা, শুহাদায়ে কারবালা, ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র শাহাদাত শরীফ দিবস।
সারাবিশ্বের মুসলিম উম্মাহ উনাদের জন্য দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে- পবিত্র আশূরা শরীফ এবং সাইয়্যিদুনা ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র শাহাদাত দিবস উনার সম্মানার্থে মাসব্যাপী উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক আলোচনা করা অর্থাৎ পবিত্র ওয়াজ শরীফ, পবিত্র মীলাদ শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াম শরীফ এবং দোয়ার মাহফিলের আয়োজন করা।
আর সরকারের জন্যও দায়িত্ব এবং কর্তব্য হচ্ছে- এ মুবারক দিবস উপলক্ষে পবিত্র মাহফিলসমূহের সার্বিক আঞ্জাম দেয়ার সাথে সাথে কারবালার হৃদয়বিদারক ইতিহাসসহ উনার পবিত্র জীবনী মুবারক সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা এবং উনার পবিত্র শাহাদাত শরীফ দিবস উপলক্ষে কমপক্ষে ৩ দিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করা।
যামানার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, আজ সুমহান ঐতিহাসিক পবিত্র আশূরা মিনাল মুহররমুল হারাম শরীফ। মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমরা পবিত্র মুহররমুল হারাম শরীফ মাস উনাকে এবং উনার মধ্যস্থিত পবিত্র আশূরা শরীফ উনাকে সম্মান করো। যে ব্যক্তি পবিত্র মুহররমুল হারাম শরীফ মাস তথা পবিত্র আশূরা শরীফ উনাকে সম্মান করবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে সম্মানিত জান্নাত দ্বারা সম্মানিত করবেন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করবেন।” সুবহানাল্লাহ!
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, পবিত্র মুহররমুল হারাম শরীফ মাস উনারই দশ তারিখ অর্থাৎ ১০ই মুহররম “পবিত্র আশূরা শরীফ” দিনটি বিশ্বব্যাপী এক আলোচিত দিন। সৃষ্টির সূচনা হয় এই রবকতময় দিনে এবং সৃষ্টির সমাপ্তিও ঘটবে এ বরকতময় দিনেই। বিশেষ বিশেষ সৃষ্টি এ রবকতময় দিনেই করা হয় এবং বিশেষ বিশেষ ঘটনা এ বরকতময় দিনেই সংঘটিত হয়। সুবহানাল্লাহ!
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে শুরু করে প্রথম নবী ও রসূল হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম পর্যন্ত প্রায় সকল হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের কোনো না কোনো উল্লেখযোগ্য ঘটনা এ বরকতময় দিনে সংঘটিত হয়েছে। সঙ্গতকারণেই এ বরকতময় দিনটি সবার জন্য এক মহান আনুষ্ঠানিকতার সম্মানিত দিন যা রহমত, বরকত, সাকীনা, মাগফিরাত হাছিল করারও দিন। সুবহানাল্লাহ!
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, এ দিনেই মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র মর্যাদা, সম্মান, খুছূছিয়ত ও হাবীবুল্লাহ হওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করে এদিনকে সম্মানিত করেন। সুবহানাল্লাহ! এদিনে হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার দোয়া মুবারক কবুল করা হয় এবং উনার ইছমত ঘোষণা করা হয়। সুবহানাল্লাহ!
এদিনে মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ইদরীস আলাইহিস সালাম উনাকে আকাশে তুলে নেন। সুবহানাল্লাহ! এদিনে মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার বরকতময় কিস্তিকে জুদী পাহাড়ে ভিড়িয়েছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
এদিনে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন এবং এদিন উনাকে খলীল উপাধি হাদিয়া করা হয় এবং উনাকে নমরূদের আগুন থেকে বের করে আনা হয়। সুবহানাল্লাহ!
এদিনে হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম উনার ইছমত মুবারক ঘোষণা করা হয় এবং উনার সম্মানিত আওলাদ হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম উনার বিশ্বব্যাপী কর্তৃত্ব প্রদানের ঘোষণা দেয়া হয়। সুবহানাল্লাহ!
এদিনেই হযরত আইয়ূব আলাইহিস সালাম তিনি অসুস্থতা থেকে আনুষ্ঠানিক আরোগ্য লাভ করেন। সুবহানাল্লাহ!
এদিনে হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সাথে মহান আল্লাহ পাক তিনি কথা মুবারক বলেছিলেন।
সুবহানাল্লাহ! এবং এদিনেই হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি ও উনার সম্প্রদায় লোহিত সাগর পার হয়েছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
এদিনেই হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম তিনি মাছ সম্প্রদায়কে সুস্থতা দান করে পুনরায় যমীনে তাশরীফ মুবারক এনেছেন। সুবহানাল্লাহ!
এদিনেই হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে আসমানে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
এদিনেই মহান আল্লাহ পাক তিনি দুনিয়া সৃষ্টি করেন এবং এ দিনেই ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে। এ দিনেই মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বপ্রথম যমীনে বৃষ্টি নাযিল করেন। সুবহানাল্লাহ!
এদিনেই হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি রহমতসহ সর্বপ্রথম যমীনে নাযিল হন। আর এদিনেই মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বপ্রথম পৃথিবীতে রহমত বর্ষণ করেন। সুবহানাল্লাহ!
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, পবিত্র আশূরা মিনাল মুহররমুল হারাম শরীফ উনার আরেকটি রহমত বরকত ও সাকীনাপূর্ণ ঘটনা হচ্ছে, ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র শাহাদত মুবারক দিবস। বলার অপেক্ষাই রাখে না, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র শাহাদাত মুবারক নিঃসন্দেহে মুসলিম বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে হৃদয়বিদারক ঘটনা। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, রহমতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়ায় অবস্থান গ্রহণকালীন এবং পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করার পরে আরো অনেক মর্মবিদারক শাহাদাতের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র শাহাদাত মুবারক উনার ন্যায় এত দীর্ঘস্থায়ী ও এত ব্যাপক শোক, কান্না ও আহাজারি মুসলিম জাতি আর কোনো শাহাদাতের জন্য করেনি।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ গ্রহণের কিছুদিন পরই উনার শাহাদাতের কথা সবার মধ্যে জানাজানি হয়ে গিয়েছিল। সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম, সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনারাসহ অন্যান্য ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ও হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সংশ্লিষ্ট সকলেই সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শৈশবাবস্থায় জানতে পেরেছিলেন যে, উনাকে অত্যন্ত নির্মমভাবে শহীদ করা হবে এবং কারবালার ময়দান উনার রক্ত মুবারক দ্বারা রঞ্জিত হবে। এ ব্যাপারে অনেক পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণিত হয়েছে।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, হযরত উম্মুল ফজল বিনতে হারিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা (হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আহলিয়া) তিনি বলেন, আমি একদিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতে হাজির হয়ে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কোল মুবারক-এ দিলাম। এরপর আমি দেখলাম, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দু’চোখ মুবারক থেকে টপটপ করে পানি মুবারক পড়ছে। আমি আরজ করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক, এর কি কারণ? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আমার কাছে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি এসে এ খবর দিয়ে গেলেন, “নিশ্চয়ই আমার উম্মত আমার এ সম্মানিত আওলাদ উনাকে শহীদ করবে।”
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সা’দ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত শা’বী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেছেন, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি জঙ্গে সিফফীনের সময় কারবালার পথ দিয়ে যাওয়ার সময় দাঁড়িয়ে গেলেন এবং সেই জায়গার নাম জানতে চাইলেন। লোকেরা বললো, এ জায়গার নাম ‘কারবালা’। ‘কারবালা’র নাম শুনামাত্র সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি এত কান্নাকাটি করলেন যে, উনার দু’চোখ মুবারক উনার পানি মুবারক দ্বারা মাটি পর্যন্ত ভিজে গিয়েছিল। অতঃপর ফরমালেন, আমি একদিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতে হাজির হয়ে দেখতে পেলাম, তিনি কাঁদছেন। আমি আরজ করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি কাঁদছেন কেন? জাওয়াবে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জানালেন, এইমাত্র হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি এসে আমাকে খবর দিয়ে গেলেন-
“আমার আওলাদ (দৌহিত্র) সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ফোরাত নদীর তীরে যে জায়গায় শহীদ করা হবে, সে জায়গার নাম কারবালা।”
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, পরবর্তীতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ভবিষ্যদ্বাণী মুবারক অনুযায়ী সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ৬১ হিজরী সনের পবিত্র মুহররমুল হারাম শরীফ মাস উনার ১০ তারিখ অর্থাৎ পবিত্র আশূরা মিনাল মুহররম শরীফ উনার দিনে পবিত্র শাহাদাত মুবারক গ্রহণ করে কায়িনাতবাসীকে এই শিক্ষা দিয়ে গেলেন যে, জীবন চলে গেলেও হক্ব থেকে এক চুল পরিমাণ বিচ্যুতও হওয়া যাবে না এবং কোনো অবস্থাতেই নাহক্ব ও বাতিলের কাছে মাথা নত ও আপোস করা যাবে না। সর্বাবস্থায় হক্ব মত-পথ উনার উপর ইস্তিকামত থাকতে হবে। এটাই পবিত্র আশূরা মিনাল মুহররম শরীফ উনার অন্যতম শিক্ষা।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, হযরত ইমাম যাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শহীদকারীদের কেউই মহান আল্লাহ পাক উনার গযব থেকে রক্ষা পায়নি। কেউ লা’নতে পড়ে নিহত হয়েছে এবং কেউ এমন কষ্টদায়ক অবস্থার শিকার হয়েছে যে, মৃত্যুও তার চেয়ে অনেক ভালো ছিল। হযরত ইমাম ইবনুল জাওযী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, “সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে শহীদকারীরা সবাই দুনিয়াতেই কোনো না কোনো প্রকারে শাস্তি পেয়েছে। কেউ নিহত হয়েছে, কেউ অন্ধ হয়ে গেছে। আর ক্ষমতাসীনরা অল্প সময়েই ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে।”
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, আব্দুল মালেক ইবনে মারওয়ানের শাসনামলে যখন হযরত মুখতার সাকাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি কূফার শাসক হলেন, তখন তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শাহাদাত মুবারক-এ অংশগ্রহণকারীদেরকে এবং উনার বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়া বাহিনীতে যোগদানকারীদেরকে বেছে বেছে হত্যা করেন। এমনকি একদিনে তিনি এ ধরনের দুইশ চল্লিশ ব্যক্তিকে হত্যা করেন। আমর বিন হাজ্জাজ নামক এক ব্যক্তি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শহীদকারী ছিল। সে কূফা থেকে পালিয়েও বাঁচতে পারেনি। হযরত মুখতার সাকাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার লোকদের হাতে সে নিহত হয়েছে। হযরত মুখতার সাকাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার লোকেরা পাপিষ্ঠ সিমারকে হত্যা করে তার লাশ কুকুরকে খাইয়ে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! মোটকথা, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে জিহাদ ও ষড়যন্ত্রে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেককেই মহান আল্লাহ পাক তিনি সমূলে ধ্বংস করে দেন।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, কোনো কোনো গুমরাহ ও কাফির তারা পাপিষ্ঠ ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহিকে ‘রহমতুল্লাহি আলাইহি’ ও ‘তাবিয়ী’ বলে উল্লেখ করে। নাউযুবিল্লাহ! যা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। কেননা, ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি সে যেসব অপকর্ম করেছে তা সুস্পষ্ট কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। কেউ কুফরী করলে সে মুসলমান থেকে খারিজ হয়ে যায়। যার কারণে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ইমাম-মুজতাহিদ, আউলিয়ায়ে কিরাম উনারা ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহিকে কাফির, লা’নতগ্রস্ত ও জাহান্নামী বলতে কোনো দ্বিধা করেননি। কাজেই, ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহিকে তাবিয়ী বলার অর্থ হলো তার ছানা-ছিফত করা, তাকে হক্ব বলে স্বীকার করা। ইয়াযীদের মতো পাপিষ্ঠ ব্যক্তির ছানা-ছিফত কেবল ওইসব ব্যক্তিই করতে পারে যে তার শুভাকাঙ্খী, সমর্থনকারী। ফলে সম্মানিত শরীয়ত উনার ফতওয়া অনুযায়ী ইয়াযীদের যা হুকুম তার শুভাকাঙ্খী ও সমর্থনকারী তাদেরও একই হুকুম। আর তা হলো সম্মানিত শরীয়ত উনার ফতওয়া মতে কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, মূলকথা হলো- আজ সুমহান ঐতিহাসিক পবিত্র আশূরা মিনাল মুহররম শরীফ। যেদিনটি সকলের জন্যই রহমত, বরকত ও সাকীনা হাছিল করার দিন। এদিন অনেক রহমতপূর্ণ, বরকতপূর্ণ, নিয়ামতপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। পাশাপাশি এ সুমহান দিনটি হচ্ছে- সাইয়্যিদুশ শুহাদা, শুহাদায়ে কারবালা, ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র শাহাদাত শরীফ দিবস। সারাবিশ্বের মুসলিম উম্মতের জন্য দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে- পবিত্র আশূরা শরীফ এবং সাইয়্যিদুনা ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র শাহাদাত দিবস উনার সম্মানার্থে মাসব্যাপী উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক আলোচনা করা অর্থাৎ পবিত্র ওয়াজ শরীফ, পবিত্র মীলাদ শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াম শরীফ এবং দোয়ার মাহফিলের আয়োজন করা। আর সরকারের জন্যও দায়িত্ব এবং কর্তব্য হচ্ছে- এ মুবারক দিবস উপলক্ষে পবিত্র মাহফিলসমূহের সার্বিক আঞ্জাম দেয়ার সাথে সাথে কারবালার হৃদয়বিদারক ইতিহাসসহ উনার পবিত্র জীবনী মুবারক সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা এবং উনার পবিত্র শাহাদাত শরীফ দিবস উপলক্ষে কমপক্ষে ৩ দিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করা।
সূত্র: দৈনিক আল ইহসান
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন