স্বনির্ভর বাংলাদেশের উপরই নির্ভর করে বেঁচে থাকে ফকির ভারত: আজ্ঞাবহ সরকারের কারণেই ভারত নিম্নমানের পণ্য রপ্তানি করে এদেশের মানসম্পন্ন পণ্যদ্রব্য আমদানি (চুরি) করে যাচ্ছে
বাংলাদেশের অধিকাংশ গণমাধ্যমই ভারত নিয়ন্ত্রিত ও ভারতের আজ্ঞাবহ সরকারের সেন্সরে থাকার কারণে এ তথ্যটি অনেকেরই জানা নেই যে, বাংলাদেশে প্রতিবছর ফল-ফলাদি, যেকোনো ফসলের বাম্পার ফলন হলেও তা আমরা কেন ভোগ করতে পারি না? বাংলাদেশ স্বনির্ভর হওয়া সত্ত্বেও কেন আমাদের আমদানি নির্ভর হয়ে থাকতে হয়? বাংলাদেশে যেকোনো ফসল উৎপাদনে বাম্পার ফলনের খবর প্রকাশ হলেও কেন রফতানির খবর পাওয়া যায় না? তাহলে এ ফসলগুলো কোথায় যায়? দেশের চাহিদার অতিরিক্ত ফলন হওয়া পরেও কেন আমাদের উচ্চমূল্য দিয়ে কিনতে হয়? প্রতি বছর ইলিশের ভরা মৌসুমেও কেন আমরা ইলিশ খেতে পারি না?
এসব প্রশ্নের অনুসন্ধানী রিপোর্ট বা নেপথ্যের কাহিনী গণমাধ্যমে প্রকাশ না হলেও একথা অনেকেরই জানা আছে যে, বাংলাদেশে উৎপাদিত অধিকাংশ ফসলই চলে যায় (পাচার হয়) পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে। ভারত নানান চ্যানেলে (সরকারি-বেসরকারি দালালদের মাধ্যমে) এগুলো চুরি করে নিয়ে যায়। এর একটা অংশ দিয়ে ভারত নিজেরা খেয়ে বেঁচে থাকে এবং উদ্বৃত্ত হলে বহির্বিশ্বে রফতানি করে। এখানে একটি তথ্য উপস্থাপন না করলেই নয়, বাংলাদেশে প্রতি বছর যে পরিমাণ খাদ্য উৎপাদন হয়, তা দিয়ে বিশ্বের খাদ্য চাহিদার কমপক্ষে এক তৃতীয়াংশ পূরণ করা সম্ভব।
বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী বাঙালি প্রবাসীদের থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে দেখা যায়, বিভিন্ন দেশের বাজারগুলোতে প্যাকেটকৃত ফল, শাক-সবজি, মাছ, শুটকি ইত্যাদি ভারতীয় পণ্য হিসেবে স্টীকার লাগানো থাকে, তার অধিকাংশই বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া পণ্য। আর বাংলাদেশ থেকে চুরি করে আনা এসব পন্য রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেই টিকে থাকে ভারত।
উল্লেখ্য, গত বছর সেপ্টেম্বরে শ্রীলঙ্কায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল রফতানির খবর যেভাবে হাইলাইট করে বিভিন্ন মিডিয়া প্রকাশ হয়েছে, এভাবে অন্যকোনো ফসল বা পণ্য দ্রব্যের রফতানির খবর কোনো পত্রিকার ভেতরের পাতায়ও পাওয়া যায় না। তাহলে অন্যান্য বাম্পার ফলন হওয়া খাদ্য দ্রব্যগুলো যায় কোথায়?
বিভিন্ন দিক থেকে বাংলাদেশের উপর নির্ভরশীল ইসলামবিদ্বেষী সাম্প্রদায়িক ভারত। এর একটি দিক হচ্ছে, ভারতে উৎপাদিত কোনো পণ্য কিংবা ফসল কতটুকু রফাতানিযোগ্য কিংবা কতটুকু গুণগত মানসম্পন্ন তা পরীক্ষা করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের জনগণকে বানানো হয় গিনিপিগ। বিভিন্ন সময় পত্র-পত্রিকায় ভারত থেকে চাল, ডাল, ওষুধ, টিকা ইত্যাদি আমদানির খবর আসে। মূলত, ভারত থেকে পাঠানো এসব পণ্যদ্রব্য হয় অতিশয় নিম্নমানের অথবা টেস্ট কেস হিসেবে পাঠানো হয়।
এখানে কিছু উদাহরণ তুলে ধরা হলো- (১) দেশী কোম্পানীগুলোর উৎপাদিত ওষুধ বহির্বিশ্বে ব্যাপক চাহিদা থাকলেও ৩১২ কোটি টাকার ভ্যাকসিন আমদানি করা হয়েছিলো ভারতের অখ্যাত সিরাম ইন্সটিটিউট থেকে। (মানবজমিন, ২১ জানুয়ারি, ২০১৪ঈ.)
(২) শিশুদের জন্য ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল আমদানি করা হয়েছিলো ভারত থেকে। (দৈনিক ইত্তেফাক, ১৭ই মার্চ, ২০১৩)
বলাবাহুল্য, এসব আমদানিকৃত ওষুধ, টিকা কিংবা ভ্যাকসিন নিয়ে মানুষের অসুস্থ হয়ে পড়া ও মৃত্যুর খবর নিয়েও কম সংবাদ প্রকাশ হয়নি। এক্ষেত্রে ভারত যদি বিপরীত ফল পেতো হয়তো তাদের দেশে উৎপাদিত এসব ভ্যাকসিন, টিকা কিংবা ওষুধ অন্যান্য দেশে রফতানি করতো।
(৩) রাজশাহীর পুঠিয়ায় খাদ্য গুদামে ভারতের নিম্নমানের গম দিচ্ছে আওয়ামী লীগ নেতারা (খবর: আমারদেশ অনলাইন, ২৬ জুন ২০১৪ ঈসায়ী) খবরে বলা হয়, ‘সরকারি নিয়ম অনুসারে স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে গম সংগ্রহের নিয়ম থাকলেও আ’লীগের নেতারা খাদ্য কর্মকর্তার সহয়তায় কৃষকদের বঞ্চিত রেখে ভারতের আমদানিকৃত নিম্নমানের গম উপজেলা খাদ্য গুদামে সরবরাহ করছে।’
এখানে একটি বিষয় পরিষ্কার হয় যে, একটি চ্যানেলের মাধ্যমে ভারতের উৎপাদিত নিম্নমানের গম আসছে বাংলাদেশে আর এদেশের উৎপাদিত গম পাচার হয়ে চলে যাচ্ছে ভারতে।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, খাদ্য দ্রব্যের দিক থেকে বাংলাদেশের ভারতের উপর কোনো নির্ভরশীলতা নেই, বরং ভারতই বাংলাদেশের উপর নির্ভরশীল। আর তাদের এই নির্ভরশীলতা অর্থাৎ দুর্বলতাকে আড়ালে রাখতেই প্রকাশ্য আমদানি না করে বরং বিভিন্ন চ্যানেলে পাচার করে নিয়ে যায়। আর এসব সম্ভব হয় এদেশে নিয়োজিত দালালদের মাধ্যমে।
ভারতের রেমিটেন্স আয়ের ৫ম শীর্ষ উৎস হচ্ছে বাংলাদেশ। ভারতীয় হিন্দুরা বাংলাদেশ থেকে বছরে ১৫ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স ভারতে নিয়ে যায়। এছাড়া ১ম ও ৩য় অবস্থানে আছে যথাক্রমে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সউদী আরব। (সূত্র: ইন্টারনেট)
ভারত বাংলাদেশে (নিম্নমানের) পণ্য রফতানি করে প্রচুর বাণিজ্য করে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশী কোম্পানিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলেও অবাধে প্রবেশ করানো হচ্ছে ভারতীয় ভেজাল পণ্যদ্রব্য। এসব রফতানিকৃত পণ্য অধিকাংশ অতিশয় নিম্নমানের ও ক্ষতিকর।
উল্লেখযোগ্য কয়েকটি উদাহরণ এখানে উল্লেখ করা হলো- (১) ভারত থেকে আমদানী হচ্ছে নিম্ন মানের ও পাথর মিশ্রিত কয়লা, বিক্রি হচ্ছে ৩ গুণ দামে (সূত্র: বার্তা২৪.কম.বিডি, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৪ ঈসায়ী) খবরে কয়লা সঙ্কটের কারণ হিসেবে বলা হয়, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি কর্তৃপক্ষ কয়লা বিক্রি বন্ধ রাখায় এই জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ কয়লার কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে ভারত থেকে পাথর মিশ্রিত ও নিম্নমানের কয়লা আমদানি করা হয়েছে।
(২) বৈকারি সীমান্ত দিয়ে আসছে ভারতীয় নিম্ন মানের সার (দৈনিক পত্রদূত, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৪)
এখবরেও প্রকাশ হয়েছে, ‘সদর উপজেলার বৈকারী সীমান্ত দিয়ে বানের স্রোতের মতো বাংলাদেশে প্রবেশ করছে ভারতীয় নিম্নমানের কাকর ও পাথর কুচি মিশ্রিত সার। কৃষকরা এ সার ব্যবহার করে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। কৃষকরা জানায়, প্রতিদিন ভারত থেকে এ সীমান্ত দিয়ে প্রচুর পরিমাণে নিম্নমানের সার প্রবেশ করছে। সারের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে কাঁকর ও পাথরের কুচি মিশ্রিত থাকায় এ সার ব্যবহার করায় ফসলি জমি উর্বরতা হারাচ্ছে। অপরদিকে জমির ফসল ও কমে যাচ্ছে বলে কৃষকদের জোর অভিযোগ।’
(৩) খবর: নিম্নমানের ভারতীয় চালের দখলে দেশীয় বাজার, খাদ্যমন্ত্রী বললেন, চিন্তার কোনো কারণ নেই। (সূত্র: কালের কন্ঠ, ০৮/১২/২০১৪ঈ)
এখবরেই প্রকাশ হয়, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বাংলাদেশে চাল উৎপাদনে রেকর্ড করেছে বাংলাদেশের কৃষকরা। আগের বছরের ৩ কোটি ৩৮ লাখ টন থেকে বেড়ে গেল বছর চাল উৎপাদন হয়েছে ৩ কোটি ৪৪ লাখ টন। এ উৎপাদন দেশের চাহিদার জন্য যথেষ্ট হওয়া সত্ত্বেও ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ভারত থেকে ৭ লাখ ৮৬ হাজার টন চাল আমদানির ঋণপত্র (এলসি) নিষ্পত্তি হয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে ২০ গুণ বেশি। অথচ এ চাল গো-খাদ্য মানের- যা আনা হচ্ছে মানুষের জন্য।
বলাবাহুল্য, এসব আমদানির দায় শুধু এদেশের মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের ঘাড়ে চাপালে ভুল হবে। কেননা, ভারত থেকে চাপ সৃষ্টি না করলে আর আমাদের আজ্ঞাবহ সরকারের গ্রীন সিগন্যাল না পেলে ব্যবসায়ীরা এ অপ্রয়োজনীয় আমদানি করার সুযোগ পেতো না।
সরকারি হিসেবে ২০১৪ অর্থবছরে ভারত বাংলাদেশে ৬.০৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রফতানি করে, সেখানে বাংলাদেশ ভারতে করে মাত্র ৪৫৬.৬৩ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। অর্থাৎ ভারতের অনুকূলে বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ৫.৫৭ বিলিয়ন ডলার (সূত্র: আমারদেশ অনলাইন, ১০ অক্টোবর, ২০১৪ঈ.) তবে বেসরকারি হিসেবে ভারত থেকে আরো বহুগুণ পণ্য বাংলাদেশে প্রবেশ করে, যার বেশিরভাগ হচ্ছে ভারতীয় পোশাক, ফেন্সিডিল, ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক দ্রব্য।
উল্লেখ্য, ভারতীয় যেকোনো পণ্যই নিম্ন মানের। এজন্য আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতীয় পন্যের চাহিদা নেই বললেই চলে। এমনকি ভারতের উৎপাদিত ফসল, ফল-ফলাদি, চাষকৃত মাছসহ বিভিন্ন চাষাবাদের ফসলও নিম্নমানের। এক্ষেত্রে উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, গত বছর (২০১৪ ঈসায়ী) ১ মে থেকে ইউরোপীয় বাজারে ভারতীয় আম আমদানীতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ভারত থেকে আসা পরপর ২০০টি চালানের আম পরীক্ষা করে ইউরোপীয়রা আমের মধ্যে বিষাক্ত কেমিক্যাল পেয়ে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করে। আম ছাড়াও আরো চারটি ভারতীয় পণ্যের উপর এই নিষেধাজ্ঞা বহাল আছে। এগুলো হচ্ছে ভারতীয় বেগুন, করলা, চিচিঙ্গা এবং কচু। সে হিসেবে ভারত বহির্বিশ্বে রফতানি অযোগ্য একটি দেশ। আর রফতানিকৃত পণ্যও যখন নিম্নমানের কারণে ফেরত আসে, তখন বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ হয় ভারতের একমাত্র বিপদের বন্ধু(!)। অর্থাৎ সেই ফেরত আসা পণ্যের চালানটি তখন খুব সহজেই পাঠিয়ে দেয়া যায় বাংলাদেশে। যেমন- গত ৫ মে, ২০১৪ ঈসায়ী তারিখ ইউরোপ থেকে ফেরত আসা বিষাক্ত আমের চালানটি ট্রেনে করে বাংলাদেশের বাজারে পাঠিয়ে দেয় ভারত। এক্ষেত্রে ভারত যে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা ছিলো, তা থেকে সম্পূর্ণ বেঁচে গেলো। আর এদিকে বিষাক্ত আমে ছেয়ে গেলো বাংলাদেশ। অথচ বাংলাদেশে এতো পরিমাণ আমের ফলন হয় যে, নিজ দেশের চাহিদা পূরণ করে তা বিশ্বের অনেক দেশে রপ্তানি হয়।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, ভারত আমাদের পাশে থাকার সুবাদে খুব সহজেই আমাদের মাথায় কাঁঠাল ভেঙ্গে পেট ভরে খেয়ে বেঁচে আছে।
ভারত বাংলাদেশের উপর নির্ভরশীল বলেই জোর খাটিয়ে ও নানান কৌশলে আমাদের সাথে বাণিজ্য করে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে ভারতের অনুকুলে কাজ করে কিছু আজ্ঞাবহ এজেন্ট (দালাল), কিছু অতিলোভী প্রশাসনিক কর্মকর্তা কিংবা সরকারি কোনো আমলা। ফলস্বরূপ দেখা যায়, সরকারের তরফ থেকে বহুবার বাংলাদেশকে স্বনির্ভর ঘোষণা করা হলেও একটা সামান্য প্রয়োজনেও ভারতের কিংবা ভারতীয় কোনো প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা নিতে হয়। নাউযুবিল্লাহ!
যেমন- (১) বাংলাদেশে অনেক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কনস্ট্রাকশন ফার্ম থাকার পরও যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার বানানো হলো ভারতীয় কোম্পানি সিমপেক্স ইনফ্রাস্ট্রাচার দিয়ে।
(২) বাংলাদেশে বিদেশে রফতানিকারী আন্তর্জাতিক মানের ঔষধ কোম্পানি থাকলেও শিশুদের জন্য ভিটামিন এ ক্যাপসুল বানানো হলো ভারতের বিতর্কিত ‘অলিভ হেলথ কেয়ার’র মতো অখ্যাত কোম্পানি দিয়ে।
(৩) দেশী কোম্পানিগুলোর যথেষ্ট অভিজ্ঞতা থাকলেও দ্বিতীয় ভৈরব সেতু বানানো হচ্ছে ভারতীয় কোম্পানি ইরকন ও এফকন্সকে দিয়ে।
(৪) দেশি কোম্পানিগুলোর যথেষ্ট অভিজ্ঞতা থাকলেও দ্বিতীয় তিতাস রেলসেতু বানানো হচ্ছে ভারতীয় কোম্পনি গ্যানোন ও এফএলসিএলকে দিয়ে।
(৫) বাংলাদেশের ভ্যাকসিন উৎপাদন বন্ধ করে ৩১২ কোটি টাকার ভ্যাকসিন আনা হয়েছে ভারতের অখ্যাত সিরাম ইন্সটিটিউট থেকে।
(৬) বাংলাদেশে অজস্র ছাপাখানা থাকলেও বোর্ডের বই ছাপানো হচ্ছে ভারতীয় কোম্পানি গফ সন্স ইন্ডিয়া, ক্যালিকো, রেপপ্রো ইন্ডিয়ারমতো অখ্যাত কোম্পানি দিয়ে ।
(৭) বাংলাদেশে সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ রেখে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে।
(৮) বাংলাদেশের অসংখ্যা রিয়েল স্টেট গ্রুপ থাকলেও ভারতের সাহারাগ্রুপ দিয়ে উপশহর বানানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
(৯) ভারতের নিম্নমানের রেল ইঞ্জিন কেনা হচ্ছে উচ্চমূল্য দিয়ে।
(১০) বাংলাদেশের যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও ভারত থেকে বাস-ট্রাক কেনা হচ্ছে।
(১১) বাংলাদেশে চাল পাচার করে ভারত থেকে চাল আমদানি করা হচ্ছে।
(১২) অনুন্নত হওয়া সত্ত্বেও ভারত থেকে কেনা হয়েছে ডেমু ট্রেন, তেল ট্যাঙ্কার, ড্রেজার।
(১৩) বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কোম্পানিগুলোকে আতুর করে রেখে ভারতের ওএনজিসি নামক কোম্পানিকে সাগরে গ্যাস উত্তোলন করতে দেয়া হয়েছে। (১৪) বাংলাদেশের সক্ষমতা থাকলেও আমাদের নৌটার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নিচ্ছে ভারত।
উপরের তথ্যগুলো দেখলে সহজেই অনুধাবন করা যায়, বাংলাদেশের সক্ষমতা থাকার পরও ভারতীয় দালালদের কারণে বাংলাদেশ থেকে টাকা নিয়ে যাচ্ছে ভারত। বলার অপেক্ষা রাখে না, সেই টাকা দিয়েই বেঁচে আছে ফকির ভারত।
অনেকেই ভারতকে শক্তিশালী ও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ দেশ বলে মনে করে থাকে। কিন্তু ভারতের প্রকৃত তথ্য, যা সবসময় গোপন করে রাখা হয়, তার খবর অনেকেরই জানা নেই। তাদের জন্য এখানে ভারত সম্পর্কে কিছু তথ্য প্রকাশ করা হলো-
(১) ২০০৯ সালের হিসাব অনুযায়ী ভারতে ৩৮ শতাংশ বা ৪০ কোটি লোক চরম দারিদ্র্যতার মধ্যে বসবাস করে। (এখন আরো বেড়েছে)
(২) ভারতের ৬০ শতাংশেরও বেশি মানুষের নিরাপদ সেনিটারি ব্যবস্থা নেই, অর্থাৎ তারা খোলা আকাশের নিচে প্রাকৃতিক কর্ম সারে। এজন্য ভারতকে বলা হয়, ‘পৃথিবীর সবচেয়ে বড় টয়লেট’।
(৩) পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি দরিদ্র লোক বাস করে ভারতে।
(৪) ভারতের ৪২ শতাংশ শিশু অপুষ্টির শিকার এবং ভারতে প্রতিদিন অপুষ্টির শিকার হয়ে মারা যায় ৩ হাজার শিশু (সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং একে জাতীয় লজ্জা হিসেবে মন্তব্য করে)।
(৫) পৃথিবীর ৪০ শতাংশ অপুষ্টিতে থাকা লোক বাস করে ভারতে।
(৬) ভারতে প্রতিদিন ক্ষুধা পেটে নিয়ে ঘুমাতে যায় ৩২ কোটি লোক।
(৭) ভারতে ক্ষুধার জ্বালায় মানুষ মাটি, কুকুরের দুধ, এমনকি মৃত প্রাণী পর্যন্ত ভক্ষণ করে।
বলাবাহুল্য, বাংলাদেশ যদি ভারতের সাথে শুধু বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করে দেয়, আর বাংলাদেশ থেকে সকল হিন্দুদের ভারত পাঠিয়ে দেয়, তবে স্মরণকালের বিপর্যয় নেমে আসবে ভারতে। কারণ বাংলাদেশকে চুষে চুষে খেয়েই বর্তমানে বেঁচে আছে তারা। তাই যেসব বাংলাদেশী দালাল হিসেবে ভারতকে নানান সুযোগ-সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে, তাদেরকে সতর্ক করে দিয়ে বলছি- ক্ষমতা সবসময় থাকে না। নমরূদ, শাদ্দাদ, ফিরাউনের মতো মহা ক্ষমতাধররা এখন আযাব-গযবে নাস্তানাবুদ হচ্ছে।
৭১-এর রাজাকাররাও এখন যেমন বিপদে আছে, তদ্রুপ এখন যারা দেশ ও জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে যাচ্ছে, দেশের সম্পদ পাচার করে যাচ্ছে, পর্যাপ্ত উৎপাদন থাকার পরেও বিদেশ থেকে নিম্নমানের পণ্য আমদানি করে যাচ্ছে, দেশের সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও বিদেশীদের দিয়ে কাজ করাচ্ছে- তাদের জন্যও সামনে বিপদের দিন ঘনিয়ে আসছে। তাদেরও কঠিন জবাবদিহি করতে হবে। তাদেরকে অবশ্যই দেশবিরোধী চক্রান্তের অপরাধে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।
বাংলাদেশের অধিকাংশ গণমাধ্যমই ভারত নিয়ন্ত্রিত ও ভারতের আজ্ঞাবহ সরকারের সেন্সরে থাকার কারণে এ তথ্যটি অনেকেরই জানা নেই যে, বাংলাদেশে প্রতিবছর ফল-ফলাদি, যেকোনো ফসলের বাম্পার ফলন হলেও তা আমরা কেন ভোগ করতে পারি না? বাংলাদেশ স্বনির্ভর হওয়া সত্ত্বেও কেন আমাদের আমদানি নির্ভর হয়ে থাকতে হয়? বাংলাদেশে যেকোনো ফসল উৎপাদনে বাম্পার ফলনের খবর প্রকাশ হলেও কেন রফতানির খবর পাওয়া যায় না? তাহলে এ ফসলগুলো কোথায় যায়? দেশের চাহিদার অতিরিক্ত ফলন হওয়া পরেও কেন আমাদের উচ্চমূল্য দিয়ে কিনতে হয়? প্রতি বছর ইলিশের ভরা মৌসুমেও কেন আমরা ইলিশ খেতে পারি না?
এসব প্রশ্নের অনুসন্ধানী রিপোর্ট বা নেপথ্যের কাহিনী গণমাধ্যমে প্রকাশ না হলেও একথা অনেকেরই জানা আছে যে, বাংলাদেশে উৎপাদিত অধিকাংশ ফসলই চলে যায় (পাচার হয়) পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে। ভারত নানান চ্যানেলে (সরকারি-বেসরকারি দালালদের মাধ্যমে) এগুলো চুরি করে নিয়ে যায়। এর একটা অংশ দিয়ে ভারত নিজেরা খেয়ে বেঁচে থাকে এবং উদ্বৃত্ত হলে বহির্বিশ্বে রফতানি করে। এখানে একটি তথ্য উপস্থাপন না করলেই নয়, বাংলাদেশে প্রতি বছর যে পরিমাণ খাদ্য উৎপাদন হয়, তা দিয়ে বিশ্বের খাদ্য চাহিদার কমপক্ষে এক তৃতীয়াংশ পূরণ করা সম্ভব।
বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী বাঙালি প্রবাসীদের থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে দেখা যায়, বিভিন্ন দেশের বাজারগুলোতে প্যাকেটকৃত ফল, শাক-সবজি, মাছ, শুটকি ইত্যাদি ভারতীয় পণ্য হিসেবে স্টীকার লাগানো থাকে, তার অধিকাংশই বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া পণ্য। আর বাংলাদেশ থেকে চুরি করে আনা এসব পন্য রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেই টিকে থাকে ভারত।
উল্লেখ্য, গত বছর সেপ্টেম্বরে শ্রীলঙ্কায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল রফতানির খবর যেভাবে হাইলাইট করে বিভিন্ন মিডিয়া প্রকাশ হয়েছে, এভাবে অন্যকোনো ফসল বা পণ্য দ্রব্যের রফতানির খবর কোনো পত্রিকার ভেতরের পাতায়ও পাওয়া যায় না। তাহলে অন্যান্য বাম্পার ফলন হওয়া খাদ্য দ্রব্যগুলো যায় কোথায়?
বিভিন্ন দিক থেকে বাংলাদেশের উপর নির্ভরশীল ইসলামবিদ্বেষী সাম্প্রদায়িক ভারত। এর একটি দিক হচ্ছে, ভারতে উৎপাদিত কোনো পণ্য কিংবা ফসল কতটুকু রফাতানিযোগ্য কিংবা কতটুকু গুণগত মানসম্পন্ন তা পরীক্ষা করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের জনগণকে বানানো হয় গিনিপিগ। বিভিন্ন সময় পত্র-পত্রিকায় ভারত থেকে চাল, ডাল, ওষুধ, টিকা ইত্যাদি আমদানির খবর আসে। মূলত, ভারত থেকে পাঠানো এসব পণ্যদ্রব্য হয় অতিশয় নিম্নমানের অথবা টেস্ট কেস হিসেবে পাঠানো হয়।
এখানে কিছু উদাহরণ তুলে ধরা হলো- (১) দেশী কোম্পানীগুলোর উৎপাদিত ওষুধ বহির্বিশ্বে ব্যাপক চাহিদা থাকলেও ৩১২ কোটি টাকার ভ্যাকসিন আমদানি করা হয়েছিলো ভারতের অখ্যাত সিরাম ইন্সটিটিউট থেকে। (মানবজমিন, ২১ জানুয়ারি, ২০১৪ঈ.)
(২) শিশুদের জন্য ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল আমদানি করা হয়েছিলো ভারত থেকে। (দৈনিক ইত্তেফাক, ১৭ই মার্চ, ২০১৩)
বলাবাহুল্য, এসব আমদানিকৃত ওষুধ, টিকা কিংবা ভ্যাকসিন নিয়ে মানুষের অসুস্থ হয়ে পড়া ও মৃত্যুর খবর নিয়েও কম সংবাদ প্রকাশ হয়নি। এক্ষেত্রে ভারত যদি বিপরীত ফল পেতো হয়তো তাদের দেশে উৎপাদিত এসব ভ্যাকসিন, টিকা কিংবা ওষুধ অন্যান্য দেশে রফতানি করতো।
(৩) রাজশাহীর পুঠিয়ায় খাদ্য গুদামে ভারতের নিম্নমানের গম দিচ্ছে আওয়ামী লীগ নেতারা (খবর: আমারদেশ অনলাইন, ২৬ জুন ২০১৪ ঈসায়ী) খবরে বলা হয়, ‘সরকারি নিয়ম অনুসারে স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে গম সংগ্রহের নিয়ম থাকলেও আ’লীগের নেতারা খাদ্য কর্মকর্তার সহয়তায় কৃষকদের বঞ্চিত রেখে ভারতের আমদানিকৃত নিম্নমানের গম উপজেলা খাদ্য গুদামে সরবরাহ করছে।’
এখানে একটি বিষয় পরিষ্কার হয় যে, একটি চ্যানেলের মাধ্যমে ভারতের উৎপাদিত নিম্নমানের গম আসছে বাংলাদেশে আর এদেশের উৎপাদিত গম পাচার হয়ে চলে যাচ্ছে ভারতে।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, খাদ্য দ্রব্যের দিক থেকে বাংলাদেশের ভারতের উপর কোনো নির্ভরশীলতা নেই, বরং ভারতই বাংলাদেশের উপর নির্ভরশীল। আর তাদের এই নির্ভরশীলতা অর্থাৎ দুর্বলতাকে আড়ালে রাখতেই প্রকাশ্য আমদানি না করে বরং বিভিন্ন চ্যানেলে পাচার করে নিয়ে যায়। আর এসব সম্ভব হয় এদেশে নিয়োজিত দালালদের মাধ্যমে।
ভারতের রেমিটেন্স আয়ের ৫ম শীর্ষ উৎস হচ্ছে বাংলাদেশ। ভারতীয় হিন্দুরা বাংলাদেশ থেকে বছরে ১৫ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স ভারতে নিয়ে যায়। এছাড়া ১ম ও ৩য় অবস্থানে আছে যথাক্রমে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সউদী আরব। (সূত্র: ইন্টারনেট)
ভারত বাংলাদেশে (নিম্নমানের) পণ্য রফতানি করে প্রচুর বাণিজ্য করে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশী কোম্পানিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলেও অবাধে প্রবেশ করানো হচ্ছে ভারতীয় ভেজাল পণ্যদ্রব্য। এসব রফতানিকৃত পণ্য অধিকাংশ অতিশয় নিম্নমানের ও ক্ষতিকর।
উল্লেখযোগ্য কয়েকটি উদাহরণ এখানে উল্লেখ করা হলো- (১) ভারত থেকে আমদানী হচ্ছে নিম্ন মানের ও পাথর মিশ্রিত কয়লা, বিক্রি হচ্ছে ৩ গুণ দামে (সূত্র: বার্তা২৪.কম.বিডি, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৪ ঈসায়ী) খবরে কয়লা সঙ্কটের কারণ হিসেবে বলা হয়, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি কর্তৃপক্ষ কয়লা বিক্রি বন্ধ রাখায় এই জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ কয়লার কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে ভারত থেকে পাথর মিশ্রিত ও নিম্নমানের কয়লা আমদানি করা হয়েছে।
(২) বৈকারি সীমান্ত দিয়ে আসছে ভারতীয় নিম্ন মানের সার (দৈনিক পত্রদূত, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৪)
এখবরেও প্রকাশ হয়েছে, ‘সদর উপজেলার বৈকারী সীমান্ত দিয়ে বানের স্রোতের মতো বাংলাদেশে প্রবেশ করছে ভারতীয় নিম্নমানের কাকর ও পাথর কুচি মিশ্রিত সার। কৃষকরা এ সার ব্যবহার করে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। কৃষকরা জানায়, প্রতিদিন ভারত থেকে এ সীমান্ত দিয়ে প্রচুর পরিমাণে নিম্নমানের সার প্রবেশ করছে। সারের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে কাঁকর ও পাথরের কুচি মিশ্রিত থাকায় এ সার ব্যবহার করায় ফসলি জমি উর্বরতা হারাচ্ছে। অপরদিকে জমির ফসল ও কমে যাচ্ছে বলে কৃষকদের জোর অভিযোগ।’
(৩) খবর: নিম্নমানের ভারতীয় চালের দখলে দেশীয় বাজার, খাদ্যমন্ত্রী বললেন, চিন্তার কোনো কারণ নেই। (সূত্র: কালের কন্ঠ, ০৮/১২/২০১৪ঈ)
এখবরেই প্রকাশ হয়, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বাংলাদেশে চাল উৎপাদনে রেকর্ড করেছে বাংলাদেশের কৃষকরা। আগের বছরের ৩ কোটি ৩৮ লাখ টন থেকে বেড়ে গেল বছর চাল উৎপাদন হয়েছে ৩ কোটি ৪৪ লাখ টন। এ উৎপাদন দেশের চাহিদার জন্য যথেষ্ট হওয়া সত্ত্বেও ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ভারত থেকে ৭ লাখ ৮৬ হাজার টন চাল আমদানির ঋণপত্র (এলসি) নিষ্পত্তি হয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে ২০ গুণ বেশি। অথচ এ চাল গো-খাদ্য মানের- যা আনা হচ্ছে মানুষের জন্য।
বলাবাহুল্য, এসব আমদানির দায় শুধু এদেশের মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের ঘাড়ে চাপালে ভুল হবে। কেননা, ভারত থেকে চাপ সৃষ্টি না করলে আর আমাদের আজ্ঞাবহ সরকারের গ্রীন সিগন্যাল না পেলে ব্যবসায়ীরা এ অপ্রয়োজনীয় আমদানি করার সুযোগ পেতো না।
সরকারি হিসেবে ২০১৪ অর্থবছরে ভারত বাংলাদেশে ৬.০৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রফতানি করে, সেখানে বাংলাদেশ ভারতে করে মাত্র ৪৫৬.৬৩ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। অর্থাৎ ভারতের অনুকূলে বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ৫.৫৭ বিলিয়ন ডলার (সূত্র: আমারদেশ অনলাইন, ১০ অক্টোবর, ২০১৪ঈ.) তবে বেসরকারি হিসেবে ভারত থেকে আরো বহুগুণ পণ্য বাংলাদেশে প্রবেশ করে, যার বেশিরভাগ হচ্ছে ভারতীয় পোশাক, ফেন্সিডিল, ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক দ্রব্য।
উল্লেখ্য, ভারতীয় যেকোনো পণ্যই নিম্ন মানের। এজন্য আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতীয় পন্যের চাহিদা নেই বললেই চলে। এমনকি ভারতের উৎপাদিত ফসল, ফল-ফলাদি, চাষকৃত মাছসহ বিভিন্ন চাষাবাদের ফসলও নিম্নমানের। এক্ষেত্রে উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, গত বছর (২০১৪ ঈসায়ী) ১ মে থেকে ইউরোপীয় বাজারে ভারতীয় আম আমদানীতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ভারত থেকে আসা পরপর ২০০টি চালানের আম পরীক্ষা করে ইউরোপীয়রা আমের মধ্যে বিষাক্ত কেমিক্যাল পেয়ে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করে। আম ছাড়াও আরো চারটি ভারতীয় পণ্যের উপর এই নিষেধাজ্ঞা বহাল আছে। এগুলো হচ্ছে ভারতীয় বেগুন, করলা, চিচিঙ্গা এবং কচু। সে হিসেবে ভারত বহির্বিশ্বে রফতানি অযোগ্য একটি দেশ। আর রফতানিকৃত পণ্যও যখন নিম্নমানের কারণে ফেরত আসে, তখন বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ হয় ভারতের একমাত্র বিপদের বন্ধু(!)। অর্থাৎ সেই ফেরত আসা পণ্যের চালানটি তখন খুব সহজেই পাঠিয়ে দেয়া যায় বাংলাদেশে। যেমন- গত ৫ মে, ২০১৪ ঈসায়ী তারিখ ইউরোপ থেকে ফেরত আসা বিষাক্ত আমের চালানটি ট্রেনে করে বাংলাদেশের বাজারে পাঠিয়ে দেয় ভারত। এক্ষেত্রে ভারত যে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা ছিলো, তা থেকে সম্পূর্ণ বেঁচে গেলো। আর এদিকে বিষাক্ত আমে ছেয়ে গেলো বাংলাদেশ। অথচ বাংলাদেশে এতো পরিমাণ আমের ফলন হয় যে, নিজ দেশের চাহিদা পূরণ করে তা বিশ্বের অনেক দেশে রপ্তানি হয়।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, ভারত আমাদের পাশে থাকার সুবাদে খুব সহজেই আমাদের মাথায় কাঁঠাল ভেঙ্গে পেট ভরে খেয়ে বেঁচে আছে।
ভারত বাংলাদেশের উপর নির্ভরশীল বলেই জোর খাটিয়ে ও নানান কৌশলে আমাদের সাথে বাণিজ্য করে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে ভারতের অনুকুলে কাজ করে কিছু আজ্ঞাবহ এজেন্ট (দালাল), কিছু অতিলোভী প্রশাসনিক কর্মকর্তা কিংবা সরকারি কোনো আমলা। ফলস্বরূপ দেখা যায়, সরকারের তরফ থেকে বহুবার বাংলাদেশকে স্বনির্ভর ঘোষণা করা হলেও একটা সামান্য প্রয়োজনেও ভারতের কিংবা ভারতীয় কোনো প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা নিতে হয়। নাউযুবিল্লাহ!
যেমন- (১) বাংলাদেশে অনেক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কনস্ট্রাকশন ফার্ম থাকার পরও যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার বানানো হলো ভারতীয় কোম্পানি সিমপেক্স ইনফ্রাস্ট্রাচার দিয়ে।
(২) বাংলাদেশে বিদেশে রফতানিকারী আন্তর্জাতিক মানের ঔষধ কোম্পানি থাকলেও শিশুদের জন্য ভিটামিন এ ক্যাপসুল বানানো হলো ভারতের বিতর্কিত ‘অলিভ হেলথ কেয়ার’র মতো অখ্যাত কোম্পানি দিয়ে।
(৩) দেশী কোম্পানিগুলোর যথেষ্ট অভিজ্ঞতা থাকলেও দ্বিতীয় ভৈরব সেতু বানানো হচ্ছে ভারতীয় কোম্পানি ইরকন ও এফকন্সকে দিয়ে।
(৪) দেশি কোম্পানিগুলোর যথেষ্ট অভিজ্ঞতা থাকলেও দ্বিতীয় তিতাস রেলসেতু বানানো হচ্ছে ভারতীয় কোম্পনি গ্যানোন ও এফএলসিএলকে দিয়ে।
(৫) বাংলাদেশের ভ্যাকসিন উৎপাদন বন্ধ করে ৩১২ কোটি টাকার ভ্যাকসিন আনা হয়েছে ভারতের অখ্যাত সিরাম ইন্সটিটিউট থেকে।
(৬) বাংলাদেশে অজস্র ছাপাখানা থাকলেও বোর্ডের বই ছাপানো হচ্ছে ভারতীয় কোম্পানি গফ সন্স ইন্ডিয়া, ক্যালিকো, রেপপ্রো ইন্ডিয়ারমতো অখ্যাত কোম্পানি দিয়ে ।
(৭) বাংলাদেশে সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ রেখে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে।
(৮) বাংলাদেশের অসংখ্যা রিয়েল স্টেট গ্রুপ থাকলেও ভারতের সাহারাগ্রুপ দিয়ে উপশহর বানানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
(৯) ভারতের নিম্নমানের রেল ইঞ্জিন কেনা হচ্ছে উচ্চমূল্য দিয়ে।
(১০) বাংলাদেশের যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও ভারত থেকে বাস-ট্রাক কেনা হচ্ছে।
(১১) বাংলাদেশে চাল পাচার করে ভারত থেকে চাল আমদানি করা হচ্ছে।
(১২) অনুন্নত হওয়া সত্ত্বেও ভারত থেকে কেনা হয়েছে ডেমু ট্রেন, তেল ট্যাঙ্কার, ড্রেজার।
(১৩) বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কোম্পানিগুলোকে আতুর করে রেখে ভারতের ওএনজিসি নামক কোম্পানিকে সাগরে গ্যাস উত্তোলন করতে দেয়া হয়েছে। (১৪) বাংলাদেশের সক্ষমতা থাকলেও আমাদের নৌটার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নিচ্ছে ভারত।
উপরের তথ্যগুলো দেখলে সহজেই অনুধাবন করা যায়, বাংলাদেশের সক্ষমতা থাকার পরও ভারতীয় দালালদের কারণে বাংলাদেশ থেকে টাকা নিয়ে যাচ্ছে ভারত। বলার অপেক্ষা রাখে না, সেই টাকা দিয়েই বেঁচে আছে ফকির ভারত।
অনেকেই ভারতকে শক্তিশালী ও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ দেশ বলে মনে করে থাকে। কিন্তু ভারতের প্রকৃত তথ্য, যা সবসময় গোপন করে রাখা হয়, তার খবর অনেকেরই জানা নেই। তাদের জন্য এখানে ভারত সম্পর্কে কিছু তথ্য প্রকাশ করা হলো-
(১) ২০০৯ সালের হিসাব অনুযায়ী ভারতে ৩৮ শতাংশ বা ৪০ কোটি লোক চরম দারিদ্র্যতার মধ্যে বসবাস করে। (এখন আরো বেড়েছে)
(২) ভারতের ৬০ শতাংশেরও বেশি মানুষের নিরাপদ সেনিটারি ব্যবস্থা নেই, অর্থাৎ তারা খোলা আকাশের নিচে প্রাকৃতিক কর্ম সারে। এজন্য ভারতকে বলা হয়, ‘পৃথিবীর সবচেয়ে বড় টয়লেট’।
(৩) পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি দরিদ্র লোক বাস করে ভারতে।
(৪) ভারতের ৪২ শতাংশ শিশু অপুষ্টির শিকার এবং ভারতে প্রতিদিন অপুষ্টির শিকার হয়ে মারা যায় ৩ হাজার শিশু (সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং একে জাতীয় লজ্জা হিসেবে মন্তব্য করে)।
(৫) পৃথিবীর ৪০ শতাংশ অপুষ্টিতে থাকা লোক বাস করে ভারতে।
(৬) ভারতে প্রতিদিন ক্ষুধা পেটে নিয়ে ঘুমাতে যায় ৩২ কোটি লোক।
(৭) ভারতে ক্ষুধার জ্বালায় মানুষ মাটি, কুকুরের দুধ, এমনকি মৃত প্রাণী পর্যন্ত ভক্ষণ করে।
বলাবাহুল্য, বাংলাদেশ যদি ভারতের সাথে শুধু বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করে দেয়, আর বাংলাদেশ থেকে সকল হিন্দুদের ভারত পাঠিয়ে দেয়, তবে স্মরণকালের বিপর্যয় নেমে আসবে ভারতে। কারণ বাংলাদেশকে চুষে চুষে খেয়েই বর্তমানে বেঁচে আছে তারা। তাই যেসব বাংলাদেশী দালাল হিসেবে ভারতকে নানান সুযোগ-সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে, তাদেরকে সতর্ক করে দিয়ে বলছি- ক্ষমতা সবসময় থাকে না। নমরূদ, শাদ্দাদ, ফিরাউনের মতো মহা ক্ষমতাধররা এখন আযাব-গযবে নাস্তানাবুদ হচ্ছে।
৭১-এর রাজাকাররাও এখন যেমন বিপদে আছে, তদ্রুপ এখন যারা দেশ ও জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে যাচ্ছে, দেশের সম্পদ পাচার করে যাচ্ছে, পর্যাপ্ত উৎপাদন থাকার পরেও বিদেশ থেকে নিম্নমানের পণ্য আমদানি করে যাচ্ছে, দেশের সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও বিদেশীদের দিয়ে কাজ করাচ্ছে- তাদের জন্যও সামনে বিপদের দিন ঘনিয়ে আসছে। তাদেরও কঠিন জবাবদিহি করতে হবে। তাদেরকে অবশ্যই দেশবিরোধী চক্রান্তের অপরাধে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন